#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ১৮
শুভ্র সকাল দিয়ে সূচনা হলো স্নিগ্ধ এক দিনের৷ স্নিগ্ধ এক মূহুর্ত মিষ্টি এই সকাল৷ ঘড়ির কাটা তখন আটের ঘরে৷ রোদ আজ চিক চিক করছে চারোদিক৷ অনামিকা আঙ্গুলে আংটিটির দিকে নজর গেলো৷ চুড়িটা খুলে রাখলেও আংটিটা কেন যেন খুলতে ইচ্ছা করলো না৷ কেন? সে পরিয়ে দিয়েছে তাই? ভয় ও করছে না এটা হাতে নিয়ে৷ কেন বুঝলাম না, প্রিয় মানুষ এর ভালোবাসার চিহ্ন তাই? এটায় যে তাঁর ভালোবাসার স্পর্শ আছে খুলতাম কি করে?
সে যে স্ব-যত্নে পরিয়ে দিয়েছিলো৷ হ্যাঁ আন্টিও ভালোবেসেই পরিয়ে দিয়েছিলো৷ কিন্তু সে তো অনুমতি দিয়েছিলো খোলার৷ আর আমার পাগলাটে প্রেমিকটা? সে তো তার মায়া মাখা কন্ঠে বলেছিলো,
“এটা খুলবেন না চাঁদ৷”
ইসস এমন আদুরে বানী কি ফেলা যায়? কি করে খুলে ফেলতাম আমি? অন্তর আত্মা যে কেঁপে উঠতো৷
আজ কি হবে যানা নেই আমার৷ মা বাবা রাজি হবে নাকি তাও জানা নেই৷ না রাজি হলে আমাদের সব এখানেই থেমে যাবে৷ এ কথা ভাবতেই আমার রুহ কেঁপে উঠে তবুও কিছু করার নেই৷ জন্ম দিয়েছে তারা আমায় তাদের কথা ফেলি কি করে? তখন না হয় ভেবে নিবো সবার ভালোবাসা পূর্নতা পায় না৷ তখন না হয় ভেবে নিবো? সে আমার না৷ তখন না হয় ভেবে নিবো? ‘আমার সৃষ্টিকর্তা তাকে আমার জন্য বানায়নি৷’
নিজে কষ্ট পাবো কিন্তু বাবা মা কে কষ্ট দেওয়ার মত আমার শক্তিনেই তাদের দিয়েই যে আমি৷ কি হবে আজ সত্যি আমার জানা নেই অজানা আতংক আমায় আষ্টেপৃষ্টে ধরছে আরো৷ সময় যাচ্ছে আর ভয় বাড়ছে৷ আমাদের ভালবাসা কি সত্যি পূর্নতা পাবে না? বাবা কি না করে দিবে সত্যি?
এতো দিনে তিশান কে বেশ ভালো করে বুঝিছি সে যা চায় তা করি ছাড়ে তা ঠান্ডা মাথায়৷ এবার কি করবে? এমন কিছু করবে না তো যেখানে আমার বাবা মা আমাকে ভুল বুঝবে? এমন কিছু করবে না তো যাতে আমার বাবা মা থেকে আমার আলাদা হতে হয়? হায় আল্লাস এমন কিছু যে না হয়৷ আমার মাথায় উলটো পালটা ভাবনা ছাড়া ভালো কিছু আসছেই না৷ কেন এসব ভাবছি? বাবাতো রাজিও হতে পারে? আমি তো কখনো তেমন কিছু করিনি যাতে বাবার খারাপ কিছু হয় কখনো রিলেশনেও যায়নি৷ কিন্তু এবার? আচ্ছা মন কি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়? যা করবে আল্লাহ ভালোর জন্যই করবে৷
