প্রিয়দর্শিনীর খোঁজে পর্ব ১২

0
639

#প্রিয়দর্শিনীর_খোঁজে❤
|| পর্ব – ১২ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

হুট করেই চট্রগ্রাম থেকে বাস ধরে রিদ বান্দরবান চলে আসে। কাউকে কিছু না জানিয়েই। পরনে হোয়াইট শার্ট, ব্লু জিন্স, শার্ট এর সাথে ঝোলানো ব্ল্যাক সানগ্লাস। কাঁধে ঝুলছে স্টুডেন্ট ব্যাগ। সব মিলিয়ে রিদের আকর্ষনীয় একটা লুক দেখা গেল আজ। বাসে যতক্ষণ ছিল কিছু মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। রিদ বান্দরবান এসেছে একটা ভিন্ন উদ্দেশ্যে। তাহনা এই উদ্দেশ্যের কেন্দ্রবিন্দু।

.
বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিদ পুরাই বোকা বনে গেল। সে বান্দরবান এসেছে ঠিকি। কিন্তু কোথায় উঠবে সেটা মাথায়ই আসছে না। মোবাইলটা নিয়ে তাহনার নাম্বারে কল দিল রিদ।
.
অনুর সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে তাহনা। অনু তাহনাকে নিয়ে ভুল ধারণায় ছিল। এখন ভুল ভেঙেছে। তাই মন ভরে আলাপ করছে তারা। অনিকের বিয়েতে কে কি করবে তাই নিয়ে। তাহনার ফোন বেজে উঠলেই তাহনা ফোন হাতে নিয়ে দেখে যে সেই বিরক্তিকর নাম্বার থেকে কল দিয়েছে। অনু জিগ্যেস করে,

‘কি হয়েছে! কে কল দিয়েছে?’

তাহনা বলে,

‘সেই নাম্বার থেকে। লোকটা বিরক্ত করছে বারবার।’

অনু তাহনার কাঁধে হাত রেখে বলে,

‘কলটা ধরো। যদি উল্টো পাল্টা কিছু বলে তাহলে আমাকে দিও। একদম টাইট দিব লোকটাকে। এতো বড় সাহস ওর, আমার মিষ্টি বোনুকে বিরক্ত করে?’

তাহনা অনুর কথা শুনে ফোনটা রিসিভ করে। রিসিভ হতেই রিদ আর তাহনাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়না। পরপর করে বলতেই থাকে,

‘তাহনা, আমি রিদ। বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। কিচ্ছু শুনতে চাইনা তুমি এসো তাড়াতাড়ি। নাহলে একটা মাইরও মাটিতে পড়বে না।’

তাহনা পিলে চমকে উঠে!

‘আ-প-নি?’

‘জলদি আসো প্লিজ।’

রিদ কল কেটে দেয়। তাহনা মনে মনে ভাবছে, তারমানে এটা রিদের নাম্বার? সে-ই এতোদিন তাহনাকে কল দিয়ে ধমক দিত? কিন্তু কেন?
তাহনাকে চিন্তায় মগ্ন দেখে অনু জিগ্যেস করে,

‘কি বলছে?’

তাহনা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বলে,

‘হ্যাঁ? না মানে। আমাকে এক্ষুণি বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে।’

তাহনা দৌড়ে অনিকের কাছে গিয়ে বলল,

‘ভাইয়া চলুন। আমার একজন পরিচিত বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়ে আছে। এখন বলেছে আমাকে নাকি যেতেই হবে। আমি না গেলে তুলকালাম বাধিয়ে ফেলবে।’

অনিক তাহনার কথা শুনে বাইক বের করে। তাহনা মাস্ক পড়ে মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে অনিকের সাথে বাসস্ট্যান্ডের দিকে চলে যায়।

🌼
রাইশা সকালে উঠে দেখলো যে তার রুমে এক বক্স চকলেট আর একটা হলুদ কালারের চিরকুট। রাইশা চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়লো,

‘আমি চাই তুই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বোন হ। শুভ জন্মদিন বোন। – রিদ।’

রাইশা খুব খুশি হয়। কিন্তু রিদের ঘরে গিয়ে দেখে সে নেই। মায়ের কাছে শুনেছে রিদ নাকি বান্দরবান গেছে। রাইশা আর কিছু বলে না। কিন্তু মন খারাপ হয় ভিষণ। প্রতিটি জন্মদিন তার ভাই অনেক স্পেশাল করে তোলে। আজ সে নেই। রাইশার বান্ধবীরা এসে বাসায় ভিড় করে। রাইশা খুশি হয়। বান্ধবীরা তাকে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে। রাইশার মাও অনুমতি দিয়ে দেন। নিজের রুমে এসে রেড়ি হয়ে বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে গেল রাইশা।
.
৫ মিনিটের মধ্যে তাহনারা বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছায়। রিদকে দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি বাইক থেকে নেমে যায় তাহনা। রিদ তাহনাকে দেখেই খুশি হয়। তাহনা রিদের সামনে এসে বলে,

‘আপনি এখানে কি করছেন? আর এতদিন আপনিই আমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করতেন? ভাইয়া আপনি তো এমন নন। তাহলে এসব কেন করলেন? কেন বলুন?’

তাহনার কথায় রিদ বলে,

‘মাত্র এলাম কোথায় থাকবো আগে সেটা বলো, পরে সব বলবো।’

তাহনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘কোথায় থাকবেন মানে? আপনি এখানে কিসের জন্য এসেছেন আমি তা কিভাবে বলবো?’

