প্রীতিলতা আসবে বলে(পর্ব২৬+২৭

0
621

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :২
পার্ট :১৩

সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ৷ছোট প্রীতিলতার এখন তিনবছর ৷বেশ পাকাঁ কথা বলে সে ৷বাবার একমাত্র রাজকন্যা সে ৷বাবাকে ছাড়া তার দিন কাটতেই চায় না ৷আর আয়ানও মেয়ে বলতেই পাগল ৷মেয়ে একদিকে আর দুনিয়া অন্য দিকে ৷ কিছু দিন আগে দুষ্টুমী করার জন্য চারু প্রীতিকে বকে ছিল ৷তার জন্য আয়ান চারুকে বকা দিয়েছে ৷তার মেয়েকে কিছু বলা যাবে না ৷তার সব কিছুই তো এই মেয়ে ৷এর জন্য আবেশ প্রীতিকে একদম দেখতে পারে না ৷তার ধারনা মতে বাবা তাকে একদম ভালোবাসে না ৷এর জন্য প্রায় সময়ই সে মায়ের কাছে বিচার দেয় ৷

দেখতে দেখতে চার বছর পার হয়ে গেছে ৷প্রীতির এখন সাত বছর ৷স্কুলে পড়ে এখন সে ৷অন্যদিকে আয়ানের বন্ধু জামিলের মেয়ের সাথে আবেশের বিয়েও ঠিক হয়েছে ৷তারা এই বন্ধুত্ব কখনো শেষ করতে চায় না ৷কিন্তু যখনই জামিলের মেয়ে প্রীতিদের বাড়ীতে আসে ৷তখনই প্রীতি তাকে দুষ্টু ছেলের বউ বলে হাসে ৷এর জন্য আবেশ প্রীতির কানও মলে দিয়েছে বেশ কয়েকবার ৷ছোট প্রীতিলতা সবার নয়নের মনি ৷অন্যদিকে চারুর আবারো বাচ্চা হবে ৷তার চারমাস চলছে ৷

কয়েক দিন পরের কথা ৷হঠাৎ একদিন জামিল তার ছোট ভাইকে নিয়ে প্রীতিদের বাসায় আসে ৷জামিলের ভাইয়ের এক ছেলে আর এক মেয়ে ৷ ছেলের নাম নির্ঝর ৷আর মেয়ের নাম মিলা ৷এগারো বছরের নির্ঝরও বাবার সাথে প্রীতিদের বাসায় এসেছে ৷প্রাতিদের বাড়ীটা নির্ঝর ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছিল ‌৷হঠাৎ করেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নির্ঝর নিচে পড়ে গেল ৷বেশ ব্যথাও পায় সে পড়ে যেয়ে ৷রেগে পেছনে তাকাতেই দেখতে পায় একটা মিনিস্কার্ট পরা মেয়েকে ৷বেশ ঢং করে কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ৷পেছনে তার বোন মিলা দাড়ানো ৷ মিলার চোখে পানি ৷নির্ঝর রেগে গিয়ে মিনিস্কার্ট পরা মেয়েটাকে বলল

এই মেয়ে আমায় ধাক্কা দিলি কেন ৷

এই একদম তুই করে বলবে না ৷আমার বাবা জানলে একদম মেরে দেব ৷

একে তো ধাক্কা মেরেছিস ৷আবার আমাকেই ভয় দেখাস ৷ সরি বল তাড়াতাড়ি ৷

এই প্রীতিলতা কাউকে সরি বলে না ৷তোমার মতো একটা পচাঁ লোককে তো আরো বলবো না ৷

ও তাহলে তুমি সেই পাজী প্রীতিলতা ৷যার কথা আপু আমায় বলে ছিল ৷এই মিলা তুই ওর পেছনে কেন দৌড়াচ্ছিলি ৷

ভাইয়া এই মেয়েটা আমার চকলেট কেড়ে নিয়েছে ৷

যা বাবা এত দিন জানতাম এই মেয়ে একটা বদের হাড্ডি ৷এখন তো দেখছি চুন্নি ৷

এই পচাঁ ছেলে একদম বাজে কথা বলবে না৷

সেটা বললে তো হবে না মামুনি ৷আজ তোমার একদিন কি আমাদের একদিন ৷এই মিলা মালটাকে ধর ৷আজ একে একটা শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো ৷

