প্রিয়তার প্রহর (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) পর্ব ১৩

0
86

#প্রিয়তার_প্রহর (২য় পরিচ্ছেদ )
পর্ব সংখ্যা (১৩)

রাত্রির মাঝ ভাগ। ঘড়ির কাঁটা চলছে নিজের খেয়ালে। আশপাশের কোনো বাড়িতেই আলো নেই। অদূরে রাস্তায় থাকা ল্যামপোস্টের ক্ষীণ আলো জ্বলছে। অপার সৌন্দর্যের এই শহরটাকে নিস্তব্ধ দেখাচ্ছে। প্রিয়তার চোখ যায় আকাশের দিকে। তাকিয়ে থাকে খানিকক্ষণ। নেত্রপল্লব ভিজে একাকার হয়। আলগোছে মুছে নেয় নোনা জল। প্রহরের হাতের মুঠোয় হাত চেপে ধরে ছাদের কোণে বসে আছে প্রিয়তা। মাঝে মাঝে নাক টানছে। হেচকি উঠছে অনবরত। নাক লাল করে ফেলেছে মেয়েটা। অন্ধকারে ও চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। প্রহর ফোনের বাটন চেপে সময়টা দেখে নেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে। প্রিয়তার হাতের পিঠে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বলে,

” আর কাঁদে না। মাথা ব্যথা করবে।

প্রিয়তা শোনে না। ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁত দিয়ে। মোলায়েম কণ্ঠে বলে,

” থামাতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে খুব।

” অনেক রাত হয়েছে প্রিয়তা। ঘুমোবেন চলুন। অনেকটা জার্নি করেছেন। অসুস্থ হয়ে পড়বেন এবার।

প্রিয়তা ঘাড় বাঁকায়। ঘুম আসছে না তার। প্রহরের দিকে না তাকিয়ে বলে,
” আব্বু আমাকে ভালোবাসে না। একটুও না। আব্বু আমাকে আরো কয়েকবার কাছে ডাকতে পারতো, আরো কয়েকবার আমার কাছে ক্ষমা চাইতে পারতো। কই, করলো না তো। সম্পত্তি নিয়ে কথা বলে গেল শুধু। আমার সম্পত্তির ভাগ চাই না। বিশ্বাস করুন আব্বুর টাকা-পয়সার প্রতি লোভ নেই আমার। কিন্তু আব্বু যদি একবার তার সম্পত্তির কিয়দংশ অংশ আমাকে দিতে চাইতো, একবার যদি বলতো প্রিয়তার দায়িত্ব আমি নিবো, তাতেই আমি খুশি হয়ে যেতাম। মনে করতাম আব্বু আমাকেও নিজের উত্তরাধিকারী ভাবছে। কোনো কিছুই চাইতাম না আমি। শুধু মুখ থেকে একবার শুনতাম। কিন্তু সেটা তো হলো না। আব্বুর চিন্তা শুধু আরহামকে ঘিরে। ওর ভবিষ্যত নিয়ে আব্বু ভাবছে। আমার নিজের দায় নিজেকেই নিতে হবে।

প্রহর কি বলবে ভেবে পায় না। বাবা-মেয়ের এই দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না সে। প্রিয়তাকে সান্ত্বনা দিতে বলে,

” দিলেও আপনি নিতেন না। হয়তো এটা ভেবেই দেয়নি। কিন্তু আপনার দিক থেকে আপনি ঠিক। উনি আপনাকে মানানোর চেষ্টা করতে পারতেন।

” আমি কি ভুল করেছি প্রহর? কেন আমার সাথেই এমন হয়?

” ভুলটা আপনার নয় প্রিয়তা, ভুল আমাদের এই সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আপনার আব্বু ঘরে অমন সুন্দরী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য নারীতে বিমোহিত হয়েছেন। আপনার আম্মু এমন সুদর্শন, ধনী স্বামী থাকা সত্ত্বেও পরপুরষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়েছেন। আপনাদের কথা উনাদের মাথায় আসেনি তখন। উনাদের এই অবৈধ সম্পর্কের মাঝে আপনাকে আর আরহামকে এমন ভাবে পিষে দেওয়া হয়েছে যে আপনারা চাইলেও মাঝ থেকে বের হতে পারছেন না। আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার আব্বু-আম্মু অন্য সংসারে গিয়ে বেশ সুখে আছেন। কিন্তু আপনি জানেন কি, কারো সুখ কেড়ে নিয়ে কেউ সুখী হয় না, হতে পারে না। আপনার আম্মু, আব্বুর মাঝে এক ফোঁটা কষ্ট হলেও আছে। এতদিনে হয়তো উনারা দুজনই আপনার ভালোবাসা অনুভব করতে পারছেন। উনারা একটা সময় ঠিকই নিজেদের কর্মফল পাবেন। আপনাকে অভিশাপ ও দিতে হবে না। প্রকৃতি নিজেই প্রতিশোধ নিবে।

