প্রীতিলতা আসবে বলে(পর্ব ১৭+১৮

0
581

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :২
পার্ট: ৪

আজ নয় দিন আয়ানের কোনো খোজ নেই ৷এদিকে চারুর বাড়ীর অবস্থা ভালো না ৷এলাকার মানুষ চারুকে ছিঃ ছিঃ করছে ৷চারুর নামে এলাকায় খারাপ কথা রটেছে ৷চারু নাকি আয়ানের সাথে অবৈধ ভাবে রাত্রি যাপন করে এমন কথা এলাকায় ছড়িয়ে গেছে ৷গত দুই দিন ধরে চারুকে নিয়ে বাজে কথা রটে যাচ্ছে ৷চারুর দাদু চারুকে মেরেছে গতকাল ৷চারু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ৷আয়ানের কোনো খবর সে পায় নি ৷গত দুই দিন ধরে এলাকার ছেলেরা বাড়ীর সামনে এসে বাজে কথা বলছে চারুকে ৷গত রাতে চারুর জানালার কাছে কয়েকজন ছেলে এসে ছিল ৷চারু জানালার কাছেই ছিল ৷চারু প্রতি রাতের জন্য কত টাকা নেয়ে ৷তার রেট কত জানতে চেয়েছে তারা ৷চারু ওদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে নি ৷শুধু কেদেঁ গেছে ৷ নয় দিন আগে আয়ান তার জানালার কাছে এসেছিল ৷এটা অনেকেই লুকিয়ে দেখেছে ৷চারুকে দিয়ে ওর দাদা দাদি গোপনে দেহ ব্যবসা করায় এই কথা এখন এলাকায় ছড়িয়ে গেছে ৷গতকাল রাতে তাদের একঘর করা হয়েছে ৷

চারু বিছানার চাদর খামচে ধরে কাদঁছিল ৷হঠাৎ ওর দাদি এসে বলল তোর লগে জামিল নামের একটা পোলা দেহা করতে আইছে বইন ৷

চারু জামিলের কথা শুনে কোনো রকম ওরনা জরিয়ে দৌড়ে গেল ৷বসার ঘরে জামিল বসে আছে ৷তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা ৷দেখে তাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে খুব ৷বেশ শুকিয়ে গেছে ৷চারু জামিলের কাছে দৌড়ে যেয়ে বলল

জামিল ভাই আমার ৷তোমার মাথায় কি হয়েছে ৷তুমি এত দিন পর কেন এসেছো ৷আয়ান কোথায় আছে ৷তুমি জানো আমার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে ৷আমরা এলাকায় মুখ দেখাতে পারছি না ৷ আয়ান কেন আসছে না ৷

চারু কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ৷জামিলের চোখেও পানি চারুর অবস্থা দেখে ৷সে মূলতো চারুর ব্যাপারে কাল রাতেই খবর পেয়েছে ৷আয়ানই তাকে পাঠিয়েছে ৷চারুদের বাড়ীতে ঢোকার সময় অনেকেই ইঙ্গিতে খারাপ কথা বলেছে তাকে ৷কিন্তু সে তো চারুকে নিজের বোনের মতোই দেখে ৷জামিল চারুর পাশে বসে বলল

আজ বিকেল পাচঁটায় আয়ান আসবে ৷তাকে দেখলেই বুঝতে পারবে কেন সে আসে নি এত দিন ৷চিন্তা করো না কোনো ৷তোমার চিন্তা দূর করার ব্যবস্থা হচ্ছে ৷আর সেটা আজই ৷

মানে ৷

মানেটা সময় হলেই জানতে পারবে ৷এবার আমি যাই কেমন ৷

জামিল চলে গেল ৷আর চারু তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷

আয়ান আসবে কথাটা শোনার পর থেকেই চারুর মনটা কেমন যেন আনচান করছে ৷ হাজারো প্রশ্ন নিয়ে তার হৃদয় বসে আছে ৷যার উত্তর আয়ান নামের শ্যাম পুরুষের কাছে আছে ৷হাজারো চিন্তার মাঝেই বাইরে কারো গলার আওয়াজ পেল চারু ৷কন্ঠটা সে চেনে ৷এটা তাদের পাশের বাড়ীর লোক ৷লোকটার নাম রমিজ ৷তার একটা ছেলে আছে ছাদেক ৷এলাকায় বখাটেদের অন্যতম একজন সদস্য ৷চারুকে বড্ড জ্বালায় ৷এক বছর ধরে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে বখাটে ছাদেক ৷কিন্তু চারুর দাদা দাদি মোটেই রাজী নয় এই প্রস্তাবে ৷রমিজ আলীর চিৎকারে চারুর দাদা বাইরে এলো ৷এসে দেখলো তার সাথে আরো কিছু লোক আছে এলাকার ৷চারুর দাদা বলল

