প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
সিজন : ৩
পার্ট :৫
ব্যরিস্টার সোহেলের লাশটা গাছে ঝুলছে ৷সাংবাদিকরা তার ছবি তুলতে ব্যস্ত ৷একের পর এক সংবাদ হচ্ছে সোহেলকে নিয়ে ৷তার মৃত্যুর কারন কেউ জানে না ৷তবে এটাকে সবাই পরিকল্পিত খুন বলেই বিবেচনা করছে ৷কারন সোহেলের স্ত্রী এর কথা অনুযায়ী সোহেল আত্মহত্যা করতেই পারে না ৷সে স্বাভাবিক ছিল গতকাল দুপুরেও ৷কিন্তু বিকেলের পরেই সে অস্থির হয়ে যায় অজানা কারনে ৷রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সে বার বার তার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন ৷ বারবার জিঞ্জাসা করার পরেও কিছু বলে নি সে ৷ বাসা থেকে চলে যায় কিছু না বলেই ৷ কিন্তু মাঝ রাতের পর স্বামীকে কল করে আর পান নি ৷আর সকালে তার মৃত্যুর খবর গেছে বাড়ীতে ৷
আরো একটা ব্যাপার পুলিশের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে ৷কারন সোহেলের লাশের নিচে তারা একটা চিরকুট পেয়েছেন ৷যেটা একটা ইট দিয়ে চাপা দেওয়া ছিল ৷আর চিঠিটা সাংবাদিকের হাতে যাওয়ার পর সংবাদ মাধ্যম একের পর এক নিউজ করে যাচ্ছে ৷চিঠিতে লেখা ছিল
আমি আমার প্রতিশোধের তিন নম্বর খুনটা সম্পন্ন করেছি ৷আরো চারটা খুন করবো ৷আমি প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুড়ে বেড়াবো ৷কিন্তু ধরতে আমায় পারবেন না ৷তাই আমাকে না খুজে আমার পরবর্তী শিকারদের বাচাঁন ৷
দ্বীপ চৌধুরী পাগলের মতো যা তা বলছে ৷কারন সে জানে না প্রীতিলতা কোথায় আছে ৷তার সব হিসেব গুলিয়ে যাচ্ছে ৷সে নিজের হাতে প্রীতিকে খুন করেছে ৷যেভাবে সে ঐ ছোট মেয়েটাকে মেরে ছিল তাতে তার বাচাঁর কথা না ৷এক আয়ান তার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে ছিল ৷তাকে তো সেই কবেই শেষ করেছে ৷আর এখন এসেছে তার মেয়ে ৷ এভাবে চলতে থাকলে তার মুখোশ সবার সামনে চলে আসবে ৷যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে ৷
অন্যদিকে প্রীতি ঘুমিয়ে আছে ৷তার দরজায় একের পর কড়া নেড়ে যাচ্ছে জবা ৷কাল অনেক রাতে বাড়ীতে এসেছে প্রীতি ৷না চাইতেও ঘুম থেকে সে উঠলো ৷দরজা খুলতেই জবাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো সে ৷তারপর বলল
কি ব্যাপার এত সকাল সকাল ডাকছো যে ৷
কি সব বলছো আপু ৷এগারোটা বাজে ৷
কি এগারোটা বাজে ৷ আমাকে ডাক দাও নি কেন ৷
আপনি অনেক রাত করে ঘুমিয়েছেন তাই ৷নিচে একজন আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে ৷অনেক কিছু নিয়ে এসেছে সাথে করে ৷আপনার সাথে তার নাকি কি কথা আছে ৷