প্রিয়তা গা এলিয়ে দেয়। মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগে তার। ঘাড়ে প্রিয়তার চুলের ছোঁয়া পায় প্রহর। মুচকি হাসে। প্রিয়তা প্রশান্তিতে চোখ বুজে নেয়। ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে,

” আপনার ঘাড়ে মাথা রাখলে এত শান্তি লাগে কেন প্রহর?

নিঃশব্দে হাসে প্রহর। প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

” বুকে মাথা রাখুন প্রিয়, আরো সুখ পাবেন।

সময় গড়ায়। প্রহর তাড়া দেয় ঘরে ফেরার জন্য। এগারোটার দিকে প্রহর নিজের বাড়িতে প্রিয়তাকে নিয়ে ফিরেছে। প্রিয়তাকে দেখা মাত্র নাবিলা উত্তেজিত হয়ে চুমু খেয়েছেন প্রিয়তার ললাটে। আরহামকে উনি নিজের কাছে রেখেছেন। রান্না করেছিলেন কয়েক পদ। প্রিয়তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছেন। সবাইকে ঘুমোতে বলে নিজেও ঘুমিয়েছেন। কিন্তু প্রিয়তার আব্বুর চিন্তায় ঘুম আসে না। ছাদে আসে। ডেকে নেয় প্রহরকেও। দুজনে একসাথে আকাশ দেখে। এত রাত হওয়ায় প্রহর পাঠিয়ে দেয় প্রিয়তাকে। কাঁথা টেনে দেয় শরীরে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

” ধৈর্য ধরুন প্রিয়তা। সুখ আসবেই। কান্নাকাটি করবেন না। ঘুমোনোর চেষ্টা করুন। আপনাকে এভাবে ভেঙে যাওয়া মানায় না। আপনাকে শক্ত হতে হবে। এ প্রিয়তাকে আমি ভালোবাসিনি। আমি ভালোবেসেছি এমন একটি মেয়েকে যে সংগ্রাম করতে জানে। আপনি এক উত্তপ্ত হরিদ্রাভ অনল প্রিয়তা। কখনো আলো দেন, উষ্ণতা দেন, কখনো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভষ্ম করেন সর্বাঙ্গ।

________

প্রিয়তার ঘুম ভাঙে বেশ বেলা করে। রাতে মাথা ব্যথায় এপাশ ওপাশ করে আরো পরে ঘুম ধরেছিল প্রিয়তার। সকালের সতেজ রোদ মুখে পড়ায় ঘুম ছুটে যায় তার। মিষ্টি হেসে বিছানা ছাড়ে। জানালার সম্মুখে দেওয়া পর্দা ভালো করে সরিয়ে দেয়। বাড়িটা আজ অন্যরকম লাগছে প্রিয়তার নিকট। আগে এ ফ্ল্যাটে ঢুকতে ভয় পেত প্রিয়তা। আর এখন? এখন এ ফ্ল্যাটের হাওয়াটাও দারুন লাগে। মাংসের গন্ধে বাড়িটা ম ম করছে। ওড়না জড়িয়ে বের হতেই দরজার আড়াল থেকে ভো জাতীয় শব্দ করল আরহাম। প্রিয়তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টায় সফল হলো। আচমকা সামনে এসে শব্দ করায় ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল প্রিয়তা। ঘটনা বুঝতে পেরে রাগমিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠল,

” এইসব কি ধরনের ফাইজলামো আরহাম? ভয় পেয়েছি না?

আরহাম খুশি হয় বোনকে ভয় দেখাতে পেরে। জোরে হাত তালি দিয়ে বলে,
” প্রহর ভাইয়া বলেছে তুমি নাকি ভয় পাও না। তাই টেস্ট করছি। আমার কোনো দোষ নেই।

প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকায়। বলে,
” উনার কথা শুনো কেন? উনি এইসব বাজে বকেই। মানুষ মাত্রই ভয়। প্রত্যেকটা মানুষ ভীতু। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আমরা সবাই ভিতু। কেউ পশুপাখিকে ভয় পায়, কেউ শব্দতে ভয় পায়, মানুষে ভয় পায়, আবার কিছু মানুষ ভালোবাসায় ও ভয় পায়। ভয় পাই না এটা যে বলে সে মিথ্যে বলে। ভয় সবার মাঝেই আছে। বুঝেছো?

