#প্রণয়
#পর্বঃ২১
#তানিশা সুলতানা
“এই পাগল ছাগল এভাবে কেনো আসছে??
সূচক গাড়িতে বসে তানহার দিকে কটমট চাহনিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
তানহা গাল ফুলিয়ে সূচকের পাশে বসে পড়ে। তোহা আর সাদিয়া বেগম পেছনে বসে।
” একদম পাগল বলবেন না বলে দিলাম।
আঙুল তুলে চিল্লিয়ে বলে তানহা। ড্রাইভার একবার পেছন ঘুরে ওদের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে দেয়।
“বাবু তোর সমস্যা কি? মেয়েটার সাথে এমন কেনো করছিস?
চোখ পাকিয়ে বলেন সাদিয়া বেগম।
” তো কি করবো? অবস্থা দেখো ওর।
ইডিয়েট একটা।
“ভালো করে বুঝিয়ে বললেই তো হয়।
ক্লান্ত গলায় বলে সাদিয়া বেগম।
” ও বুঝবে? আস্ত একটা ইডিয়েট
সাদিয়া বেগম কথা না বাড়িতে চোখ বন্ধ করে ছিটে মাথা ঠেকায়।
তানহা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
“উনি আমাকে দুচোখে দেখতে পারে না। খালি ধমক দেয়। আমিও আপনাকে দেখতে পারি নি। হুহহহহহ
তানহা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। চোখের পানির থেকে নাকের পানি বেশি পড়ছে।
সূচক বাঁকা চোখে এক পলক তানহার দিকে তাকায়।
তোহা ফোন নিয়ে ব্যস্ত। তার এই দিকে মন দেওয়ার সময়ই নাই। তবুও তানহার নাক টানাতে ভীষণ বিরক্ত লাগছে।
” তুই নাক টানা বন্ধ কর। তাজ ঠিকি বলে। তোর নাক কেটে ফেলা উচিৎ।
তোহা বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলে তোহা। তোহার কথায় তানহার অভিমান আকাশ ছুঁই ছুঁই
কেউ দেখতে পারে না ওকে। সবদই শুধু বকে। থাকবেই নদীর ওদের সাথে।
“গাড়ি থামান আমি নামবো।
তানহা নাক টেনে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে।
” ইহহহহহহহ বুচি। গাড়ি থেকে নামবে। সাহস দেখে থাপ্পড়াইতে ইচ্ছে করছে
সূচক বলে।
“তোরা দুইজন এবার মাইর খাবি আমার হাতে। মেয়েটার পেছনে কেনো লাগছিস? আর একটা কথা বললে দুটোকেই নামিয়ে দেবল আমি।
সাদিয়া বেগম ধমক দিয়ে বলে।
তানহার কান্না থেমে যায়। বেশ হয়েছে এদের বকে দিছে।
বিশ্ব জয়ের হাসি দেয় তানহা। সূচক তানহাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
এক ঠোঁটে নেওয়া লিপস্টিক এখন ঠোঁটের আশেপাশে মাখিয়ে গেছে। এলোমেলো চুল গুলো আরও এলোমেলো হয়ে গেছে। চোখের কাজল লেপ্টে গেছে। কান্না করার জন্য নাকে পানি চলে এসেছে। নাকটাও হালকা লাল হয়ে গেছে। মুখে পাউডার নিয়েছিলো সেটা এল জায়গায় আছে তো আরেক জায়গায় নাই।
কে বলেছে একে সাজতে???