কি হইছে এমনে ডাকতাছো ক্যান ৷

রমিজ আলী নিজের দাতঁ কেলিয়ে বলল তোমার জন্য একটা ভালো সংবাদ নিয়া আসলাম ৷

কি এমন সংবাদ শুনি ৷

তোমার ঐ নষ্টা নাতনিরে এহন আর কেউ বিয়া করবো না ৷এহন আমার ছাদেকের চাইতে ভালা পোলা আর পাইবা না ৷আমার পোলা চারুরে বিয়া করতে এহনও রাজী ৷আর ছাদেকের লগে বিয়া দিলে তোমাগো আর একঘর হইয়া থাকা লাগবো না ৷

চারুর দাদা রাগী চোখে রমিজ আলীর দিকে তাকিয়ে বলল তোমার সাহস হয় কেমনে আবার বিয়ার প্রস্তাব দেহনের ৷বাহির হইয়া যাও আমার বাড়ী থেইকা ৷চারুরে আমি কাইট্টা নদীতে ভাসামু তাও তোমার পোলা ছাদেকের মতো একটা নেশাখোরের লগে বিয়া দিমু না ৷

রমিজ মিয়া চিৎকার করে বলল এহনো বুইড়ার তেজ কমে নাই ৷ঐ বুইড়া তোর নাতনি তো একটা বেশ্যা ৷তোর ঐ বেশ্যা নাতনিরে কে বিয়া করবো ৷তোর ঐ নাতনিরে ফূর্তি করার জন্য ভাড়ায় নিয়া যাইবো পোলারা ৷কেউ বিয়া করবো না ৷আর বিয়া দিলে তো ব্যাবসা বন্ধ হইয়া যাইবো ৷আমিও দেখমু তোর ঐ নাতনি এই এলাকায় কেমনে থাকে ৷ঐ তোমরা চলো সবাই ৷চারু এতক্ষন সবই শুনেছে ৷চারু বসে বসে কাদঁছিল ৷হঠাৎ করেই নিজের অসুস্থ শরীরে প্রচন্ড আঘাত অনুভব করলো চারু ৷চারুকে ওর দাদা এলোপাথারী লাঠি দিয়ে মারছে ৷চারু ওর দাদার পায়ে পড়ছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না ৷চারুর দাদিও থামাতে পারছে না ৷চারুর দাদা মারতে মারতে থেমে গেল ৷তারপর বলল

আমি আর কত অপমান সহ্য করমু ৷তোরে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করছি ৷আর এহন তোরে মানষে বেশ্যা কয় ৷এই দিন দেহনের আগে আমার মরন ক্যান হইলো না ৷চারুর দাদা চোখের পানি মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেল ৷আর চারু ওর দাদীকে ধরে কাদঁতে লাগলো ৷

বিকেল হয়ে গেছে ৷ঘড়িতে পাচঁটা বাজে ৷আয়ান দাড়িয়ে আছে চারুর বাড়ির সামনে ৷কেউ নেই আশেপাশে ৷আয়ানের দৃষ্টি ছাদে ৷চারু আসে নি ৷তবে কি আজকেও তার চারুলতা আসবে না ৷নিজের দিকে না তাকিয়ে সে যার জন্য এলো সে কি আসবে না ৷কি হয়েছে তা চারুর কাছ থেকে জানতে চায় আয়ান ৷চারু হয়তো আসবে না ৷এটা ভেবেই আয়ান চলে যাবে ৷হঠাৎ করেই আয়ানকে অবাক করে দিয়ে একটা লাল টুকটুকে বউ ছাদে এসে উদয় হলো ৷তার মুখটা স্পষ্ট না আয়ানের কাছে ৷ তবুও আয়ান তাকিয়ে রইলো ৷ তবে কি চারুও তাকে ভালোবাসে ৷ এটা কি তার লাল টুকটুকে বউ ৷হ্যা এটা তারই বউ ৷আয়ানের মুখে হাসি ফুটলো ৷তার চারু লাল বেনারসি পড়েছে ৷তার চারু বউ সেজেছে ৷

