প্রস্থান — ২৯তম পর্ব।
রিফাত হোসেন।
৩৬.
আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে চিত্রা। রশ্মি বসে আছে বিছানায়। পূবের জানালা দিয়ে সূর্যের একফালি রোদ আছড়ে পড়েছে চিত্রার উপর। ওর চুলগুলো আলোতে চকচক করছে। মাত্রই গোসল করে ঘরে এসেছে সে। আজ শ্বশুর বাড়িতে যাবে, তাই এই প্রস্তুতি। মুখে হালকা করে মেকাপ করল। ঠোঁটে লিপস্টিক দিলো। পরণের জামাটা খয়েরী রঙের। কানে দুল পরল। হাতে কিছু কাঁচের চুড়ি পরল। বিয়ের সময় যে আংটিটা পরানো হয়েছিল তাকে, সেটা গতকাল খুলে রেখেছিল, আজ আবার পরল। এরপর চুলগুলোর পিছনে হাত রেখে নিজেকে আয়নায় পরখ করে দেখল, কোথাও কমতি রইল কী-না!
চিত্রার দিকে তাকিয়ে, রশ্মি মুচকি হেসে বলল, “যতক্ষণে বাড়িতে যাবে, তোমার স্বামী তো ততক্ষণে অফিসে চলে যাবে। তাহলে কার জন্য এর সাজুগুজু করছ শুনি?”
চিত্রা হো হো করে হেসে উঠল রশ্মির কথা শুনে। রশ্মি সঙ্গে সঙ্গে বলল, “এভাবে হেসো না। লিপস্টিক খারাপ হয়ে যাবে।”
“হোক।” ঠোঁটের কোণে হাসি স্থির রেখে আয়নার সামনে থেকে চলে এলো চিত্রা। বিছানায়, রশ্মির সামনে বসতে বসতে বলল, “তোমাকে কে বলল আমি ফিরোজের জন্য সাজছি?”
“নয় বুঝি?”
চিত্রা ‘না’ সূচক মাথা ঝাঁকাল। রশ্মি আবার বলল, “তবে কার জন্য?”
মিটমিট করে হেসে চিত্রা বলল, “ওই বাড়িতে আর পুরুষ নেই নাকি? সুব্রত ভাই আছে না? উনার জন্য।”
ভড়কে গেল রশ্মি! ছানাবড়া হয়ে যাওয়া দৃষ্টি চিত্রার দিকে স্থির রেখে বলল, “তুমি সুব্রত ভাইয়ের জন্য সেজেছ? কিন্তু কেন?”
“ধাক্কা খেলে বুঝি?” মুখে চেপে হাসল চিত্রা। আবার বলল, “নাকি হিংসে বোধ হলো?”
“ধুর!” কাচুমাচু হয়ে বসল রশ্মি। “আমার কেন হিংসে বোধ হতে যাবে?”
“সত্যিই হয়নি? নাকি স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছ?”
“ভয় পেতে যাব কেন?”
“তবে মেনে নিচ্ছ, তোমার হিংসে হচ্ছে?”
“একটুও না। সুব্রত ভাইয়ের জন্য কেউ সাজলে আমার কেন হিংসে হবে?”
“সেদিন তো হয়েছিল। ওই যে, সুব্রত ভাইয়ের অফিসের মেয়েটা এলো। মনে পড়েছে?”
