প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট : ১০
সিজন : ২
অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকালো দ্বীপ ৷সব কিছুই তার কাছে ঝাপসা লাগছে ৷ তার বাবার ম্যানেজার দাড়িয়ে আছে সামনে ৷দ্বীপকে অনেক কষ্টে দুইজন লোক ফ্রেশ করে দিল ৷তার বাবার ম্যানেজার দ্বীপকে খাইয়ে দিল ৷দ্বীপ ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বলল
আংকেল আব্বুকে আসতে বলুন ৷তার সাথে আমার কথা আছে ৷তাড়াতাড়ি আসতে বলুন ৷
ম্যানেজার নিজের ফোন বের করে দ্বীপের বাবাকে কল করলেন ৷
আয়ান বসে আছে তুরাগ নদীর পাশে ৷ ১৯৮৪ সালের দিকে এই নদীর অনেক বড় ছিল ৷আয়ানের বাসা থেকে নদী বেশ কাছে ৷সে তার অতি কাছের চার বন্ধুর সাথে বসে আছে ৷চার বন্ধুর মধ্যে ওসমান তার অনেক কাছের ৷আয়ান ওসমানকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ৷ ওসমান তার ছোট বেলার বন্ধু ৷ ওসমানও আয়ানকে অনেক ভালোবাসে ৷ ওসমান আর্মিতে জয়েন করবে ৷ আজ পাচঁ বন্ধু সারা দিন এক সাথে কাটাবে ৷কারন আয়ানকে ওর বাবা বিদেশ পাঠাবে লেখাপড়া করতে ৷
অপর দিকে দ্বীপ তার বাবার সামনে বসে আছে মাথা নিচু করে ৷কারো মুখে কথা নেই ৷নিরবতা ভেঙ্গে দ্বীপ বলল
বাবা আমি তোমার সব শর্তে রাজী ৷তুমি এটাই চাইছো যেন আমি তোমার মাদকের ব্যবসায় এখন থেকেই যোগ দেই ৷ঠিক আছে তাই হবে ৷আমি আমার বন্ধুদের মধ্যে মাদক ছড়িয়ে দেব ৷মাদক ছড়াতে যা যা করা লাগে করবো ৷কিন্তু দুইটা শর্তে ৷
কি শর্ত বলো ৷
তুমি মা ,ভাইয়া আর ভাবিমার কোনো ক্ষতি করবে না ৷আর মাদক ছাড়া এখন আমি থাকতেও পারবো না ৷তাই আমাকে মাদক দেবে যখন আমার চাই ৷যদি রাজী থাকো তাহলে আমিও রাজী ৷
দ্বীপের মাথায় ওর বাবা চুমু দিয়ে বললেন ৷এই তো আমার লক্ষী ছেলে ৷শুধু শুধু এতদিন কষ্ট করলি ৷তোর শর্তে আমি রাজী ৷তোর যত ইচ্ছে মাদক নে ৷আমার কোনো সমস্যা নেই ৷ তোর শুধু একটাই কাজ সাবধানে এই মাদক ছড়ানো ৷পারবি না এতটুকু করতে ৷
দ্বীপ মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো ৷এই হ্যা শব্দটাই হয়তো তার জীবনে কাল হয়ে আসবে ৷এই হ্যা শব্দের জন্যই হয়তো একদিন প্রিয়জনদের হারাবে সে ৷ যা এখন কল্পনাও করতে পারছে না সে ৷
দ্বীপের বাবা দ্বীপকে বাড়ী নিয়ে যাবে ৷এখানে আর রাখবে না ৷তাই দ্বীপের সব জিনিস গুছিয়ে নিল ৷
বিকেল চারটা বাজে ৷আয়ান নিজের ঘরে ঘুমিয়ে আছে ৷কিছুক্ষন আগে বাসায় এসেছে ৷ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়েছে ৷ তার শরীর নাকি ব্যাথা করছে ৷চারু আয়ানের পাশে বসে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল
শুনছেন ৷তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন ৷ খেয়ে নিন আপনি ৷নইলে কিন্তু শরীর খারাপ করবে ৷
আয়ান চোখ না খুলেই বলল আজ কাল বউ আমার একটু বেশি খেয়াল রাখছে ৷এত খেয়াল রাখলে বিদেশ তো যেতে পারবো না ৷
