প্রণয় ডায়েরি পর্ব-৪

0
607

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ০৪

আমরা কিছু ভাবলে সে ভাবনার জিনিস টা যদি না হয় তাহলে মন খারাপের পাল্লাটা আরো বেশি ভারি হয়ে যায়৷ ভেবেছিলাম হয়তো যদি দেখা হয়ে যায় শপিং মলে আসলে কিন্তু না দেখিনি তাকে আমি৷ সারাক্ষণ, সারাটা পথ সারাটা শপিং মল আমার চোখ সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষ টি কে খুঁজেছে৷ আমি একটু বেশি করে ফেলছি হয়তো? আমার মন মস্তিষ্ক যেন তিশান নামক পুরুষটি কেরে নিয়েছে৷
সে দিন এর পর দশ দিন কেটে গেছে আজ বছরের শেষ দিন থার্টি ফার্স্ট পার্টি আমাদের বাড়িতে আজ৷ আমি পার্টি জয়েন করছিনা তা শুনে সবাই বেশ অবাক৷ আমি বা কি করবো? আমারতো ভালো লাগছে না কিছু৷
কি কে শুনে কার কথা? মা জোরাজুরি করে ছাদে পাঠিয়ে দিলো আমিও আর কথা বাড়ালাম না আম্মুর সাথে কথা বাড়ানো মানে নিজের কপালে দূঃখ ডেকে আনা৷
তিশানের বলা সে দিনের কথা টা মনে পরলো৷
“ভিতর বাহিরে কিছু একটা ঘটবে এবার৷” সত্যি এর মানে বুঝলাম আজ৷ ভিতর বাহির সত্যি কিছু ঘটছে৷ আজ কাল নিজের মন কে বোঝা বড় দায় হয়ে পরছে যে, যেন দূরে থেকেও তিশান নামক পুরুষটি আমার মন মস্তিষ্ক নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখেছে৷ অন্যের মন মস্তিষ্ক অন্যের অনুমতি ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা ঘোর অন্যায় নয় কি? তাঁর কঠিন তম শাস্তি হএয়া উচিত৷ আচ্ছা তিশান কি আমায় ভুলে গেছে?
আমার বছর শেষের একটা ইচ্ছে তাঁর সাথে যেন আবার কোন এক প্রহরে দেখা হয়৷ কোন এক গধুলিতে যে তাঁর সাথে গধুলি বিলাশ করতে পারি যেন৷ কি অদ্ভুত ইচ্ছে তাই না? আচ্ছা এমন ইচ্ছের কারণ কি? সে তো অচেনা৷ সত্যি মন কে বোঝা বড় দায় কখন কার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায় তা বলা যায় কি? আচ্ছা এতো মন খারাপের কারণ কি? এতো অনুভূতির কারন কি?
এ কি প্রণয়ের আভাস? না!
এতো সহজে কি প্রণয় হানা দেয় মনে? আবেগে ডুবছি আমি নিজেকে সংযত রাখতে হবে৷ ব্যাপার টা বেশি করে ফেলছি আমি৷
এ ভেবে ছাদে এসে বসলাম৷ তখনি স্বর্না আপু এসে বলে,
“তাফসি তোর রেড কালার লিপস্টিক টা একটু এনে দে তো আমায়৷ ”
বিরক্ত হলাম বেশ ওনার এই এক অভ্যাস অন্য কে হুকুম দেয়া৷ সবে এসে বসলাম এখনি আবার যেতে হবে আমি ধপ ধপ করে পা ফেলে দু’তলায় আসলাম আমার রুমে এসে সব জায়গা খুজে লিপস্টিক টা পেলাম না পরে মনে পরলো লিপস্টিক টা তো আমার ব্যাগে৷ নানু বাড়িতে যাওয়ার সময় রেখেছিলাম৷
ব্যাগের পিছনের চেন খুলতেই লিপস্টিক টা পেলাম৷ কিন্তু একি লিপস্টিকটায় একটা কাগজ মোরানো কাগজ টা দেখে কেন যেন বুক টা ধক করে উঠলো তাড়াতাড়ি কাগজটা মেললাম৷ মেলে দেখি একটা নাম্বার লেখা উপরে তিশান লেখা৷ হাত কাঁপতে শুরু করলো কেন জানি হার্টবিট বেড়ে গেছে ইসসস এ কেমন অনুভূতি আল্লাহ? ঠোঁটের কোনে না চাইতেও এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো শরীর যেন ঠান্ডা হয়ে কাঁপছে৷ নিজের অবস্থা দেখে নিজেই অবাক হলাম৷
তখনি ডাক পরলো আপুর, মন নিমেষে ভালো হয়ে গেছে৷ নাম্বারটা ঠিক জায়গা রেখে এক প্রকার লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে গেলাম৷ ইচ্ছে করছে আপুকে একটা কিস করি৷ তারমানে সে দিন তিশান হসপিটালেই নাম্বারটা দিয়েছিলো তাই এমন ফোন করার ইশারা করছিলো? ইসস কি ডাফার আমি এটাও বুঝতে পারলাম না যে হয়তো নাম্বার দিয়েছে?