তুমি বসতে বলো ৷ আমি আসছি ৷
প্রায় পনেরো মিনিট পরে প্রীতি নিচে গেল ৷নিচে যেয়ে দেখলো শান্ত বসে আছে ৷শান্ত প্রীতিকে দেখে সালাম দিল ৷
প্রীতি সালামের জবাব নিয়ে বলল আমার বাসায় হঠাৎ আপনার আগমন মিঃ শান্ত ৷
দুইটা কারনে এখানে আসা ম্যাডাম ৷গতকাল রাতে ব্যরিস্টার সোহেল খুন হয়েছে বলে পুলিশ ধারনা করছে ৷আজ সকালে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া গেছে ৷আপনাকে এসিপি স্যার জরুরী ভাবে ডেকেছেন ৷হয়তো এই কেসটা আপনাকে দিতে চাইছেন উনি ৷
কি সব বলছো এমপি সাঈদের ভাই সোহেল মারা গেছে ৷
জ্বী ম্যাডাম ৷আপনি এখনও জানেন না ৷আর খুনী এর আগেও খুন করেছে ৷সামনে আরো চারটা খুন করবে ৷এমনটাই একটা চিরকুটে আমরা পেয়েছি ৷আপনি তাড়াতাড়ি স্যারের সাথে দেখা করুন ৷ এই কেসের সমাধান করতেই হবে ম্যাম ৷উপর মহল থেকে কড়া আদেশ এসেছে ৷
ওকে আমি নিজেই এর সমাধান করে দেব ৷আমি যাবো এসিপি স্যারের কাছে ৷এবার বলো দ্বিতীয় কারনটা কি এখানে আসার প্রীতি মুচকি হেসে বলল ৷
শান্ত কিছুটা নিরব থেকে বলল আমি আপনার বোন জবাকে বিয়ে করতে চাই ৷
জবা একটু দুরেই দাড়িয়ে ছিল ৷শান্তর মুখ থেকে এমন বাক্য শুনতেই সে কেপেঁ উঠলো ৷কি বলছে এই লোকটা ৷জবা শান্তর দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ শান্ত একবার জবার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল ৷
প্রীতি শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল আমার বোন আগে পতিতালয়ে ছিল ৷তার একটা বিয়েও হয়ে ছিল ৷আপনি এগুলো জেনেও বিয়ে করবেন ৷
আমার তাতে কিছু যায় আসে না ম্যাডাম ৷আমি শুধু তাকে নিয়ে একটু ভালো থাকতে চাই ৷ আর কিছু না ৷
আমি কাউকে বিয়ে করবো না ৷হঠাৎ এমন কথায় শান্ত চমকে গেল ৷জবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে কাদঁছে ৷জবা কাদঁতে কাদঁতে বলল
আমি কোনো দিন বিয়ে করবো না ৷দয়া করে আমাকে নিয়ে আর খেলতে আসবেন ৷জবা কাদঁতে কাদঁতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল ৷শান্ত তাকিয়ে আছে জবার যাওয়ার পানে ৷
প্রীতি শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল অনেক দিনের কষ্ট মনের ভেতর ৷পুরুষ মানুষের দ্বারা আঘাত পেয়েছে ৷ঘা শুকাতে একটু সময় নেবে ৷কিন্তু তাই বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না ৷পুরনো ক্ষত আবারো জেগে উঠেছে ৷যাও তার কাছে ৷তোমাকে তার প্রয়োজন ৷
