প্রীতিলতা আসবে বলে(পর্ব বোনাস+২৫

0
633

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট :বোনাস

ঘড়ির কাটায় সাড়ে এগারোটা বাজে ৷চারু বালিশে মুখ গুজে কাদঁছে ৷সে তো এই আয়ানকে চায় নি তার জীবনে ৷তাহলে কেন এমন হলো ৷ চারু কান্নার মাঝেই একটা শীতল হাতের ছোয়া পেল তার পেটে ৷একটা গরম নিঃশ্বাস তার গালে আচড়ে পড়ছে ৷কেউ একজন তাকে খুব শক্ত করে নিজের সাথে চেপেঁ ধরেছে ৷কেউ একজন তার নরম গালে নিজের নাক মুখ চেপেঁ ধরেছে ৷যার ফলে চারুর গালের পানি ঐ মানুষটার মুখেও লেগে যাচ্ছে ৷চারু জানে এই লোকটা কে ৷চারু লোকটাকে নিজের থেকে ছাড়াতে চাইলো ৷ কিন্তু ছাড়াতে পারছে না ৷ চারু লোকটার হাতে ইচ্ছে মতো আঘাত করতে লাগলো ৷ তারপর বলল

ছাড়ুন আমাকে ৷একদম আমার কাছে আসবেন না ৷আমি কালকেই বাবার বাড়ীতে চলে যাব ৷থাকবো না আর এখানে ৷

আয়ান একটা কথাও বলল না ৷চারুকে অনেক কষ্টে নিজের দিকে ঘুড়ালো ৷তারপর বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরলো ৷এবার চারু খুব জোড়েই কেদেঁ দিল আয়ানের বুকে ৷চারু বারবার হেচঁকি তুলতে তুলতে কাদঁছে ৷শরীরটা বারবার কেপেঁ উঠছে চারুর ৷চারু আয়ানের বুকে বারবার আঘাত করেই গেল ৷আয়ান চারুকে ছাড়লো না কোনো মতেই ৷আয়ান চারুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল

চারু আর কাদঁবেন না দয়া করে ৷আজ সারাদিন কাদঁলেন ৷সারা দিন কিছু খান নি আপনি ৷আর কতো কাদঁবেন চারু ৷বেশি কাদঁলে আপনার চোখের পানিতেই সাগর হয়ে যাবে ৷আমি আর কখনো বকা দিব না আপনাকে ৷আমাকে মাফ করে দিন চারু ৷আমাকে যত খুশি মারুন আপনি ৷তবুও আর কাদঁবেন না ৷আমি তখন ইচ্ছে করে খারাপ ব্যবহার করি নি সত্যি বলছি ৷আপনি জানেন আপনাকে দেখার জন্য আমার বুকের ভেতরটা কেমন করছিল ৷আমি ভেবে ছিলাম আপনি এয়ারপোর্টে যাবেন ৷কিন্তু আপনি যান নি ৷আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি সেই খবর কি আপনি রাখেন চারু ৷ ভাবলাম বাড়ীতে এসেই আমি আমার পরী বউটার মুখ দেখবো ৷কিন্তু কি হলো বলুন তো ৷বাড়ীতে এসেও আপনাকে দেখতে পেলাম না ৷কিন্তু আপনি ঠিকই জানালার আড়াল থেকে আমায় দেখে নিলেন ৷তারপর নিচে যেয়েও একবার তাকালেন না ৷এত লজ্জা কেন পেতে হবে আমার সামনে চারু ৷ভালোবাসার মানুষের সামনে এতটা লজ্জা পেতে নেই ৷আপনি জানেন আমার তখন কত খারাপ লেখেছে ৷আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে দেখে নি ৷আমার বউটা আগের থেকে যে বড্ড সুন্দরী হয়ে গেছে সেই খবর কি আপনি জানেন ৷আমার বউটা যে আগের থেকে গলুমলু হয়ে গেছে ৷আমার বউটার গাল গুলো যে এখন লাল বর্ন ধারন করেছে সেই কথা কি আপনি জানেন ৷আপনি কি জানেন আপনার এই দীর্ঘ চুলের প্রেমে আমি আবারো পড়েছি ৷চারু আজ আপনাকে শাড়ীতে বড্ড সুন্দর লেগেছে ৷আমার ইচ্ছে করে ছিল আপনাকে কোলে নিয়ে পুরো বাড়ী ঘুড়তে ৷কিন্তু আপনি তো আমায় পাত্তাই দিলেন না ৷আপনি বড্ড খারাপ চারু ৷আমাকে একদম বোঝেন না আপনি ৷যদি ঘরে এসে একবার বাতীটা জ্বালাতেন তাহলে এতক্ষন শুয়ে শুয়ে কাদঁতেন না ৷