মিলা আর নির্ঝর মিলে ছোট প্রীতিলতাকে চেপেঁ ধরলো ৷তারপর ওর সারা শরীরে কাতুকুতু দিতে লাগলো ৷প্রীতিলতা হাসঁতে হাসঁতে লুটিয়ে পড়েছে ৷ আর ছুটার জন্য মোচড়াতে লাগলো ৷

পেরিয়ে গেছে সাত মাস ৷চারুর আবারো ছেলে হয়েছে ৷ছেলের নাম রাখা হয়েছে আদিত্য ৷অপর দিকে নির্ঝর আর প্রীতিরও বেশ বন্ধুত্ব হয়েছে ৷সবাই ঠিক করেছে বড় হলে প্রীতি আর নির্ঝরের বিয়ে দিবে ৷একজন আরেক জনের সাথে ওরা বড্ড খুশি থাকে ৷ নির্ঝরও এখন প্রীতিকে বেশ আদর করে ৷ প্রীতি বিয়ে কি খুব একটা বোঝে না ৷কিন্তু নির্ঝর বেশ ভালোই বোঝে ৷নির্ঝর ,আবেশ আর প্রীতি একই স্কুলে পড়ে এখন ৷নির্ঝর বেশ আগলিয়ে রাখে ছোট প্রীতিকে ৷

চারু বেশ কয়েকদিন যাবৎ খেয়াল করছে মিহান ,দ্বীপ আর ওর শ্বশুড়ের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে বেশ কথা কাটাকাটি হয় ৷কিন্তু কি ব্যপারে তারা কথা বলে তা চারু জানে না ৷কাউকে দেখলেই তাদের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় ৷চারু খুব একটা পাত্তা দেয় না ৷ হয়তো ব্যবসায়ী কোনো ব্যাপার ৷তাই কিছুই মনে করে না ৷

দিন গুলো বেশ ভালোই কাটছিল সবার ৷কিন্তু সুখ বেশিদিন কারো কপালে টিকে না ৷চৌধুরী বাড়ীর সুখও টিকলো না ৷মিহানের মৃত্যুর সংবাদ সবার জীবন লন্ডভন্ড করে দিল ৷এক সপ্তাহ আগে মিহান আর দ্বীপ চট্টগ্রাম যায় একটা ডিল ফাইনাল করতে ৷কিন্তু মিহানকে হঠাৎ করেই তার বাবা ঢাকা আসতে বলে টেলিফোনে ৷ মিহান বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ৷কিন্তু বাড়ী ফেরার পথে একটা ট্রাক মিহানের গাড়ীতে ধাক্কা মারে সজোরে ৷যার ফলে রাস্তার মধ্যেই মিহান মারা যায় ৷তার শরীরের একপাশ থেতলে যায় খারাপ ভাবে ৷মিহানের লাশ বাড়ীতে আসার পর কান্নার রোল পড়ে যায় ৷মিহানের বাবা ছেলের লাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন ৷তার চোখ থেকে দুই ফোটাঁ পানি গড়িয়ে পড়লো ৷

মিহান মারা যাওয়ার দুই দিন পার হয়ে গেছে ৷মমতা বেগম হাসপাতালে ভর্তি ৷ডাক্তার বলেছে ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারে নি ৷তাই মমতা বেগম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন ৷তাকে এখন ঘুমের ইজ্ঞেকশন দিয়ে রাখা হয় ৷ছেলের জন্য এখন সে একটা পাগল ৷মিহান মারা যাওয়ার পর মমতা বেগম চিৎকার করে কেদেঁছেন লাশ ধরে ৷ছেলের থেতলে যাওয়া মুখটা ধরে হাউমাউ করে কেদেঁছেন ৷

অন্যদিকে মিহানের বাবা ছেলের মৃত্যুর পর কেমন যেন জড় পদার্থে পরিনত হলো ৷সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন ৷স্ত্রীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কাদঁতেন ৷

মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ৷মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে চারুর শ্বশুড় ৷তার চোখের পানি বৃষ্টির পানির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে ৷আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন

