প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন:৩
পার্ট :১৩
আশরাফ খান ক্লাবের মেয়েটাকে নিয়ে নিজের নামে বুক করা হোটেলের রুমে চলে এসেছে ৷মেয়েটা ক্লাবে থাকতে চায় নি ৷তাই হোটেলেই নিয়ে এসেছে ৷মেয়েটার চেহারা এখনো সম্পূর্ন দেখা হয় নি ৷মাস্ক আর সানগ্লাসের জন্য দেখতে পায় নি ৷কিন্তু মেয়েটা অত্যাধিক সুন্দর এতে সন্দেহ নেই ৷আশরাফ খানের মাথাটা একটু ব্যাথা করছে তাই তিনি একটু ফ্রেশ হতে গেলেন ৷ সাথে আসা মেয়েটার নাকি ঘুম আসছে ৷তাই যাওয়ার আগে নিজের এবং তার জন্য দুই কাপ চা অর্ডার করে গেলেন ৷আর যাই হোক আজ রাতের শয্যা সঙ্গী তার ৷একটু যত্ন তো করতেই হবে ৷তার মধ্যে মেয়েটাকে নিয়ে আসতে কোনো বেগ পেতে হয় নি ৷অফার করতেই রাজী হয়ে গেছে ৷মেয়েটা যে রাজী হবে তা আশরাফ নিজেও বুঝতে পারে নি ৷
কিছুক্ষন পরে আশরাফ ফ্রেশ হয়ে এলো ৷ মেয়েটা ঘরে নেই ৷বারান্দায় উকি দিয়ে দেখলো মেয়েটা দাড়িয়ে আছে অন্য দিকে মুখ করে ৷আশরাফ বিছানার কাছে থাকা টেবিলের উপর থেকে নিজের চায়ের কাপ তুলে নিল ৷তার পর নিজেও বারান্দার দিকে চলে গেল ৷চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মেয়েটার রেশমি চুলে হাত চালালো আশরাফ ৷বড্ড সুন্দর সেই চুল ৷চায়ের কাপে আবার চুমুক দিয়ে আশরাফ বলল
আজকাল তোমার মতো এত সুন্দর মেয়ে খুজে পাওয়া যায় না ৷
তাই বুঝি ৷
হুমম ৷
একটা কথা বলবো ৷
একটা নয় হাজারটা বলো ৷
যে মেয়ে যত সুন্দর ৷সেই মেয়ে তত ভয়ংকর এটা জানেন ৷
তাদের ভয়ংকর রূপে আমি ভয় পাই না ৷তাদের রূপ হজম করার শক্তি আমার আছে ৷
তাই বুঝি ৷পারলে আমার রূপ হজম করে দেখাও ৷
মেয়েটা ঘুড়ে দাড়াতেই আশরাফ চমকে উঠলো ৷আরে এটা তো সিআইডি অফিসার প্রীতিলতা ৷ এই অফিসারই তো আয়ানের মেয়েকে খুজছে ৷আশরাফের মাথায় কাজ করছে না ৷
কি খুব চিন্তা হচ্ছে ৷এটাই তো ভাবছো আমি তোমার সাথে কেন ৷জানতে চাও এখানে কেন এসেছি আমি ৷
আশরাফ মাথা নেড়ে সায় জানালো ৷যার মানে সে জানতে চায় ৷
প্রীতি ঘাড়টা হালকা কাত করে বলল তোমায় খুন করতে এসেছি আমি ৷আফটার অল তুমি আমার পরিবারের খুনী বলে কথা ৷
মানে কি সব বলছিস ৷তুই তাহলে আয়ানের মেয়ে ৷তোকে তো আমি এখনই মেরে ফেলবো ৷কথাটা বলেই আশরাফ প্রীতির দিকে তেড়ে এলো ৷কিন্তু বেশি দূর আসার আগেই আশরাফের হাত থেকে চায়ের কাপটা পরে গেল ৷ হঠাৎ করেই সে বমি করে দিল ৷প্রীতি পাশে থাকা দোলনায় বসে পড়লো ৷পায়ের উপর পা তুলে সে চা খাচ্ছে আর সময়টা উপভোগ করছে ৷ওপর দিকে আশরাফ নিজের গলা চেপে ধরেছে ৷তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ৷শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে ৷মাথা ঘুড়ছে ৷