প্রীতির কথা শেষ হতেই শান্ত জবার রুমের দিকে দৌড়ে গেল ৷মেয়েটা বিছানায় পরে কাদঁছে ৷শান্ত তার পাশে যেয়ে বসলো ৷জবার কান্নায় শব্দ হচ্ছে ৷শান্তর হঠাৎ করেই রাগ হলো খুব ৷সে কি এই বোকা মেয়েটাকে মেরেছে নাকি যে কাদঁছে ৷শান্ত জবার হাতটা শক্ত করে ধরলো ৷তারপর হেচকা টান দিয়ে বসালো ৷হঠাৎ টান পড়ায় জবাও অবাক হয়ে গেল ৷শান্ত জবার দুইগালে হাত রেখে বলল
কাদঁছো কেন ৷আমি কি মেরেছি তোমাকে ৷
জবা শান্তর হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
খুব তো ঐ দিন ভালো মানুষী দেখিয়ে ছিলেন ৷সব খুলে যখন দিয়ে ছিলাম তখন তো ফিরেও তাকান নি ৷তা এখন কেন বিয়ে করতে আসছেন ৷নিজের ইচ্ছে মতো ভোগ করতে নাকি ৷তো নিন ভোগ করুন ৷তারপর চলে যান ৷জবা কথাটা বলেই নিজের ওরনা খুলতে গেলে শান্ত তাকে ঠাটিয়ে এক চড় মেরে দিল ৷জবা ছিটকে বিছানায় পরে গেল ৷শান্ত এবার চিৎকার করে বলল
আর একবার যদি উল্টা পাল্টা কথা বলেছো তো জানে মেরে দেব ৷আমি ভোগ করতে এসেছি না ৷কি আছে একটা মেয়ের দেহে যে তাকে ভোগ করা লাগবে ৷আর ভোগ করার যদি ইচ্ছে থাকতো তাহলে ঐ রাতেই সব করতে পারতাম ৷বিয়ে করার কোনো দরকার ছিল না ৷ আর হ্যা বিয়ের পর নিজের টা আমি ঠিকই বুঝে নেব ৷আর কখনো যদি নিজের কাপড় খুলেছো তাহলে একেবারে গলা টিপে মেরে ফেলবো ৷
কেন বিয়ে করবেন আপনি কেন ৷আপনি জানেন না আমি আগে পতিতালয়ে ছিলাম ৷রোজ পাচঁ ছয় জনের সাথে থেকেছি ৷ছয় মাসে কত লোকের সাথে থেকেছি তার হিসেব নেই ৷এই দেহে দেওয়ার মতো আর কিছু নেই ৷সব কুকুর শিয়ালে খেয়ে গেছে ৷এখন আপনার কি চাই হ্যা ৷
শান্ত জবাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল
আমার তোমাকে চাই বুঝেছো ৷আর সেটা নিজের ভালোবাসার মানুষ হিসেবে ৷কাল আমি সব নিয়ে আসবো ৷ কালকেই আমাদের বিয়ে হবে ৷সুন্দর করে সাজবে কাল ৷আর বেশি চালাকি করলে একদম উঠিয়ে নিয়ে যাব ৷
জবা আবারো কেদেঁ দিল ৷তারপর বলল আমি বিয়ে করবো না ৷
শান্ত জবাকে নিজের বুকে চেপেঁ ধরে বলল
আমি বিয়ে করবো ৷তোমার চাওয়ায় আর না চাওয়ায় আমার কি ৷তোমার ভালোবাসা আমার লাগবে না ৷ আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট ৷
প্রীতি দরজার কাছে দাড়িয়ে দুইজনের ঝগড়া দেখছে ৷কেন জানি তার আজ খুব আনন্দ লাগছে ৷দুটো ভালোবাসার মানুষ ভালো থাকুক ৷আর কি চাই এই জিবনে ৷প্রীতি আর দাড়ালো না বেড়িয়ে গেল নিজের কাজে ৷
সোহেলের লাশ পোস্টমর্ডামে নেওয়া হয়েছে ৷ সোহেলের খুনের কেস প্রীতির কাছে এসেছে ৷এই কেসটা সেই সমাধান করবে তার ফোর্স নিয়ে ৷
