#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_১৩
-”আমি তার ক/লি/জা মেপে ইঞ্চি ইঞ্চি করে টু/ক/রো করে এসেছি। আগামীকাল গিয়ে কুকুরকে খাওয়াব। আমার সুখ রাজ্যে হাত বাড়ানোর শাস্তি সে পেয়েছে।”
তিতাসের কথা শুনে ভোরের পুরো শরীর কেঁপে উঠল। মানে কি! কার কথা বলছে তিতাস? কাকে মে/রে/ছে সে। কে তার সুখ রাজ্য হাত বাড়িয়েছিল, আয়মান? তবে কি আয়মানকে মেরে দিয়েছে? হঠাৎ কী এমন হলো যে মেরে ফেলতে হলো?এসব ভেবে সে ছটফট করে উঠল।তিতাসের চুল টেনে পিঠে খ/ম/চি বসিয়েও কিছু হলো না। তিতাস কোনোভাবেই তাকে ছাড়ল না, বাহুডোর থেকে মুক্ত হতেও দিলো না। বরং অনড় হয়ে পড়ে পড়ল। কিন্তু তিতাসের অশ্রুতে ভোরের গ্রীবাদেশ ভিজে একাকার হয়ে গেল। ভোর আর বাঁধা দিলো না। বরং অনুভব করল নিঃশব্দে গড়িয়ে যাওয়া তিতাসের অশ্রুবিন্দু।ছেলেটা কাঁদছে! বোধহয় প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে। নতুবা এমন করার ছেলে সে নয়। ভোর এবার তিতাসকে শান্ত হতে বলে আলতো করে পিঠে হাত রাখল। জ্বরে তিতাসের শরীর পুড়ে যাচ্ছে। সত্যিই কাউকে খুন করেছে নাকি জ্বরের ঘোরে ভুল বকছে? তার কার্যকলাপই উটকো, হতেও পারে।ভোর এবার নিজেকে সামলে চুপ হয়ে গেল। তিতাসের থেকে কথা বের করতে হলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। আস্তে ধীরে মাথা ঠান্ডা করে কথা বলতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ ওকে স্থির দেখে তখন তিতাসই বলল,
-”সে আমার জাত শ/ত্রু। অথচ এই আমিই তাকে বুকে টেনে নিয়েছিলাম। কত সন্মান করতাম, ভালোবাসতাম। আমার খেয়ে আমার বুকেই ছুরি মারা, না? এজন্য তার বুক থেকেই আমি কলিজাখানা বের করে নিয়েছি।”
-” কি করেছে সে?”
-”অনেক কিছু।”
-”বল আমায়।”
তিতাস আর জবাব দিলো না। মুখে কুলুপ এঁটে শুয়ে রইল।
বাকি রাতটুকু না নিজে থেকে উঠল আর না ভোরকে উঠতে দিলো। ভোর ততক্ষণে হাজারটা প্রশ্নও করে ফেলেছে। তবুও তিতাস নিরুত্তর। ওভাবেই সময় গড়ালো, ঘন্টা কাটল। তাও তিতাস ভুলেও টু শব্দ উচ্চারণ করল না।একটা সময় জ্বরের ঘোরে শরীরের ভার রাখতে পারল না। নিজেই গড়িয়ে পড়ল বিছানার অপর পাশে। ভোর তড়িঘড়ি উঠে পানি এনে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করল। তিতাস তখন পুরো বেহুশ। অতঃপর বাকি রাতটুকু তিতাসের সেবা শুশ্রূষা করে পার করল ভোর। তবে মাথায় গেঁথে গেল তিতাসের বলা কথাগুলো। মনে রয়ে গেল অবাধ কৌতুহল। সকাল আটটার দিকে তিতাস হুড়হুম করে উঠে ওয়াশরুমে দৌড় দিলো। ঝটপট ফ্রেশ হয়ে জলদি শার্ট প্যান্ট পরে দৌড়ে নিচে নামল। একগ্লাস জুস খেয়ে সিদ্ধ গোটা ডিম মুখে পুরে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে প্রস্থান করল। ওর মা চেঁচিয়ে পিছু ডাকলেন তবুও শুনল না। বরং
বেরিয়ে যেতে যেতে চেঁচিয়ে উত্তর দিলো,
-”আমার হয়ে ভোরকে ‘আই লাভ ইউ’ বলে দিও তো আম্মু। অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার, বলতে গেলে আরো দেরি হয়ে যাবে।”
একথা বলে সে বাইক নিয়ে দ্রুত গতিতে ছুট লাগাল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চোখের আড়াল হয়ে গেল। ওর মা ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশার শ্বাস ফেললেন। মাঝে মাঝে বুঝেন না, ডাক্তারী পড়তে পড়তে ছেলেটা পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি।না প্রচন্ড মানসিক চাপে এমন ভুলভাল কথাবার্তা বলে ফেলছে। নতুবা এমন ধরনের কথা কেউ কারো মাকে বলে?
