#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ২৫
আঁধারে নিমজ্জিত আকাশে এক টুকরো চাঁদ আর তাঁর চারোপাশে বিস্তৃত আছে হাজার তারারা৷ অম্বর খানায় চাঁদ তারার রাজত্ব চলছে৷ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আঁধার অন্তরিক্ষে৷
চাঁদ তারার এমন ঝলসানো রুপে হয়তো যে কেউ মোহিত হয়? তাদের এক বার স্পর্শ করা হয়তো সবার স্পৃহা? ওই চাঁদ হাতে পাওয়ার লোভ কার না হয়? কিন্তু চাঁদ টা যে ওই অম্বরের বুকেই বেশি শোভা পায় বেশি৷ আর ওই দাম্ভিক অম্বরটা স্পর্শ ও করতে দেয় বা তার চাঁদ কে? চাঁদ কে দেখে সবাই বলে ওটা আমার৷ কিন্তু আদৌকি চাঁদ সবার হয়?
কতই না কল্পনা জল্পনা করে ওই কমনীয় চাঁদ কে নিয়ে?
সুশ্রী আকাশটায় হঠাৎ বিকট শব্দ করে লাল নিল আগুনের ফুলকি ঝরতেই ভাবনার সুতো কাটলো মাহতাবের৷
ওই অন্তরিক্ষের চাঁদ এর সাথে নিজের চাঁদ কে মিলালো৷ ওই অন্তরিক্ষর মতো তাঁর চাঁদটাও একই রকম৷ তাকে দূর থেকে দেখা যায়৷ তাকে নিয়ে দূর থেকে কল্পনা জল্পনা করা যায় কিন্তু স্পর্শ করা যায় না৷
সে তো তাঁর নয় সে যে অন্যের৷ আর ওই আকাশটার মত তাকেও তাঁর প্রিয় মানুষটার বুকে মানায় হয়তো?
হ্যাঁ মানায় তো৷ কাল তো দেখলো তিশান যখন গাড়ি থেকে নেমে আলতো হাতে তাফসিকে জড়িয়ে ধরেছিলো প্রেয়সীর মুখটা কি সুন্দর লাগছিলো৷ লজ্জায় রেঙে উঠেছিলো মুখখানা৷ চোখে ছিলো একরাশ আনন্দ প্রিয় মানুষটাকে কাছে পাওয়ার আনন্দ৷ কিন্তু তা যে তাঁর সামনে আসলে থাকে না৷ সে চোখে আনন্দ থাকে না ওর সামনে আসলে তাঁর মুনের চোখে এক রাশ ঘৃনা আর বিরক্ত থাকে৷
চোখ মেলে তাকালো তাঁর মুনের পানে৷ হলুদিয়া পাখি লাগছে৷ সে জানে তাঁর মুনের পরনের জামাটাও তিশানের দেওয়া৷ ছেলেটা যে মেয়েটাকে বড্ড ভালোবাসে তা আগেই বুঝে গেছে মাহতাব৷ মুগ্ধকর দৃষ্টিতে আর তাকালো না ধাতস্ত হলো অন্য দিকে ফেরলো৷ মুন যে তাঁর নয় নিষিদ্ধ কিছুতে দৃষ্টি দেয়াও পাপ৷
আজ মনটা বার বার অবাধ্য হচ্ছে মাহতাবের৷ ইচ্ছে করছে একটু প্রশংসা করতে প্রেয়সীর৷ করলে ক্ষতি হবে কি? আজই না হয় শেষ বার প্রশংসা করলো? পরক্ষনেই ভাবলো না ঠিক হবে না৷
বেশক্ষানিক্ষণ পর তাফসি নিজেই এগিয়ে এলো মাহতাবের দিকে৷ অতঃপর শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো মাহতাবের দিকে,
“ভাইয়া বড় ভাইয়া কোথায়?”
থমকালো মাহতাব, চমকালো, অবাক হলো৷ মন টা অক্ষুণ্ণ হলো, প্রসন্ন হলো৷ তাফসি স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে?
