প্রীতিলতা আসবে বলে ( সিজন ৩ পর্ব ২)

0
641

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :৩
পার্ট :২

প্রীতি কান্নারত মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

আর একবারও কাদঁবে না ৷আগে আমাকে বলো এখানে কিভাবে এসেছো ৷

মেয়েটা কাদঁতে কাদঁতে বলল আমরা কোচিং থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম ৷হঠাৎ করেই তিনটা গাড়ি আমাদের সামনে আসে ৷আমরা কিছু বলার আগেই ওরা আমাদের মুখে কিছু একটা স্প্রে করে ৷তারপর আর কিছু মনে নেই ৷আমদের জ্ঞান ফেরার পর দেখি একটা ঘরে বন্দি ৷ বাসায় যাওয়ার জন্য কান্না করলে ওরা অনেক মারে আমাদের ৷

অপর দিকে শান্তর সামনে বসে থাকা অর্ধনগ্ন মেয়েটা বলল

আমার মা নেই ৷মা মারা যাওয়ার পর বাবা আবার বিয়ে করেন ৷সৎ মা উঠতে বসতে আমায় মারতো ৷অত্যাচারের শেষ ছিল না ৷তাই বেশি দিন বাবার বাড়ীতে আর থাকা হয় নি ৷শহরের একজন ব্যাংকারের সাথে বাবা বিয়ে দেন আমার ৷কিন্তু সে মানুষ হিসেবে একটা জানোয়ার ছিল ৷উঠতে বসতে আমায় মারতো ৷আমার একটাই অপরাধ বাবা কেন অঢেল যৌতুক দেয় নি আমায় ৷আমার জীবনটা নরক করে দিয়ে ছিল ৷তারপর একদিন আমায় বললো আমাকে নাকি বাবার বাড়ী দিয়ে আসবে ৷অনেক কেদেঁ ছিলাম সেই দিন ৷কিন্তু সে শোনে নি ৷অতঃপর বাবার বাড়ীতে নেওয়ার নাম করে আমাকে এখানে নিয়ে আসে ৷সে আগে থেকেই সর্দারনীর সাতে কথা বলে রেখেছিল ৷পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে এখানে রেখে যায় আমায় ৷নিজের ইজ্জত বাচাঁতে সর্দারনীর পা ধরে কেদেঁছি ৷কিন্তু লাভ হয় নি ৷প্রথম যেই দিন নিজের সম্মান বিসর্জন দেই ৷ঐ দিন চিৎকার করে কেদেঁ ছিলাম ৷তারপর অভ্যাস হয়ে গেছে ৷ছয় মাস পার হয়ে গেছে এখানে আছি ৷কত লোকের সাথে শুয়েছি তার হিসেব নেই ৷

শান্ত তার সামনে থাকা মেয়েটার কথা শুনছিল ৷সে যেন নিজের মাঝে নেই ৷এতদিন বেশ্যা নামটা শুনলেও সে থুথু ফেলতো ৷এক প্রকার প্রীতির জন্যই এই নিষিদ্ধ পল্লীতে সে এসেছে ৷নইলে এখানে নিজের পা রাখতো না ৷তার মতে পতিতারা ছিল দুনিয়ার সব থেকে আত্মসম্মানহীন মানুষ ৷কোথাও যেন আজ সে এই অর্ধনগ্ন মেয়েটার কষ্ট অনুভব করতে পারছে ৷ তার বুকের বা পাশটায় এই মেয়েটার জন্য কষ্ট অনুভব হচ্ছে ৷ হঠাৎ করেই শান্তর মোবাইলটা বেজে উঠলো ৷শান্ত মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রীতি কল করেছে ৷সে সাথে সাথে রিসিভ করলো ৷শান্ত রিসিভ করতেই প্রীতি বলল

শান্ত আর একটু পরেই আমাদের ফোর্স হামলা করবে ৷নিজেকে প্রস্তুত করুন ৷আমাদের ফোর্স হামলা করতে রেডি ৷

