প্রণয় ডায়েরি পর্ব-২৯

0
437

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ২৯

স্নিগ্ধ ভোর হলো সবে৷ অম্বর আজ চকচকে ঝকঝকে আঁধার কাটার পরমুহূর্তর আর্দ্র পরিবেশ৷
বিভাবসু আজ মিটমিটে হেসে তার কিরণ নিমজ্জিত করছে ধরনি৷
সিক্ত পাতা গুলো রৌদ্র কিরণে মুক্তার ন্যায় চিকচিক করছে এখনো৷
রৌদ্রকিরণ চোখে মুখে পরতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো প্রেমিক পুরুষ তিশানের৷ অপ্রসন্নতা ফুটলো মুখশ্রীতে কুচকে এলো চোখ মুখ৷ বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব করে ভরকালো৷ চোখ খুললো না চোখ বুজেই রইলো৷ মস্তিষ্ক খুললো মনে পরলো সে আর একা নয়৷
নিত্যদিনের অভ্যাস টা একটু তো থেকেই যাবে৷ অপ্রসন্নতা সরলো মুখ থেকে প্রসন্নতা এসে ভির করলো অঙ্গ জুরে৷
চোখ খুললো অতঃপর হাসলো৷ আড় চোখে মেয়েটাকে দেখলো এক রাশ প্রাপ্তির অনুভূতি সঞ্চিত হলো অন্তস্তলে৷ মেয়েটা তাঁর বুকে৷ সে পেরেছে নিজের করতে তাকে৷ মেয়েটা এখন একান্ত তাঁর, খাতা কলমেও তাঁর ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেকও তাঁর৷

পাষাণ মেয়েটা কাল রাতে কি না করছিলো৷ শুতেই চাইছিলো না এক সাথে কখনো বোনের ঘরে কখনো সোফায় আবার কখনো মাটিতে৷
কি কষ্টে আটকালো৷ তিহান যখন এলো রাতে ওদের রুমে তখন তো মেয়েটা সরাসরি বলেছিলোও,
“তিহান আমি তোমার সাথে ঘুমাবো৷ ”
তিহান মেয়েটা কি খুশি তখন খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে ভাইয়ের কথা না ভেবে বলেই দিয়েছিলো,
“এখনি চলো ভাবি৷ একসাথে ঘুমাবো মজা হবে খুব৷ ”
তিশানের তখন রাগ হয়েছিলো৷ এই পাষাণ মেয়েটা না হয় পাষাণের মতই করছে তাই বলে ভাবির কথায় তোর নাচতে হয়?
তিশান লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলেই দিয়ে ছিলো,
“আমার বউয়ের সাথে তুই ঘুমাবি কেন?”
এহেন কথায় তিহান চুপসে গেলেও তাফসি থামেনি সে রীতিমতো তিহানের হাত টেনে বাইরে যেতে যেতে বলেছিলো,
“চলো চলো আমি তোমার সাথেই থাকবো৷”
তিশান তখন রাগ সামলাতে না পেরে ধমক দিয়ে বলেছিলো,
“চুপচাপ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরো কোথাও যাওয়া চলবে না৷”
ধমক খেয়ে তিহানের হাত ছেড়ে মুখ ফুলিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে৷ তিহান তো ভয়ে বেরিয়েই গিয়েছিলো এক প্রকার দৌড়ে৷
অতঃপর তিশান মেয়েটাকে নিজের কাছে নিয়ে শোয়৷