আরহাম পুরোটা না বুঝেও মাথা নাড়ে। প্রিয়তা ড্রইংরুমে আসে। সেখানে কেউ নেই। ডাইনিংরুমে প্রবেশ করে প্রিয়তা। বড়সড় টেবিলটায় বসে আছে নিধি। এটা ওটা ঠিকঠাক করছে মিসেস নাবিলা। প্রিয়তাকে দেখে প্রফুল্ল হলো নিধি। দাঁত বের করে হাসল। এগিয়ে এসে প্রিয়তাকে চেয়ারে বসাল। বলল,

” দেখো তোমার জন্য আজ কত আয়োজন। বসো বসো। আমি যে কতটা খুশি হয়েছি তুমি আসবে জেনে, বলে বোঝাতে পারবো না।

প্রিয়তা চারপাশ অবলোকন করে টেবিলে বসল। মিসেস নাবিলা প্রিয়তাকে দেখে হাসলেন। বললেন,

” তোমাকে আরো আগে ডাকতে চাইলাম। সক্কাল সক্কাল উঠে আমি রান্নাবান্না করে রেখেছি। ডাকতে যাবো অমনি প্রহর বললো তুমি অনেক রাত করে ঘুমিয়েছো। এখনই যেন না ডাকি। তাই চলে এলাম। ডাকলাম না।

প্রিয়তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। টলমল করে ওঠে চোখের কার্ণিশ। নাকের ডগা রক্তিম রঙ ধারণ করে। মিসেস নাবিলা হাত ধুয়ে বিরিয়ানির প্লেট থেকে খাবার তুলে দেয় প্রিয়তার মুখে। মনে মনে প্রিয়তা বলে,

” এত সুখ আমার সইবে আদৌ?

প্রহর আসে টেবিলে। প্রহরের পরণে ছাই রঙা শার্ট। শার্টের হাতা ফোল্ড করা। অগোছালো চুলগুলো চোখের সামনে এসে হানা দিচ্ছে। প্রিয়তাকে দেখে গাঢ় হাসল প্রহর। প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে বলে,

” শুভ সকাল।

প্রিয়তা হেসে ফেলে ফিক করে। ঝলমলিয়ে ওঠে মুখশ্রী। বলে,

” এখনো সকাল? দেখুন দুপুর হয়ে গেছে।

নিধি হেসে ফেলে প্রিয়তার কথায়। বলে,

” ভাইয়া দেখি দিন-দুনিয়া ভুলে গিয়েছে। সকালে উঠে আবার গিয়েছিল ঘুমোতে। আপুর চিন্তায় আজকাল রাতে ঘুম হচ্ছে না ভাইয়ার। কি ঠিক বলছি তো?

প্রহর হাসে। উত্তর দেয়,
” রাতে ঘুম আসেনি। ফোন চেপেছি। সকালের দিকে একটু ঘুম হলো। তবে তোর কথা পুরোটা মিথ্যে নয়।

প্রহর আড়চোখে প্রিয়তার দিকে চায়। নজর সরে না প্রিয়তার থেকে। প্রিয়তা বুঝতে পারে প্রিয় পুরুষের গভীর চাহনি। অসস্তিতে আটশাট হয়ে বসে থাকে। নিধি খেতে খেতে প্রিয়তাকে বলে,

” আমার ভাইয়াকে কবে বিয়ে করবে প্রিয়া আপু?

প্রিয়তা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়। এক ঝলক প্রহরের দিকে তাকিয়ে চোখ সরায়। বুকের ভিতরটা ধক করে উঠে। বিয়ে শব্দটা শুনে কম্পিত হয় প্রিয়তার বেখেয়ালি মন। চিবুকে মাথা ঠেকে। নিধি হেসে ফেলে প্রিয়তাকে লজ্জা পেতে দেখে। প্রহর খাবার চিবুতে চিবোতে বলে,

” উনাকে রাজি কর। আজই বিয়ে করবো।

প্রিয়তা দ্রুত মাথা উঁচু করে। বিস্ময় চেপে ধরে চোখেমুখে। শৈথিল্যময় কণ্ঠে বলে,

” বিয়ে করবো বললেই কি বিয়ে করা যায়?