অপর দিকে ছাদের উপর থেকে চারু তার শ্যাম পুরুষকে দেখে আতঁকে উঠলো ৷একি অবস্থা মানুষটার ৷তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা ৷ ডান হাতের কবজি থেকে কনুই ব্যান্ডেজ করা ৷চারু অপেক্ষা করলো না ৷ছাদ থেকে দৌড়ে নেমে গেল ৷চারু দৌড়ে বাড়ীর বাইরে চলে এলো ৷ আয়ানকে অবাক করে দিয়ে চারু আয়ানকে ঝাপটে জরিয়ে ধরলো ৷চারু আয়ানকে কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিল ৷তার পর আয়ানের ব্যান্ডেজে হাত বুলাতে বুলাতে হাউমাউ করে কেদেঁ উঠলো ৷চারু কাদঁতে কাদঁতে বলল

কিভাবে এমন হলো তোমার ৷সব সময় আমার খেয়াল কেন রাখতে হবে ৷ নিজের খেয়াল রাখতে পারো না ৷

অপর দিকে আয়ানের নজর চারুর চেহারার দিকে ৷চারুর দুই গালে পাচঁ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট ৷ঠোটেঁর পাশে কাটা দাগ আয়ানের চোখ এড়ালো না ৷ডান হাতের কবজিতে কালশিটে দাগও আয়ান দেখলো ৷গলার পাশেই কাটাঁ দাগ ৷হয়তো কোনো ধারালো কিছুতে কেটেঁ গেছে ৷আয়ানের চোখে পানি ৷যেই মেয়েটাকে সামান্য আঘাত করার কথা চিন্তাও সে করতে পারে না ৷ সেই মেয়েটাকে কেউ এভাবে মেরেছে ৷এটা সে সহ্য করবে কি করে ৷তার সামান্য অসুস্থ থাকায় মেয়েটার উপর দিয়ে কি গেছে তা চিন্তাও সে করতে পারছে না ৷আয়ানের চিন্তার মাঝেই কেউ চারুকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিল ৷চারু ছিটকে দূরে পরে গেল ৷আর আয়ানের গালে প্রচন্ড জোড়ে একটা চড় পড়লো ৷আয়ান সামনে তাকিয়ে দেখলো চারুর দাদা ৷তার সাথে আরো বিশ পচিঁশ জন লোক ৷

চারুর দাদা চারুর কাছে যেয়ে বলল

তার মানে সবাই ঠিক কইতাছে ৷ তুই এই পোলার লগে নষ্টামি করছ ৷ রমিজ আলী আমারে নিজের চোখে না দেখাইলে তো বিশ্বাসই করতাম না আমি ৷চল তুই ভিতরে ৷আজকেই আমি ছাদেকের লগে তোর বিয়া দিমু ৷চারুর দাদা হেচঁকা টান দিয়ে চারুকে নিয়ে যেতে লাগলো ৷কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই সে বাধা পেল ৷পেছনে তাকিয়ে দেখলো আয়ান চারুর অন্য হাত ধরে আছে ৷ আয়ান চারুকে নিজের দিকে হেচঁকা টান দিয়ে বলল

আমি চারুকে বিয়ে করবো ৷আমি বেচেঁ থাকতে চারুর বিয়ে অন্য কারো সাথে হবে না ৷

চারুর দাদা রেগে কিছু বলবে তার আগেই আয়ান চিৎকার করে বলল আমি যে চারুর সাথে এক ঘরে থেকেছি এটা কেউ দেখেছে নিজেদের চোখে ৷আমি রাতে চারুর ঘরে ঢুকেছি এটা কেউ দেখেছে ৷আমি শুধু আমার চারুলতাকে একটু দেখতে এসে ছিলাম ৷ আর সেটাই সবাই বানিয়ে দিল রাত্রিযাপন বাহ ৷ আমি চারুকে বিয়ে করবো ৷কারো বাপের ক্ষমতা থাকলে যেন আয়ান চৌধুরীকে ঠেকায় ৷ আয়ান চারুকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো ৷কিন্তু একি চারু কোনো সাড়া দিচ্ছে না কেন ৷

আয়ান চারুর দিকে তাকাতেই চারু বলে চিৎকার করে উঠলো ৷চারুর মুখ থেকে ফেনা বেড়িয়ে আসছে ৷তার রক্তজবার মতো লাল টুকটুকে বউটার দেহ নেতিয়ে এসেছে ৷আয়ান চারুকে নিয়ে মাটিতে বসে পড়লো ৷আয়ান চারুর গালে হাত রেখে কাদঁতে কাদঁতে বলল চারু কি হয়েছে আপনার ৷আপনার মুখ থেকে এগুলো কি আসছে চারু ৷