আমায় ক্ষমা করে দিও বাবা ৷আমি তোমায় জন্ম দিয়েছি ঠিকই কিন্তু বাবা হতে পারি নি ৷তোমায় জোড় করে পাপের জগতে এনে ছিলাম ৷তুমি ঠিকই বলে ছিলে টাকায় সুখ হয় না ৷তুমি ঠিকই বলে ছিলে আপনজনের মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন ৷আমি তো তখন তোমার কথায় আনন্দ পেতাম বাবা ৷তাহলে আজ কেন তোমার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না ৷তোমার থেতলে যাওয়া মুখটা ধরে কেন কাদঁতে পারি নি আমি ৷কিভাবে ছুয়ে দিতাম তোমায় শেষ বারের মতো ৷আমার এই হাত যে তোমায় ছোয়ার ক্ষমতা রাখে না বাপ ৷সেই ছোট বেলায় যদি ফেরত যেতে পারতাম ৷তাহলে জীবনটা আবারো নতুন করে শুরু করতাম ৷আমি তোমাকে মারতে চাই নি ৷বিশ্বাস করো বাচাঁতে চেয়ে ছিলাম ৷কিন্তু তোমার ভাই আমার কথাই শুনলো না ৷আমি আজ নিজের কাছে হেরে গেলাম বাবা ৷তোমার মৃত্যুর কাহিনী অজানা থাক বাবা ৷পারলে এই পাপী বাপটাকে মাফ করে দিও ৷

পেরিয়ে গেছে আরো পাচঁ মাস ৷মমতা বেগম এখন মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি ৷আয়ানের বাবা অনেক অসুস্থ ৷চারমাস আগে স্ট্রোক করে ছিলেন ৷বাড়ীতে কারো মাঝেই এখন আর হাসিখুশি নেই ৷সবার মাঝে পরিবর্তন এলেও দ্বীপ বেশ ভালো আছে ৷পরিবারের এত সমস্যা তাতে তার যেন কিছু যায় আসে না ৷সে নিজের মতো বেশ ভালো আছে ছেলে আর বউকে নিয়ে ৷ডায়নাকে যেন আগের থেকেও বেশি ভালোবাসে দ্বীপ ৷ছেলে দিহান তার নয়নের মনি ৷

অন্যদিকে কিছুদিন যাবৎ চারু একটা হাসপাতালের প্রধান অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছে ৷অন্যদিকে আয়ানের ব্যবসা দিন দিন উন্নতি হচ্ছে ৷আয়ান নিজের সম্পত্তি তিন ছেলে মেয়ের নামে লিখে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন ৷কারন দ্বীপের সাথে আজকাল তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না৷দ্বীপ কেমন যেন বদলে গেছে ৷

কিছুদিন পরের কথা হঠাৎ করেই একদিন চারুর বাসায় আসতে দেরি হয়ে যায় ৷বাড়ীতে এসে চারু অবাক হয়ে যায় ৷কারন পুরো বাড়ী অন্ধকার ৷চারু অনেক ভয় পেয়ে যায় ৷চারু সিড়ি বেয়ে কোনো রকম উপরে উঠে সবাইকে ডাকতে থাকে ৷কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না ৷

চলবে…

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন : ২
সমাপ্তি পর্ব

চারু আস্তে আস্তে উপরে সিড়ি বেয়ে উঠে পড়লো ৷কিন্তু উপরে উঠে যা দেখলো তাতে তার চোখ কপালে উঠে গেল ৷আয়ান আর তার বেড রুম খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো ৷বিছানার দিকে তাকাতেই দেখলো একটা প্যাকেট রাখা ৷চারু প্যাকেটটা হাতে নিল ৷প্যাকেটের নিচে একটা চিরকুট ৷চিরকুটে লেখা

আমার সুন্দরী বউটা যেন তাড়াতাড়ি রেডি হয় ৷এই গরমে ফ্যান ছাড়া লুকিয়ে থাকতে খুব কষ্টে হবে আমাদের ৷

চারু একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো ৷তারপর প্যাকেটটা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল ৷চারু ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখলো আয়ান দাড়িয়ে আছে ৷আয়ান চারুর দিকে তাকিয়ে রইলো ৷চারুর পড়নে তার বিয়ের সেই লাল টুকটুকে শাড়ীটা ৷আয়ানের কাছে চারুকে সেই নতুন বউয়ের মতো লাগছে ৷আয়ান চারুকে আয়নার সামনে বসিয়ে দিল ৷তারপর চিরুনী দিয়ে চুল আচড়ে একটা হাত খোপা করে দিল ৷তারপর নিজের পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা বেলীফুলের গাজরা বের করে খোপায় লাগিয়ে দিল ৷চারু বুঝতে পারছে না তার সাথে কি হচ্ছে ৷চারু আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল

তা মহাশয় আজ হঠাৎ এত প্রেম কেন দেখানো হচ্ছে শুনি ৷

আপনি আজকেও ভুলে গেছেন চারু ৷কিন্তু আমি ভুলি নি ৷আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আজকের দিনে আপনি আমার বউ হয়ে এই বাড়ীতে পা রেখে ছিলেন ৷চারু করুন চোখে আয়ানের দিকে তাকালো ৷চারু এই বছরও ভুলে গেছে ৷কিন্তু আয়ান প্রতিবছর চারুকে সারপ্রাইজ দেয় ৷ আয়ান চারুর হাতে কাচেঁর রেশমি চুড়ি পড়িয়ে দিল ৷তারপর বলল

এবার তাহলে দরজাটা খুলি চারু কি বলেন ৷

চারু খেয়াল করলো দরজা লাগানো ৷এতক্ষন খেয়ালই করে নি সে ৷আয়ান দরজা খুলেই দেখলো তার আট বছরের মেয়ে প্রীতিলতা আর ছেলে দাড়িয়ে আছে ৷পেছনে ডায়না ছোট ছেলে আদিত্যকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ৷তার পাশেই দিহান দাতঁ বের করে দাড়িয়ে আছে ৷

সবাই মিলে আয়ান আর চারুর তেইশতম বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছে ৷আজ কত দিন ছেলে মেয়ে গুলোও মজা করে নি ৷কিন্তু আজ তারাও বেশ মজা করেছে ৷

রাত দুইটা বাজে ৷আয়ান আর চারু বাড়ীর পাশে থাকা দিঘীর ঘাটে বসে আছে ৷দুজনের দৃষ্টি চাদেঁর দিকে ৷চারু আয়ানের বুকে মাথা দিয়ে বসে আছে ৷আর আয়ান তার চারুলতাকে জরিয়ে বসে আছে ৷নিরবতা ভেঙ্গে চারু বলল

আপনার পাশে আমায় একদম মানায় না এখন আয়ান ৷ আপনাকে দেখুন এখনো কত সুন্দর লাগে ৷আর আমাকে দেখুন কেমন হয়ে গেছি ৷ তবুও কেন আমাকে ভালোবাসেন আপনি ৷

আয়ান চারুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো ৷তারপর বলল

আর কখনো যদি আমার বউয়ের ব্যাপারে উল্টা পাল্টা কিছু বলেছেন চারু ৷সেই দিন আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না ৷আমার ভালোবাসাকে দয়া করে অপমান করবেন না ৷যদি নারী দেহের প্রতি লোভ থাকতো তাহলে অনেক মেয়েকে ব্যবহার করতে পারতাম ৷অনেক মেয়ের মাঝে যারা শারিরীক সুখ খোজেঁ ৷তারা আর যাই হোক মনের সুখ খুজে পায় না ৷এই দুনিয়ায় মানসিক ভাবে সুখী হওয়া খুব কঠিন চারু ৷ এই যে আপনি রোজ রাতে আমার জন্য অপেক্ষা করেন ৷এই যে আপনি রোজ রাতে আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেন ৷এই যে আপনি রোজ রাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন ৷এটাই তো আমার কাছে অনেক ৷আপনার এই ভালোবাসার মূল্য কিভাবে দেব বলুন তো ৷

আয়ান কিছুক্ষন থেমে বলল জানেন চারু আজকাল মনে হয় আপনাকে হয়তো আর ভালোবাসি বলতে পারবো না ৷আজকাল আপনার কাছে খুব থাকতে ইচ্ছে করে ৷মনে হয় সময় হয়তো আর নেই ৷

আয়ানের দিকে চারু ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো ৷হঠাৎ করেই জোড়ে কেদেঁ দিল ৷আর আয়ানের বুকে কিল মারতে লাগলো ৷ আয়ান তার চারুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ৷তারপর বলল

কাদঁছেন কেন চারু ৷একদিন না একদিন তো যেতেই হবে ৷বয়স তো বিয়াল্লিশ হয়েই গেছে ৷কখন যে ওপারের ডাক চলে আসে তা বলা যায় না ৷তবে আমার একটাই চাওয়া আপনার আগে যেন আমি চলে যাই ৷

চারু কেদেঁই যাচ্ছে ৷আয়ানও নিজের চোখের পানি মুছে নিল ৷তারপর নিজের পকেট থেকে একটা বক্স বের করে বলল

এভাবে কাদঁলে আপনাকে আমি উপহারটা কিভাবে দেব বলুন তো ৷আয়ান চারুর চোখ মুছে দিল ৷তারপর বক্স থেকে একটা চেইন বের করে চারুকে পড়িয়ে দিল ৷তারপর চারুর কপালে চুমু খেয়ে বলল