প্রীতি নিজের চা শেষ করে আশরাফের কাছে বসলো ৷তারপর বলল
কি খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না ৷কষ্টই তো দিতে চেয়েছি ৷এতক্ষন চায়ের সাথে কি খেয়েছিস জানিস ৷বিষাক্ত অ্যান্টিমনি খেয়েছিস ৷চায়ের সাথে শত্রুকে খাওয়াতে বেশ জনপ্রিয় ৷আর যাই হোক নিজের কাজের কোনো প্রমান প্রীতিলতা রাখে না ৷আর একটু সময় অপেক্ষা কর ৷ তারপর তোর হৃদপিন্ডটা একদম বন্ধ হয়ে যাবে ৷এই জীবনে আর সুন্দর নারী হজম করতে পারবি না ৷তুই ওয়াসরুম থেকে আসার আগেই তোর চায়ে অ্যান্টিমনি মিশিয়ে দিয়েছি ৷ওপারে ভালো থাকিস ৷তোর যাত্রা শুভ হোক ৷কিন্তু তোর ব্যাড লাক ৷প্রীতিলতা নামক এক বিষাক্ত ফুলের আঘাতে তুই মরলি ৷তোর বাকী সদস্যরাও খুব তাড়াতাড়ি আসছে ৷
আশরাফের চোখ স্থির হয়ে গেছে ৷পাথরের মতো পরে আছে ফ্লোরে ৷প্রীতিলতা ওকে দেখে হাসলো ৷তারপর নিজের মুখ ঢেকে বেড়িয়ে গেল হোটেল থেকে ৷
আজকেও হোটেলের মধ্যে রহস্যময় খুন হয়েছে ৷কে খুন করেছে তার হদিস নেই ৷কোনো আঘাত ছাড়াই খুনটা করা হয়েছে ৷লাশ পোস্টমর্ডামে পাঠানো হয়েছে ৷সামাজিক মাধ্যমে মানুষের নানা রকম প্রতিক্রিয়া ৷সবাই এই জঘন্য খুনীর শাস্তি চাইছে ৷যেখানে দেশের এমন বড় বড় মানুষের জীবনের গ্যারান্টি নেই ৷সেখানে তারা তো পিপড়াও না ৷সবার একটাই দাবী খুনীর ফাসিঁ চাই ৷পুলিশ সিসি টিভি ফুটেজ চেক করলো স্পষ্ট সেখানে আশরাফের সাথে একজন মেয়ে ভেতরে গেছে ৷কিন্তু মেয়েটার চেহারা ঢাকা ৷আর মেয়েটা প্রায় একঘন্টা পর বেড়িয়ে গেছে ৷ কিন্তু একা রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে সে ৷তার মানে খুনী এই মেয়ে ৷পুলিশ আশরাফের পাশে পরে থাকা ভাঙ্গা কাপ ল্যাবে পাঠিয়েছে ৷ পাশের টেবিলে আরো একটা কাপ আছে ৷তবে সেটা একদম ক্লিন করা ৷খুনী অনেক চালাক ৷ এত সহজে তাকে ধরা যাবে না ৷
দুপুর ঘড়িতে তিনটে বাজে ৷প্রীতিলতা ক্লান্ত শরীরে নিজের বাড়ীতে ঢুকলো ৷ বাড়ীতে ঢুকতেই কেউ একজন তাকে জরিয়ে ধরলো ৷ প্রীতি প্রথমে চমকে গেলেও পরে নিজেকে সামলে নিল ৷জরিয়ে ধরা মানুষটার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
কি ব্যাপার ৷হঠাৎ গরিবের বাড়ীতে হাতির পারা কেন ৷
জরিয়ে ধরা মেয়েটা আর কেউ নয় জবা ৷প্রীতিকে ছেড়ে জবা বলল
আমি আর ঐ লোকটার কাছে যাব না আপু ৷আমার একদম ভালো লাগে না ঐখানে ৷
