#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ৩০
হাল্কা গোলাপি বেনারসির সাথে খোপায় গোলাপি গোলাপ গুলো বেশ শোভনীয় লাগছে৷
চুড়ি গুলো কি সুন্দর রুনঝুন আওয়াজ তুলছে বারংবার৷ নতুন ফোড়ানো নাকে ছোট পাথরের নাকফুলটা সুন্দর লাগছে৷ কপালের মধ্যিখানে গোলাপি মাঝারো সাইজের টিপ বড় সোনালি রঙের ঝুমকো হালকা কৃত্রিম সাজসোজ্জা মন্দ লাগছে না তাফসি মেয়েটাকে৷ মেয়েটা এতো সুন্দর তাই বোধহয় মেয়েটাকে সবাই অল্পতেই এতো বেশি ভালোবাসে৷
আফরা নিজ হাতে সাজিয়েছে বেশ যত্ন করে৷ আফরার কাছে তাফসি মেয়েটাকে বেশ লাগে৷ মেয়েটার সব কিছু ঘিরে আছে মাধুর্যতা৷ সুন্দর গুছিয়ে কথাও বলে৷ ও যদি ওর নিজের বোন হতো সবসময় মেয়েটাকে পুতুলের মত সাজিয়ে বুকে আগলে রাখতো সবসময়৷
মেয়েটার মুখে মায়া আছে অদ্ভুত রকমের৷ এই মায়া দেখেই বুঝি তিশান এতো পাগল৷ মেয়েটা হাসলে চোখ হাসে ওর মা বলে যে মেয়ে হাসলে চোখ হাসে তারা মায়াবতী হয়, মিষ্টি হয়৷
আর এখনই বা বোন থেকে কম কিসে? জা বলে কি হয়েছে মেয়েটাকে বোনের মত আগলে রাখবে৷ ভাইয়ের জন্য এমন একটা মেয়ে পেলে ওর মাকেও আর একা থাকতে হতো না৷ তিশানের পছন্দ আছে বলতে হবে৷ মেয়েটা চাঁদের মতই সুন্দর তাইতো মেয়েটাকে চাঁদ বলে ডাকে তিশান৷ মেয়েটার বাবাও মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসে তা সে দিনই দেখে বুঝেছিলো৷
বড়দের সাথে তিশান সকালে বেরিয়েছে৷ রিছিপশন ও বাড়িতে আরাভ আর চাচা ছাড়া কেউ নেই তাই তিশান আর ইশান সেখানেই আছে৷
তিশান নেই তাই এই শাড়ি পরানোর মত অসাধ্য সাধণ করলো তিহান আর আফরা মিলে৷ নয়তো যাওয়ার আগেও আফরাকেই বলে গেছিলো,
“ভাবি মা যেন চাঁদ কে শাড়ি না পড়ায় তুমি দেখবে৷ ”
ওর উপর দায়িত্ব দিয়ে গেছে ও নিজেই শাড়ি পড়িয়ে দিলো৷ ছেলেটা শাড়ি পরাতে না করছে কেন এটাই বুঝতে পারছে না৷
আর সত্যি তো যখন তিশানের সাথে ওকে দেখবে মানুষ তো পরিচয় জানতে চাইবে তখন তো বলতেই হবে এ বাড়ির ছোট বউ৷ তখন কি বলবে মানুষ? বাড়ির অনুষ্ঠানে বউ শাড়ি পরেনি৷
কিন্তু ওই ছেলে এসে না জানি কি কান্ড করে৷ দুপুর হয়ে এসেছে এখনি রেডি হওয়ার ফিরে আসবে হয়তো?