ছেলের কথা উনি কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলেন। চাচী পরোটা ভাজতে ভাজতে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছেন। ভোর এক সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে রুমের দিকে পা বাড়াল।তিতাস
আসলেই বেহায়া। মাথায় বোধবুদ্ধিটুকুও নেই। এসব বলার মানে হয়! এজন্য ছোট বয়সের কাউকে বিয়ে করতে হয় না।
এরা পরিস্থিতি বুঝে না। ভোর তিতাসকে বকতে বকতে হঠাৎ তার গতরাতের কথা মনে হলো। কালবিলম্ব না করে ঝটপট
আয়মানকে কল দিলো। চারবারের বেলায় আয়মান রিসিভ করে বলল,
-”তুমি ঠিক আছো? হঠাৎ এত সকালে?”
-”আসলে তোমাকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছি৷ তাই অসময়ে কল দিলাম, আমি দুঃখিত।”
-”এই না, না, না, বরং আমি খুশি হয়েছি। তোমার যখন ইচ্ছে কল দিবা।”
-”আচ্ছা। ”
-”আজ হসপিটালে যাবে ভোর?”
-”আমি ছুটিতে আছি। আমার রিফ্রেশমেন্টের প্রয়োজন তাই আর কি।”
-”আমি ভেবেছি তিতাস হয়তো জোর করে আঁটকে রেখেছে।
হসপিটালেও যেতে দিচ্ছে না। তারমানে হসপিটালের খবরও জানো না দেখছি। তিতাস এখন হসপিটালে গিয়ে নার্সদের সঙ্গে রাশলীলা চালায়। লাজ-লজ্জার বালাইও নেই, ছিঃ!”
-”হুম।”
ভোরের যা জানার জেনে দ্রুত কল কাটল। অহেতুক বকার ইচ্ছে তার নেই। তাছাড়া আয়মানের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবগত সে। ওর বাবা তাকে সবটা জানিয়েছেন। ভোর এবার চিন্তায় পড়ে গেল। আয়মান দিব্যি সুস্থ আছে, সব ঠিকঠাক আছে। বরং শুয়ে বসে শয়তানি বুদ্ধি পাকাচ্ছে। তাহলে তিতাস কার কথা বলল? কে তার জাত শত্রু? উফ, এসব জটলাতে তার মাথা ঝিমঝিম করছে। এখন তিতাস না আসা অবধি কিচ্ছু জানা যাবে না। সে বা তাড়াহুড়ো করে কোথায় গেল? তবে কী সত্যি সত্যিই কারো কলিজা কুকুরকে খাওয়াতে গেল? তাছাড়া তার তো কোথাও যাওয়ার কথা না। গতরাতে খেতে বসে সেই বলেছে অনেক পড়া বাকি। সেগুলো কমপ্লিট করা লাগবে, বাজার টাজারে যেতে পারে না। হতে পারে, বাজারে যাওয়া ভয়ে পড়ার অজুহাত দেখিয়েছি। ফাঁকিবাজি করেও কী ভাবে ইন্টার্ণ অবধি এসেছে কে জানে। তখন নিচে থেকে শাশুড়ির ডাক শুনে ভোর সেদিকে পা বাড়াল। কিছুক্ষণের জন্য ভুলেও গেল গতরাতে ভ/য়ং/ক/র সেই কথাটা।