ঢং দেখলে মরে যাই বাপু ৷আপনার মতলোব আমি বুঝি না ভেবেছেন ৷বিদেশ যেয়ে ম্যাম পটাবেন ৷এর জন্যই তো এত লাফালাফি করছেন যাওয়ার জন্য ৷
আয়ান হাসলো চারুর কথায় ৷তারপর বলল
বুঝেই যখন গেছো ৷তাহলে আর লুকিয়ে লাভ কি ৷ বিদেশি ম্যাম গুলো না সেই দেখতে ৷একদম রক্ত জবার মতো ৷দেখলেই ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে ৷ওমন একটা সুন্দরী ঘরে থাকলে আর কি লাগে ৷আহ কি শান্তি ৷
চারু ঝাঝাঁলো গলায় বলল খেয়ে নিন তাড়াতাড়ি ৷আর ম্যাম বিয়ে করার কথা ভুলে যান ৷ঐ সাদা ভূত বিয়ে করলে একটা চুলও রাখবো না আপনার মাথার ৷চারু কথা গুলো বলেই চলে যেতে নিল ৷কিন্তু যেতে পারলো না ৷আয়ান চারুর হাত ধরে বলল
রাগ করে না সুন্দরী গো ৷
রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো ৷
চারুর রাগ কিছুটা কমে গেল ৷লোকটা বেশ ভালো মেয়ে পটাতে পারে ৷কিন্তু তার সহজ সরল মুখটা দেখে কেউ বুঝবেই না ৷চারু আর আয়ানের কথার মাঝেই মমতা বেগম এলেন ৷তারপর বললেন
চারু মা দ্বীপ এসেছে ৷তোমার বাবাই দ্বীপকে নিয়ে এসেছে ৷
চারু আয়ানের হাত ছেড়ে দৌড়ে বাইরে গেল ৷দ্বীপকে দেখার জন্য তার মনটা এমনিতেই ব্যাকুল হয়ে আছে ৷তাই আর অপেক্ষা করলো না ৷
চারু সিড়ি বেয়ে নিচে এলো ৷কিন্তু একি তার সামনে এটা কে দাড়িয়ে আছে ৷চারুর চোখে পানি চলে এসেছে ৷এটা সে কাকে দেখছে ৷চারু দ্বীপের পুরো মুখে হাত বুলালো ৷তার চেহারার সেই সহজ সরল ভাবটা হারিয়ে গেছে ৷চোখ ঘোলাটে হয়ে গেছে ৷মাথায় চুল নেই ৷মাথার সব চুল ফেলে দেওয়া হয়েছে ৷একদম শুকিয়ে গেছে ৷কিন্তু শরীরের আঘাত গুলো কাপড়ের নিচে চাপা পড়ে গেল ৷যা চারু কিংবা অন্য কেউ দেখতে পায় নি ৷ চারু দ্বীপকে জরিয়ে ধরে কাদঁতে লাগলো ৷দ্বীপও তার ভাবিমাকে ধরে কাদঁতে লাগলো ৷
তিনমাস পার হয়ে গেছে ৷কাল আয়ানের বিদেশে চলে যাওয়ার তারিখ ৷চারুর মেডিকেল পরীক্ষা শেষ ৷বেশ ভালো পরীক্ষা দিয়েছে সে ৷বোর্ডের রেজাল্টও বেশ ভালো হয়েছে তার ৷কিন্তু আয়ানের ওতটা ভালো হয় নি ৷সব আগের মতই স্বাভাবিক ভাবেই চলছে ৷চারুর দাদুও চারুকে মেনে নিয়েছে ৷যদিও আয়ানই তাদের মিলিয়ে দিয়েছে ৷তিন মাসে বেশ কয়েকবার চারু তার বাবার বাড়ীতে গেছে ৷
চারু বিছানায় শুয়ে ফুপিয়ে কাদঁছে ৷আজ এক সপ্তাহ ধরে সে কেদেঁই চলেছে ৷আয়ান এত এত প্রেমের কথা বলেছে ৷তাও বেচারীর মন গলেনি ৷তার ধারনা আয়ান বিদেশে যেয়ে বদলে যাবে ৷আয়ান ঘরে এসে দেখলো তার বউটা বিছানায় শুয়ে কাদঁছে ৷ আয়ান চারুর পাশে শুয়ে পড়লো ৷তারপর পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো চারুকে ৷চারু কোনো কিছুই বলল না আয়ানকে ৷নিজের মতো কেদেঁই গেল ৷আয়ান চারুকে জরিয়ে ধরে বলল