পুলিশ আর পতিতা পল্লীর সন্ত্রাস বাহিনীদের সাথে লড়াই চলেছে একঘন্টা ৷অর্ধেক সন্ত্রাস পুলিশের গুলিতে মারা গেছে ৷বাকি অর্ধেক এরেস্ট হয়েছে ৷মূলত হঠাৎ আক্রমনে পতিতা পল্লীর লোকেরা কিছু করতে পারে নি ৷আর তারা কিছু করার আগেই পুলিশ তাদের ঘায়েল করেছে ৷প্রীতি আদেশ দিয়েছে সব মেয়েদের তাদের বাড়ীতে দিয়ে আসতে যাদের জোড় করে ধরে আনা হয়ে ছিল ৷প্রীতির কাছে একজন অফিসার এসে বলল
ম্যাডাম বিশটা মেয়ে তাদের পরিবারের কাছে যেতে চায় না ৷তাদেরকে নাকি পরিবারের লোকেরাই বিক্রি করে দিয়েছে ৷এখন এদের কি ব্যবস্থা নেব ৷

প্রীতি কিছুক্ষন নিরব থেকে বলল ওদের আমার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিন ৷আমি ওদের জন্য যা করার করবো ৷গাড়ী করে পাঠিয়ে দিন ৷অন্ধকার রাতে পতিতা পল্লী থেকে মুক্ত হয়ে মেয়ে গুলো প্রীতির বাড়ীতে আশ্রয় পেল ৷যাদের নেই বাড়ী ,যাদের নেই প্রিয়জন ৷

দুই দিন পার হয়ে গেছে ৷প্রীতির বাড়ীটা এখন আর নিরব নেই ৷তার বাড়ীটা এখন হাসি আনন্দে নেচে বেড়াচ্ছে ৷পতিতা পল্লী থেকে বিশটা মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে প্রীতি ৷প্রথম দিন তো মেয়ে গুলো কথাই বলে নি প্রীতির সাথে ৷কারন প্রীতি যে একজন সিআইডি তা তারা ভালো করেই জানে ৷তার মধ্যে এই বাড়ীতে আসার আগে ড্রাইভার যা বলেছে তাতেই ওদের প্রান শুকিয়ে গেছে ৷ড্রাইভার তাদের বেশি কথা বলতে নিষেধ করেছে প্রীতির সাথে ৷সে অনেক রাগী একজন অফিসার তাও বলেছে ৷আর যা যা বলেছে তাতেই প্রান যায় অবস্থা ৷কিন্তু প্রীতির বাড়ীতে আসার পরের দিন তাদের সব ধারনা বদলে গেল ৷কারন সকাল হতেই প্রীতি সবার জন্য নিজের হাতে নাস্তা তৈরি করে ৷যেটা দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়ে ছিল ৷তারপর প্রীতি তার বাড়ীর সব দায়িত্ব তাদের দিয়ে দেয় ৷শুধু তার ঘরে ঢোকার অনুমতি ছাড়া ৷সবার সাথে এমন ভাবে কথা বলেছিল ৷যেন সে সবার মায়ের পেটের বোন ৷তারা যে বছরের পর বছর পতিতা পল্লীতে ছিল ৷তা যেন প্রীতিই জানেই না ৷বিশটা মেয়ে তাকে ধরে কেদেঁ দিয়ে ছিল ৷যখন প্রীতি তাদের বোন বলে ডেকে ছিল ৷

প্রীতি এখন পতিতা পল্লীর সর্দারনী আমেনা বেগমের সামনে বসে আছে ৷ সে এখন কারাগাড়ে বন্দি ৷

প্রীতি তার দিকে ঝুকে বলল খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না ৷আমি চাইলে তোকে এখান থেকে বের করে দিতে পারি ৷

সর্দারনী উৎফুল্ল কন্ঠে বলল তাহলে তাড়াতাড়ি কর না ৷আমাকে এখানে বন্দি করে কেন রেখেছিস ৷যাওয়ার ব্যবস্থা কর ৷

ছেড়ে দেব তোকে ৷আর এর জন্যই তো এখনো তোকে একটু টাচও করি নি ৷তোকে একেবারে ছেড়ে দেব ৷কিন্তু তার জন্য আমার একটা কাজ করে দিতে হবে তোর আজকে ৷