রাত ঘড়িতে দশটা বাজে প্রীতি বসে আছে একটা চেয়ারে ৷তার সামনেই একটা লোক বসে আছে ৷চেয়ারের সাথে বাধা লোকটা ৷প্রীতির দৃষ্টি ঐ লোকটার দিকে ৷প্রীতি নিজের ফোনটা বের করলো ৷তারপর সোহেলের ফাঁসিতে ঝুলার সময় ছটফট করার ভিডিও চেয়ারে বাধা লোকটাকে দেখাতে লাগলো ৷চেয়ারে বাধা লোকটা উম উম শব্দ করতে লাগলো ৷একটা কথাও সে বলতে পারলো না ৷তার মুখটা একটা শক্ত কাপড় দিয়ে বাধা ৷ লোকটার ভয়ে হাত পা কাপঁছে ৷ তার চোখে পানি চলে এসেছে ৷
হঠাৎ করেই প্রীতি লোকটার দুই গাল শক্ত করে চেপেঁ ধরে বলল
কষ্ট হচ্ছে খুব হ্যা ৷নিজের ভাইয়ের ছটফট করা দেহটা দেখে তোর কষ্ট হচ্ছে ৷ খুব কষ্ট হয় না নিজের ছোট ভাইকে বোনকে মরতে দেখলে ৷জানিস আমারো কষ্ট হয়ে ছিল ৷খুব কষ্ট হয়ে ছিল চৌদ্দ বছর আগে ৷কিন্তু আমি সেই দিন কাউকে আমার পাশে পাই নি ৷কাউকে আমার কষ্টের কথা বলতে পারি নি ৷আমি পারি নি আমার ভাইটাকে বাচাঁতে ৷তুই যেমন আমার ভাইকে কেড়ে নিয়ে ছিলি ৷আমিও তোর ভাইকে কেড়ে নিলাম ৷এবার তো হলো সমানে সমান ৷প্রীতি লোকটাকে ছেড়ে দিল ৷হঠাৎ করেই ওর মধ্যে অস্থিরতা ভর করলো ৷প্রীতি নিজের মাথার চুল খামঁচে ধরলো ৷নিজে নিজে কিছু একটা বিরবির করতে করতে বলল
এই তুই তো আমার মাকে দম বন্ধ করে মেরেছিস তাই না ৷আমার মায়ের শরীরটা তখন কত ছটফট করেছিল তুই দেখেছিস ৷আমার মা কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বিছানার চাদর খামচে ধরে ছিল ৷কিন্তু তোদের মনে একটু দয়া হয় নি ঐ দিন ৷আমিও দয়া করবো না আজ ৷আজকের খবরে তোর ভাইকে দেখাচ্ছে ৷কিন্তু কালকের খবরে থাকবি তুই ৷তোকে আমি মারবো না ৷কিন্তু তোর এমন হাল করবো যে তুই প্রতি মুহূর্তে মরতে চাইবি ৷কিন্তু তুই মরতেও পারবি না ৷প্রীতি বাইরে চলে গেল বিরবির করতে করতে ৷
প্রীতি কিছুক্ষন পরে ফিরে এলো ৷কিন্তু এইবার আর সে একা ফিরে এলো না ৷তার সাথে দুইটা ক্ষুদার্থ কুকুর এসেছে ৷ কুকুর দুটোকে দেখে চেয়ারে বাধা লোকটার ভয়ে আত্মা কাপঁছে ৷প্রীতি মাথাটা কাত করে বলল
কি ভয় লাগছে ৷আমি সব ভয় কাটিয়ে দেব এবার তোর ৷
প্রীতির হাতে একটা ধারালো ছুড়ি ৷ছুড়িটা হাতে নিয়ে প্রীতি বলল
কি এমপি সাইদ ভয় পাচ্ছো বুঝি ৷তোমার ভাইও ভয় পেয়ে মরেছে ৷তোমার ভাইয়ের কেসটা আমিই সামলাবো ৷তোমার সামনেই আমি থাকবো প্রতিদিন ৷ কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারবে না তুমি ৷ কাল সকালে আবার আমাদের দেখা হবে ৷ কিন্তু একটু ভিন্ন ভাবে ৷এখন আমি তোমার সামনে তোমারই যম ৷আর কালকে তোমার ……থাক আর বলবো না ৷তুমি ভয় পাবে ৷আমি তো ভয় দেখাবো না ৷আমি তো কাজ করে দেখাবো তাই না ৷ প্রীতি কথা গুলো বলতে বলতে সাঈদের হাতের কনুইতে কোপ বসিয়ে দিল ৷সাঈদ চিৎকার করতে পারলো না ৷প্রীতি সাইদের কাটা ডান হাতটা নিয়ে বলল