আজ রাগ নেই ওই চোখে৷ প্রক্ষনে হাসি মুখে উত্তর দিলো,
“হৃদয়? হৃদয় তো নিচে গেছে এসে পরবে৷ কেন তোর বা তোদের কিছু লাগবে? বল আমি করে দিচ্ছি৷ ”
তাফসি হাসলো মুচকি হাসি৷ যাক মাহতাবও যে স্বাভাবিক আছে৷ সবসময় যাকে ভাই হিসেবে ভেবে এসেছিলো তাঁর সাথে ঝামেলা টা আর ভালো লাগছিলো না তাফসির৷ ভাবলো আগের মত হয়ে গেলে ভালো হবে কাজিন মহলের আনন্দটা ফিরে আসবে৷
তাফসি বললো,
“না ভাইয়া দরকার নেই৷ ”
চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো তাফসি৷ আবার থেমে গেলো পরক্ষণে পিছনে ফিরে ধাতস্ত কন্ঠে বলেন,
” ভাইয়া? তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছি অনেক সবটাই পরিস্থিতির জন্য৷ কিছুটা তোমার ভুল ছিলো কিছুটা আমার হয়তো? দুঃখিত৷
আমি চাই সবটা আগের মত হোক আমাকেও স্বাভাবিক ভাবে নাও তুমি৷ ভালোবাসি আমি তাকে হয়তো নিজের থেকেও বেশি৷ যা ঘটেছে ভুলে যাবে আশা করি?”
‘তাকে ভালোবাসি’ কথাটার মাঝে কতটা গভীরতা লুকিয়ে ছিলো যে কেউ শুনলে মুগ্ধ হতো৷ কি সুন্দর ভাবে বললো মেয়েটা? এই সুন্দরতম কথাটা সুন্দর শুনালেও তিক্ততায় ভরে উঠলো মন টা৷ বিষন্নতা ছেয়ে গেলো৷ কষ্ট হলো মাহতাবের৷ বুকটা টিপ টিপ করছে মনে হলো কেউ বুঝি কলিজাটা ছেড়ার জন্য টান দিলো৷ হৃদপিণ্ডটা কেও ছুড়ি দিয়ে আঘাত করলো যেন নিশ্বাস ভারি হলো চোখ ঝাপসা হলো আবার হলো না৷ মাহতাব ধাতস্ত হলো অতঃপর মাহতাব স্বস্থির নিশ্বাস টানলো৷ যাক প্রেয়সী ভালো থাকবে এই অনেক৷ কি সুন্দর মোহনীয় হাসি মেয়েটার৷ আর সেই হাসিটা তিশানের সাথে থাকলেই বজায় থাকবে৷ পরিবার এখন রাজি না হলেও তিশান যা ছেলে কৌশলে রাজি করিয়ে তাফসিকে নিজের করবেই৷ কতটা ভালোবাসলে এমন পাগলামো করা যায়? কতটা ভালোবাসলে এক ঘর মানুষের সামনে বলা যায় আমি আমার ‘ চাঁদ ‘কে চাই৷ কিন্তু ও তো নিজের মাঝেই লুকিয়ে রেখেছিলো৷
কতবার এমন সুযোগ ছিলো বলার বলেনি ও সময়ের অপেক্ষা করতে করতে হারিয়ে ফেললো তাঁর মুন কে?
ভাবনা থেকে বেড়িয়ে মুচকি হাসলো মাহতাব অতঃপর বললো,
“সরি৷ আমার অনকটাই ভুল ছিলো৷ আমি আর তোর পথের বাধা হবো না৷ ভালো থাকিস তুই৷ ”
কথাটা কেমন শোনালো৷ তবুও ভালো লাগলো তাফসির৷ তাফসি আবার অন্যদিকে পা বাড়ালো “মুন” বলে ডেকে আবার থামালো মাহতাব অতঃপর বললো,
“শেষ বারের মত একটা কথা বলি?