তিতাস কাজ সেরে ঘন্টা দু’য়েক পরে শিষ বাজাতে বাজাতে বাসায় ফিরল। তার মন বেজায় খুশি। ড্রয়িংরুমে ঢুকে দেখে রোজা বসে টিভি দেখছে। এটা কেন জানি তার পছন্দ হলো না। সে বিনাবাক্য টিভি বন্ধ করে চলে গেল৷ রোজা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর বিরক্ত হয়ে পুনরায় টিভি চালু করল।এখন গোপাল ভাঁড়ের নতুন পর্ব হচ্ছে, তাকে দেখতেই হবে। নয়তো বুদ্ধি বাড়বে না। বড় হয়ে গোপাল ভাঁড়ের মতো বুদ্ধিমান হতে চায় সে। তারপর ছোট মিয়াকে কথায় কথায় বোকা বানিয়ে টাকা হাতাবে। সেই টাকা দিয়ে তার পা ঠিক করবে বাইরের দেশের বড় বড় ডাক্তারদের দেখিয়ে। তখন তাকে কেউ আর ল্যাং/রা বলতে পারবে না। এসব ভেবে সে হেসে টিভি দেখাতে মন দিলো। তখন তিতাস পুনরায় ফিরে এসে রোজার সামনে দু’টো চকলেট রেখে ‘খা টেপি’ বলে পা বাড়াল। রোজা চকলেট পেয়ে জবাব দিলো,” লাভ ইউ ছোট মিয়া।”
তিতাসের বাবা তখন বিপরীত পাশের সোফায় বসে পেপার পড়ছিলেন। উনি ছেলের কান্ডখানা দেখেও অতি শান্তভাবে বললেন,
-”আব্বু শুনে যাও।”
বাবার এমন আদুরের ডাকের কারণ তিতাসের অজানা নয়। তাই সে সেখানে দাঁড়িয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,
-”পারব না। এবার আগে ভিজিট তারপর চিকিৎসা।”
-”তাহলে তোর একটা সিক্রেট ভোরকে বলে দিবো।”
-”বলেই দেখো। তোমার ফোন নং পাবলিক টয়লেটে,’এঞ্জেল পরী’ নামে লিখে আসব। সেই সঙ্গে নিচে ফাস্ট ব্রাকেট দিয়ে লিখে দিবো, ‘সু-প্রেমিকের সন্ধান চাই।”
-‘আমি তোর বাবা হই, বে/য়া/দ/ব।”
-”তো? এমন বাবা আমার দরকার নেই। আম্মুকে বলে বাবা চেঞ্জ করে আনব আমি।”
একথা বলে সে শিষ বাজাতে বাজাতে রুমে চলে গেল। আর ওর বাবা বসে কপাল চাপড়ালেন। মনে মনে দোয়া করলেন, এমন বে/য়া/রা ছেলে যেন কারো ঘরে জন্ম না হয়। নয়তো বাবারা জীবনেও সুখ শান্তি পাবে না। ছেলের জ্বালাতে জ্বলে পু/ড়ে ম/র/বে। তখন ভোর রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে হাত মুছে উনার সমস্যা জানতে চায়ল। সে বাসায় আছে, তাকে বললে
এতক্ষণে সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। কিন্তু তিতাসের বাবা বলতে পারলেন না।কোষ্ঠকাঠিন্যের কথা পুত্রবধূকে জানাতে কিঞ্চিৎ লজ্জাবোধ করলেন। পূর্বের মেডিসিনের খোঁসাটাও খুঁজে পাচ্ছেন না। নিশ্চিত তিতাসের মা ফেলে দিয়েছে। এই মা ছেলে উনাকে আর শান্তি দিলো না। অন্তত খোঁসাটা পেলে পাঁজি বে/য়া/দ/ব/টাকে বলতে হতো না। আর না তার ভাব দেখতে হতো। ভোর উনাকে জিজ্ঞাসা করেও উত্তর না পেয়ে