সাজানো শেষ হতেই তিহান খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে বলে,
” মাশাল্লাহ৷ ছোট ভাবি কে কি মিষ্টি লাগছে এই শাড়িতে৷ ভাইয়া তো পাগলই হয়ে যাবে আজ৷”
মেয়েটার এহেন কথায় লজ্জা পেলো তাফসি মৃদু হাসলো এর মাঝেই আফরা বললো,
“এই তাফসি তিশান কিছু বললে একটু সামলে নিও প্লিজ ও তোমার কথা ফেলতে পারবে না৷”
আফরার কথা শেষ হতে দেরি তিশানের ঘর থেকে তিশানের কন্ঠ ভেসে আসতে দেরি হলো না,
“চাঁদ কোথায় তুমি? ঘরে এসো৷ ”
আফরা ইশারা করে যেতে বললো তাফসি ভয়ে ভয়ে রুম থেকে বের হলো ততক্ষণে তিশান ওয়াশরুমে ঢুকে গেছে৷ তাফসি ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো৷ না জানি এই পাজি ছেলে কি করে এখন৷ এই ছেলেকে তাফসি এক ধমকেই বসিয়ে রাখতে পারবে ওই হসপিটালের দিনের মত৷ কিন্তু আপাদত ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই ওর৷
তিশান মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলো তাফসিকে না পেয়ে ফের ডাকতে যাবে তখনই দরজার দিকে চোখ গেলো দরজা তো ভেতর দিয়ে লাগানো তাহলে পাষান মেয়েটা কোথায় গেলো?
তিশান আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিম্ন স্বরে ডাকলো,
“চাঁদ কাছে এসো৷ কোথায় তুমি?”
থামলো তিশান উত্তর না পেয়ে ফের ডাকবে কিন্তু আয়নার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো৷ তীরের মত বিধলো বুকের বা পাশটায়৷ হৃদ স্ফন্দন বাড়লো৷
তাফসি পেছন থেকে সন্তপর্ণে পাশ ঘেঁষে এসে দাড়ালো তিশানের৷ হঠাৎই ছেলেটির ভ্রু কুচকে এলো গম্ভীর্যতা ফুটলাও মুখশ্রীতে অতঃপর আয়নার দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লো অনুরাগী কন্ঠে,
“শাড়ি?
না করেছিলাম তো?”
তাফসির কি হলো কে জানে তিশান কে নিজের সম্মুখে ঘুড়িয়ে লেপ্টে রইলো ওর বুকে৷
তাফসির এহেন কান্ডে ভরকালাও তিশান বিস্মিত হলো অতঃপর অধরে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটলো৷ বাহ চাঁদ মান ভাঙানোর কৌশল খুব ভালো করেই যেনে গেছে৷ এই মেয়ে ধূর্ত এতো তিশান আগে থেকেই জানে এই ধূর্ত মেয়ের প্রেমেই তো পরেছিলো সে দিন৷
হাসিটা চওড়া হলো সে বললো,
” তোমার থাকে আমি কখনোই পেরে উঠবো নাকি? সেই প্রথম দিন পারিনি এখন কি করে পারবো?
ছলে বলে কৌশলে নিজের জালে বার বার আমায় বাজে ভাবেই আটকে দাও চাঁদ৷
এটা অন্যায়৷ সব কিছু তুলে রাখছি একদিন এর শোধ সমেত ফেরত দিবো বলে দিলাম৷”
“পারবে তো?”
তিশান এবার আরো বেশি বিস্মিত হলো৷ ‘তুমি’ বলছে মেয়েটা৷ মেয়েটা ওকে আজ হার্ট অ্যাটাক করিয়ে মেরে ফেলার ফন্দি এটেছে নাকি?
হৃদস্ফন্দন দ্রুত গতিতে বেরেই চলেছে এই বুঝি বেরিয়ে আসবে এখনি৷
নিজের আচরণে নিজেই লজ্জা পেলো মেয়েটা, আড়ষ্ট হয়ে খামচে ধরলো ওর বক্ষ৷ কিঞ্চিৎ ব্যাথা পেলো তিশান কিন্তু বললো না কিছু৷ মেয়েটার দেওয়া ক্ষতটাও ওর অনেক বেশি প্রিয়৷
মেয়েটা ওকে বেশি কষ্টতে দেখতে হয়তো পছন্দ করে? তাইতো কখনো ওর ভালোবাসার কথা ভাবে না৷ সর্বদা অন্য জনের কথা ভাবে৷
কি অদ্ভুত মানুষের জীবন তাই না? কি অদ্ভুত ভাবে দেখা হলো অতঃপর ঝগড়া ফের প্রেম এখন মেয়েটা ওর বুকে আছে একান্ত ওর৷
তিশান মেয়েটার দিকে তাকালো ওপাশ ফিরে আছে বুঝলো মেয়েটা লজ্জা পেয়েছে৷
আজ না হয় মেয়েটার লজ্জা আরেকটু বাড়িয়ে দিক নিজে? ক্ষতিকি? প্রেয়সীর লজ্জা মাখা মুখশ্রী কার না প্রিয়?