চারু তার নিভু নিভু চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল

আমি নাকি বেশ্যা আয়ান ৷আমাকে নিয়ে টাকা দিয়ে ফুর্তি করে ছেলেরা ৷আমি নাকি নষ্টা ৷আমি আর পারছি না আয়ান ৷আপনার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে ৷তাই আপনার কাছে আসার আগে বিষ পান করেছি আমি ৷

চলবে
প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম সিজন : ২
পার্ট : ৫ (বিবাহ স্পেশাল 🙈🙈)

চারুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে ৷ডাক্তার চারুর পেট থেকে বিষাক্ত পয়জন বের করেছে ৷কিছুক্ষন আগে জ্ঞান এসেছে চারুর ৷এখনো কেউ চারুর সাথে দেখা করে নি ৷চারু চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল ৷দরজা বন্ধ করার আওয়াজে সে চোখ খুললো ৷ কিন্তু চোখ খুলে যা দেখলো এতে তার পরান যায় যার অবস্থা ৷আয়ান তার সামনে দাড়িয়ে আছে ৷আয়ান যে বড্ড রেগে আছে ৷তা চারু বুঝতে পারলো ৷তবুও নিজের মুখে কিছুটা হাসি ফুটিয়ে বলল

আয়ান আমাকে …….

চারু আর কিছু বলার আগেই আয়ান এসে ওর মুখ চেপে ধরলো ৷তারপর বলল

এই তোর ভয় করে না আমাকে ৷দাড়া তুই যাতে আমাকে ভয় পাস সেই সব ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি ৷ কিভাবে পারলি বিষ খেতে তুই ৷আজকে যদি তোর কিছু হতো তাহলে আমি কি করতাম ৷তোর মৃত্যুর আগে যেন আল্লাহ আমাকে আগে নিয়ে যায় ৷আয়ান কথা গুলো বলতে বলতে কেদেঁই দিল চারুকে ধরে ৷

আমাকে কেন একটু বুঝতে চান না চারুলতা ৷আমি কি এতটাই খারাপ যে আমাকে বোঝা যায় না ৷আপনার কাছ থেকে তো অনেক ভালোবাসা আমি চাই নি ৷আপনি শুধু আমাকে বুঝবেন ব্যস ৷ আপনি কি সত্যি আমার চোখে ভালোবাসা দেতে পান না চারু ৷একটা মানুষ আর কত ভাবে বুঝাতে পারে বলুন তো ৷আমাকে এত শাস্তি না দিয়ে মেরে ফেলুন চারু ৷ আজ যদি আপনার কিছু হতো তাহলে আমি কি করতাম চারু ৷আমি তো আপনাকে হারাতে চাই না ৷আপনাকে নিয়ে হাজার জনম পারি দিতে চাওয়া ছেলেটাকে রেখে মরে কেন যেতে চান আপনি ৷জানেন চারু আমি রোজ খোদার কাছে বলি যেন আমি আগে মরি ৷কারন আপনার মৃত্যু আমি সহ্য করতে পারবো না ৷তাহলে আপনি কেন আমাকে ছেড়ে যেতে চান ৷যদি সত্যি ছেড়ে যেতে চান ৷তাহলে নিজের হাতে মেরে চলে যাবেন ৷আমি বাধাঁ দেব না ৷কিন্তু আমাকে বাচিঁয়ে রেখে যাবেন না কখনো ৷আপনাকে ছাড়া বেচেঁ থাকার কথা কখনো ভাবতেও পারি না আমি চারু ৷আয়ান চারুকে জরিয়ে ধরে কাদঁতে কাদঁতে কথা গুলো বলল ৷চারুও আয়ানকে ধরে কাদঁছে ৷ হ্যা সে সত্যি বড্ড ভুল করেছে তার শ্যাম পুরুষকে বুঝতে ৷ আয়ান চারুকে ছেড়ে দিল ৷তারপর মাথা নিচু চোখের পানি মুছে বলল