কাল রাতে এতো কাহিনী করে এখন কি সুন্দর ওর বুকেই লেপ্টে ঘুমাচ্ছে৷
মেয়েটা বড্ড এলোমেলো৷ ঘুমালে মেয়েটার কিছুই ঠিক থাকেনা জামাকাপর ঠিক জায়গায় নেই৷ তিশান চোখ সড়িয়ে নিলো মেয়েটির থেকে৷ অতঃপর নিজের কান্ডে নিজেই হাসলো মেয়েটাতো এখন তারই তবুও কিসের জরতা?
মেয়েটাকে সন্তপর্ণে বালিশে শুইয়ে উঠলো তিশান ঘরিতে সবে সারে ছয়টা বাজে৷ পর্দাটা ঠিক মতো টেনে ফের এগিয়ে এলো নিজের জায়গায় শুতে গিয়েও শুলো না ঝুকে এলো মেয়েটার দিকে তাতে দুরত্ব ঘুচলো অনেকটা মুচকি হেসে প্রথমবারের মত প্রেয়সীর শুষ্ক অধরে নিজের অধর যুগল আলিঙ্গন করলো মৃদু ভাবে৷ টেরো পেলো না মেয়েটা৷ হাসলো তিশান প্রসন্ন হাসি৷
ফের ঘুমালো কিছুক্ষণ আজ ঘুম হলো শান্তির ঘুম৷

ঘড়ির কাটা যখন আটের ঘরে ধড়ফড়িয়ে উঠলো তাফসি৷ আশেপাশে চোখ বুলালো তার ও নিত্যদিনের অভ্যাস টা রয়েই গেলো৷
অন্য বাড়িতে নিজেকে দেখে ধক করে উঠেছিলো বুকটা৷ ফুপিয়ে উঠলো মেয়েটা৷ আজ বাবার কন্ঠ শুনলো না বাবার কন্ঠে মা ডাক টা আজ শুনতে পেলো না মিষ্টি কন্ঠে আর কেউ বললো না “আম্মাজান ঘুম হয়েছে৷”
তাফসির কন্ঠে উঠলো তিশান৷ মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে ভরকালো, থমকালো৷
কাঁদছে কেন মেয়েটা আবার?
তিশান এগিয়ে এসে বললো,
“কি হয়েছে চাঁদ? কাঁদছো কেন?”
মেয়েটা কিছু বললো না৷ তিশান আরেকটু কাছে এলো মিশালো নিজের সাথে৷
তাফসি মিশে রইলো ক্ষোভ নিয়ে খামছে ধরলো বুকের পাশটায় অতঃপর বললো,
“আপনি খারাপ তিশান৷ আপনি ভালো না৷ ”
ভরকালো তিশান৷ কি হলো আবার? এইতো অভিমানী মেয়েটার অভিমান ভাঙিয়েছে রাতে৷
তিশান কিছু বলবে এর আগেই মুঠোফোন টা বেজে উঠলো৷ বিরক্ত নিয়ে মুঠোফোন টা নিলো হাতে নাম্বারটা অচেনা তবুও উঠিয়ে কানে ধরতেই ওপাশের কথা শুনলো চেহারার ভঙ্গি পাল্টালো তিশানের শুকনো ঢোক গিললো অতঃপর কান থেলে সরিয়ে স্পিকারে দিলো৷
“আম্মু নতুন বাড়িতে ঘুম হয়েছ?”
কেঁপে উঠলো তাফসি৷ আশেপাশে চোখ বুলালো কান্নারত কন্ঠে অস্ফুটস্বরে ‘আব্বু’ বললো মেয়েটা অতঃপর ফের ঢুকরে কেঁদে উঠলো৷
আবার কন্ঠটা পেলো তাফসি,
“আম্মাজান কাঁদেনা৷ আব্বু আসছিতো৷”
কন্ঠটা কোমল শোনালো তাফসি বুঝলো এবার ও সত্য শুনেছে বোঝার সাথে সাথে তিশান কে ছেড়ে ফোনটা নিলো অতঃপর ব্যাস্ত হয়ে পরলো বাবা মায়ের রাগ ভাঙাতে,
“আব্বু আমাকে মাফ করো আমি তোমার অবাধ্য,,,৷ ”
মেয়েকে মাঝ পথে থামিয়ে বললো সে,
“জানি মা৷ আমার মেয়ে ভুল করেনা শান্ত হও তুমি৷ ”
শান্ত হলো না ও জানে মা হয়তো রেগে আছে৷ কিন্তু না ওর কথার ভুল প্রমান করে দিয়ে মা শান্ত কন্ঠে বলে,
” উঠেছিস?”
তাফসি বরাবরই মা কে ভয় পায় কি না কি বলে তাই স্পিকার অফ করে কানে ফোনটা নিয়ে শান্ত কন্ঠেই উত্তর দেয়,
“উঠেছি৷ ”
ওর মা ওকে আরো অবাক করে দিয়ে বলে,
“কেঁদে কেটে চোখ ফুলালে মানুষ কি বলবে? আর বেশি লাফালাফি করবিনা মা তুই কিন্তু শুধু ও বাড়ির অতিথি বা স্বর্নার বোন না ওবাড়ির বউ৷ তিশান ছেলেটা বরাবরই ভালো আমরা জানি তোর আব্বু একটু ওর উপর রেগে আছে এ রাগ তিশান ভাঙাতে পারবে ওর মা বলেছে৷ কারো অবাধ্য হবি না মা তোর শাশুড়ী অনেক ভালো মানুষ তার কথা শুনবি. তিশানের উপর রেগে থাকিস না৷ আমরা বিকেলে আসবো৷ অনুমতি ব্যাতিত বাড়ি থেকে বের হবি না রাখছি এখন৷ আর খাওয়া দাওয়া যেন ঠিক মত করা হয়৷”
বলে ফোনটা কেটে দিলো৷ অবাক হলো তাফসি শান্ত হলো কিন্তু বুকটা এখনো ভার হয়ে আছে৷ এ বাড়ির বউ কথাটি কেমন অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করলো সাথে কষ্টও দিলো৷