কি হয়েছে চারু কাদঁছেন কেন ৷আপনি এভাবে কাদঁলে আমার ভালো লাগে না ৷এই ছোট কথাটা আর কত ভাবে বুঝাবো বলুন তো ৷আমি পড়ালেখা শেষ করেই চলে আসবো ৷ আপনিও মন দিয়ে লেখাপড়া করুন ৷আপনাকে সংসারের জালে বেধেঁ রাখতে আমি চাই না চারু ৷আমি চাই আপনার একটা পরিচয় হোক ৷যেটা আমি এখানে থাকলে হবে না ৷আমি ফিরে আসবো চারু ৷তারপর আমাদের সংসার হবে ৷আমি আসার পর এক সেকেন্ডের জন্য কোথাও যেতে পারবেন না ৷তাই আমি যাওয়ার পর জীবনটা উপভোগ করুন ৷আর আপনি যদি এভাবে কাদেঁন তাহলে আমি যাব না ৷আপনাকে আর পড়তেও দেব না বলে দিলাম ৷
চারু আয়ানের দিকে ফিরলো ৷আয়ানের দিকে তাকিয়ে এবার জোড়েই কেদেঁ দিল ৷তারপর কাদঁতে কাদঁতে বলল
ঐ দেশে যেয়ে আপনি আমায় ভুলে যাবেন আয়ান ৷বিদেশি ম্যাম দেখে আমায় ভুলেই যাবেন ৷আমি আর পড়বো না ৷তাও আপনি যাবেন না ৷আপনাকে ছাড়া থাকতে আমার বড্ড কষ্ট হবে আয়ান ৷আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন না দয়া করে ৷
আপনি কি ভয় পাচ্ছেন চারু ৷ভয় পাবেন না আপনি ৷এই দুনিয়ায় আমি যত দিন আছি ৷ঠিক ততদিন কোনো ভয় পাবেন না ৷জীবন থাকতে আপনাকে ছাড়বো না আমি ৷আপনাকে ছাড়লে আমি নিজেই মরে যাব চারু ৷আয়ান চারুকে নিজের বুকে চেপে ধরলো ৷চারুর কান্নার বেগ কমে গেল ৷ভেজা চোখে সে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
আপনি কি মেয়েদের পেছনে ঘুড়বেন ৷আপনাকেই তো মেয়েরা পাত্তা দেবে না ৷এখনো দাড়ি হয় নি সে নাকি আবার বিয়ে করেছে ৷আমি চারু আপনাকে বিয়ে না করলে কেউ বিয়ে করতো না আপনাকে ৷ আমার মতো সহজ সরল মেয়েকে বিয়ে করতে পেরেছেন ৷বিদেশে গিয়ে মেয়েদের পেছনে ঘুড়লে গনধোলাই খাবেন আপনি ৷
শকুনের দোয়ার গরু মরে না বউ ৷
চারু আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল কি আমি শকুন ৷চারুর অভিমানী কান্না এবার রাগে পরিনত হলো ৷সে আয়ানের উপর উঠে বসলো ৷তারপর আয়ানের চুল ধরে টানতে লাগলো ৷
আয়ান হাসতে হাসতে বলল ওরে পেতনি ধরেছে আমায় ৷কেউ বাচাও আমাকে ৷আমার বুকের উপর একটা হাতি সাইজের পেতনি উঠেছে ৷মরে গেলাম বাবাগো ৷
চলবে
প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :২
পার্ট :১১
আয়ান বিদেশ চলে গেছে গতকাল ৷চারুর চোখ ফুলে গেছে কাদঁতে কাদঁতে ৷এই নাকি সে চারুকে ভালোবাসে ৷ পাচঁ বছর পর নাকি দেখা হবে ৷কিভাবে থাকবে সে এতদিন ঐ শ্যামপুরুষকে না দেখে ৷ চারু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো ৷ সেও কথা বলবে না আর শ্যামপুরুষের সাথে ৷
তিনমাস পার হয়ে গেছে ৷চারু ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে ৷ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলেই সে এখন থাকে ৷ তার শ্বশুড় শ্বাশুড়ী মাঝে মাঝে দেখতে আসে ৷দ্বীপ আর মিহানও ভালো আছে ৷ দ্বীপের সাথে খুব একটা দেখা হয় না ৷ দিনকাল ভালোই যাচ্ছে চারুর ৷সময় নিজের মতো পেরিয়ে যাচ্ছে ৷
