#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ২৪
লাল টকটকে হয়ে আছে মেহেন্দির রঙ৷ হাত জুরে আছে পুরো মেহেন্দি৷ মেহেন্দিটা কৃত্রিম নয় হাতে বানানো মেহেন্দি৷ আসল মেহেন্দি পাতা শুকিয়ে ঘরে বানিয়ে টিউবে ভরা হয়েছে স্বর্নার বিয়ের জন্য৷
সে মেহেন্দির রঙ টকটকে হয়ে গেছে মধ্যখানে গোলের মাঝে ‘তিশান’ নামটা স্পষ্ট৷ যে কেউ দেখে ফেলবে অনায়েসে৷
মানুষ বলে যার নামে মেহেন্দি দেওয়া হয় সেই মেহেন্দি যদি গাঢ় হয় তাহলে নাকি তাঁর ভালোবাসাও বেশ প্রগাঢ় হয়৷ কথাটি কতটা সত্য তা জানা নেই তাফসির৷ তবে এ ঠিকি জানে ছেলেটা যে ওকে পাগলের ন্যায় ভালোবাসে৷ তাঁর ভালোবাসায় বৈচিত্র সবারই নজরে পরেছে৷ সে যেমন চমৎকার তাঁর ভালোবাসার ধরন ও চমৎকার৷
কিন্তু হস্তের মধ্যখানে এই নামটা নিয়ে শঙ্কিত তাফসি৷ এ নাম যে কারো নজরে এসে যাবে তখন যে কেলেংকারী হয়ে যাবে তখন কি করবে?
লোকটা জোর করে আড়ালে নিয়ে নিজ দায়িত্বে নিজ হাতে মেহেন্দি দিয়ে নিজের নামটা স্পষ্ট করে লিখে দিয়েছে৷
এখন বাড়ির কারো চোখে পরলে কি বলবে? কতক্ষনি বা লুকিয়ে রাখতে পারবে?
মা দেখলেই চেচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলবে৷ এ লোকটা বড্ড অবুঝ আর ঘাড় বাঁকা৷ শুনলোই না কথা? মুছতেও দিলো না শুকোনো পর্যন্ত আশেপাশেই ছিলো৷ লোকটা কি সব সময় উঠে পরে লাগে ওর ঝামেলা বাড়ানোর? হাত ভর্তি মেহেন্দি কখনোই পছন্দ করে না তাফসি কিন্তু তিহানের হাতে জোর করে হাত ভর্তি বউদের মত করে মেহেন্দি দিয়ে দিইয়েছে৷
হাত কেমন ভর্তি ভর্তি লাগছে লাল টকটকে হয়ে আছে এমন মেহেন্দি অপছন্দ হলেও আজ মন্দ লাগছেনা৷ তাঁর সাথে অনামিকায় তিশানের পরিয়ে দেওয়া আংটি আর হাতে ওর মায়ের চুড়িটা৷
আজ পরেছিলো চুড়ির সাথে৷ আর আংটটা সুযোগ পেলেই পরে৷
অন্তরিক্ষ তখন আবছা অন্ধকার থেকে শুভ্র রাঙা হচ্ছে৷ পূর্ব দিক থেকে তখন বিভাবসুর আলো বিস্তৃত হচ্ছে৷ আবছা রক্তিম বিভা সুন্দর লাগলো তাফসির নজরে৷
প্রফুল্ল হলো মন৷
ভোর হতে দেখলো৷ আজ মন মস্তিষ্ক দুটোই নিজ নিয়ন্ত্রণে আছে৷ নয়তো তা আর নিজ নিয়ন্ত্রণে থাকে কই? নিজের কাছে থেকেও যেন নিজের কাছে নেই৷
আজ হলুদ৷ স্বর্নার হলুদ৷ সারা রাত ছিটেফোঁটাও ঘুমায়নি এখন একটা লম্বা ঘুম দিবে নয়তো পরে দেখা যাবে অসুস্থ হয়ে পরবে?
বোনের বিয়েতে অসুস্থ হয়ে থাকলে ভালো লাগে কি?