ইডিয়েট একটা। পাগল বানিয়ে দেবে আমায়।
বিরবির করে বলে পকেট থেকে টিস্যু বের করে সূচক। আর তানহার ব্যগ থেকে হেয়ার কিলিপ বের করে।
সূচক টিস্যুটা তানহার দিকে এগিয়ে দেয়। তানহা এক পলক টিস্যুর দিকে তাকিয়ে আরেক পলক সূচকের দিকে তাকায়। তারপর টিস্যুটা হাতে নিয়ে নাক মুছে ফেলে দেয়।
” তোর ওই দু টাকার লিপস্টিক মুছে ফেল। নাক মোছার জন্য দেই নি। ওটা তুই তোর ওড়না দিয়ে মুছে ফেল।
সূচক দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“দু টাকার না। একশত বিশ টাকার লিপস্টিক আমি এক ঘন্টা দামাদামি করে নব্বই টাকা দিয়ে কিনেছি। দুই টাকায় লিপস্টিক পাওয়া যায় না।
সূচক বাঁকা চোখে তাকায় তানহার দিকে। সূচকের নজর খেয়াল করে তানহা আবার বলা শুরু করে
” এবার নিশ্চয় কাজলের কথা বলবেন?
কাজল বিশ টাকা দিয়ে কিনেছি। দাম কম হলেও মান ভালো।
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
সূচক ফোঁস করে শ্বাস টেনে তানহার হাত থেকে টিস্যু নিয়ে নেয়। তারপর খুব যত্ন করে ঠোঁটের লিপস্টিক আর লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দিতে থাকে।
আর এই সুযোগেই তানহা প্রাণ ভরে সূচককে দেখতে থাকে।
“হাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো স্টুপিট?
ধমক দিয়ে বলে সূচক। তানহা কেঁপে ওঠে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
” শান্তিতে একটু দেখতেও দেবে না। হনুমান একটা
বিরবির করে বলে সূচক।
মুখটা ভালো করে মুছিয়ে হেয়ার ক্লিপ তানহার হাতে দেয়।
“চুল বেঁধে ফেল।
তানহা কোনো কথা ছাড়াই চুল বেঁধে ফেলে।
বিজয় স্যার খুব জ্বালাচ্ছে তোহাকে। সকাল থেকে মেসেজ দেওয়া শুরু করেছে। একটা দুইটা না বিশটা মেসেজ দিয়েছে। সব গুলোই oiii মেসেজ।
তোহার ভীষণ বিরক্ত লাগছে লোকটাকে। এভাবে জ্বালানোর কোনো মানে হয়?
না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে সয্য করতে।
সূচক ফোন ঘাটছে। দুই কানে হেডফোন গুঁজে পায়ের ওপর পা তুলে বসে ফোন দেখছে।
তানহা আড়চোখে সূচককে দেখছে। দাঁড়ি গুলো বেশ বড় হয়েছে। চুল গুলোও বড় হয়ে গেয়েছে। হয়ত সেলুনে যাওয়ার সময় পাচ্ছে না।
কি এমন কাজ করে যে সেলুনে যাওয়ার সময় হচ্ছে না?
তবে এই লুকে কিউটনেস বেরে গেছে। একদম কিউটের বস্তা লাগছে।
ইচ্ছে করছে বড়বড় চুলের মধ্যে নিজের হাত ডুবিয়ে দিতে। ফর্সা বড় হাতটার মধ্যে নিজের ছোট হাতটা ঢুকিয়ে দিতে।
বেশ কিছুখন লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু সেই সাহসটা কি আর তানহার আছে?
একটু ভালো করে তাকালেই ধমক দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবে। লাটসাহেব কি না।
মানে এই লোকটা কি সারাজীবনই এরকম বেরসিক থাকবে? না কি বিয়ের পরে রোমান্টিক হয়ে যাবে?
অবশ্যই হবে না। এর রক্তে রক্তে মিশে আছে বেরসিকতা।
” হারে তানহা তোর কপাল পুরেছে।
কপাল চাপকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জোরে বলে ওঠে তানহা। সূচকের গান তখন শেষ হয়ে গেছে। তানহার কথা শুনে চট করে হেডফোন কান থেকে খুলে কপাল কুচকে তাকায় তানহার দিকে।
তাহা শুকনো ঢোক গিলে। কথাটা মনে মনে বলতে চেয়েছিলো। জোরে কি করে বলে ফেললো?