এমন আনন্দ হওয়ার কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না তবুও অনেক খুশি খুশি লাগছে৷
থার্টি ফার্স্ট নাইট বেশ কাটলো, রাত তিনটায় ঘুমাতে আসলাম আজ ঘুমটা বেশ হয়েছে৷ নতুন বছর নতুন কিছুর সূচনা, নতুন অনুভূতি৷ কিন্তু নাম্বারটা নিয়ে বিপাকে পরলাম নাম্বার টা ডায়াল লিস্ট এ উঠিয়েও কল দিতে পারছি না হাত পা কাঁপছে হাত পা পুরো হীম হয়ে গেছে কেমন করছে বুকটা৷ এমন লাগছে কেন? কেন ফোন করতে পারছি না?
ইসসস এ কেমন অনুভূতি এ যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আমায়৷
এ কেমন যন্ত্রনা? এ যেন এক মধুর জন্ত্রনা৷ না পারছি থাকতে না পারছি ফোন দিতে৷
কি করবো আমি? ফোন দিবো কি? আচ্ছা ফোন দিয়ে কি বলবো?
কিছুখন ফোন নিয়ে থম মেরে বসে রইলাম৷ ঠিকঠাক হয়ে বসে ফোন দিতে যাবো এর মাঝেই আম্মুর ডাক পরলো৷
আমি ফোনটা রেখে আম্মুর কাছে গেলাম৷ কিন্তু যাওয়ার পর মাথাটা গরম হয়ে গেলো ঘটক আর একজন মহিলা বসে আছে৷ আমি মহিলাটিকে সালাম দিলাম৷ মহিলাটি সালাম নিয়ে আমাকে বসতে বলেন, আমার রাগ হচ্ছে মায়ের উপর আর ওই ঘটকের উপর৷ লোকটা যখন তখন আসে যাকে তাকে নিয়ে আম্মুও কিছু বলে না আম্মুকে বলেছি আমি এখন বিয়ে করবো না তবুও ঘটক কে কিছু বলে না৷
আজ আমি বলবো আম্মু যদি কিছু না বলেন৷ মহিলাটি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“মা একটু দাড়াও তো কয়েকটা ছবি তুলে নেই আমার ছেলে সৌদি আরব থাকে ওখানে ওকে পাঠাবো৷ ওর পছন্দ হলে আমরা কথা এগোবো৷ ”
রাগ হলো মহিলাটির কথায়, বাহ ওনার ছেলের জন্য আমার ছবি তুলে নিবে ওনার ছেলের পছন্দ হলে কথা এগোবে৷ মগের মূলক নাকি? আমি কি কোনো খেলনা নাকি? কই আমাকে তো দেখিয়ে বলেনি তাঁর ছেলেকে আমার পছন্দ কি না?
আম্মু আমার দিকে তাকালো৷ আম্মু হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি রেগে যচ্ছি আম্মু তবুও কিছু বলছে না আমি উঠলাম তবে ওনার ছবি তোলার জন্য না৷ ওনার বলা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে হেসে বলি,
“আন্টি দুঃখিত! আমি ছবি তুলি না কারো মোবাইলে৷”
আম্মু একদিন বলেছিলো হাসি মুখেই মানুষ কে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়া যায়৷
উনি আবার বলেন,
“তাহলে মা তোমার মোবাইল থেকে কিছু ছবি দাও৷ ”
আমি আম্মুর আম্মুর দিকে তাকালাম আম্মু হয়তো বুঝলো আমার কথা৷
আম্মু হেসেই বললেন,
“আপনার ছেলে দেশে আসুক তখন না হয় দু-জন দু-জন কে দেখবে? এখন ব্যাপার টা এক পাক্ষিক হয়ে যাচ্ছে৷ ”
আম্মুর কথাটা মহিলার হয়তো ভালো লাগলো না পাংশুটে মুখ করে ঘটকের দিকে তাকালেন৷
ঘটক কিছু বলবেন এর আগেই আম্মু বলেন,
“ভাই আপনাকে বলেছিলাম কাউকে নিয়ে আসার আগে একটু জানাবেন৷ আমার কথার ভুল কিছু মনে করবেন না এই যে না জানিয়ে আসলেন আজ যদি না থাকতাম বাড়িতে তাহলে তো ফিরে যেতে হতো তাই বললাম৷ আর বড় ব্যাপার আমার মেয়ের ও মতামত আছে এতে আশা করি বুঝতে পেরেছেন?”