মাথা নিচু করে ফেলল রশ্মি। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
চিত্রার আরও এগিয়ে, রশ্মির থুতনিতে হাত রেখে বলল, “এইতো, এইতো স্বীকার গেলে৷ মাঝে মাঝে নীরবতাই অনেক কিছু বলে দেয়। এখনো দিচ্ছে।”
রশ্মি বিবর্ণমুখে বলল, “এটা ঠিক, সেদিন আমার হিংসে বোধ হয়েছিল। কিন্তু কেন হয়েছিল, সেটা এখনো অস্পষ্ট আমার কাছে।”
“সত্যিই অস্পষ্ট? তুমি কি জানো না, সুব্রত ভাইয়ের প্রতি তোমার বেশ দুর্বলতা আছে? আসলে তুমি উনার প্রেমে পড়েছ।”
চিত্রার হাত সরিয়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল রশ্মি। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি এটা মানতে চাই না। এটা কেমন প্রেম, যা আমিই জানি না? আমি তো চাই না উনার প্রেমে পড়তে।”
“এটাকেই বলে অন্তরের প্রেম। মানুষের হৃদয়ে প্রেম হুট করেই জন্মায়। কখনো কখনো তো সে দীর্ঘদিন যাবত বুঝতেও পারে না, সে কারোর প্রেমে পড়েছে। শুধু অদ্ভুত এক অনুভূতি হয় মানুষটাকে দেখলে। তাঁর কাছে যেতে ইচ্ছে করে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে। জীবনের একাকী সময়গুলোতে তাঁর কথা মনে পড়ে। জ্যোৎস্না রাতে তার পাশে বসে থাকতে ইচ্ছে করে। তাঁর হাত ধরে বৃষ্টিস্নাত করতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, সে যদি পাশে থাকতো, তবে জীবনটা অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যেতো। তুমি বলো, তোমার মনে সুব্রত ভাইয়ের প্রতি এই দুর্বলতাগুলো কাজ করে না?”
রশ্মি জবাব দিতে পারল না। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, নির্বিকার ভঙ্গিতে সেই বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইল, যেখানে রোজ সকালে সিগারেট টানতে আসে সুব্রত ভাই। কিন্তু এখন বারান্দাটা শূন্যতায় ভরা। তাঁর হৃদয়ও যেন প্রখর শূন্যতা অনুভব করছে এই মুহূর্তে! মনটা অস্থির হয়ে আছে।
রশ্মির দিকে একপলক তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল চিত্রা। বলল, “এইসময় তোমাদের দুজনকেই দুজনের বড্ড প্রয়োজন।”
রশ্মি জানালার পাশ থেকে সরে এসে বলল, “আমি তাকে নিয়ে এভাবে ভাবতে পারি না, চিত্রা। যদি তাঁর প্রতি আমার প্রেম থাকে, তবে থাকুক। দূর থেকেও তো প্রেম হয়। হয় না?”
“কিন্তু কাছে আসলে ভালোবাসা হয়। একে অপরের পরিপূরক হয়। দুটো হৃদয়ের বন্ধন গভীর হয়। হারানোর ভয় থাকে না।”
রশ্মি মৃদু হেসে বলল, “মুরুব্বিরা সবসময় বলে, আগুন আর ঘি কাছাকাছি থাকতে পারে না। সুব্রত ভাই একটা আগুন। আর আমি ঘি। আমি উনার যতটা কাছে যাব, ততটা নিঃশেষ হবো। আমি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হতে চাই না, চিত্রা। এভাবেই বাঁচতে চাই আমি; কিছু অনুভূতি হৃদয়ে আঁকড়ে ধরে।”
রশ্মির কথার কাছে হেরে গেল চিত্রা। সে নির্লিপ্ত হয়ে গেল।
ঠিক ঘড়ি ধরে রশ্মিদের বাড়ি থেকে বেরোলো চিত্রা। শ্বশুর বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেলে চাপ দিলো।
কিছুক্ষণ পর সুলতানা এসে দরজা খুলে দিলো। তাকে দেখেই উল্লাসে চিৎকার দিয়ে উঠল, “ভাবী আপনি? কনা আপা, মেজো ভাইজান, দেখেন কে এসেছে!”
চিত্রা সঙ্গে সঙ্গে কান চেপে ধরে বলল, “আস্তে। বাপরে!” এরপর ফিক করে হেসে বলল, “আমি তো কালকেই এসেছি।রশ্মিদের ওখানে ছিলাম। তুমি জানতে না?”
“কই, না-তো।” সুলতানা হতভম্ব!
চিত্রা বলল, “কনা তো জানতো। তাছাড়া রাতে মা-ও দেখে এসেছেন। সুব্রত ভাইও বলেননি?”