প্রীতি কিছু বলল না ৷জবার হাত ধরে উপরে নিয়ে গেল ৷নিজের রুমে জবাকে বসালো ৷জবা ঘরটা দেখছে ৷ঘরটা বেশ গোছালো ৷তবে ঘরটা থেকে সিগারেটের একটা বাজে গন্ধ আসছে ৷রুমের এক পাশেই তিন চারটে প্যাকেট পরে আছে ৷ প্রীতি জবার দৃষ্টি অনুসরন করে হাসলো ৷তারপর বলল
ঐ টা কিছুই না ৷আমার ব্লাড টেস্ট করলে অনেক মাদকের সন্ধান পাওয়া যাবে ৷তাই সিগারেটের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও ৷যতটা ভালো আমায় ভাবো ৷আমি ততটা ভালো নই ৷এবার বলো চলে কেন এসেছো ৷
জবা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল তার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না ৷শান্ত ছেলে হিসেবে ভালো ৷কিন্তু আমি বউ হিসেবে ভালো নই ৷তাই থাকবো না ৷ আর তার দিকে তাকালে লজ্জায় পরে যাই ৷সে কোথায় আর আমি কোথায় ৷কোথায় আকাশের চাদঁ ৷আর কোথায় আমি বামন ৷
ওকে ৷আমাকে কিছু প্রশ্নের জবাব দাও ৷শান্ত কি তোমাকে শারীরিক সম্পর্কে যেতে জোড় করেছে ৷কিংবা কোনো ব্যাপারে অত্যাচার করেছে ৷নাকি মেরেছে ৷
সে আমায় অত্যাচার তো দূরে থাকুক ৷আমার সব জিনিসে খেয়াল রাখেন ৷ উনি আমার যতটা খেয়াল রাখেন ৷ততটা খেয়াল আমি নিজেও নিজের রাখতে পারি না ৷আর আমাদের মাঝে কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয় নি ৷ উনি বলেছেন যেই দিন আমি চাইবো ঐ দিন ৷
প্রীতিলতা হাসেঁ তারপর বলে
জানো জবা ভালোবাসা কি ৷
ভালোবাসা হলো ভালোবাসার মানুষকে গোপনে আগলে রাখা ৷ছেলেরা যখন কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে তখন কি বলে জানো ৷
জবা মাথা নেড়ে না বোঝায় ৷
ছেলেরা বলে আমি তোমার শরীরকে নয় ৷আমি তোমার মনকে ভালোবাসি ৷কিন্তু সত্যি কি শরীর ছাড়া ভালোবাসা যায় ৷শরীর ছাড়া কখনো ভালোবাসা যায় না ৷ভালোবাসার মানুষের একটা দৃশ্যমান শরীর দরকার হয় ৷যেটার দিকে ইশারা করে বারবার বলা যায় ৷ এটা আমার ভালোবাসার মানুষ ৷ভালোবাসতে গেলে শরীরটা ছুতে হয় না কে বলল ৷শরীর ছুতে হয় ৷যখন ভালোবাসার মানুষটা প্রচন্ড অসুখে জর্জরিত ৷সেই সময় তার মাথায় ভরসার হাতটা রেখে ছুতে হয় ৷কে বলে ভালোবাসতে গেলে সুন্দর মন লাগে ৷তবে কি হিংস্রদের ভালোবাসতে নেই ৷ভালোবাসা কোমল ৷তবে যে যত্নে রাখতে জানে ভালোবাসা শুধুই তার জন্য ৷
প্রীতিলতা থেমে আবারো বলল
যেই মানুষটা তোমার অতীত জেনেও তোমায় ভালোবাসতে জানে সে তোমায় আর যাই হোক ঠকাবে না ৷
যেই মানুষটা হাজারো কাপুরুষের ভিড়ে তোমার হাতটা শক্ত করে ধরে ৷সে আর যাই হোক তোমায় ছেড়ে যাবে না ৷