চারুর কান্না বন্ধ হয়ে গেছে ৷কিন্তু এখনো হেচঁকি তুলছে ৷চারু আয়ানের কথা শুনছে ৷আয়ান চারুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল

আজ আমাদের বিবাহের ছয় বছর শেষ হলো ৷আর রাত বারোটা এক মিনিটে আমাদের সপ্তম বিবাহ বার্ষিকী বউ ৷তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার তখন খারাপ ব্যবহার করেছি ৷যেন তুমি ঘরে না আসো ৷ আজ সারাদিন আমি আর দ্বীপ ঘর সাজিয়েছি তোমায় সার প্রাইজ দিতে ৷

আয়ান চারুকে ছাড়লো ৷তারপর চারুকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিল ৷তারপর লাইট অন করে দিল ৷লাইট অন করতেই চারু অবাক হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে রইলো ৷কত সুন্দর করে ঘর সাজানো ৷এই সব কি সত্যি সত্যি আয়ান তার জন্যই করেছে ৷আয়ান চারুর চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল

আমার সত্যিই ভুল হয়ে গেছে চারু ৷ আর কখনো এমন হবে না ৷চারু আয়ানের দিকে আড় চোখে তাকালো ৷ কিন্তু কোনো কথা বললো না ৷ চারু এখন আবারো কেদেঁ দিল ৷তারপর কাদঁতে কাদঁতে বলল

আপনি একদম আমাকে ছুবেন না ৷আপনি সব সময় আমার সাথে এমন করেন ৷আপনি সাড়ে পাচঁ বছর আগে আমায় ছেড়ে চলে গেলেন ৷আর এখন এসেই আবার ঢং শুরু ৷কাল সকালেই চলে যাবো ৷চারু কথাটা বলেই চলে যেতে নিল ৷কিন্তু যেতে পারলো না ৷ তার আগেই আয়ান চারুকে ধরে ফেললো ৷

কোথায় যাবে বউ ৷যেতে দেব বলে তো আর আসি নি আমি ৷এত রাগ করতে নেই বউজান ৷রাগ কমাও এখন ৷আমি কিন্তু এখন আর আগের আয়ান নেই ৷অনেক বদলে গেছি আমি ৷আমাকে দেখেই হয়তো বুঝতে পেরেছো ৷ কত সুন্দর হয়ে গেছি আমি দেখেছো ৷আমি জানি আমার চেহারা দেখেই তুমি হিংসে করছো ৷এই দেখো কত সুন্দর দাড়ি হয়েছে ৷ এখন আর দাড়ি নিয়ে কিছু বলতে পারবে না ৷ সবই কিন্তু ঐ বিদেশি রক্তজবার মতো দেখতে ম্যামদের কাজ ৷ আয়ান চারুকে রাগাতে কথা গুলো বললো ৷

চারু অবাক চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল মানে ৷ বিদেশি ম্যামরা কি করেছে ৷

বিদেশি ম্যামদের চুমু খেয়েই তো দাড়ি হয়েছে ৷বউ তো আর দেয় না ৷তাই ……

চারু আয়ানের দিকে রাগী চোখে তাকালো ৷ তারপর বলল

কি ঐ দেশে গিয়ে এই কাজ করেছেন ৷আজ আপনার একদিন কি আমার একদিন ৷চারু আয়ানে ছোট ছোট দাড়ি ছিড়তে না পেরে ৷সেখানে একের পর এক খামচি দিতে লাগলো ৷

চলবে…..