তোর এই কাটা হাতটা এবার এই রাস্তার কুকুর দুটো খাবে ৷প্রীতি হাতটা কয়েক টুকরা করে ছিটিয়ে দিতেই কুকুর দুটো খেতে শুরু করলো ৷প্রীতি সাইদের চুল খামচে ধরে বলল
এই দেখ সেই বাড়ী ,সেই ঘর ,সেই তুই ৷কিন্তু এবার তুই বন্দি আর আমি খুনী ৷তুই যেই বাড়ীতে আমার মা বাবার খুন করেছিস ৷ঠিক সেই বাড়ীতেই আজ তোর গল্পের শেষ হবে ৷আমার অন্ধকার রাজ্যের অন্ধকারে এবার তুইও তলিয়ে যাবি
চলবে।।
প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :৩
পার্ট:৬
সারা দেশের জনগনের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে ৷সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একের পর এক খবর আসছে ৷আজ ভোর সকালে সাবেক এমপি সাঈদের হাত ,পা আর জ্বিহবা কাটা রক্তাক্ত আধমরা দেহ পাওয়া গেছে ৷তার দেহ একটা ব্রিজের পাশে পাওয়া গেছে ৷ পুলিশ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করেও কিছু পায় নি ৷ক্রিমিনাল যে বড্ড চালাক তা পুলিশ অলরেডি বুঝে গেছে ৷ সে একের পর এক অন্যায় করে যাচ্ছে ৷কিন্তু পুলিশ তাকে ধরার কোনো উপায় খুজে পাচ্ছে না ৷সাঈদ হাসপাতালে ভর্তি তার অবস্থা খুবই খারাপ ৷তার কাছ থেকে যে কোনো তথ্য পুলিশ জানবে তার উপায় নেই ৷কারন ক্রিমিনাল তার হাত আর জ্বিহবা কেটে দিয়েছে ৷শুধু তাই নয় পুলিশ সাঈদের পাশে একটা ছোট খাম পেয়েছে ৷যেখানে কিছু ছবি আর মেমোরি কার্ডও পেয়েছে ৷ মেমোরি কার্ডের ভেতর কর্নেল ওসমান ,ডাক্তার শাকিল ,ব্যরিস্টার সোহেল হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটে উঠেছে ৷ছবি গুলোতে তাদের হত্যা করার মুহূর্ত ফুটে উঠেছে ৷হত্যার নিষ্ঠুরতা যে কারো শরীর হিম শীতল করে দিতে পারে ৷বড্ড কষ্ট দিয়ে তাদের মারা হয়েছে ৷কিন্তু তাদের মারা কেন হলো এটা কেউ জানে না ৷ পরবর্তী শিকারকে এই খুনীর তাও কেউ জানে না ৷শুধু সবাই জানে আরো তিনটা খুন করবে এই খুনী ৷
নিজের ঘরে বসে আছে প্রীতিলতা ৷আজ শান্তর জবাকে বিয়ে করার কথা ছিল ৷ কিন্তু আজ বিয়ে হবে না ৷মিডিয়ার চাপে পুরো পুলিশ ফোর্স এখন এক সাথে খুনীকে খুজছে ৷
প্রীতির ফোনে একটা কল আসতেই প্রীতি রিসিভ করে ৷তারপর বলল
কি অফিসার কোনো উপায় পেলেন খুনীকে ধরার ৷
জ্বি না ম্যাম ৷তবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে ৷
যা করার তাড়াতাড়ি করুন ৷আমাদের পরবর্তী খুনটা আটকাতে হবে ৷আর সেটা যেভাবে হোক ৷
ইয়েস ম্যাম ৷
এখন রাখুন ৷আমিও কাজ করছি ৷