যেই মানুষটা সর্বোচ্চ অধিকার পাওয়ার পরেও তোমায় ছুয়ে দেখে না ৷ সে আর যাই হোক যৌন পিপাসু নয় ৷
যে মানুষটা দিন শেষে নিজের খাচাঁয় তোমায় বন্দি রাখে ৷আর যাই হোক তাকে ছেড়ে যেও না ৷
চলবে
প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন :৩
পার্ট :১৪
জবা ফিরে গেছে নিজের বাড়ীতে ৷বেচারী বেশ ভয়ে ভয়ে গেছে ৷আজ কপালে শনি আছে তার ৷শান্ত হাজার রাগ করলেও জবাকে চুপ থাকতে বলেছে প্রীতি ৷কেননা জবা ভুল করেছে ৷শান্ত হয়তো একটু বকা দিবে ৷কিন্তু গায়ে হাত তুলবে না ৷ এটা নিশ্চিত প্রীতি ৷
জবা ধীর পায়ে ফ্লাটে ঢুকলো ৷দরজা খোলা ছিল ৷বাসার পরিবেশ একদম চুপচাপ ৷জবা ঘরের ভেতর প্রবেশ করতেই শান্তকে দেখতে পেল ৷ শান্ত মাথা নিচু করে বসে আছে ৷ জবাকে দেখে একটা কথাও বলল না সে ৷চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে গেল ৷ জবা কেন যেন চেয়েও আটকাতে পারলো না ৷খুব ইচ্ছে করলো মানুষটাকে জরিয়ে ধরতে ৷কিন্তু কোথাও একটা তীব্র বাধা অনুভব করলো সে ৷
চারিদিকে গোধুলী বেলার ছোয়া ৷সময়টা বেশ সুন্দর ৷প্রীতিলতা বসে আছে একটা কদম গাছের নিচে ৷ নির্ঝরকে আসতে বলেছে প্রীতি ৷ ফোন করতেই মানুষটা রিসিভ করে ৷এক সাথে এত এত প্রশ্ন করে নির্ঝর ৷প্রীতি সেই সব প্রশ্নের জবাব দেয় না ৷ নির্ঝরকে দেখা করতে বলে ৷আর নির্ঝরও রাজী হয়ে যায় ৷
পাশে থাকা কদম গাছটাতে অনেক ফুল ফুটেছে ৷কদমের মাতাল করা ঘ্রানে প্রীতির চোখ বুঝে আসে ৷নিজের পাশে হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঐ দিকে ফিরলো প্রীতি ৷এই তো পাশেই দাড়িয়ে আছে নির্ঝর ৷প্রীতি নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেঁ ৷নির্ঝরের চোখে একরাশ অভিমান ৷নির্ঝর মাথা নিচু করে নিজের আবেগ আটকে রাখার চেষ্টা করছে ৷সে চায় না প্রীতিলতা নামক এই অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটার প্রেমে জড়াতে ৷কেননা প্রেমে জাড়ালেই তো মরন ৷প্রীতি নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল
আজ এত চুপ যে ৷কিছু বলবেন না ৷
নির্ঝর মাথা নিচু করেই না বোঝালো ৷
প্রীতি নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল
আমরা আর কখনো এতটা কাছাকাছি আসবো না সূর্যসেন ৷আজকের পর আমাদের আর দেখা হবে না এই ভাবে ৷তাই আপনার জীবনে আসা এই দ্বিতীয় প্রীতিলতাকে দেখে নিন ৷
নির্ঝর প্রীতির দিকে তবুও তাকালো না ৷প্রীতি নির্ঝরের হাতে একটা কাগজে মোড়ানো প্যাকেট দিল ৷তারপর বলল