প্রীতিলতা আসবে বলে

লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :২
পার্ট:১২

বারান্দায় শীতল পাটির উপর চারু আর আয়ান বসে আছে ৷ আয়ান চারুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে ৷দুজনার মুখে কোনো কথা নেই ৷এক জন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে আছে ৷কিছুক্ষন আগে আয়ান চারুকে খাইয়ে দিয়েছে নিজের হাতে ৷ চারুর ডান হাতটা আয়ানের পুরো মুখে বিচরন করছে ৷ কত দিন এই মুখটাকে সে দেখে নি ৷চারু আয়ানের কপালে চুমু দিল ৷আয়ান উঠে বসলো ৷তারপর চারুর পুরো মুখে নিজের ওষ্ঠ ছোয়াল ৷ চারুর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল

এত সুন্দর হওয়ার জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে আপনার জন্য ডাক্তারনী ৷ আমার জীবনে কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো আসার জন্য আপনাকে শাস্তি পেতে হবে ৷আপনাকে আমার সাথে বৃদ্ধা হতে হবে ৷বুড়ো বয়সে আমার হাতের মুঠোয় শক্ত করে নিজের হাত রাখতে হবে ৷আমৃত্যু আমার সাথে থাকতে হবে ৷

এমন ছোট ছোট স্পর্শে কিছু ভালোবাসার প্রকাশ হোক ৷

অভিমানে যখন প্রেয়সী কাতর ৷তখন শ্যামপুরুষের আগমন হোক ৷

হাজার বছর বেচেঁ থাকুক শ্যামপুরুষ ৷তার প্রেয়সী নামক সত্তার জন্য ৷

আট বছর পার হয়ে গেছে ৷ চারু আর আয়ানের একটা ছেলে হয়েছে ৷তার নাম আবেশ ৷আবেশের বয়স সাত বছর ৷চারু আবারো প্রেগনেন্ট ৷চারুর আট মাস চলছে ৷দ্বীপ বিয়ে করছে ৷তার দেড় বছর আগে ছেলে হয়েছে ৷দ্বীপের ছেলের নাম মিহান রেখেছে ৷ভালোবেসে নাম রেখেছে দিহান ৷দ্বীপের আর নিজের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছে সে ৷মিহান বিয়ে করে নি ৷কিন্তু সে কেন বিয়ে করে নি এটা কেউ জানে না ৷অপর দিকে আয়ানের বন্ধু জামিল ও বিয়ে করেছে ৷তার মেয়ের বয়স এই চার বছর ৷আবেশের সাথে তার বেশ ভাব ৷আয়ান আর জামিল ঠিক করেছে ওদের বিয়ে দিবে ৷চারুর দাদা দাদি মারা গেছে তিন বছর আগে ৷চারুর দাদি হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে মারা যায় ৷স্ত্রীর মৃত্যু সহ্য করতে পারে নি চারুর দাদা ৷স্ত্রী মারা যাওয়ার এক মাস পরে উনিও মারা যায় ৷

আয়ানের মায়ের শরীরটা দিন দিন খারাপ হচ্ছে ৷উনি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন ৷উল্টা পাল্টা কথাও বলে আজকাল ৷ একা একা কথাও বলে মাঝে মাঝে ৷ওনাকে ডাক্তারের কাছেও নেওয়া হয়েছে ৷কিন্তু ডাক্তার কোনো কারন খুজে পায় নি ৷

আয়ান তার বাবার জুয়েলারির ব্যবসা সামলাচ্ছে ৷যাতে বেশ লাভ হচ্ছে তার ৷অপর দিকে চারুও ডাক্তারী পেশায় বেশ এগিয়ে গেছে ৷চারিদিকে তার সুনামও বেশ ছড়িয়ে গেছে ৷