প্রীতি ফোনটা রেখে দিল ৷ হাতে থাকা জলন্ত সিগারেটে টান দিতে দিতে প্রীতি হাসতে লাগলো ৷এক পৈশাচিক হাসি সে হাসতে লাগলো ৷তারপর একা একা বলল
খুনীকে জানাচ্ছে তাকেই কিভাবে ধরবে ৷ইস ওরা তো আর জানে না ৷আমাকে ধরার সব রাস্তা আমি বন্ধ করে দিয়েছি ৷সবাই দৌড়াবে আমার মরিচীকার পেছনে আর আমি আমার শিকারদের পেছনে ৷বছরের পর বছর ধরে প্লান করেছি ৷এভাবে ধরা পরার জন্য নাকি ৷তারপর ঘর কাপিঁয়ে আবারো হাসতে লাগলো সে ৷
ছয় দিন পার হয়ে গেছে ৷আজ সাঈদের জ্ঞান ফিরেছে ৷সে এখন না পারছে কথা বলতে আর না পারছে নিজের হাত পা নাড়াতে ৷কারন হাটুর নিচ থেকে তার পা কাটা হয়েছে ৷কনুই থেকে হাত নেই ৷
আজ সাঈদকে দেখতে সিআইডি অফিসার প্রীতিলতা আসছে তার ফোর্স নিয়ে ৷সাঈদ যদি কিছু বুঝাতে পারে খুনীর ব্যাপারে ৷এই আশায় তারা যাচ্ছে ৷
প্রীতি আইসিইউ এর সামনে এসে তার লোকদের বলল
আপনারা এখানেই থাকুন ৷আমি একা গিয়ে তাকে দেখে আসছি ৷এমনিতেই সাবেক এমপি সাহেব অসুস্থ ৷
প্রীতির লোকেরা সহমত পোষন করলো ৷প্রীতি দরজা ঠেলে ভেতরে ডুকলো ৷ভেতরে দুইজন নার্স ছিল ৷প্রীতি ইশারায় তাদের বাইরে যেতে বললো ৷নার্স দুটো চলেও গেল ৷প্রীতি একটা টুলে বসলো ৷অন্যদিকে প্রীতিকে দেখে সাঈদ কাপঁছে ৷প্রীতি বাকাঁ হেসে বলল
ভয় লাগছে খুব ৷আহ এত ভয় পেলে চলে নাকি ৷তুমি জানো এই অবধি আমি চুয়ান্নটা খুন করেছি ৷তাও নিজের হাতে ৷কিন্তু তোমায় কেন যেন খুন করতে ইচ্ছে করলো না ৷তোমায় একেবারে মারার থেকে বারবার মরতে দেখতে ,আমার অনেক ভালো লাগবে ৷আজ থেকে তোমার অধ্যায় এখানেই আমি শেষ করলাম ৷আর হ্যা আমার পরবর্তী শিকার খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে ধরা দিতে যাচ্ছে ৷বাই ডিয়ার ৷
প্রীতি উঠে দাড়ালো ৷তারপর দরজা খুলে বাইরে এলো ৷তারপর মুখে কিছুটা কষ্ট ফুটিয়ে বলল
ওনাকে দেখে বড্ড খারাপ লাগছে ৷উনি কোনো কিছু বলার অবস্থায় নেই ৷তার থেকে বরং চলুন আমরা আমাদের কাজ করি ৷প্রীতি তার ফোর্স নিয়ে চলে গেল ৷
দ্বীপ চৌধুরী কারো সাথে ফোনে কথা বলছে ৷সে বলল
তুমি বুঝতে পারছো না কেন ৷ও আমাদের কাউকে ছাড়বে না ৷আমরা কেউ বাচঁবো না ৷এক এক করে সবাই শেষ হয়ে যাচ্ছে ৷এর পর কার সিরিয়াল আমরা কেউ জানি না ৷সাত জনের মধ্যে চার জনকে ও শেষ করেছে ৷ আমরা আর তিনজন আছি ৷ওপাশ থেকে দ্বীপকে কিছু একটা বলা হলো ৷দ্বীপ ওপাশের কথা শুনে বলল
তোমার প্লান কাজ করবে তো ৷যদি কাজ করে তাহলে এইবার ওকে নিজের হাতে দ্বিতীয়বার মারবো ৷