“চাপকে যেদিন তোর দাঁত ফেলে দেবো। সেদিন তোর কপাল খুলবে গাঁধা।
ফোন পকেটে পুরে তানহার একটা হাত মুঠো করে ধরে বলে সূচক। তানহা খুশিতে গদগদ হয়ে সূচকের হাতটা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখে।
সূচক ধমক দিতে গিয়েও দেয় না।
সারাক্ষণ বকাবকি করতে ভালো লাগে না।
ছয় ঘন্টা জার্নি শেষে কক্সবাজার পৌঁছে যায় ওরা। একদম নানুবাড়ির সামনে গাড়ি থামে। সূচকের মামা বাড়ি খুব বড়লোক। তানহাদের তুলনায় তিন গুন বেশি। বড় মা ও দারুণ সুন্দরী। তানহা মাঝেমধ্যে ভাবে এই রকম বড়লোক বাড়ির সুন্দরী মেয়েকে ওনারা কেনো তানহার বড়বাবার সাথে বিয়ে দিয়েছিলে?
গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পায় বৃষ্টি, বৃষ্টির বড় ভাই, বিহান, মামা নানা মামি দাঁড়িয়ে আছে।
সাদিয়া বেগমরা দুই ভাই আর উনি তাদের একমাত্র বোন।
বৃষ্টি ঢাকায় পড়াশোনা করে ওর ছোট চাচার বাড়ি থেকে। সূচক আর বৃষ্টি একই ভার্সিটিতে।
তোহা নেমে এক দৌড়ে গিয়ে নানাভাইকে জড়িয়ে ধরে।
সত্তরের ওপরে লোকটার বয়স। কিন্তু তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার এতো বয়স। এখনো খাবার খায় হিসেব করে। রোজ সকালে হাঁটাহাঁটি করে।
তানহা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়। সাদিয়া বেগম বাবা ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলে। কত বছর পরে আসলো।
ওনার ছোট ভাই ঢাকায় থাকে বউ বাচ্চা নিয়ে। তারাও আসছে মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে।
তানহাও সালাম নিয়ে সবার সাথেই টুকটাক কথা বলে শুধু বৃষ্টির সাথে বলে না। বৃষ্টিও আগে বাড়িয়ে বলে না। সবাই তানহা বেশ পছন্দ করে।
সবাই ভেতরে যায়। সূচকের ফোনে কল আসায় ও পেছনে পড়ে যায়।
তানহাও দাঁড়িয়ে থাকে বাইরে। সূচক কথা বলা শেষ করে এসে দেখে তানহা দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি হাসে সূচক।
“তানহা চল আমার সাথে।
তানহার হাতটা মুঠো করে ধরে বলে সূচক।
” ঘুরতে নিয়ে যাবেন?
খুশিতে গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করে তানহা।
“বিয়ে করবো।
বলেই হাঁটতে শুরু করে। তানহা কোনো কথা না বলে সূচকের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে।
সত্যিই কি বিয়ে হবে আজ? এই স্বপ্ন পুরুষ কি সত্যিই তার স্বামী হয়ে যাবে?
আর ভাবতে পারছে না তানহা। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন নাচতে শুরু করলে থাপ্পড় খেতে হবে নিশ্চিত।
মেইন রোডে আসার পরেই দেখতে পায় দশ বারোটা বাইক দাঁড়িয়ে আছে। একটা বাইক খালি। আর বাকি বাইক গুলোতে দুজন করে ছেলে। এই ছেলে গুলোকে তানহা চেনে না। কখনো দেখেও নি।
” লাইলি মজনু হাজির।
সূচক আর তানহাকে দেখে ওনারা চিৎকার করে বলে। সূচক চোখ পাকিয়ে তাকায়। তানহার খুব হাসি পায়
বাইকে বসে হেলমেট পড়তে থাকে সূচক। বাকি বাইক গুলো চলতে শুরু করে দিয়েছে। তানহা যেনো ঘোরের মধ্যে আছে। কি হচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
“উঠবি না কি রেখেই চলে যাবো?
সূচক বলে। তাহা চট করে সূচকের কাঁধে হাত দিয়ে উঠে বসে।
চলবে
আইডির সমস্যার কারণে এতোদিন গল্প দিতে পারি নি।