কি কাজ বল ৷

প্রীতি বাকাঁ হেসে একটা ফোন বের করলো ৷তারপর আমেনাকে তার কাজ করতে বললো ৷কাজ শেষ হতেই প্রীতি দাড়িয়ে গেল ৷তারপর বলল কাল রাতে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেব চিরতরে ৷ আর কেউ আটকে রাখতে পারবে না তোকে ৷এখন আসছি আমি ৷আর আমাদের মধ্যে যা কথা হয়েছে তা কেউ যদি জানে ৷তাহলে একদম ফাসিঁ ৷তাই সাবধান ৷

প্রীতি নিজের বাড়ীর দিকে রওনা দিল ৷ আজ আরো অনেক কাজ বাকি আছে তার ৷আজ রাতের মধ্যেই তা করতে হবে ৷

প্রীতির বাড়ী ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেছে ৷কিন্তু বাড়ীতে ঢুকেই সে অবাক হয়ে গেল ৷তার বাড়ীতে এলাহী কান্ড করে বসে আছে সবাই ৷প্রীতি ভেবে ছিল মেয়ে গুলো হয়তো খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে ৷কিন্তু তারা খাবার সামনে নিয়ে তার জন্য বসে আছে ৷হঠাৎ করেই চোখের কোনায় জলরাশি জমা হলো প্রীতির ৷আজ চৌদ্দ বছর কেউ তার জন্য অপেক্ষা করে নি ৷কিন্তু এই পাগল মেয়ে গুলোর কান্ড দেখে প্রীতি কাদঁতে যেয়েও হেসে ফেললো ৷রাত বাজে ঘড়িতে এগারোটা ৷প্রীতি ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে খেতে বসলো ৷হাসি , ঠাট্টা আর কথার মাঝে একঘন্টা লেগে গেল তাদের খেতে ৷তারপর সবাই মিলে টেবিল গুছিয়ে ঘরে চলে গেল ঘুমাতে ৷

রাত বাজে দুইটা ৷সবাই ঘুমালেও প্রীতি ঘুমায় নি ৷প্রীতি নিজের কাজে ব্যস্ত ৷রাতটাই তার অন্ধকার জগতের সঙ্গী ৷যার আগমনে সে অন্ধকার জগতের সব কাজ করে ৷নিজের কম্পিউটারে অতি দক্ষতার সাথে প্রীতি কোনো কাজ করছে আর মিটিমিটি হাসছে ৷

রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার কাজ শেষ হয়ে গেল ৷ আজ পনেরো দিন পর সে সফল হয়েছে ৷প্রীতি সিটি বাজাতে বাজাতে কম্পিউটার অফ করলো ৷তারপর শুয়ে পড়লো বিছানায় ৷আজকে তার বেশ ভালো ঘুম হবে ৷

সকাল এগারোটার দিকে প্রীতির ঘুম ভাঙ্গলো ৷ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতেই দেখলো নাস্তা রেডি ৷কিন্তু কেউ খায় নি তাকে ছাড়া ৷প্রীতি এবার বেশ কড়া গলায় সবাইকে শাসিয়ে বলল

আমার জন্য এখন থেকে আর অপেক্ষা করবেন না দয়া করে ৷আমি আগেও বলেছি এটা আপনাদের বাড়ী ৷আর এখনো বলছি এটা আপনাদের বাড়ী ৷দয়া করে এরপর থেকে নিজেদের আর কষ্ট দেবেন না ৷যদি আরেক দিন দেখি আপনারা এমন ছেলে মানুষ করেছেন ৷তাহলে আমি আর বাড়ীতে আসবো না ৷প্রীতি কথাগুলো বলতে বলতে টিভি অন করলো ৷ টিভি অন করতেই প্রীতি দেখলো খবর চলছে ৷খবরের শিরোনাম দেখে প্রীতি হাসলো ৷এমপি সাইদ হাসান রনির ব্যাংক থেকে একশ কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেছে ৷মেয়েদের সাথে থাকা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে ৷একজন ষাট ছুইছুই মানুষের এমন ভিডিও তে দেশে চাঞ্চল্যকর অবস্থা তৈরি হয়েছে ৷যেখানে মেয়েগুলোর মুখ দেখা না গেলেও ৷তার মুখটা দেখা
যাচ্ছে ৷তার মধ্যে এমপির একশ কোটি টাকা কিভাবে ব্যাংক একাউন্ট থেকে হ্যাকিং হলো তা রহস্য ৷

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here