অন্যদিকে আবেশ তার ছেলে মেয়ের কাছে বসে আছে ৷বাচ্চা দুটোর কাছে এই অবধি অনেক কথা জিজ্ঞাসা করেছে আবেশ ৷কিন্তু বাচ্চা দুটো তেমন কিছু বলতে পারে নি ৷পুলিশ বেশ কয়েকবার এসে ছিল তাদের কাছে ৷পুলিশ সন্দেহ করছে যে আবেশের ছেলে মেয়েকে কিডন্যাপ করেছিল ৷সেই দিহানকে কিডন্যাপ করেছে ৷বাচ্চা দুটো তেমন কিছুই বলতে পারে নি ৷পুলিশের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ৷কারন তারা যেই দিক থেকেই কেস সমাধান করতে যাচ্ছে ৷ঠিক ঐ জায়গা থেকেই আবার গুলিয়ে যাচ্ছে ৷ক্রিমিনাল বড্ড চালাক ৷সে ইচ্ছে করে পুলিশকে গাধার মতো খাটিয়ে চলেছে ৷
রাত ঘড়িতে এগারোটা বাজে ৷খোলা আকাশে একমনে তাকিয়ে আছে প্রীতি ৷শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার ৷নির্ঝরের সাথে রোজ তার কথা হয় ৷নির্ঝর ইচ্ছে করেই তাকে কল করে ৷কিন্তু আজ দুই দিন ধরে নির্ঝর তার সাথে রাগ করেছে ৷প্রীতি ভার্সিটিতে কেন যায় নি ৷তাই সে রাগ করেছে ৷প্রীতি পকেট থেকে ফোন বের করে নির্ঝরকে কল করলো ৷আবারো কেন যেন একটা পিছুটান তৈরি হচ্ছে এই ছেলেটার উপর তার ৷আজ কিছু দিন যাবৎ প্রীতির খুব বাচঁতে ইচ্ছে করে নির্ঝরের সাথে ৷তার ইচ্ছে করে নির্ঝর রাগ করুক তার সাথে ৷অভিমান করুক তার সাথে ৷তাকে দেখতে না পেয়ে দেবদাস হোক ৷তবুও নির্ঝর তার জীবনে ফিরে আসুক ৷সেই পুরনো তুমি হয়ে ফিরে আসুক ৷প্রীতির চিন্তার মাঝেই নির্ঝর ফোন ধরলো ৷তারপর রাগী গলায় বলল
আমাকে যেন কেউ কল না দেয় ৷আমি কারো সাথে কথা বলবো না ৷
প্রীতি হাসলো ৷লোকটা ভাঙ্গবে তাও মচকাবে না ৷ফোন রিসিভও করবে আবার রাগও দেখাবে ৷নির্ঝর ফোনটা কেটে দিতেই প্রীতি আবারো কল করলো ৷নির্ঝর এবার ফোন ধরে বলল
বারবার কেন কল করছো ৷
কাল ভার্সিটিতে আসছি ৷সারপ্রাইজ আছে আমার পক্ষ থেকে ৷ যেটা কখনো আশা করেন নি ৷কাল সেটাই পাবেন যেটার জন্য আপনার অপেক্ষা ৷কাল সকাল নয়টায় ভার্সিটিতে থাকবেন ৷বাই ৷
আজ প্রীতির কাছে কেন যেন আনন্দ লাগছে ৷সে আর নিজেকে লুকিয়ে রাখবে না ৷নির্ঝরের কাছে সে সব শিকার করবে ৷সে নিজেকে শুধরেও নেবে ৷নির্ঝরকে নিয়ে একটা স্বাভাবিক জীবন পার করবে সে ৷
সকাল থেকেই নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে গেল প্রীতি ৷তার সুন্দর চেহারাটা কালো মেকাপের আড়ালে ঢাকলেও নির্ঝরের পছন্দ মতো সাদা শাড়ী আর খোপায় ফুল দিতে ভুল করলো না ৷প্রীতি বেড়িয়ে পড়লো তার গন্তব্যে ৷
প্রীতি একটা অটোতে করে ভার্সিটিতে পৌছে গেল ৷তার হাতে একগুচ্ছ কদম ফুল ৷অনেক কষ্ট করে ব্যবস্থা করেছে ফুল গুলো ৷নির্ঝরকে নিজের মনের কথা বলবে ৷তাও আবার তার পছন্দের ফুল ছাড়া তা কি করে হয় ৷