সুলতানা মলিন সুরে বলল, “কেউই বলেনি আমাকে। কনা আপাও না। এর মধ্যে অবশ্য সুব্রত ভাইয়ের ঘরে যাইনি একবারও। নাহলে উনি বলতো, নিশ্চিত।”
চিত্রা ভিতরে এসে সুলতানা কাঁধের উপর হাত রেখে বলল, “থাক, মন খারাপ করো না। শুনলাম তুমি আমাকে খুব মিস করো। সেদিন মার্কেটে দেখা হয়েছিল কনার সাথে; ও বলল। আমাকে ছাড়া নাকি তোমার দিন কাটতে চায় না।”
“সত্যিই বলেছে আমার কথা?” ফের সুলতানার চোখ-মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে এলো। মন থেকে বলল, “আল্লাহ, কনা আপাকে অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখুক।”
চিত্রা মৃদু হেসে বলল, “বাড়ির বাকি লোকজন কোথায়? ব্রেকফাস্ট শেষ নাকি?”
সুলতানা চিত্রার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে জবাবে বলল, “এখনো শুরুই হয়নি। মাত্র রান্না শেষ হলো। খালাম্মা ঘরে গেল ফ্রেশ হতে। সবাইকে ডাকবো ভাবছিলাম, তখনই আপনি এলেন।”
চিত্রা সোফায় গিয়ে বসল। সুলতানা বলল, “ভাবী, আপনি ফ্রেশ হবেন না?”
“আমাকে দেখে কী একটুও ক্লান্ত মনে হচ্ছে, সুলতানা? আমি তো রশ্মিদের বাড়ি থেকে এলাম। সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করব বলে তাড়াতাড়ি চলে এলাম। এখন আর উপরে যাব না।”
“ওহ্।” হাসল সুলতানা। জানতে চাইল, “তাহলে কি ব্যাগটা আমি উপরে রেখে আসবো?”
“যাও।”
সুলতানা চলে যাওয়ার পর ঠিক দুই মিনিটের মাথায় ফিরোজ এলো, প্রায় দ্রুত হেঁটে, কিন্তু সিড়ির কাছে আসতেই চিত্রার দিকে তাকিয়ে তাঁর পায়ের গতি কমে গেল আচমকা। ঠোঁট জোড়া সামান্য ফাঁকা করে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল চিত্রার দিকে। ধীর পায়ে কাছে আসতেই চিত্রাও দাঁড়িয়ে গেল, ফিরোজ তখনও একভাবে তাকিয়ে আছে। ওর দুই চোখে তীব্র মোহ!
চিত্রা ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি টেনে বলল, “কেমন আছো?”
জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল ফিরোজ, “কখন এলে?”
“গতকালই এসেছি। রশ্মিদের বাড়িতে ছিলাম। এই বাড়িতে এক্ষুণি এলাম।” চিত্রা স্বাভাবিক ভাবে জবাব দিলো। ফিরোজ এখনো তাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে। ওর চোখ সরছে না এক মুহূর্তের জন্যও।
সিড়ি দিয়ে নেমে আসছেন দীপালি বেগম। চিত্রাকে দেখে বললেন, “এসেছ তাহলে।”
চিত্রা তাকাল শাশুড়ির দিকে। বিনয়ী হেসে সালাম দিলো। ভদ্রমহিলা জবাব দিলেন সাথে সাথে।
দীপালি বেগম নিচে আসতেই ফিরোজ বলল, “মা, তুমি তো বলোনি চিত্রা গতকালই এসেছে।”
দীপালি বেগম বললেন, “কাল রাত করে ফিরলি না, সেজন্য আর বলিনি।” ছেলেকে বউয়ের দিকে অমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিনি কিছুটা রূঢ স্বরে বললেন, “দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখনো? তখন বললি না আজ তাড়া আছে? ব্রেকফাস্ট অফিসে গিয়ে করবি।”