ছয়টা বাজতেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে অতঃপর কিছুক্ষনের মাঝেই তলিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে৷
সারা রাত ঘুম পরিরা ওর কাছে ধরা না দিলেও এখন যেন আষ্টেপৃষ্টে ধরলো অতঃপর ঘুম সাগরে ডুব দিলো গভীর ভাবে৷
বারোটা বাজতেই বাবার ডাকে উঠলো তাফসি৷ তাঁর বাবা প্রবেশ করলো ঘরে মেয়েকে ডাকতে ডাকতে৷ সে সর্বদা রুমে ঢুকার আগে দরজার বাইরে থেকেই ডাকা শুরু করে৷ মেয়ে এখন বড় হয়েছে কত ভাবেই তো শুয়ে বসে থাকতে পারে? রুমে ঢুকে মেয়েকে এখনো ঘুমাতে দেখে মৃদু হেসে বললো,
“আম্মাজান উঠবে না?”
প্রশান্তিতে ভরে গেলো যেন তাফসির মনটা “আম্মাজান ” কথাটা কারি না ভালো লাগে? বাবার মুখের মা, আম্মাজান ডাক যে সবার প্রিয়৷
ঘুম ঘুম চোখে তাকালো তাফসি৷ তাফসির বাবা চিন্তিত ভঙ্গিতে মেয়ের দিকে তাকালো৷ মেয়ের কিছু হলোনা তো তা ভেবে চিন্তা হলো৷
নয়তো এ মেয়ে যা আড্ডা প্রিয় বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে ঘুম ভাঙে আগে তাঁর রাজকন্যার৷ আজ যে চঞ্চল মেয়ে কিনা অনুষ্ঠান বাড়িতে পরে পরে ঘুমাচ্ছে? শরীর খারাপ করেছে নাকি তা দেখার জন্য চিন্তাগ্রস্ত হয়ে সন্তপর্ণে কপালে হাত দিলো৷ না শরীর ঠান্ডাই আছে স্বস্থির নিশ্বাস টানলো সে৷ মেয়েটা তাঁর কলিজা৷
মেয়েটার কিছু হলে তাঁর অন্তর আত্মা কাঁপে৷
“জ্বর নেই আব্বু৷ ”
মেয়ের কথায় মিহি হাসলো৷ চোখ বুলালো মেয়ের মুখ চোখে৷ মুখ চোখ আগে থেকে শুকিয়ে গেছে৷ মেয়েটা কষ্টে আছে৷ আর সে কষ্ট সেই দিচ্ছে. মেয়েটার প্রতি এমনি অন্যায় করছে সে৷ কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু মুখ বুঝে বলছে না মেয়ে৷
মেয়ে হিসেবে নিযের মেয়েকে শ্রেষ্ঠ, সার্থক মনে হলো তাঁর৷ এমন মেয়ে ভাগ্যক্রমে পাওয়া যায় ভাবলো সে৷ নয়তো আজকাল কে বাবা মায়ের কথা ভাবে? মা-বাবা একটা বলে মেয়েরা আজকাল দশটা শুনিয়ে দেয়৷ আর সেখানে উনি ভালোবাসা থেকে দূরে রেখেছে৷ মেয়ে তবুও মুখটুকু কালো করেনি৷ কিছু বলেনি৷
কিন্তু তিশান ছেলেটা নিয়ে চিন্তা হয় তাঁর৷ ছেলেটা পাগলাটে যেকোনো সময় যা খুশি করতে পারে৷ এ কথা সে শুনেছে বিশেষ কারো থেকে৷ সে জানে জেনে শুনে তাঁর মেয়ে কখনো ভুল করবে না৷ এই দের মাসে সে বুঝেছে৷ ভুল করলে করার অনেক সুযোগ ছিলো ফোন কেরে নিয়েছে তাতেও মেয়ে টু-শব্দ করেনি৷
ভাবনা থেকে বের হলো অতঃপর মেয়ের দিকে নিষ্পলকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“আম্মা জান শরীর খারাপ লাগছে?”