আমার লাল টুকটুকে বউ ৷আমার পরী বউ ৷

আয়ান আর চারু একে ওপরকে জরিয়ে ধরলো ৷তাদের ভালোবাসার যেন শেষ নেই ৷যে ভালোবাসা সময়ের সাথে শেষ হয়ে যায় ৷তা কখনোই ভালোবাসা হয় না ৷যেই ভালোবাসা সময়ের সাথে গাঢ় হয় ৷তাই সত্যিকারের ভালোবাসা ৷যে ভালোবাসা ছেড়ে যাওয়া যায় না ৷

চৌধুরী বাড়ী আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে ৷আবারো সবাই হাসি খুশিতে মেতে উঠছে ৷

এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে ৷চারুর শরীরে জ্বর তিন দিন ধরে ৷আজ শরীরটা অনেকটাই ভালো তার ৷আয়ানের অফিসেও কাজ কম ৷তাই সেও আজ অফিসে যায় নি ৷প্রীতি আজ স্কুলে যায় নি ৷তার নাকি পেট ব্যাথা ৷ আয়ান জানে এই সব প্রীতির চালাকি ৷সে একদম স্কুলে যেতে চায় না ৷বড্ড ফাকিঁবাজ সে ৷আবেশ সকালেই স্কুলে গেছে ৷ডায়না তার ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে গেছে ৷দ্বীপ তাকে কিছুদিন ঘুড়ে আসতে বলেছে ৷

আয়ান আর প্রীতি লুকোচুরি খেলছে ৷চারু ছোট ছেলে আদিত্যকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে ৷ আয়ান চোর হয়েছে ৷তাই সে প্রীতিকে খুজছে ঘরের মধ্যে ৷আয়ান খুব ভালো করেই জানে প্রীতি আলমারির ভেতর ৷তবুও সে ঢং করেই প্রীতিকে খুজছে ৷

হঠাৎ করেই কলিংবেলের আওয়াজ আসে ৷আয়ান নিচ তলায় চলে যায় দরজা খুলতে ৷

অনেক সময় পার হয়ে যায় কিন্তু আয়ান আসে না ৷চারু আদিত্যকে রেখে বাইরে যায় ৷ কিছুক্ষন পর চারু দৌড়ে প্রীতির কাছে আসে ৷তারপর আলমারীর দরজা খুলে বলে ৷আজ যাই হয়ে যাক তুই এখান থেকে বের হবি না মা ৷আমরা মরে গেলেও না ৷নিজের খেয়াল রাখিস মা ৷আমরা না থাকলে পালিয়ে যাস তুই ৷ছোট প্রীতি মায়ের কথার মানে বোঝে নি ৷শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল ৷তারপর চারু আলমারীর দরজা আলগা করে লাগিয়ে চলে গেল ৷ তারপর তার পরিবারের সাথে যা হয় সেটা ভাবতেই প্রীতির চোখ থেকে একফোটাঁ পানি গড়িয়ে পরে ৷

বর্তমানে…..

প্রীতি নিজের ডায়রীটা বন্ধ করলো ৷ডায়রীর পরবর্তী পৃষ্ঠা ফাকাঁ ৷প্রীতি নিজের চোখের পানি মুছে নিল ৷আকাশের দিকে তাকালো প্রীতি ৷সকাল হয়ে গেছে ৷এখনো যে পাচঁজনকে খুন করা বাকি তার ৷তারপর আর তার পিছুটান নেই নির্ঝর ছাড়া ৷সব পিছুটান থেকে মুক্ত হয়ে তারপর সেও না হয় চলে যাবে নিজের মা বাবার ঘুম ভাঙ্গাতে ৷

(তৃতীয় খন্ড কাল আসবে ৷যেখানে আপনারা প্রচন্ড করমের নিষ্ঠুরতা আর কষ্টের পার্ট পাবেন ৷আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন ৷দয়া করে নেক্সট বলবেন না ৷ কাল একদিনে সিজন ৩ শেষ করবো ৷পেইজে ছোট একটা সমস্যা ছিল ৷তাই গল্প দেই নাই ৷তবে এখন থেকে গল্প পাবেন ৷আপনাদের দীর্ঘ অপেক্ষা গল্প দিয়ে শোধ করে দেব )

সমাপ্তি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here