দেখতে দেখতে সাড়ে চার বছর পার হয়ে গেছে ৷সাড়ে চার বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে ৷ আজ চারু একজন ডাক্তার ৷দ্বীপ আর মিহান ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে ৷আয়ানের লেখা পড়া শেষ ৷সামনেই তার রেজাল্ট বের হবে ৷ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এ লেখাপড়া শেষ করেছে সে ৷ এখন শ্বশুড় বাড়ীতেই আছে চারু ৷আজ সকালেই চারুর কাছে আয়ানের চিঠি এসেছে ৷চিঠিটা পড়া হয় নি এখনো ৷বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ৷ ঘরের দক্ষিনের জানালাটা খোলা ৷ বাইরে থেকে হালকা হাওয়ায় চারুর কালো চুল উড়ে যাচ্ছে ৷ পরনে গোলাপী রংয়ের সুতি শাড়ী ৷চারু ড্রয়ারের ভেতর থেকে চিঠিটা বের করলো ৷তারপর পড়তে শুরু করলো ৷
প্রিয় চারু
পত্রের শুরুতে আমার সালাম নেবেন ৷আপনি কেমন আছেন চারুলতা ৷আমি জানি আপনি ভালো আছে ৷কিন্তু আমি ভালো নেই ৷আমার দিন কাটতে চায় না চারু ৷ আচ্ছা চারু আপনাকে কি আমি সত্যি ভালোবাসি ৷সেটা আমি আজও জানি না ৷কিন্তু আপনি বলতেই আমি পাগল ৷আপনাকে বড্ড ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে ৷আচ্ছা আপনি কি এখনো সেই আগের মতো সহজ সরল চারু আছেন নাকি বদলে গেছেন ৷আপনি কি আমার দিকে এখনো আড় চোখে তাকাবেন ৷আপনি কি এখনো আড়াল থেকে আমায় দেখে মুচকি হাসবেন ৷অনেকে বলে ভালোবাসা নাকি রং বদলায় ৷সময় নাকি ভালোবাসার রং বদলে দেয় ৷কিন্তু আপনার প্রতি আমার ভালোবাসার রং এত তীব্র কেন হচ্ছে বলুন তো ৷আপনাকে নিয়ে আমার কল্পনার শেষ নেই চারু ৷কোনো এক শ্রাবনে আপনি আর আমি পাশাপাশি হাটবো চারু ৷আপনার ঐ নরম গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি শুষে নেব ঠোটঁ দিয়ে ৷আপনার দিকে তাকিয়ে শত শত রাত পার করে দেব ৷আজ কাল দিন গুলো যেতেই চায় না ৷রাতে ঘুম হয় না ৷মনটা বড্ড উথাল পাথাল করে আমার ৷আপনি এখন কেমন দেখতে হয়েছেন ৷আপনাকে না দেখতে পাওয়ার জন্য কবে যেন মরেই যাই চারু ৷নিজের যত্ন নেবেন ডাক্তারনী ৷আপনার হাতের সেবা দিয়ে এই অসুস্থ পাগলটাকে কিন্তু ঠিক করতে হবে ৷ খুব তাড়াতাড়ি আসছি আমি আপনার কাছে ৷
ইতি
আপনার শ্যামপুরুষ ৷
চারু চিঠিটা বন্ধ করলো ৷তারপর বারান্দায় চলে গেল ৷তারপর একা একা বলল
এখন খুব ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে ৷বিয়ের আগেও তার কত ভালোবাসা ৷আর বিয়ের পর ফিরেও তাকায় নি ৷বিদেশ চলে গেছে একা ফেলে ৷ এখন আবার ভালোবাসা দেখাচ্ছে ৷কথা নেই তার সাথে ৷আমার মনে হয় কষ্ট হয় না ৷চারুর চোখে অশ্রুকনা জমা হতে লাগলো ৷
পনেরো দিন পাড় হয়ে গেছে ৷চারু আজ হাসপাতালে রোগী দেখতে যায় নি ৷কারন আজ শ্যামপুরুষ আসবে ৷বাড়ীর কাজ সব শেষ ৷বাড়ীঘর পরিষ্কার করিয়েছে লোক দিয়ে ৷আয়ানের পছন্দের সব খাবার চারু নিজের হাতে রান্না করেছে ৷ এখন সে ঘরে বসে আছে ৷চারুর শ্বশুড় আর দ্বীপ গেছে আয়ানকে নিয়ে আসতে ৷চারুর মনটা বড্ড উথাল পাথাল করছে ৷বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ শব্দ হচ্ছে ৷ হাত পা কেমন যেন কাপঁছে তার ৷ চারু যান নি এয়ারপোর্টে ৷কেন যাবে সে ৷ তার কোনো কথা নেই ঐ নিষ্ঠুর শ্যামপুরুষের সাথে ৷সে তার চারুকে একা ফেলে চলে গেছে ৷ ঐ খারাপ লোকটা জানে না , তার চারু থাকতে পারে না তাকে ছাড়া ৷চলে যাবে চারু তার বাবার বাড়ী ৷ থাকবে না এই খারাপ লোকের সাথে ৷