ফিরোজ নিজেকে সামলে নিয়ে ঘড়ি দেখল। আপাদমস্তক ভাবে বলল, “না-না মানে, এখনো কিছুটা সময় হাতে আছে। ভাবছি ব্রেকফাস্ট করেই যাব।” এরপর সুলতানার দিকে তাকাল সে। বলল, “আমাকে খাবার দে তো, সুলতানা।”
সুলতানা ব্যাগ রেখে আবার ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়িয়ে ছিল, ফিরোজের কথা শুনে দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেল।
খাবার টেবিলে চিত্রা ফিরোজের পাশেই বসল, একদম স্বাভাবিক ভাবে। ফিরোজ আর দীপালি বেগম বারবার তাকাচ্ছে চিত্রার দিকে। মেয়েটার মধ্যে আজ ভিন্ন মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতগুলো দিন পর শ্বশুর বাড়িতে এলো, অথচ কোনো উত্তেজনা নেই, কোনো উচ্ছলতা নেই। একদম সাবলীল, যেমন আগে ছিল। তবে ফিরোজের আজ বেশ মন খারাপ। চিত্রা প্রথমেই তাঁর কাছে আসেনি; বন্ধুর বাড়িতে একটা দিন থেকে তবে এসেছে। আবার এসেও সরাসরি তাঁর সাথে দেখা করতে যায়নি। সেভাবে কথাও বলেনি। দীর্ঘদিনের দূরত্বের পর আজ কাছে এসেও তেমন চঞ্চলতা নেই চিত্রার মধ্যে।
খাবার টেবিলে বসে খালেদ সাহেব বললেন, “বুঝলে মা, এতদিন তোমাকে খুব মিস করছি। বাড়ির লক্ষ্মী তুমি। তোমাকে ছাড়া সবকিছু অপূর্ণ লাগছিল।”
চিত্রার শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, “এবার তো এসে গেছি, বাবা। আর অপূর্ণ লাগবে না কোনোকিছুতে।”
খাওয়াদাওয়া শেষে ফিরোজ আর খালেদ সাহেব বেরিয়ে গেলেন। চিত্রাও উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছিল, বাধা দিলেন দীপালি বেগম।
“এভাবে হুট করে একা একা চলে আসা উচিত হয়নি, বউমা। রাস্তায় যদি কিছু হয়ে যেতো? কালকে ওই বাড়িতে ছিলে বলে কিছু বলতে পারিনি।” দীপালি বেগম গুরুগম্ভীর ভঙ্গিতে বললেন কথাগুলো।
চিত্রা মৃদু হাসল শাশুড়ির কথা শুনে। ঠোঁট টিপে বলল, “আপনার ছেলে তো আনতে যাচ্ছিল না, তাই নিজেই চলে এলাম। আপনার ছেলে একদিন বলেছিল, একটা গোটা জীবন আমি সবাইকে পাশে পাবো না। কখনো কখনো আমাকে একাই চলতে হবে। সেজন্যই আরকি।” একটু থামল চিত্রা। শাশুড়িকে ক্রমশ বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে দেখে বলল, “আমি বরং উপরে যাই এখন। সারারাত রশ্মির সাথে গল্পগুজব করেছি। ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি।”
দীপালি বেগম গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে রইলেন চিত্রার দিকে। ইতোমধ্যে উপরের ঘরে যেতে শুরু করেছে ও।
ঘরে গিয়ে ঘড়ি দেখতে লাগল চিত্রা, বারংবার। তাঁর বিশ্বাস, আজ সময়ের অনেক আগেই অফিস ত্যাগ করে বাড়িতে ফিরে আসবে ফিরোজ। আসতে বাধ্য হবে!