তাফসির ঘুম ভাঙলো পুরোপুরি অতঃপর চোখ কচলে উঠলো মিনমিনিয়ে বললো,
“সারা রাত ঘুম হয়নি আব্বু বারান্দায় বসে ছিলাম৷ মোবাইল ঘেটেছিলাম৷ সকালের দিকে ঘুমিয়েছি৷”
নিঃসংকোচে, নির্ভয়ে উত্তর দিলো তাফসি৷ তাঁর বাবা এতে হাসলো৷ অন্য বাবা মা হলে নিশ্চয়ই শুনে চেচামেচি শুরু করে দিতো? সন্দেহ ও করতো? আর অন্য মেয়েরা হলে তা জানাতো নাকি? মিথ্যে বলতো৷ কিন্তু তাঁর মেয়ে সত্যি বলেছে৷
তাফসির বাবা মুচকি হেসে বলে,
“এখন ঘুম হয়েছে আম্মু? নাকি আরো ঘুমাবে? ”
তাফসি হেসে উত্তর দিলো,
“হয়েছে ঘুম৷ ”
তাঁর বাবা বের হলো রুম থেকে ও জানে বাবা যে চা বানাতে গেছে৷ মেয়ের জন্য চা বানাতে তাঁর ভালো লাগে৷ এ যে তাঁর ঘরের জান্নাত৷ আল্লাহ খুশি হয়ে উপহার স্বরুপ মেয়ে সন্তান দেয়৷ আর তাঁর ঘরে দুটো উপহার পাঠিয়েছে খুশি হয়ে তাদের খেয়াল রাখার দায়িত্ব তো তারই? স্ত্রী তো কতই কষ্ট করেছে এই পরি দুটো কে জন্ম দিতে দিয়ে সেই কষ্টের ভাগিদার তো সে হয়নি৷ তাঁর রাজকন্যাদের ভালো রাখার দায়িত্ব তো এখন তারই?
দুজনকেই সে বুকে আগলে রেখে বড় করেছে কষ্ট পেতে দেয়নি কিন্তু এখন তাঁর কলিজাটাকে সব চেয়ে বড় কষ্ট তাকেই দিতে হচ্ছে৷
কি করবে? যতই হোক বাবা তো? মেয়ের ভালো দেখা যে তারই দায়িত্ব?
চা বানিয়ে মেয়ের হাতে দিলো৷ তৃপ্তি নিয়ে চা পান করলো তাফসি অতঃপর শাওয়ার নিয়েই একেবারে খেয়ে দেয়ে নিচে নামলো৷ তাতে তনটা প্রায় বেজে গেছে৷
স্বর্না মুখ ফুলিয়ে বসে আছে৷ বুঝলো বোন রাগ করেছে৷
অতঃপর অতি কষ্টে রাগ ভাঙালো বোনের৷ চারটা নাগাত বের হলো সবাই পার্লারের উদ্দেশ্যে৷
হলুদ আর সাদা লেহেঙ্গা পরেছে তাফসি লেহেঙ্গার টপ হলুদ আর নিচের পার্ট পুরো সাদা নিচে দিয়ে হলুদ লেস লাগানক৷ নিসন্দেহে বলা যায় ছেলেটার পছন্দ ভালো৷
বেশ সুন্দর পোষাক গুলো৷ সব গুলো দেখেনি তিশান নিজেই বলেছে যে দিন যেটা পরবে সে সেদিন তা একেবারে দেখতে৷
এতো গুলো প্যাকেট দেখে মনে করিছিলো সেখানে রিশিপশনেরো আছে কিন্তু না তিশান কাল বললো রিছিপশনের জন্য কিছু কিনে দেয়নি৷ আর অবাক করা বিষয় হলো একটা স্বর্নের মোটা হার দিয়েছে৷ তাফসি এর জন্য অনেক রেগে ছিলো সে নিতে চায়নি সবার সামনে ওটা পরবে কি করে? কি বলবে? তা ভেবেই পাচ্ছে না৷ কিন্তু তিশানের জেদ ওটা পরতেই হবে৷ নয়তো বিয়েতে আসবে না৷ এর জন্য কালকেও অনেক ঝগড়া হয়েছে ওদের মাঝে৷ পরক্ষণে স্বর্না তিশান কে আশ্বাস দিয়েছে সে পরাবে৷ আর বাড়িতে যা হবে সে দেখে নিবে৷
আটটা বাজে পার্লার থেকে সোজা কমিউনিটি সেন্টারে এলো৷ হলুদ আর সাদা সংমিশ্রণে সাজানো হয়েছে সেন্টার টা৷ সুন্দর লাগছে৷ সবার মুখে প্রশংসা শুনেও মন ভরলো না তাফসির অপেক্ষায় রয়েছে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির৷ মানুষটিকি আজ আসবে না?
আজ সারা দিন এক বার ও কথা হয়নি এমনি কাল যাওয়ার পর একবার ও কথা হয়নি৷ লোকটা রেগে আছে?
না হাসি মুখেই তো গেলো৷ তাহলে আসছে না কেন? আসবে না তাফসির প্রেমিক পুরুষ?
চলবে,