আন্দাজমতো ওষুধ লিখে দিলো। সঙ্গে বলে দিলো কাজ না হলে জানাতে। গ্যাস্ট্রিক বা অন্য সমস্যা হলে অনায়াসে বলে দিতেন। তাছাড়া সে শুনেছে উনার কোষ্ঠিকাঠিন্যের সমস্যা আছে। তাই গাঁইগুঁই করতে দেখে সেটা ভেবেই ওষুধের নাম লিখে দিয়েছে। দেখা যাক, কাজ হয় নাকি। তিতাসের বাবা
সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে সেটা নিয়ে চলে গেলেন। ওষুধের নামটা উনি এবার লকারে তুলে রাখবেন। যাতে কোনোভাবে আর না হারায়। ভোর উনাকে যেতে দেখে হেসে নিজেও গেল রুমের দিকে।তিতাস তখন শার্ট খুলে কানে ইয়ারফোন গুঁজে
গান শুনছে আর লিখছে। সম্ভবত রাতে যেগুলো পড়েছিল, সেগুলেই লিখছে। পরখ করে দেখছে মনে আছে নাকি জং ধরে পড়াগুলো মূর্ছা গেছে। না পুরোটা লিখতে পারল দেখে কলমখানা ছুঁড়ে মেরে উঠে দাঁড়াল। ভাবখানা এমন সে সব পারে। তখন ঘুরতে গিয়ে ভোরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বললেন,
-”আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। জেরা পরে আগে আমার সঙ্গে চলুন।”
-”কোথায়?”
-”ওয়াশরুমে।”
-” ওয়াশরুমে, কেন?
-”খুব তো নিজেকে বড় বড় জপ করে আমার কানের পোকা বের করে দিয়েছেন। এবার বড় হওয়ার সকল দায়িত্ব পালন করুন।”
-”কথা না পেঁচিয়ে সোজাসাপটা বল।”
-”আমাকে শ্যাম্পু করে দিবেন, চলুন। বিনিময়ে দশখানা চুমু উপহার দিবো। সেগুলো আপনি নিজের কাছে গচ্ছিত রেখে, লজ্জায় লাল নীল হবেন। আর আমি দু’চোখ ভরে দেখব।”
-”চালাকি করে একদম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না। রাতে যেগুলো বললি সেকথা কি সত্যি?”
-”কী বলেছি মনে নাই। এখন মনে করিয়ে দেন।”
-”সে কে?”
-”সে কে আবার কী? কোন সে কে?”
-”তিতাস!”
-”আরে বাবা মনে না পড়লে কী করব?”
ভোর এবার রেগে দু’পা উঁচু করে তিতাসের গলা চেপে ধরল। এই ছেলে ইচ্ছে করে কথা বাড়াচ্ছে। যেন মূল টপিক এড়িয়ে যেতে পারে। তখন তিতাস হাট করে খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
–”আরে আরে বউ দরজাটা অন্তত বন্ধ করুন। নয়তো আমি লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারব না।”
ভোর এবার রাগান্বিত দৃষ্টি ছুঁড়ে চলেই যাচ্ছিল। কোনো কথা বলবে না সে। তখন তিতাস খপ তার হাত ধরল। ধীরে ধীরে ওর কাছে গিয়ে ধীর কন্ঠে জবাব দিলো,
-”তার নাম নাহিদ হাসান।”
-”সত্যি মেরেছিস?”
-”হুম, আর সেটা স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ।”
-”কেন? ”
-”কারণ সে ভোর চৌধুরীর অনাবৃত দেহখানা দেখে খায়েশ মিটাতে চেয়েছিল।”
To be continue…..!!