প্রিয় তুই পর্ব ২৬

0
876

#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৬

-”যা করছেন ভেবে করুন। আমি কিন্তু আজ পিছ পা হবো না। কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিবো আমার পাওনা।”

একথা বলে তিতাস ফিক করে হেসে দিলো। এতক্ষণ গম্ভীর ভাবটা ধরে রাখলেও সেটা আর অটুট রাখতে পারল না সে।
ভোরের মুখটা দেখে তার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। সিনিয়র বউটা আজ ভীষণ ক্ষে’ পে’ ছে। তাতে এই রুপে তাকে মন্দ লাগছে না বরং বউ বউ রুপ ফুটে উঠেছে। তবে পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সে সত্যিই নিয়েছে। কারণ পিয়াসের মৃ/ত্যু/র পর সে না পেয়েছে একদন্ড শান্তি আর না একটু স্বস্তি। ঝামেলা পোহাতে পোহাতে সে অতিষ্ঠ। ওর মনে সর্বদা যুদ্ধ চলছে সুখ এবং স্বস্তির। রোজকার এসব ঝামেলায় আদৌও পড়াশোনা হয়? এটা কী ক্লাস ওয়ানের পড়া? তাছাড়া, নিজের কথায় ভাবার সময় নেই সেখানে পড়াশোনা কীভাবে হবে?কতদিন বা চলবে এভাবে? গতকাল তার কানে পৌঁছেছে ওর বাবা সবদিক থেকে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। উনার ব্যবসার অবস্থাও বেগতিক। এমন চলতে থাকে ওদের পথে বসতে হবে। সবটা স্বাভাবিক করলে হলে তাকেই হাল ধরতে হবে। যদিও এখন সে নিজেকে বড্ড বেশি পরিশ্রান্ত অনুভব করে। এসব থেকে মুক্তি পেতে তার প্রাণটা আয় চায় করে। গা ঢাকা দিতে ইচ্ছে করে, রোজকার ঝামেলা থেকে। কিন্তু পারে কই, দায়িত্বের বোঝা এখন তার কাঁধে। এই দায়িত্ব তাকে এক পাও সামনে এগোতে দেয় না। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখে একই স্থানে।
এজন্য নিরুপায় হয়েই মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছে পরিস্থিতির নির্মম কড়াঘাত। ভেতরে ভেতরে হচ্ছে দ/গ্ধ। এসব ভেবে সে একদম নিশ্চুপ হয়ে গেল। ওকে হঠাৎ নিশ্চুপ দেখে ভোর ভ্রু
কুঁচকে তাকিয়ে রইল। তিতাসের মতি-গতি বোঝার আপ্রাণ
চেষ্টা চালাচ্ছে সে। কিন্তু ভোরের প্রয়াসে বিঘ্ন ঘটিয়ে তিতাস চটজলদি তার শাড়ির আঁচলটা তুলে কাতুকুতু দিতে লাগল।
অকস্মাৎ এহেন আক্রমণে ভোরও হতবাক। তাৎক্ষণিক খুব শক্তি প্রয়োগ করেও সে ব্যর্থ। ততক্ষণে তিতাস স্বজোরে এক ধাক্কা দিয়েছে বিছানায়। সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে উঠার আগেই
তিতাস পুনরায় তাকে কাতুকুতু দিতে থাকল। ভোর থামাতে চায়লেও পারল না। একপর্যায়ে কাতুকুতুর চোটে সেও হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগল বিছানার মধ্যেখানে। তাদের হাসির কলবরে মুখোরিত হলো বদ্ধ রুমের চারিপাশ। খানিকবাদেই তিতাস ভোরকে নিজের খুব কাছে টেনে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলল,

-”রাগের বশে আদরের তাল টানলাম না। হিতে বিপরীত হতে পারে তাই ছাড় দিলাম। ”

-”আসলেই কী তাই? নাকি অন্যকিছু?”

তিতাস জবাব না দিয়ে কেবল হাসল।ভোর জবাবের আশায় তার মুখ পানে চেয়ে আছে। আজকাল তিতাসকে তার বড্ড অচেনা মনে হয়। হয়তো পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে। সেও মানুষ। তার উপর আজকাল খুব বেশি চাপ যাচ্ছে এটা সেও বুঝে। কিন্তু পরিস্থিতির লাগাম যে তার হাতেও নেই। সেও যে নিরুপায়। ভোরের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিতাস মৃদু স্বরে ডাকল,

-”ভোর!”