তখন অনিক এসে ওদের মাঝখানে ঢুকে বলে,

‘তাহনা? এটা তোমার বয়ফ্রেন্ড?’

তাহনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিদ অনিককে বলে,

‘শুধু বয়ফ্রেন্ডই নয়। আমি ওর হবু হাসবেন্ড।’

তাহনার সব মাথার উপর দিয়ে যায়। এদিকে অনিক সাথে সাথেই রিমিকে কল দিয়ে বলে।

‘রিমি, জলদি বাসস্ট্যান্ডের পাশের রেস্টুরেন্টে আসো। আজ একজন ট্রীট দিবে তোমাকে।’

তাহনা রিদকে বলে,

‘ভাইয়া? মাথা ঠিকাছে আপনার? কিসব বলছেন আপনি?’

‘তার আগে তুমি এটা বলো যে, ছেলেটা সে-ই না? যাকে আমি তোমার সাথে ছবিতে দেখেছিলাম?’

তাহনা ছোট করে বলে,

‘হ্যাঁ।’

অনিক রিদকে বলে,

‘ভাইয়া উই আর জাস্ট কাজিন’স। সামনে আমার বিয়ে। ততদিন আপনি আমার বাড়িতেই থাকবেন। আর এখন আমাকে আর আমার হবু বউকে ট্রীট দিতে হবে। সে আসছে। তাহনার হবু বর বলে কথা।’

রিদ হেসে বলে,

‘অবশ্যই। আর আমার বিয়েটাও তোমাদের সাথে করতে চাই। আই হোপ তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।’

অনিক খুশি হয়ে বলে,

‘এটা তো আরো ভালো খবর। সব ব্যবস্থা আমার। ওই যে আমার বউ চলে আসছে। রেস্টুরেন্টে চলুন।’

তাহনা এখন কিছু বলে না। যা বলার একেবারে বাড়ি ফিরেই বলবে। রিদ একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে। কিসের হবু বর ও? এসব মিথ্যা গল্প কেন সাজাচ্ছে রিদ?

ওরা চারজন মিলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে হাত মুখ ধুঁয়ে অর্ডার করা খাবার খেতে নিল। রিদ বেশ ভাব জমিয়ে ফেলেছে রিমি আর অনিকের সাথে। হাসছে আর খাচ্ছে। এদিকে তাহনার রাগ হচ্ছে ভিষণ। সে চুপচাপ খেতে লাগে।
.
🌼
এদিকে একটা বিশাল কাণ্ড ঘটে গেছে। রাইশা আর তার বান্ধবীরা মিলে নদীর পাড়ে ঘুরতে এসেছিল। কিন্তু আচমকাই রাইশার পা মুচড়ে সে নদীতে পড়ে যায়। রাইশার বান্ধবীরা চিৎকার দিয়ে উঠে। রাইশা সাঁতার জানে না। শুধু রাইশা কেন, তার বান্ধবীর কেউই সাঁতার জানে না। রাইশা পানিতে ঝাপাঝাপি করছে। না পারছে উঠতে আর না পারছে পানিতে থাকতে।

রাফি তার বন্ধুদের সাথে নদীর পাড়ে ঘুরতে আসে। ঠিক তখনই চিল্লাচিল্লির আওয়াজ পেয়ে রাফি দ্রুত সেখানে যায়। গিয়ে দেখে একটা মেয়ে পানিতে ঝাপাঝাপি করছে। তার বন্ধুরা বলছে সে সাঁতার জানে না। রাফি তখনও জানে না যে এই মেয়েটা কে। রাফি হুট করেই নদীতে লাফ দেয়। সাঁতার কেটে মেয়েটার কাছে যায়। তাকে ধরে আস্তে আস্তে সাঁতার কেটে নদীর কিনারায় নিয়ে আসে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা আর কেউ নয় রাইশা।

রাইশার বান্ধবীরা দ্রুত রাইশার কাছে এসে রাইশার নাম ধরে ডাকতে থাকে৷ রাফি ওদের বলে রাইশার পেটে পানি ঢুকে গেছে, হাত দিয়ে চেপে যেন পানি বের করে নেয়। রাইশার বান্ধবীরা রাফির কথা শুনে রাইশার পেটে চাপ দিয়ে ভিতর থেকে পানি বের করে নেয়। রাইশা কাশতে থাকে। তারা রাইশাকে ধরে উঠে বসায়। রাইশা তার পাশে রাফিকে দেখে অবাক হয়। তখন রাইশার বান্ধবীরা বলে রাফিই তাকে বাঁচিয়েছে।

রাফি তাকে বলে,

‘এভাবে ভিজে কাপড়ে থাকবেন না। অটো দিয়ে বাসায় চলে যান।’

রাইশার হাত ধরে উঠিয়ে রাস্তায় নিয়ে আসে রাফি। রাইশার জন্য একটা অটো ঠিক করে দেয়। সবাই অটোতে বসে রাফিদের কাছ থেকে বিদেয় জানায়।
.
এদিকে তাহনারা বাসায় আসতেই তাহনার মামা মামি রিদকে দেখে প্রশ্ন করে। তখন অনিক পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে রিদ তার বন্ধু। তারা আর কিছু বলেন না। এদিকে রিদকে দেখে অনু পুরোই ফিদা। ক্রাশ খেয়ে বসে আছে সে রিদের উপর। তার আর কিছুই খেয়াল নেই যে সকালে তাহনা একটা ছেলের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল আর সে-ই ছেলেটাই রিদ। রিদের জন্য একটা ভালো রুম দেওয়া হয়। অনু রিদকে সেখানে নিয়ে যায়। তাহনা রিদের সামনেই আসেনা আর।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here