বিয়ে হয়ে গেছে ওর৷ আচ্ছা আজ তিশান ও বাড়ি যেতে দিবে না?
এর পর থেকে আর প্রতিদিন বাবার কন্ঠে ঘুম ভাঙবে না? কয়েক ফোটা অবাধ্য পানি ফের গড়িয়ে পরলো কিন্তু এর আগেই মুছে দিলো তিশান৷ জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে৷
চোখ মুছে উঠলো তাফসি ঠিক সেই সময়ই ডাক পরলো তাঁর তিহান ডাকছে৷
তিশান উঠে জরজা খুলে দিলো অতঃপর তিহান সহ তিশানের মা এবং প্রবেশ করলো ঘরে৷
তিশানের মা প্রবেশ করতেই প্রশ্ন ছুড়লো তাফসির পানে,
“ঘুম হয়েছে মা?”
ধক করে উঠলো তাফসির বক্ষখানা৷ চোখ ভরে এলো ফের৷ মানুষ গুলোকে যতই দেখে অবাক না হয়ে পারে না তাফসি৷

তিশানের মা হাত ধরে বিছানায় বসালো অতঃপর হাতে মোটা মোটা দুটো চুরি ছোট কানের টপ আর নাকের ফুল দিলো নাক ফোড়ানো না তাই পরতে পারলো না তা৷ আজ যখন সাজাতে আসবে ফুড়িয়ে নিবে৷
অতঃপর গোলাপি একটা শাড়ি দিলো তাফসি কে শাড়ি দেখে তিশান ভ্রু খানা কুচকে বলে,
“শাড়ি দিয়ে কি হবে?”
“পড়বে তোর বউ৷”
“ওর জন্য আমি শপিং করে রেখেছি মা ও এটা পড়বে না৷”
ছেলের কথা শুনে সে বলে,
“বাড়ির বউ ও বাবা শাড়ি না পরলে হয় বাড়ির অনুষ্ঠানে৷”
“কোন শাস্ত্রে লেখা আছে বাড়ির বউ হলে বাটির অনুষ্ঠানে শাড়ি পরতে হয়?”
“তুই তা বুঝবি না৷ ও আজ এটা পরবে৷”
মায়ের এহেন উত্তরে একবার তাফসির দিকে একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে শক্ত কন্ঠে বলে,
“শাড়িটা ভাবিকে দিয়ে দাও মা ও শাড়ি পড়বে না৷ আমি পরতে দিবো না৷ ”

চলবে,

[ দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত ]

আমার গ্রুপ জয়েন হয়ে অনুভূতি জানাতে পারেনঃ মেঘকুঞ্জ [তাফসিয়া মেঘলার প্রণয় পান্ডুলিপি ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here