-”হুম।”

-”আপনি আমার মানসিক প্রশান্তি হবেন?”

-”না, আমি তোর সুখ হবো। তোর কষ্ট নিবারণের মুখ্য কারণ হবো। তোর ঠোঁটের হাসি হবো।পরিশেষে তোর রাজ্যের রাণী হবো।”

-”তবে আমি কাছে আসলে কেন অস্বস্তি ফুটে ওঠে আপনার
অঙ্গভঙ্গিতে?ওই চোখজোড়া কেন জানান দেয় অন্য কথা? আপনার দুই হাত কেন ব্যস্ত হয়ে পড়ে আমাকে ধাক্কা দিতে।
যেন দূরে সরার নীরব আহ্বাণ। আমি বয়সে ছোট বলেই কি এত অস্থিরতা, নাকি অন্যকিছু চাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা?”

-”ব্যাপারটা তা নয়। আসলে..!”

-”শাড়ির আঁচল ফেলে শরীরের প্রতি আকৃষ্ট করানো একটা
ভালো বউয়ের গুরু দায়িত্ব হতে পারে না। যদি মনে সামান্য ভালোবাসাও থাকে তাহলে ওই চোখ বলে দেয় অনেক কথা। আমি এতটাও বোকা নই ভোর, বুঝি অনেক কিছুই। এজন্য আপনাকে আরো সহজ হতে সময় দিচ্ছি। তারমানে এই না, আমি একজন দূর্বল পুরুষ।”

-”আসলে তুই কাছে আসলে আমার মনে হয় কেউ আমাদের দেখছে। আমার ষষ্ঠী ইন্দ্রীয় জানান দেয়, কোন পুরুষ মানুষ আমাকে তীক্ষ্ণ নজরে গিলে খাচ্ছে। আমার শরীরের প্রতিটা ভাঁজে কারো দৃষ্টি ঘুরছে। কেউ আমাদের একান্ত মুহূর্তটাকে
নজরবন্দি করছে। ঠিক এই কারণেই আমি চায়লেও সহজ হতে পারি না। অস্বস্তিতে ডুবে মরি, নিজের অজান্তে তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলি।”

-”আপনার ধারণা সঠিক। আর সত্যি সত্যি আমাদের উপরে কেউ নজর রাখত। আমার রুমে আপনার প্রতিরক্ষার সকল ব্যবস্থা সেইই নষ্ট করেছিল। তবে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি আমার রুমে প্রবেশও করেছিল। অথচ এটা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ অজ্ঞাত কেউ রুমে প্রবেশ করলেই সাইরেন বেজে উঠবে। এমনকি সঙ্গে সঙ্গেই আমার কাছে একটা পর একটা এলার্ট মেসেজ আসতেই থাকবে। আমি সেভাবেই আপনাকে
দূর থেকেও নিরাপত্তা দিতাম।কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে সেটাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমি ঠিকও করেছিলাম। কিন্তু কেউ
সেটা পুনরায় নষ্ট করার ফন্দি এঁটেছিল।যদিও আমি এখনো জানতে পারি নি, সে কে? জেনে যাবো যথাশীঘ্রই। তবে হ্যাঁ, এই বাসায় এমন কিছু ঘটবে না নিশ্চিন্তে থাকুন।”