যদি কখনো আমাকে দেখার জন্য আপনার চোখে পানি আসে ৷যদি কখনো প্রীতিলতা নামক মানুষটাকে অনেক বেশি অভিশাপ দিতে ইচ্ছে করে ৷যদি কখনো একরাশ অভিমানে আমার জন্য দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসে ৷ঐ দিন এই কাগজটা খুলবেন ৷মনে করবেন এটা আপনাকে দেওয়া আমার শেষ উপহার ৷ এটার মধ্যে আমার অনুভূতি আছে ৷আমার আকাশ সমান ভালোবাসা আছে ৷ তাই আমার জন্য যেই দিন আপনার চোখ থেকে অভিমানী বৃষ্টি ঝড়ে পড়বে ৷ ঐ দিন এটা খুলবেন খুলবেন ৷
নির্ঝর তবুও চুপ ৷প্রীতির কেন যেন মনে হচ্ছে ছেলেটা নিজের চোখের পানি লুকাতে মাথা নিচু করে আছে ৷
আমাকে এবার যেতে হবে ৷আপনার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভ কামনা ৷আর এই উপহার দেওয়ার জন্যই এখানে আসা ৷ আমার বন্ধু হয়ে জীবনে আসার জন্য ধন্যবাদ ৷
প্রীতিলতা ঘুড়ে যেতে নিলেই নিজের হাতে টান অনুভব করলো ৷কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে নির্ঝর নামক ছেলেটা প্রীতিকে পেছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ৷ছেলেটা কাপঁছে ৷তারমানে কি অহংকারী নির্ঝর শাহরিয়া কাদঁছে এই কুৎসিত কালো প্রীতিলতার জন্য ৷
দয়া করে কোথাও যাবেন না প্রীতিলতা ৷আমি প্রীতিলতা নামক আপনিটাকে হারাতে চাই না ৷আমার অনেক কষ্ট হয় প্রীতিলতা ৷নির্ঝর প্রীতিকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বলল
চলুন প্রীতি বিয়ে করে ফেলি ৷আমরা খুব ভালো থাকবো ৷আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না ৷আমি এই কয়েক দিন নিজের মাঝে ছিলাম না ৷একদম থাকতে পারবো না আপনাকে ছাড়া ৷ আপনি জানেন কোথায় কোথায় খুজেছি আপনাকে আমি ৷আর আজ ফোন করে যখন বললেন আপনি দেখা করতে চান ৷জানেন আমি পাগলের মতো ছুটে এসেছি ৷দেখুন আমি ঠিক মতো জামা পরে আসিনি ৷
আপনি ভুল করছেন নির্ঝর ৷আমাদের রাস্তা আলাদা ৷আপনি কখনো আমার সাথে সুখী হবে না ৷আপনি সাবরিনার সাথে খুব ভালো থাকবেন ৷আপনার জীবনে আসা এই প্রীতিলতাকে ভুলে যান ৷আর হ্যা আপনি নিজের অজান্তেই একদিন আমায় ভুলে যাবেন ৷আমায় খুব ঘৃনা করবেন ৷আমি আপনার ভালোবাসা চাই না ৷কারন আমি সেটার যোগ্য নই ৷তাই চাই আপনি আমাকে ঘৃনা করুন ৷আমি আসি ৷আমাদের জীবনে এটাই শেষ দেখা ৷আর কখনো আমরা এতটা কাছাকাছি আসবো না ৷আমাদের পথ চলা এতটুকুই সূর্য সেন ৷প্রীতি নির্ঝরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল ৷তারপর হাটা শুরু করলো ৷আর নির্ঝর কদম গাছটার তলায় হাটু গেড়ে বসে কাদঁতে লাগলো ৷মাটিতে বারবার আঘাত করে বলতে লাগলো ৷