একটু পর কাজী আসবে ৷এখানেই আপনার আমার বিয়ে হবে ৷

মানে ৷

মানে যা বললাম আমি ৷আমি আপনাকে এখনই বিয়ে করবো ৷

আমি আপনাকে এখন বিয়ে করবো না ৷

আয়ান তড়িৎ গতিতে এসে চারুর হাত চেপে ধরে বলল অসুস্থ বলে কিছু বলছি না ৷আমার রাগ উঠিও না চারু ৷

চারু আয়ানের কথায় পাত্তা দিল না ৷মুখ ভেংচি কেটে বলল

ছেলের তো ঠিক মতো দাড়িই হয় নি ৷সে নাকি আবার বিয়ে করবে ৷তা সাহেব বিয়ে যে করবেন বউ , ছেলে, মেয়েকে কি খাওয়াবেন ৷

আয়ানের রাগ হঠাৎ করেই পানি হয়ে গেল ৷আয়ান বাকাঁ হেসে বলল আমার বউ আর যাই হোক তোমার মতো রাক্ষসী নয় ৷আর দাড়ীর কথা বলছো ৷ওটা ঠিক সময় হলেই হয়ে যাবে ৷ বউয়ের আদর পেলে দাড়ি তাড়াতাড়ি হয় ৷তাই তো বউ নিয়ে বাড়ী যাবো আজ ৷

আয়ানের ফিসফিস করে বলা কথায় চারু লজ্জায় মাথা নত করে আছে ৷ছেলেটাকে সে যত ভালো ভাবতো ৷সে তার কানাকড়িও ভালো নয় ৷বড্ড দুষ্টু স্বভাবের ৷

আয়ানের কথার মাঝেই দরজায় টোকা পড়লো ৷আয়ান চারুর কাছ থেকে দূরে সরে এলো ৷আয়ান মুচকি হাসতে হাসতে দরজা খুললো ৷দরজা খুলেই দেখলো তার মা দাড়িয়ে আছে ৷আয়ানের মা তার সাথে আরো দুইজন মেয়েকে এনেছেন ৷আয়ানের মা আয়ানকে বাইরে রেখে দরজা লাগিয়ে দিল ৷

অপর দিকে আয়ানকে ধরে নিয়ে গেল ওর বন্ধুরা ৷ আয়ানকে কিছু বলার সুযোগ কেউ দিল না ৷

অন্যদিকে আয়ানের মা চারুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

চারু মা আমার ছেলেটা অনেক ভালো ৷নিজের ছেলে বলে বলছি না ৷ তোমায় বড্ড ভালোবাসে সে ৷আজ থেকে ভালোবাসে না ৷সেই চার বছর ধরে ৷প্রথম দুই বছর লজ্জায় যেতে পারে নি ৷তারপর আমি বলেছিলাম তোমাকে জানাতে ৷আমাকে তোমার ব্যাপারে সব বলে আয়ান ৷যতক্ষন বাড়ীতে থাকে ততক্ষন ওর মুখে শুধু চারু নাম ৷আমার ছেলেটা তোমার চিন্তায় ঠিক মতো ঘুমায় না ৷ কত দিন রাতে যে ছুটে এসেছে তোমার বাড়ীর কাছে তার হিসেব নেই ৷কোনো বিপদ হলে কে দেখবে এই ভয়ে ৷আমি তাকে কখনো আটকাই নি ওকে ৷আর আটকাতে চাইও না ৷ ভালোই তো বেসেছে শুধু ৷কোনো অন্যায় তো করে নি ৷ আমার ছেলে তোমায় যতই ভালোবাসুক ৷তবুও আমি জানতে চাই তুমি তাকে বিয়ে করবে কি না ৷আমি কোনো মেয়ের উপর বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন চাপিঁয়ে দিতে চাই না মা ৷তুমি কি রাজী চারু মা ৷

চারু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল যা করলে আয়ান ভালো থাকবে তাই করুন ৷

তবুও আমি তোমার মত চাই ৷আয়ানের একার মতে আমি এই বিয়ে দিতে পারি না চারু মা ৷

আয়ানে মতই আমার মত মা ৷

আয়ানের মায়ের ঠোটেঁ হাসি ফুটলো ৷চারু তাকে মা বলে ডেকেছে ৷আয়ানের মা উত্তর পেয়ে গেছে ৷আয়ানের মা চারুর থুতনিতে হাত রেখে বললেন

এই তোরা আমার চারু মাকে সাজা সুন্দর করে ৷একদম লাল টুকটুকে বউ সাজাবি কিন্তু ৷আজ আমি ঘরে লক্ষী উঠাবো ৷