এসব শুনে ভোর আর একটা টু শব্দও করল না। শুধু চোখ বন্ধ করে ওর বালিশে মাথা রাখল। আজকাল তার বড্ড ইচ্ছে করে, আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই বরের কাছে আহ্লাদী আবদার করতে। কারণে অকারণে তিতাসকে প্রচন্ড জ্বালাতে, রাগিয়ে দিতে। ‘ভালোবাসি’ বলে জড়িয়ে ধরে তার
প্রশস্ত বুকে মাথা রাখতে। পুরুষালি শক্ত হাতের আঙুলে ওর আঙুল গুঁজে রাতের সোডিয়ামের নিয়ন আলোয় হাঁটতে।
নদীর পাড়ে বসে কাঁধে মাথা রেখে ঢেউয়ের নাচন উপভোগ করতে। বেলাশেষে তার ক্লান্ত মুখের ঘামার্ত কপালে স্বযত্নে
চুমু এঁকে দিতে। জোছনা বিলাস করতে করতে একই মগে দু’জন কফির স্বাদ নিতে। ঘুমানোর আগে চুলে বিলি কেটে দেওয়ার আবদার জুড়তে। এমনকি তিতাসের নিষিদ্ধ স্পর্শে বারংবার শিহরিত হতে। এসব চাওয়া তার অপূর্ণ রয়ে গেছে।
তিতাস বয়সে ছোট বলেই হয়তো এসব সংকোচ কাজ করে।
আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে। আচ্ছা তিতাসের
জায়গায় পিয়াস হলে কী এমন মনে হতো? বোধহয় না। সে হয়তো বুঝতো ওর গোপন কিছু আকাঙ্খার কথা। যেমনটা করেছিল বিয়ের দিন গাড়িতে বসে। যদিও এখন মাঝে মাঝে তার মন বলে এসব আবদারগুলো তিতাসের সামনে প্রকাশ করতে। তাকে আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, তিতাস যদি ভুল বোঝে। যদি মুখের উপরেই বলে বসে, “এসব আপনাকে মানায় না ভোর।। এসব ছেলেমানুষী এই
বয়সে বেমানান।” আচ্ছা তার চাহিদা কী খুব বেশি? ডাক্তার বলে কী সব শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিতে হবে? দুইবার বিয়ে হয়েছে বলে কি শখ পূরণ করতে পারবে না? বয়সে ছোট ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে কী সারাজীবন ভুগতে হবে?
কখনো কী পারবে না তিতাসের সঙ্গে সহজ হতে? ওর নারী সত্তা তো বাকিদের মতোই চায় স্বাভাবিক জীবন, সংসার।
এত অপূর্ণতা কী কখনো পূর্ণতার রুপ পাবে না? তিতাস কী কখনো তাকে বুঝবে না? সে মেয়ে, আগ বাড়িয়ে কীভাবেই বা বলবে, ”চল তিতাস আমরা প্রণয়ের বি/ষ পান করি। এই
প্রেমসুধা গ্রহন করে হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটায়। মরিয়ে হয়ে যায় একে অপরের প্রতি।”

একান্ত নিজের ভাবনায় বিভোর থাকতে থাকতে ভোর কখন ঘুমিয়ে গেছে। তিতাস পাশে নেই, ভোরকে ঘুমাতে দেখে উঠে চলে গেছে। রাত এখন বারোটা সাত। তিতাস আগের বাসায়
এসেছে তাও চুপিচুপি। ঘন আঁধারে ডুবে আছে চারিপাশ। বাসায় কারো অস্তিত্ব নেই, শূন্যতা বিরাজ করছে পুরো বাসা জুড়ে। তিতাস সময় নিয়ে নিজের পরিকল্পনা মাফিক কাজ সেরে বেরিয়ে এলো। মোড়ের দিকে তার গাড়ি দাঁড় করানো।
পাশেই গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে রবিন। ছেলেটাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে এখানে এনেছে সে। কারণ তারা এখন যাবে শাহিনার অবস্থানরত বাসায়। রোজাকে সে তার কাছে এনে রাখবে নয়তো শাহিনা তাকে অযত্নেই মেরে ফেলবে। তিতাস আর রবিন সেখানে গিয়ে বাসার পেছনের দিকে যেয়ে প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। অতঃপর তারা যখন ভেতরে প্রবেশ করতে উদ্যত হয় তখন পরিচিত এক কন্ঠস্বর শুনে থমকে যায়। তারা দ্রুত নিজেদের বাঁচাতে থামের পেছনে লুকিয়ে যায়। আর থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখে খুব পরিচিত এত বেইমানের চেহারা। তখন রবিন অতি সন্তর্পণে ফিসফিস করে বলে,

-”নিশান স্যার এখানে কেন? উনি না দেশের বাইরে ছিলেন?”

-”প্রাক্তন প্রেমিকার টানে ফিরে এসেছে।”

-”উনার প্রাক্তন প্রেমিকাটা আবার কে?”

-”আমার চাচী শাহিনা সুলতানা।”

(বিঃদ্রঃ- আজকের এই পর্বে আপনাদের রেসপন্স আশা করছি।)

To be continue……………!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here