ব্যস। খাওয়া বন্ধ হলো প্রহরের। হাসিখুশি মুখটা নিমেষেই অন্ধকারে ছেয়ে গেল ছেলেটার। গম্ভীর হলো মুহুর্তেই। কণ্ঠ ধারাল হলো বেশ। মিসেস নাবিলার উদ্দেশ্যে বলল,

” আমি আজ রাতেই বিয়ে করবো মা। আয়োজনের কোনো দরকার নেই। এই মেয়ের ডিসিশন একটু পর পর বদলায়। আমি রিস্ক নিব না।

পুনরায় নিধির উদ্দেশ্যে বলল,
” তুই শপিং শুরু করে দে বোনু। আজ এই বাড়িতে আমার আর প্রিয়তার বিয়ে হবে ইন শা আল্লাহ্।

চলে যায় প্রহর। প্রিয়তা হকচকিয়ে ওঠে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বলে,

” কিন্তু এখনই কিভাবে?

মিসেস নাবিলা খুশিমনে বলেন,
” তুমি শুধু সেজেগুজে কবুল বলবে। বাকিটা আমরা দেখে নিবো। আমার ছেলের সংসার আজ আমি সাজিয়ে দিবো।

______

গাড়ির ফ্রন্ট সিটে প্রহরের পাশেই প্রিয়তা বসে আছে। পরণে মিষ্টি রঙের থ্রিপিস আর মাথায় হিজাব। লিপবামের কারণে তৈলাক্ত লাগছে ঠোঁট। আরহাম আসাতে চেয়েছিল। মিসেস নাবিলা ছেলেটাকে আসতে দিলেন না। বিকেলে নাকি আলাদা করে আরহামকে নিয়ে মার্কেটে যাবেন উনি। প্রহর আর কথা বলেনি প্রিয়তার সাথে। মিসেস নাবিলা দুজনকে পাঠিয়েছেন বিয়ের কেনাকাটা করতে। শপিং করেই ইহানের বাসায় যাওয়ার প্ল্যান আছে প্রহরের। পাশে বসে থাকা নির্বাক, নিশ্চুপ রমণীর প্রতি অভিমান জমেছে বেশ। কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে না প্রহর। প্রিয়তার প্রিয় পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনতে ইচ্ছে হয়। হাঁসফাঁস করে কিছুক্ষণ। কাছু বলতে চেয়েও চুপ থাকে। নিচু কন্ঠে প্রশ্ন করে,

” আপনার কোন রঙ পছন্দ?

প্রহর ড্রাইভিং করতে করতে প্রিয়তার দিকে তাকায় গভীর ভাবে। নজর সরে গেলেও মুখ থেকে কথা বের হয় না। প্রিয়তা পড়ে বেকায়দায়। সহ্য হয় না প্রহরের এমন অভিমানী মুখ। পুনরায় বলে ওঠে,

” কোন মার্কেটে যাচ্ছি আমরা?

প্রত্যুত্তর করে না প্রহর। নিরাশ হয় প্রিয়তা। মন খারাপ হয় প্রচণ্ড। বড় বাজারে আসে তারা। নেমে পরে প্রহর। সম্মুখে এগিয়ে যায় দ্রুত গতিতে। প্রিয়তাও পিছু হাঁটে। নত মুখে প্রহরের পা অনুসরণ করে শুধু। কিছুক্ষণ বাদে পা থামায় প্রহর। প্রিয়তার গতি কমে না ঠিক সময়ে। ততক্ষণাৎ ধাক্কা খায় প্রহরের পিঠের সাথে। প্রিয়তার নাক বরাবর মেরুদণ্ড ঠেকে প্রহরের। ব্যথা পায় প্রিয়তা। নাক ডলে। প্রহর কতটকু লম্বা? ধারণা করে প্রিয়তা। সে পাঁচ ফুট সাড়ে তিন ইঞ্চি। প্রহর তার থেকে কম করে ছয়- সাত ইঞ্চি লম্বা। স্বাস্থ্যবান, প্রশস্ত শরীরের অতি নিকটে এলে প্রহরের চিবুক নজরে আসে প্রিয়তার। প্রহর প্রিয়তার দিকে ফিরে। ভ্রু বাঁকায়। গম্ভীর স্বরে বলে,

” কিভাবে হাঁটছেন? ধাক্কা খান কিভাবে?

প্রিয়তা মিইয়ে যায়। লোকটা এমন কেন? একটু ভালো করে কথা বললে কি হয়? মিনমিনে স্বরে সে বলে,

” আপনাকে অনুসরণ করেই চলছি। আপনিই বা মাঝ পথে থেমে গেলেন কেন?