চারুকে লাল বেনারসি পড়ানো হয়েছে ৷তার কপালে লাল আর সাদা কুমকুমের ছোয়া ৷চোখে গাড়ো কাজল আর ঠোটেঁ লাল লিপস্টিক ৷পুরো শরীরে খাটি সোনার ভারী গয়না ৷দুই পায়ে আলতার ছোয়া ৷ একটা লাল রংয়ের পাতলা ঘোমটা দিয়ে চারুর সুন্দর মুখটা আড়াল করা হলো ৷ তারপর তার গলায় চকচকে সোনালী সুতোর একটা লাভ সেইপের মালা পড়ানো হলো ৷

অপর দিকে আয়ানকে সাদা পাঞ্জাবি পড়ানো হয়েছে ৷এক হাতে ঘড়ি আর অন্য হাতে সোনালি রংয়ের চকচকে সুতোর হাত বন্ধনি ৷মাথায় একটা সাদা পাগড়ী ৷গলায় সোনালী ঝড়ি সুতোর লাভ সেইপের মালা ৷হাতে রুমাল আয়ানের ৷

হাসপাতালের ডাক্তার নার্স সবার মুখে হাসি ৷এই প্রথম তাদের হাসপাতালে কারো বিয়ে হচ্ছে ৷একে অন্যের জন্য পাগল এমন একজোড়া চড়ুই পাখির বিয়ে দেখতে কার না ভালো লাগে ৷

চারুকে আয়ানের পাশে বসানো হয়েছে ৷ পাচঁ হাজার টাকা তাদের বিয়ের দেনমোহর ৷কাজী সাহেব আয়ানকে কবুল বলতে বললেন ৷আয়ান আস্তে আস্তে কবুল বলল ৷তার কেমন যেন লাগছে বড়দের সামনে ৷ বাবার সামনে কবুল বলতে বেশ লজ্জাই তার লাগছিল ৷

চারুকে কবুল বলতে বললে সে চুপ করে রইলো ৷লজ্জায় বলতেই পারছে না ৷মাথাই তুলে তাকাতে পারছে না ৷ অবশেষে আয়ানের মা চারুকে ধরে সাহস দিল ৷চারু নিজের মধ্যে কিছুটা সাহস জুগিয়ে কবুল বলেই ফেললো ৷আর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলল ৷

এবার চারুর বিদায়ের সময় ৷ চারু তার দাদিকে ধরে খুব কাদঁছে ৷ আশেপাশে প্রান প্রিয় দাদাকে দেখতে না পেয়ে বড্ড কষ্ট পেল সে ৷আয়ানের মা চারুকে ধরে বাইরে নিয়ে গেল ৷

চারু আর আয়ানকে একটা রিকশাতে বসানো হলো ৷তারপর রিকশার চারিদিকে কাপড় পেচাঁনো হলো ৷ভেতরে শুধু বর আর বউ ৷যদিও আয়ানের বাবার গাড়ী আছে ৷তবুও আয়ান তার বউকে নিয়ে সাধারনদের মতোই যাবে ৷ছোট একটা রিকশায় চারু আর আয়ান ৷চারু কান্নার কথা ভুলে গেছে ৷পাশে থাকা শ্যাম পুরুষের জন্য বড্ড লজ্জা লাগছে তার ৷তার নিঃশ্বাসের শব্দ চারু শুনতে পারছে ৷

(সব সময় গল্পে নাইকাদের ইয়া বড় কোটি টাকার গাড়ীতে করেই নেওয়া লাগবে কেন শ্বশুড় বাড়ী ৷আয়ান চারু আশি দশকের একটা প্রেম জুটি ৷তাই তাদের বিয়ের আয়োজন ঐ সময়ের মতোই করেছি ৷আগে বড় বড় গাড়ী ছিল না ৷তাই তখন রিকশাতে কাপড় পেচিঁয়ে বর বউকে নেওয়া হতো ৷ আমার নানির কাছ থেকে তথ্য গুলো নিয়ে কপি করে দিয়েছি 🙈🙈🙈৷ যারা অতি আধুনিক তাদের হয়তো ভালো লাগবে না ৷কিন্তু কিছু করার নেই আমার ‌৷কিছু বিয়ে কল্পনার মতো না হয়ে বাস্তবের মতোই হোক ৷যদিও গল্পটাও কাল্পনিক ৷তবুও আমি বাস্তব প্রেমী মানুষ ৷কেমন হয়েছে জানাবেন ৷ )

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here