গেটের ভেতর পা রাখতেই প্রীতির শরীর কাপঁতে লাগলো ৷নির্ঝর তার পরিচয় জানার পর কেমন করবে ৷ নির্ঝর কি তাকে জরিয়ে ধরে কাদঁবে ৷নাকি অনেক রাগ করবে ৷নানা চিন্তায় ওর শরীর কাপঁছে ৷
কিছুটা দূরে যেতেই প্রীতি ছেলে মেয়েদের সিটি বাজানোর আওয়াজ শুনতে পেল ৷প্রীতি কৌতুহল নিয়ে ঐদিকে গেল ৷আর যেয়ে যা দেখলো তাতে তার বুক কেপেঁ উঠলো ৷প্রীতি তাকিয়ে দেখলো নির্ঝরের সামনে একটা মেয়ে বসে আছে ৷সে সবার সামনে নির্ঝরকে প্রপোজ করছে ৷আর নির্ঝর তার প্রপোজ গ্রহন করছে ৷সবাই সিটি বাজাচ্ছে আর তালি দিয়ে যাচ্ছে ৷আর প্রীতি একটা মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে ৷
হঠাৎ করেই প্রীতিকে দেখে মিলা দৌড়ে এসে বলল
প্রীতি জানো সাবরিনা সেই কবে থেকে ভাইয়াকে ভালোবাসে ৷ভাইয়া ওকে মেনেই নেয় নি অবশেষে আজ মেয়েটাকে মেনে নিল ৷ কাল সারা রাত ভাইয়াকে বুঝিয়েছি আমি ৷ যেন সাবরিনাকে মেনে নেয় ৷ প্রীতির কানে কোনো কথা যাচ্ছে না ৷প্রীতি ধীর পায়ে নির্ঝরের দিকে এগিয়ে গেল ৷ নির্ঝরকে প্রপোজ করা সাবরিনার দিকে প্রীতি তার হাতে থাকা কদমগুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে বলল
উনি কদম বেশি পছন্দ করে ৷যাকে ভালোবাসো তা প্রিয় জিনিসের কদর করতে শেখ ৷গোলাপ দিয়েই ভালোবাসার প্রকাশ করতে হবে এমন কারন নেই ৷তোমার উনি কদম ভালোবাসে ৷তাই তোমার ভালোবাসা তার ভালোবাসার মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখো ৷ প্রীতি আর কথা বাড়ালো না ৷সে পেছনে ফিরে হাটা শুরু করলো আবারো ৷এখানে আর সে থাকতে পারবে না ৷তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে ৷পেছন থেকে নির্ঝর ডাক দিতে লাগলো বারবার ৷ কিন্তু প্রীতি আর দাড়ালো না ৷ সে চলেই গেল ৷
রাত ঘড়িতে বারোটা ৷প্রীতি নিজের বারান্দায় পরে আছে ৷তার চোখ থেকে পানি পড়ছে ৷শরীরে থাকা শাড়ীটার বেহাল দশা ৷হাতে থাকা সিগারেটে টান দিতে দিতে প্রীতি চিৎকার করে বলল
তোমরা সবাই স্বার্থপর ৷তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাস নি ৷মানুষ নাকি বদলায় ৷তাই সবাই বদলে গেল ৷আমি তো বদলাতে পারলাম না ৷ আমি তো হাজার চেয়েও বদলাতে পারলাম না ৷বেচেঁ থাকার একটা পিছুটান চেয়ে ছিলাম ৷কিন্তু তাও আমার সঙ্গী হলো না ৷ আমার অপরাধটা কোথায় ৷আমার কি একটু ভালোবাসার অধিকার নেই ৷আমার কি বেচেঁ থাকার অধিকার নেই ৷তোমরা সবাই স্বার্থপর ৷ জীবনের পেছনে ছুটতে ছুটতে আজ আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি ৷আর পারছি না আমি ৷কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো প্রীতি বারান্দার ফ্লোরে ৷
.চলবে