প্রণয় বোনাস পর্ব

0
615

#প্রণয়
#বোনাস পর্ব
#তানিশা সুলতানা

লাল টুকটুকে গাউন পড়েছে তানহা। সাজানোর জন্য পার্লার থেকে মেয়ে আনলেও সূচক সাজাতে দেয় নি। অতোগুলো মানুষের সামনেই ধাপ করে বলে দিলো

“ওর যে স্বভাব। সাজানোর পরে দেখা যাবে এক ঠোঁটের লিপস্টিক খেয়েই ফেলেছে। তখন একদম পেত্নী লাগবে।

তানহা শুধু দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা হজম করে নিয়েছেন। একবার বিয়েটা শেষ হোক। এই লোকটাকে যদি বুড়িগঙ্গায় না চুবিয়েছে তাহলে ওর নামও তানহা না।

বড় একটা রুমে তানহারকে হাতে একটা গাউন দিয়ে রেডি হতে বলে সূচক। তানহার চট করে পড়ে বেরিয়ে এসে আবার সূচকের পাশ ঘেসে দাঁড়ায়।

কোনো একটা রেস্টুরেন্টের ছাঁদে এখন ওরা। ছাঁদটাকে খুব সুন্দর করে লাইটিং আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। স্টেজও সাজানো হয়েছে। সেখানে দুটো চেয়ার। চেয়ার দুটোও সুন্দর করে সাজানো। তানহা মুগ্ধ হয়ে চারপাশটা দেখছে।

সবগুলো ছেলে কালো পানজাবি পড়েছে আর সূচক লাল পানজাবি।

কি যে দারুণ লাগছে না লোকটাকে।

তানহার একটু খারাপ লাগছে কারণ একটাও মেয়ে নেই। একটা মেয়ে থাকতে পারতো। তানহারও আনইজি লাগতো না।

সূচক তানহার হাত ধরে স্টেজে উঠে বসে পড়ে। তানহাকেও বসতে বলে। তানহাও মাথা নিচু করে বসে পড়ে। নাক পর্যন্ত লাল ওড়না দিয়ে ঘোমটা টেনে দিয়েছে সূচক।

আজকে কেনো জানি তানহার খুব লজ্জা লাগছে। এই যে লজ্জায় সূচকের দিকে তাকাতে পারছে না। ছেলে গুলো ফোন, ক্যামেরা দিয়ে ছবি দেখছে ভিডিও করছে।

মাঝেমধ্যে বলছে ” ভাবি মুখটা তুলুন”
তবুও তানহা মুখ তুলতে পারছে না।

একটু পরেই লম্বা দাঁড়ি আর সাদা পানজাবি পড়া একটা হুজুর চলে আসে। তার হাতে ছোট একটা ব্যাগ। হুজুর আসতেই সূচক আর তানহার সামনে হুজুরকে বসার জন্য চেয়ার দেওয়া হয়।

মেয়ের এখনো আঠারো হয় নি তাই শুধু কলমা কবুল পড়িয়ে বিয়ে করতে হবে।
আঠারোর পরে রেজিস্টি করবে।

অবশেষে বিয়েটা শেষ হয়ে যায়। হুজুর চলে যায়। তানহা এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে। পাশ থেকে সূচক অনেক আগেই উঠে গেছে। কোথায় সেটা দেখার জন্য মাথা তুলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।
চারপাশে কথা, হাসাহাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

আস্তে আস্তে পুরো ছাঁদ খালি হয়ে যায়। তানহা এখন একা বসে আছে।

হঠাৎ ধাপ করে সূচক তানহার পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। খানিকটা চমকে ওঠে তানহা এভাবে আচমকা বসার জন্য। চোখ দুটো বড়বড় করে সূচকের দিকে তাকায়।
ঘামে ভিজে গেছে পানজাবিটা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।

“তুই খুশি তো তানহা।

চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে সূচক। তানহা ওড়নার এক কোনা দিয়ে সূচকের কপালের ঘাম মুছিয়ে দেয়। সূচক না তাকিয়েই তানহার হাতটা ধরে বুকের ওপর চেপে ধরে।

” বললি না তো খুশি কি না?

ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে সূচক।

“কি করে খুশি হবো? আপনি তো শুধু কথায় কথায় চাপকে দাঁত ফেলে দিতে চান।

মুখ বাঁকিয়ে অভিমানির সুরে বলে তানহা।
সূচক ঠোঁট প্রসস্ত করে একটু হাসে। সেই হাসিতে কোনো শব্দ নেই।

” তোকে আঘাত করার সাহস কি আর আমার আছে?

তানহা সূচকের মুখের দিকে তাকায়।

“তার মানে আপনি খালি আমাকে ভয় দেখান। আসল কথা হলো সত্যি সত্যি মারবেন না।

খুশিতে গদগদ হয়ে চেয়ারের ওপর পা তুলে বলে তানহা
সূচক চোখ খুলে চোখ পাকিয়ে তাকায় তানহার দিকে।

“সত্যি সত্যিই মারবো কথা না শুনলে।

ধমক দিয়ে বলে সূচক। তানহার হাসি হাসি মুখটা চুপসে যায়। গোমড়া মুখে পা নামিয়ে বসে।
সূচক মুচকি হাসে।

” গুড গার্ল
এবার চল যেতে হবে।

সূচক দাঁড়িয়ে পানজাবি ঠিক করে চুলে হাত বুলিয়ে ঠিকঠাক করে।

“কোথায় যাবো?

তানহা দাঁড়িয়ে বলে।

” আপাতত পার্লারে।

তানহার হাত ধরে বলে সূচক।

“পার্লারে কেনো?

খানিকটা অবাক হয়ে বলে তানহা।

” নাক ফুটো করতে হবে।

তানহা খানিকটা ভয় পেলেও শব্দ করে না। নাক তো ফুটো করতেই হবে। দাদিমার কাছ থেকে শুনেছে নাক ফুটো না করলে স্বামীর অকল্যান হয়।

রেস্টুরেন্টের বাইরে এসে দেখতে পায় বৃষ্টি আর তোহা দাঁড়িয়ে আছে। তানহা সূচকের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।

“তুই কি রে তানহা? দেখলিই তো দাভাই কতোটা জার্নি করে এসেছে। আর তোর এখনই এই ড্রেস লাগবে?

তোহা তানহার মাথায় চাটি মেরে বলে। তানহা গাল ফুলিয়ে তাকায় সূচকের দিকে। নিজেই আনলো আর এখন পুরো দোষ তানহার।

” শুধু কি তাই?
এখন বায়না ধরেছে নাক ফুটো করবে। বিয়ের বয়স হয়েছে কি না।

সূচক বলে। বৃষ্টির চোখে মুখে বিরক্ত ফুটে ওঠে। তোহা বড়বড় চোখ করে তাকায়।
তানহা মনে মনে সূচকের গুষ্টির পিন্ডি চটকাচ্ছে।

“তোরা নিয়ে যা ওকে। তোরাও ফুটো করে নিস।

পকেট থেকে টানা বের করে তোহার হাতে ধরিয়ে দেয় সূচক। তোহা বিরক্তির শ্বাস ফেলে।

” আসছি বউ। রাতে দেখা হচ্ছে বাসর ঘরে।

তানহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলেই চলে যায় সূচক। তানহা হা করে সূচকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
“এই লোকটা তো দেখছি আস্ত বজ্জাতের হাড্ডি। দেখে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here