সকাল পেরিয়ে দুপুর হলো। ইতোমধ্যে বেশ ক’বার ফোন দিয়েছে ফিরোজ। চিত্রা রিসিভ করেনি, ইচ্ছে করেই। ঘড়িতে যখন প্রায় দুটো বাজে, তখন আকস্মিক ফিরোজ হাজির।
চিত্রা আলমারির ভেতরটা দেখছিল তখন, কিছু অগোছালো জামা-কাপড় গুছিয়ে রাখছিল, এমন সময় একগোছা গোলাপ মাথায় উপর দিয়ে নেমে, চোখ বরাবর সামনে এসে থেমে গেল। চিত্রা হকচকিয়ে ওঠে সামান্য পিছুতেই ধাক্কা খেলো একজনের সাথে। ঘুরে তাকাতেই দেখল, ফিরোজ দাঁড়িয়ে আছে।
চিত্রা বলল, “চলে এলে? এত তাড়াতাড়ি? ক’টা বাজে এখন?” মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময় দেখল চিত্রা। “মাত্র দুটো।”
ফিরোজ ফুলের গোছা নামিয়ে মলিন সুরে বলল, “কাজ শেষ। তাই চলে এলাম।”
“ওহ্।” ক্ষীণ আওয়াজে শব্দোচ্চারণ করে আবার আলমারির সামনে দাঁড়াল চিত্রা। অযথাই কাপড়গুলো আওড়াতে লাগল।
ফিরোজ নিরাশায় আচ্ছন্ন হলো চিত্রার এমন উদাসীনতা দেখে। স্থির ভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বলল, “রাস্তায় একটা ছেলে ফুল বিক্রি করছিল। এক গোছাই অবশিষ্ট ছিল। ট্রাফিকে আটকা পড়েছিলাম। যে রোদ বাইরে! ভাবলাম এটা কিনলে ছেলেটার উপকারই হবে। তাই আরকি।”
“ওহ্ আচ্ছা।” ঘুরে ফুলের গোছাটা একপলক দেখব চিত্রা। “বেশ শুকিয়ে গেছে।”
“হ্যাঁ। জলে রেখে দাও, যদি সতেজ হয়।”
“আচ্ছা। আমি সুলতানাকে বলব, একটা পাত্রে জল নিয়ে, এটা ওখানে রেখে দিতে। তুমি চা খাবে তো?”
ফিরোজ মৃদু হেসে বলল, “হ্যাঁ। খুব ক্লান্তি লাগছে। এক কাপ চায়ের বড্ড প্রয়োজন।”
আলমারি আটকে দিয়ে চিত্রা বলল, “তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি সুলতানাকে দিয়ে চা পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
“কিন্তু।”
সঙ্গে সঙ্গে চিত্রা বেরিয়ে যাওয়ায় ফিরোজ থমকে গেল। পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে। হিসেবে মেলাতে পারছে না কিছুতেই।
সিড়ি দিয়ে নেমে এলো চিত্রা। দীপালি বেগম ড্রয়িংরুমে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। চিত্রাকে নামতে দেখে কাগজটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে বললেন, “কিছু লাগবে, চিত্রা?”
চিত্রা বলল, “ফিরোজ চা খাবে।” এরপর সুলতানাকে ডাকল সে। ও আসতেই বলল, “ভাইজানকে এক কাপ চা দিয়ে এসো, সুলতানা।”
“আচ্ছা ভাবী।” মাথা ঝাঁকিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল সুলতানা।
দীপালি বেগম হতবিহ্বল মুখ করে বললেন, “ছেলেটা কাজ থেকে ফিরল মাত্র। তুমি চা না দিয়ে ওকে বলছ?”
চিত্রা ব্যাঙ্গ সুরে বলল, “মা, এতদিন তো আমি ছিলাম না। এতদিন কি আপনার ছেলে কাজ থেকে ফিরে চা খায়নি? খেয়েছ তো। মানুষ চাইলেই অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। ও পেরেছে।” এরপর শাশুড়ির পাশে এসে বসল চিত্রা। আবার বলল, “আপনি নিজের কথা বলুন। এতদিন পর এলাম, কই, আগের মতো ডাকলেন না তো। কোনো কাজের কথাও বললেন না। এই ক’দিনে বুঝি খুব দূরের হয়ে গেছি?”
দীপালি বেগম ইতস্তত করে বললেন, “না, সেরকম না আসলে।”
“হুম, বুঝেছি বুঝেছি।” অভিমানী ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে পাশ থেকে একটা ম্যাগাজিন তুলে নিলো চিত্রা।
দীপালি বেগম আগের মতোই বসে রইলেন। তিনি বাকরুদ্ধ!
২৯তম পর্ব এখানেই সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব শীঘ্রই আসছে।
গত পর্বের লিংক – https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=844498219828213&id=100028041274793