ঘটক কিছু বললো না একটু বসে কথা বলে বেড়িয়ে গেলেন৷
রাগ দেখিয়ে রুমে এসে বসে রইলাম ভালো লাগছে না কিছু৷ সারাদিন মোবাইলে হাত ও দেইনি নিজের মন কে নিজেই বুঝি না অহেতুক কারণে মন খারাপ হয়ে থাকে আর কেন খারাপ হয় তা তো নিজেও জানি না৷
কয়েক দিন যাবত মুড একটু বেশি সুইং করছে কখনো কান্না পায়, কখনো আবার রাগ হয়৷
কেমন খিটখিটে লাগে আবার নতুন এ অবাধ্য অনুভূতি গুলো তো আছেই৷ কি করবো আমি আমাকে নিয়ে?
সারা দিন ফোন দেওয়ার সুযোগ পাইনি কেউ না কেউ পাশে ছিলোই৷ বিকেল হতেই শাড়ি বের করলাম পরার জন্য৷ সাদা শাড়ি লাল পারের শাড়িটা আমার অনেক প্রিয় সাথে লাল আর সাদা চুড়ি, লাল টিপ, আর আমার পছন্দের গাঢ় করে কালো কাজল আর আলতা, টকটকে লাল লিপস্টিক৷ চুড়ি গুলো একটা দু’টো করে পরতে পরতে সব গুলো পরা হলো ইসস কি সুন্দর “রুনঝুন” শব্দ৷
দিন দিন মন টা প্রেম পূর্ন হয়ে উঠছে, আচ্ছা এখন যদি তিশান থাকতো? আমার চুড়ির শব্দে প্রেমে পরতো? গুজে দিতো কি আমার খোপায় বেলি ফুল?
হাসলাম আমি আমার কথায় যেন শীতের মিষ্টি সূর্যটাও লজ্জা পেয়ে মিহিয়ে গেলো৷
ক্লান্ত শরীরে শাড়ি খুলে বসলাম, ফ্রেশ হয়ে একটু আড্ডা দিয়ে খেয়ে আবার নিজের রুমে আসলাম ততখনে ঘড়ির কাটা রাত এগারোটা চল্লিশের ঘরে এসে ঠেকেছে৷
এর মাঝে বান্ধুবির সাথে ফোন করে কথা বললাম, আমি তিশানের নাম্বার ফোন করতে যাবো তখনি তৃপ্তির ফোন এলো রাত একটা অব্দি ওর সাথেই কথা বললাম৷ একটা বেজে গেলো হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে এখন কি ফোন করবো? না ঠিক হবে না, আর ফোন দিয়েই বা কি বলবো? তার কি আমার কথা মনে আছে? ভুলে গেছে কি আমায়?
ঘুম এলো না এদিকে ঘড়ির কাটা তিনটায় এসে ঠেকেছে৷ এবার কান্না আসছে আমার, কেন আমার মন এতো অবুঝ হচ্ছে? কেন অচেনা কারোর জন্য আমি এমন বেকুল হয়ে যাচ্ছি? কি এ অনুভূতির নাম? কেন বুঝতে পারছি না এ নতুন নতুন অনুভূতির নাম কি? আবেগ? ভালোলাগা নাকি অন্য কিছু?
নাহ আমি আর পারছি না যা হওয়ার হবে এখন আমি ফোন করবোই৷ রীতিমতো চোখ দিয়ে পানি এসে পরেছে আমার কাঁপা হাতে ফোন করেই দিলাম কারণ আমি আর পারছি না৷ রিং হলো ধরলো না ঘুমিয়ে গেছে হয়তো৷ তো আমার কি? ঘুমাক আমার ঘুম হারাম করে দিয়ে আমি তাকে ঘুমাতে দিবো অসম্ভব৷
পরক্ষণে ভাবলাম তবুও কাজ টা ঠিক হচ্ছে না৷ আরেক বার কল করবো না ধরলে আর দিবোই না৷ চোখ দিয়ে আমার অনবরত পানি পরছেই কান্না আসছে আমার বুক ফেটে৷ আবার কল করলাম রিং হচ্ছে দুইবার হলো বুক ধক ধক বেড়ে গেছে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফোন তুললো কেউ৷ অন্য পাশ থেকে সফট মিউজিক এর আওয়াজ আসছে আমার যেন কান্নার পরিমান বাড়ছে সে অপর দিক থেকে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম৷ কে? ”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here