প্রহর বড় শ্বাস ফেলে। সংগ্রামী, পরিপক্ক,কঠোর মেয়েটা তার নিকটে এলেই কেমন বাচ্চা হয়ে যায়। হারিয়ে ফেলে ইগো। প্রিয় পুরুষের সান্নিধ্য পেতে নত করে মাথা। ভালো লাগে প্রহরের। মনে মনে হাসে সে। কণ্ঠ দমে। স্বাভাবিক স্বরে বলে,

” ব্যথা পেয়েছেন?

প্রিয়তা পিটপিট করে তাকায় প্রহরের দিকে। ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,

” পেয়েছি। এমন স্থানে ব্যথা পেয়েছি যে চাইলেও আপনাকে দেখাতে পারবো না।

প্রহরের ললাটে ভাঁজ পড়ে। চিন্তা বাড়ে। গাম্ভীর্য তলিয়ে যায় যত্নের কাছে। প্রিয়তার এক বাহু ধরে প্রহর। চিন্তিত স্বরে বলে,

” কোথায় ব্যথা পেয়েছেন? আমায় দেখাবেন না কেন? বেশ, ঠিক আছে। আমাকে বলতে হবে না। সামনের হসপিটালে মহিলা ডক্টর আছে। চলুন এক্ষুণি।

প্রিয়তা হেসে ফেলে শব্দ করে। হাসতে হাসতে পানি জমে চোখে। প্রহর ছোট ছোট করে ফেলে চোখ। প্রিয়তার হাসি থামে। দম নিয়ে বলে,

” সবসময় উল্টো বুঝেন কেন? আপনি কথা বলছেন না আমার সাথে তাইতো আমার বুকে ব্যথা হচ্ছে। বুকের ব্যথা কি দেখানো যায়? এই ব্যথা সেই ব্যথা না।

ব্যস রাগ কমে প্রহরের। আলতো চড় মারে প্রিয়তার মাথায়। হাতে হাত গুঁজে সামনে এগোয়। অনেকগুলো দোকান ঘুরে লেহেঙ্গা দেখে প্রিয়তা। পছন্দ হয় না কোনোটাই। শেষে শাড়ি কিনতে ইচ্ছে হয় প্রিয়তার। জ্ঞান হবার পর থেকে এ পর্যন্ত কখনো শাড়ি পড়েনি সে। ওয়েস্টার্ন পোশাক পড়তো আগে। বাড়ি ছেড়ে আসার পর ওয়েস্টার্ন শব্দটি উচ্চারণও করে না সে। প্রহর একটি গাঢ় খয়েরি রঙের শাড়ি বেছে দিল। সাথে ম্যাচিং করে লিপস্টিক থেকে শুরু করে সবই কিনল। বাড়ি ফেরার পথে ফোন এলো প্রহরের। ফোনের স্ক্রিনে দীপার নম্বর ভেসে ওঠায় চমকাল প্রহর। ধীরেসুস্থে ধরল কলটা। বলল,

” হ্যালো।

ওপাশ থেকে দীপা কিছু বলে ওঠে। কয়েক সেকেন্ড বাদে কল কাটে প্রহর। থমকে যায় চলাফেরা। প্রিয়তা জিজ্ঞেস করে,

” কে ফোন দিয়েছিল?

প্রহর সময় নিয়ে বলে,
” দীপা খন্দকার। আপনার সৎ মা।

প্রিয়তা অবাক হয়। আব্বুকে নিয়ে চিন্তাও হয় খানিক। বলে,
” কি বললেন উনি?

” আপনার আব্বু মারা গেছেন প্রিয়তা।

প্রিয়তা থমকায়। থমকে যায় প্রিয়তার জগত। যন্ত্রণা শুরু হয় বুকে। হৃদস্পন্দন থামে। কম্পিত হয় মোলায়েম দেহ। চোখের পাতা এক হয় না প্রিয়তার। বাকরুদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। চোখে পানি জমে। জড়তা কাজ করে কণ্ঠে। কণ্ঠ পেঁচিয়ে আসে। নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে প্রহরের দিকে। সময় নিয়ে কম্পিত স্বরে থেমে থেমে বলে,

” আব্বু নেই?

চলবে?
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ

[ পরের পর্বে বিয়ে দিবো প্রিয়তার। চিন্তা নেই। পর্বটা ছোট হলো সেজন্য দুঃখিত। পরবর্তী পর্ব তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবো। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here