অন্যদিকে ঢাকাতে মাদকের প্রবনতা বেশ বেড়ে গেছে ৷কোথা থেকে এত মাদক আসছে তা কেউ জানে না ৷ছোট বড় অনেক ছেলে মেয়ে মাদকে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে ৷ শহর থেকে মেয়েরা গায়েব হয়ে যাচ্ছে ৷মেয়েদের আর খুজে পাওয়া যায় না ৷পুলিশের কাছে যেয়েও লাভ হয় না ৷

দেখতে দেখতে দেড় মাস পাড় হয়ে গেছে ৷আজ চারুর সকালেই প্রসব বেদনা শুরু হয় ৷আয়ান দেরি না করে চারুকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷প্রথম ছেলে আবেশ হওয়ার সময় চারুর অবস্থা ভালো ছিল না ৷চারুর প্রচুর রক্তক্ষরন হয় ৷ডাক্তার যখন বলে ছিল চারুর অবস্থা ভালো না ৷আয়ান পাগলের মতো হয়ে গিয়ে ছিল ৷আয়ানের সেই কি কান্না ঐ দিন ৷দ্বিতীয় বাচ্চাটা আয়ান নিতেই চায় নি ৷চারু জোড় করে নিয়েছে ৷এর জন্য আয়ান কম রাগ করে নি তার সাথে ৷আজকেও আয়ানের ভয়ে পুরো শরীর কাপঁছে ৷চারুর কিছু হলে সে বাচঁবে না কোনো মতেই ৷কিছুক্ষন পর ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়ে আসলো ৷তারপর হাসিমুখে বলল মেয়ে হয়েছে আপনার মিঃ চৌধুরী ৷আয়ান নিজের চোখ মুছে বলল

আমার স্ত্রী কেমন আছে ডাক্তার ৷

ম্যাডাম একদম ভালো আছেন ৷আপনারা একটু পরেই দেখা করতে পারবেন ৷ডাক্তার চলে গেল ৷

এক ঘন্টা পর আয়ান গেল চারুর কাছে ৷চোখ বন্ধ করে সে শুয়ে আছে ৷আয়ান চারুর কপালে চুমু দিল ৷যার কারনে চারুর ঘুম ভেঙ্গে গেল ৷ চারু আয়ানকে দেখে মুচকি হাসলো ৷চারু কিছু বলবে তার আগেই চারুর কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে আয়ান বলল

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ চারু ৷আমার জীবনে আপনিময় হয়ে আসার জন্য ৷

আপনাকে ধন্যবাদ এই জীবনটাকে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য ৷

আপনাকে ধন্যবাদ আমার আমিতে বসবাস করার জন্য ৷

আপনাকে ধন্যবাদ আমায় পূর্ন করার জন্য ৷

আজ ছয় দিন চারুকে বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়েছে ৷পুরো বাড়ীতে খুশির রোল পড়েছে ৷আয়ান মেয়ের নাম রেখেছে প্রীতিলতা ৷মেয়ে গোল গোল চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে ৷আয়ান মেয়েকে কোলে নিয়ে হাজারো কথা বলে ৷ছোট মেয়েটা বাবার কথায় কিছু বলে না শুধু তাকিয়ে থাকে ৷কথা বলবে কিভাবে সে তো এখনো অনেক ছোট ৷ তবে নিজের ছোট হাত দিয়ে বাবার গাল ছুয়ে দেয় সে ৷বাবার আদুরে কথায় ঠোটঁ বাকিয়ে মুচকি হাসেঁ ৷ প্রীতির কাছে কাউকে আসতে দেয় না আবেশ ৷চারু বলেছে প্রীতির কাচাঁ নাড়ে হাত না দিতে ৷বোন নাড়ে ব্যাথা পেলে মরে যাবে ৷তাই আবেশ কাউকে আসতে দেয় না ৷যদি বোন মরে যায় ৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here