আমাকে কেন এত কষ্ট দিচ্ছেন ৷আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্রীতিলতা ৷আমি বাচঁতে চাই আপনার সাথে ৷আমি সত্যি বাচঁতে চাই ৷আপনাকে ছাড়া থাকা যে আমার দ্বারা সম্ভব না প্রীতিলতা ৷কেন বুঝলেন না আমাকে ৷কেন প্রীতিলতা ৷
প্রীতিলতা পেছনে ঘুড়ে তাকালো না ৷সে জানে পেছনে একবার ঘুড়লে ,আর ফেরত যেতে পারবে না ৷প্রীতি চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল নির্ঝরে দৃষ্টির অগোচরে ৷
আজ নির্ঝরকে সে ডেকে ছিল ৷তবে তাকে নিজের মনের কথা বলতে নয় ৷ নির্ঝরের জন্য একবুক ভালোবাসা সমান একটা উপহার দিতে ৷ উপহারটা একদিন নির্ঝর তাকে দিয়ে ছিল ৷আর আজ নির্ঝরকে সে ফেরত দিল ৷জীবন থেকে যখন সব হারিয়ে গেছে ৷তখন ঐ টা রেখে আর কি লাভ ৷এই জীবনে নির্ঝরে জীবনে তো আর থাকা হলো না ৷কিন্তু তার সামান্য একটা অংশ না হয় থাক নির্ঝর নামক ঐ অহংকারী মানুষটার কাছে ৷
রাত ঘড়িতে এগারোটা ৷আবেশ পুলিশ স্টেশনে ৷আজ রাত সাড়ে নয়টায় তার চাচা দ্বীপ চৌধুরীকে প্রকাশ্যে কিডন্যাপ করা হয়েছে ৷দ্বীপ চৌধুরীকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিল আবেশ ৷কিন্তু মাঝ রাস্তায় আসতেই দ্বীপ চৌধুরীর শ্বাস কষ্ট শুরু হয় ৷চাচার অবস্থা খারাপ দেখে আবেশ দ্বীপের কাছে যায় ৷চাচা দ্বীপ কোনো মতে আবেশের কাছে পানি চায় ৷ আবেশ বোতলে হাত দিয়ে দেখে পানি নেই ৷ আবেশ গাড়ী থেকে বের হয়ে যায় ৷একটু দূরেই দোকান ৷আবেশ দোকানের কাছে যায় পানি কিনতে ৷কিন্তু এসে দেখে গাড়ী নেই ৷হাজার খুজেও গাড়ী পায় নি আবেশ ৷অবশেষে উপায় না পেয়ে চলে আসে পুলিশের কাছে ৷পুলিশ সব শুনে অবাক হয়ে যায় ৷প্রকাশ্যে এমন কিডন্যাপ করা মুখের কথা নয় ৷হঠাৎ করেই পুলিশের টেলিফোন বেজে ওঠে ৷আর ওপাশ থেকে যা শোনে তাতে তাদের গলা শুকিয়ে আসে ৷ইন্সপেক্টর উঠে দাড়ায় ৷তারপর বলে
আমাদের এক্ষুনি যেতে হবে আবেশ চৌধুরী ৷আপনার চাচার জীবন সংকটে আছে ৷ আমরা এখনই ফোর্স নিয়ে বের হবো ৷আমাদের ফোর্স রেডি আছে ৷
আমি যে কোনো কিছুর মূল্যে আমার চাচাকে জীবিত চাই ইন্সপেক্টর ৷চাচা ছাড়া আমার আর কেউ নেই ৷আপনি তাকে বাচাঁন ৷
আমরা চেষ্টা করবো ৷
অপর দিকে দ্বীপ চৌধুরী একটা অন্ধকার ঘরের ফ্লোরে পরে আছে ৷পাশেই প্রীতিলতা বিরাট বড় রামদা ধার দিচ্ছে ৷দ্বীপ চৌধুরী এই প্রীতিলতাকে চেনে ৷এর কাছেই বাচাঁর জন্য সাহায্য চেয়ে ছিল ৷কিন্তু অফিসারের পোশাক পড়া এই যে আসল খুনী তা বুঝতে পারে নি ৷জীবনের এই সময় আজ অনেক ভয় করছে দ্বীপের ৷ এই একই ভয় একদিন সে দেখে ছিল আয়ান আর চারুর চোখে ৷