বলবো?”
কন্ঠ জুরে আছে অসহায়ত্ব বিষন্নতা আর কষ্ট৷ শেষ বারের মত প্রেয়সীকে কিছু বলার আকুলতা ৷ তাফসি ভরকালো৷ কি বলবে আবার? তবুও মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো মাহতাব বললো,
“সুন্দর লাগছে তোকে৷”
থামলো অতঃপর আবার বললো,
” তিশানের পছন্দ বেশ ভালো৷ ”
থমকালো তাফসি ভয় পেলো৷ অগোচরে শুকনো ঢোক গিললো৷ অগোচরে দিলেও মাহতাবের নেত্র এড়ালো না৷ সে মৃদু হেসে বলে,
“ভয় পাস না৷ বলবো না কাউকে৷ ”
স্বস্তির নিশ্বাস টানলো তাফসি৷ লোকটা জেনে যায় কি করে? কি অদ্ভুত বাবা৷ অন্যদিকে চলে গেলো তাফসি৷
পথ আলাদা হয়ে গেলো দূরত্ব বাড়লো অতঃপর আবছা হয়ে গেলো দুজনের সীমা৷ হুম সত্যি আলাদা হয়ে গেলো৷
রাত বাড়লো সোরগোল কমছে৷ রাত দুইটার বাজতেই বড়রা চলে গেলো বাড়িতে গানের শব্দ আগের ন্যায় রয়েছে হৃদয়ের সব বন্ধুরা আছে স্বর্নার বন্ধু বান্ধুবিরা আর কাজিন মহল৷
হঠাৎ ডিজে গান বন্ধ হয়ে “সাজান জি ঘার আয়া” গানটা বেজে উঠলো৷ তখনই প্রবেশ করলো আরাভ আর ওর বন্ধু মহল৷ বিকট শব্দ করে আতশ বাজলো৷ স্বর্না তাফসি দুজনেই চমকালো৷ ওরা তো জানতো আসবে না কেউ৷ অবাকের সাথে খুশিও হলো স্বর্না বিষন্ন হলো তাফসি৷
তিশান কে দেখলো না ছেলেটা আসে নি? আরাভ উঠিয়ে তাফসির পাশ থেমে উঠিয়ে নিলো স্বর্নাকে৷ তখনই স্বর্নার জায়গাটায় ধপ করে বসে পরলো সুঠাম দেহের অধিকারী তিশান৷ চমকালো তাফসি এসেছে তাহলে? কোথায় ছিলো?
“হলুদ প্রজাপতি লাগছে আপনাকে চাঁদ৷ ”
কানের কাছে ফিসফিসানি কন্ঠে ধ্যান ভাঙলো৷ লজ্জা পেলো৷ তিশান উঠলো তাফসির সামনে দাঁড়ালো অতঃপর হাত টেনে তাফসিকেও উঠালো৷
মেয়েটা ভয় পেলো ব্যাস্ত ভঙিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো না হৃদয় স্বাভাবিকই আছে৷
কাউকে পরোয়া না করে জড়িয়ে নিলো বুকে প্রেয়সীকে৷ সাথে সাথেই তিশানের বন্ধুরা এক এক জন চেচিয়ে বাহবা দিয়ে উঠলো৷ তিশান প্রেয়সীর কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
“অপেক্ষার অবসান ঘটবে৷ আপনি আমার হবেন৷ আমার নামে সাজবেন৷ আমার রঙে রাঙাবেন নিজেকে৷”
বুঝলো না কিছু তাফসি৷ ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো থমকালো তাফসি৷ শ্বাস আটকে এলো৷ হায় আল্লাহ এ কি করছে? হৃদয় ও হাসলো৷ অবাক হলো৷ লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে সরে দাঁড়ালো৷
শেষরাতের আগেই বেড়িয়ে পরলো আরাভেরা৷ রাত পোহালো দিন শুরু হলো সকাল দশটায় পার্লারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলো৷
কৃত্রিম ভাবে সাজলো আবার৷ খয়েরী লাল লেহেঙ্গা জড়ালো শরীরে সাথে স্বর্নের বড় হারটা৷ বুক কাঁপছে এটা পরতে না জানি কি ঝামেলায় পরতে হয় আজ৷
এই ছেলেটা বড্ড অবুঝ৷
বউ বউ লাগছে ওকে৷ তিশানের সাথে সাথে স্বর্নারো মাথাটা খারাপ হয়েছে পার্লারের মেয়েকে বলিয়ে তাঁর সাথে মিল রেখে সাজিয়েছে৷ মানুষ তো বলবে আজ ওর ও বিয়ে৷
ঘন্টা ক্ষানেক পর মুঠোফোন টা বেজে উঠলো তখন তাফসির পুরো সাজ শেষ স্বর্নার জন্য বসে আছে৷
তিশান ফোন করেছে৷
ফোন তুলতেই বললো,
“পার্লারের বাইরে আছি আমি চাঁদ৷ আসবেন একটু?”