চারুর চিন্তার মাঝেই গাড়ীর শব্দ এলো নিচ থেকে ৷চারু শব্দ পেতেই দৌড়ে জানালার কাছে চলে গেল ৷তবে কি শ্যামপুরুষ এসেছে এত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৷ এতক্ষন একা একা রাগ প্রকাশ করা মেয়েটাই তার প্রিয় মানুষটার জন্য দৌড়ে চলে গেছে জানালার কাছে ৷চারু নিচে গেল না ৷জানালার পর্দা হালকা সরিয়ে নিচে তাকালো ৷গাড়ীর ভেতর থেকে এক এক করে তার শ্বশুড় আর দ্বীপ নেমে এলো ৷কিন্তু ঐ মানুষটা কোথায় ৷চারুর মনটা অশান্ত হয়ে উঠছে ৷না আর অপেক্ষা করা যাচ্ছে না ৷শ্যামপুরুষের অপেক্ষা যে বড্ড যন্ত্রনা দেয় তাকে ৷চারুর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সাদা কোট পড়া একটা পুরুষ বেড়িয়ে এলো ৷চারু তার মুখটা দেখতে পেল না ৷তবে লোকটা অতিরিক্ত সুন্দর যা তার শারীরিক গঠনেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ৷ সাদা কোট পড়া লোকটা যখনই মাথা তুলে উপরে তাকালো ৷ চারু সাথে সাথে জানালার পর্দা লাগিয়ে দিল ৷
একটু পরেই চারুর ডাক পড়লো ৷চারুর শ্বাশুড়ী তাকে ডাকছে ৷চারু দেরি করলো না ৷নিজের ভেতর অনেকটা সাহস নিয়ে বাইরে ছুটে গেল ৷চারু সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো ৷চারু কোনো দিকে তাকালো না ৷তার সেই সাহস নেই একদম ৷চারুর শ্বাশুড়ী বলল
কি রে দূরে কেন দাড়িয়ে আছিস চারু মা ৷এই দ্বীপ ভাইয়ের ব্যাগ গুলো ঘরে নিয়ে যা ৷আয়ান ঘরে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে তাড়াতাড়ি ৷ চারু মা আয়ানের জন্যা এক কাপ কফি বানাতো ৷
আয়ান দ্বীপের সাথে ঘরে চলে গেল ৷চারুর সাথে একটা কথাও বলে নি সে ৷
চারু আয়ানের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৷আয়ানের নাকি মাথা ব্যাথা করছে ৷তাই কফি বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৷চারু ঘরে এসে দেখলো আয়ান নেই ৷ওয়াসরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে ৷হয়তো ফ্রেশ হতে গেছে আয়ান ৷চারু ব্যাগ গুলো একপাশে রাখলো ৷ তারপর বিছানায় বসে রইলো ৷ওয়াসরুমের দরজা খুলে আয়ান বেড়িয়ে এলো ৷চারু মাথা তুলে তার দিকে তাকালো ৷চারুর মাথা ঘুড়ছে ৷এটা কাকে দেখছে সে জানে না ৷এটা একদমই আয়ান হতে পারে না ৷ তার শ্যামপুরুষ এতো সুন্দর হলো কিভাবে ৷তার নজর লেগে যাবে তো ৷চারুর চিন্তার মাঝেই আয়ান বিছানায় শুয়ে পড়লো ৷চারু আয়ানকে শুয়ে পড়তে দেখে বলল
আপনার জন্য কফি এনে ছিলাম ৷খেয়ে নিন ৷মাথা ব্যাথা কমে যাবে ৷
আয়ানের তরফ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না ৷
চারু কিছুটা সাহস নিয়ে আয়ানের গায়ে হালকা ধাক্কা দিল ৷তারপর বলল
শুনছেন আপনি ৷কফিটা খেয়ে নিন ৷
আয়ান চারুর হাত নিজের শরীর হতে ঝাড়া মেরে ফেলে দিল ৷তারপর চিৎকার করে বলল