মেয়েটাকে শাড়িতে অসাধারণ আবেদনময়ী লাগে তাইতো কাল নিষেধ করে দিলো তবুও অবাধ্য মেয়েটা শাড়ি পরে ওর সামনেই এলো৷
যতই হোক দিন শেষে পুরুষতো বউ যদি এমন সেজগুজে থাকে৷ কাছে তো পাওয়ার ইচ্ছা জাগেই? কিন্তু এই ধূর্ত মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে পালাই পালাই করে৷
মেয়েটাকে এতোদিন দূরে রেখে কষ্ট হচ্ছিলো৷ যাক শশুর আর বাবার জন্য তারাতাড়ি বিয়েটা হলো৷
আর না হয় এই পাষাণ মেয়েকে কাছে পেতে বেশ কাঠ কয়লা খোয়াতে হতো৷
কোমর চেপে মেয়েটাকে মুখোমুখি করলো৷ নিচেই তাকিয়ে আছে মেয়েটা৷ হাসলো তিশান বাঁকা হাসি৷ অতঃপর দ্বিতীয় বারের মত সামনা সামনি মেয়েটার শুষ্ক অধরে অধর অলিঙ্গন করলো হাল্কা ভাবে তাতে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো তাফসি৷ অতঃপর ললাটে গভীর চুম্বন করলো৷
লজ্জা পেলো আরো বেশি কি করলো এটা? নিশ্বাস ভারি হয়ে এলো তাফসির৷ সরে এলো তিশানের কাছ থেকে৷ ছেলেটা ওকে লজ্জায় মারার বুদ্ধি করেছে৷
তিশান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাদা শার্ট পড়তে পড়তে নিবিড় কন্ঠে বলে,
“সুন্দর লাগছে তোমায়৷ ”
কিছু বললো না মেয়েটা বারান্দায় যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তিশান বাধ সেধে বললো,
“কাছে এসো৷ ”
এলো না মেয়েটা৷ লজ্জা পেলো আরো বেশি৷ তিশান ফের বললো,
“কাছে এসো চাঁদ৷ ”
সন্তপর্ণে সামনে এলো এবার৷ তিশানে শার্টের বোতাম দেখিয়ে বলে,
“লাগিয়ে দাও৷ ”
মুখ তুলে তাকালো তাফসি৷ তিশান ইশারা করলো লাগিয়ে দেওয়ার জন্য৷ তাফসি মাথা নিচু করে বোতাম ধরলো তখনি মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে মেয়েটাকে৷ তাফসি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
“কি করছেন?”
“তুমিটাই ঠিক ছিলো তুমিটাই বলো৷ ”
তাফসি ফের কিছু বলবে এর আগেই তিশান বলে,
“আমি যেন তুমিটাই শুনতে পাই৷”
কিছু বললো না আর দাঁড়িয়েই রইলো তিশান ঠোঁট এলিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
“দাঁড়িয়ে আছো যে? লাগিয়ে দাও?”
তাফসি মৃদু স্বরে বলে,
“ছারু,,, না মানে ছারো?”
বলে আরো একটু মাথা নিচু করলো৷ নিজের উপর রাগ হলো৷ বেশি পাকমো করে আগ বাড়িতে তুমিবকেন বলতে গেলো? এই ছেলে এখন ইচ্ছা ইচ্ছা করে লজ্জা দিচ্ছে৷
বেপরোয়া ছেলেটা ফের বাঁকা হেসে নির্লজ্জের মতো উত্তর দেয়,
“আমি তো কিস করছিনা এখন তাহলে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছো কেন? আর ছাড়বো কেন? আমি আমার কাজ করি তুমি তোমার কাজ করো৷ নড়বে না আমি ডিসটার্ব হচ্ছি সাজতে তো না করেছিলাম এখন আমাকে সামলানোর দায়িত্ব তোমারই৷”
চলবে,