কি সুন্দর আবদার৷ কিন্তু অবাক হলো তাফসি৷ একটু পর ওদের বাড়ি থেকে বর যাত্রি বের হবে ও এখন এখানে কি করছে?
তাফসি কিছু বলবে এর আগেই তিশান বলে,
“আপনাদের বাড়িতে ভাবির কিছু জিনিস দিতে এসেছেলাম৷ বাইরে বসে আছি গাড়িতে আসুননা একটু?”
হাসলো তাফসি অতঃপর ‘আসছি’ বলে ফোন কাটলো৷ তাফসি লেহেঙ্গা উচু করে বের হবে তখনই স্বর্না পিছন দিয়ে ডাকলো৷
পা ঘুড়িয়ে সে দিকে গেলো এবার৷ স্বর্নার সবে চোখ সাজানো হয়েছে৷ সে বোনকে নিজের কাছে এনে কপালে চুমু খেলো৷ তাতে তাফসি কিছুটা অবাক হলো সাথে খুশিও৷ স্বর্না মুচকি হেসে বলে,
“তিশান এসেছে বুঝি?”
এমন প্রশ্নে লজ্জা পেলো তাফসি৷ স্বর্না আবার বললো,
“সুন্দর লাগছে তোকে৷ যা ছেলেটা অপেক্ষা করছে তোর৷”
তাফসি মুচকি হেসে আবার লেহেঙ্গা তুলে এগিয়ে এলো বাইরে৷ চেনা কালো গাড়িটা দেখতেই গাড়িটায় উঠে বসলো৷ তাতে চোখাচোখি হলো দুজনের৷ মুগ্ধ হলো তিশান৷ কৃত্রিম প্রসাদনি দিয়ে বউয়ের ন্যায় সাজানো হয়েছে৷
সুন্দর লাগছে ওর চাঁদ কে৷ একেবারে আকাশের চাঁদের ন্যায়৷
“আমার হওয়ার জন্য তৈরি তো আপনি?”
হঠাৎ তিশানের এমন প্রশ্নে ভরকালো৷ অবাক চাওনি দিলো তার পানে কি বলছে ছেলেটা?
তিশান আবার বলে,
“দুঃখিত চাঁদ আমার আর কিছু করার ছিলো না৷ ”
বলে তখনি মুখে কিছু স্প্রে করলো৷ চোখ ঝাপসা হয়ে এলো তাফসির৷ সবটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো কিছু বোধগম্য করতে পারলো না কিছু৷ লুটিয়ে পরলো পাগল প্রেমিকের বুকে৷ তাতে স্বস্তির নিশ্বাস টেনে ওষ্ঠ ছোঁয়ায় প্রেয়সীর ললাটে অতঃপর গাড়িটা স্টার্ট দিলো তাঁর গন্তব্যে৷
চলবে,