একদম ভালোবাসা দেখাতে আসবি না তুই ৷খুব ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে না ৷তখন থেকে কফি কফি করে যাচ্ছিস কেন হ্যা ৷ আয়ান কফির মগটা মেঝেতে ফেলে দিল ৷তারপর চারুর হাত শক্ত করে চেপেঁ ধরে বলল
একটু শান্তি দে আমাকে ৷এত কেন জালাস তুই ৷এখন ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবি ৷একদম আমাকে জালাবি না ৷যদি জালাস তো মেরে ফেলবো বলে দিলাম ৷আমার সামনে আসবি না তুই ৷যা বের হ এখন তাড়াতাড়ি ৷একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবি না ৷আয়ান চারুর হাত ঝাড়া মেরে ছেড়ে দিল ৷
অন্যদিকে চারু হেচঁকি তুলে কাদঁছে ৷আয়ান ফিরেও তাকালো না একবার ৷আয়ান চারুকে ছেড়ে দিতেই সে দৌড়ে ঘর থেকে চলে গেল ৷চারু ছাদে বসে কাদঁতে লাগলো ৷
তার শ্যামপুরুষ বদলে গেছে ৷এখন আর সে তার চারুকে ভালোবাসে না ৷সে ঐ দেশে যেয়ে বদলে গেছে ৷ এর জন্যই চারু তার শ্যামপুরুষকে যেতে দিতে চায় নি ৷ ভালো যখন বাসেই না তখন চিঠিতে এত ভালোবাসা দেখালো কেন ৷চারু ছাদের এক কোনায় বসে খুব কাদঁতে লাগলো ৷
রাত এগারোটা বাজে ৷চারু ঘরে যায় নি এখনো ৷মমতা বেগম বারবার খেতে বলেছে কিন্তু সে খায় নি ৷খাবার টেবিলের কাছেও আসে নি ৷কাউকে কিছু বলে নি চারু ৷আয়ানের কাছে সে যায় নি ৷মমতা বেগমের সাথে টুকটাক কাজ করেছে ৷রাত হয়ে গেছে ৷চারু ধীর পায়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল ৷ঘরের লাইট অনেকক্ষন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে ৷হয়তো আয়ান ঘুমিয়ে গেছে ৷
আগে চারু না খেলে আয়ান নিজের হাতে খাইয়ে দিত ৷চারুকে কত ভালোবাসতো সে ৷চারুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিত ঘুম না আসলে ৷কানের কাছে গুনগুন করে কত ভালোবাসার কথা বলতো ৷কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই মানুষটাই বদলে গেছে ৷চারু আজ সারাদিন যে খায়নি ৷সেই খোজঁটা এই পাষান লোকটা নেয় নি ৷চারু কোথায় আছে সেই খবরটাও নেয় নি ৷ হয়তো বিদেশে যেয়ে নিজের যোগ্য কাউকে পেয়েছে আয়ান ৷কথাটা ভাবতেই চারুর বড্ড কান্না পেল ৷চোখ থেকে আবারো অশ্রুকনা গড়িয়ে পড়লো ৷চারু ঘরে যেয়ে দেখলো আয়ান ঘুমিয়ে গেছে ৷ চাদেঁর আলোয় আয়ানের ঘুমন্ত মুখটা বেশ সুন্দর লাগছে তার কাছে ৷চারু আয়ানের পাশ থেকে একটা বালিশ আস্তে করে তুলে নিল ৷তারপর ফ্লোরে বালিশটা রেখে শুয়ে পড়লো ৷মানুষটা যখন তাকে ভালোবাসে না ৷তখন সে কেন থাকবে তার পাশে ৷ চারু কাদঁতে লাগলো আবারো ৷তার চোখের পানি বালিশে গড়িয়ে পড়ছে ৷শ্যামপুরুষ তার দিকে একবার তাকায়ও নি ৷সে যে লোকটার জন্য জলপাই রংয়ের কাতান শাড়ী পড়ে ছিল ৷ লোকটার জন্য যে চারু সেজে ছিল ৷কিন্তু লোকটা তাকায় নি তার দিকে ৷লোকটা একবার কথাও বলে নি তার সাথে ৷এখন আর হয়তো ভালোবাসে না ৷চারুর কান্নাটা নিঃশব্দে হলেও চোখের পানিটা মিথ্যে নয় ৷কান্নার জন্য শরীরটা ক্ষনে ক্ষনে কাপঁছে তার ৷
চলবে