আমি তো কাল ভেবেছি রাতে বোধহয় ঘুম হবে না কিন্তু না বেশ ঘুম হয়েছে৷ রাতে তেমন কোনো চিন্তাই মাথায় আসে নি ঘুম হয়েছে চওড়া রাতে উঠিও নি কোনো কারণে এক বার ও৷ হয়তো জার্নির কারনে? ক্লান্ত থাকলে ঘুম হয় ভালো৷ তা ছাড়া মন টা ও ফুরফুরে ছিলো কাল৷ ভেবেছিলাম চিন্তায় থাকবো সারা রাত আজ তাঁরা আসবে যে চিন্তা তো হওয়ারি কথা তাই না? কাল বাবা মা কে চাচা রা কিছু বলেনি৷ কিন্তু সকাল হতে না হতে বড় চাচা মেঝো চাচার আগমন ঘটে আমাদের এখানে৷ দাদু, মেঝো চাচা আর বড় চাচা বাবা মায়ের সাথে কথা বলছে৷ তাদের শব্দেই ঘুম ভাঙলো আমার৷ দাদুর কন্ঠ ধ্বনি উচ্ছাসিত৷ সে কম বয়সে বিয়ে পছন্দ করেন হয়তো তাই খুশি সে? সে তো সব চাচা দের বলে আসে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে এমনকি আমার বাবা কেও অনেক বার বলেছে৷ বয়স কম বললেও আমার বয়স অতো কম নয় আঠারো পূর্ন হয়েছে সাত মাস আগে৷
স্বর্না আপুর তো বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু আমার বড় তাসনিম আপু রয়েছে তার আগে কি আমার বিয়ের কথা এগোবে নাকি? এটা নিয়েই ভয়৷
বেশ কিছুক্ষণের মাঝে আম্মুর ডাক পরলো শরীরে উরনা জরিয়ে বেড়িয়ে আসলাম৷
আমি গেলেই বাবা তাঁর পাশে বসালো অতঃপর মায়া মাখা কন্ঠে বলে,
” ঘুম হয়েছে আম্মু?”
বাবার নিত্য দিনের প্রশ্ন৷ ভালো লাগে খুব আমার, এখন কয়েক দিন যাবত নিজে নিজে উঠে গেলেও বাবা আগে প্রতিদিন উঠাতো৷ নিজে হাতে চা বানিয়ে দিতো এখনো চা টা সেই বানায় কিন্তু কয়েক দিন যাবত আর কাউকে ডাকতে হয় না৷
আমি মুচকি হেসে বলি,
“খুব হয়েছে৷ ”
বাবা হাসলো৷ নিঃশব্দে প্রশান্তির হাসি৷ তাঁর যেন আমার এই কথাটা খুব পছন্দের৷ প্রতিদিনি উত্তর দেওয়ার পর বাবার এমন প্রশান্তি মাখা হাসি দেখি৷ ভালো লাগে খুব৷
বড় চাচা মুচকি হেসে আমার দিকে প্রসন্ন কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
” তা আম্মাজান সব শুনেছো তো? তোমার কি মতামত?”
বড় চাচার এমন প্রশ্নে লজ্জায় পরে গেলাম৷ এই প্রশ্ন টা যেন পৃথিবীর সব চাইতে কঠিনতম প্রশ্ন মনে হলো আজ৷ কেন? প্রশ্ন টা কি সত্যি খুব কঠিন?
হ্যাঁ কঠিনই তো? একটা মেয়ের জন্য এমন একটা প্রশ্ন কঠিন নয় কি? কতটা লজ্জা মাখা একটা প্রশ্ন সেই লজ্জার দুয়ার ভেঙে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কি কম কঠিন কথা? আমার জন্য তো এ প্রশ্ন আমার এস এসসি পরিক্ষার অংক প্রশ্ন থেকেও বেশি কঠিন লাগছে৷
মূহুর্ত শরীর কম্পন যেন বেড়েই চলেছে, তার সাথে বিনা নিমন্ত্রণের অস্বস্তি লজ্জা জরতা তো আছেই৷
হঠাৎ বাবা কি ভেবে জানি এর থেকেও কঠিন একটা প্রশ্ন করে বসলো এ প্রপশ্ন শুনে লজ্জা আরো বেরে গেলো সাথে ভয় আর জরতা ও৷
বাবা বলেন,
“তিশান কে পছন্দ করো আম্মু?”
কি উত্তর দিবো আমি? এমন নয় এ প্রশ্ন টা বাবাই প্রথম করলো এ প্রশ্ন টা ভাইয়াও করেছিলো৷ ভাইয়ার করার কারণ আছে কিন্তু বাবা কেন?
কি বলবো আমি?
বাবা মিষ্টি হাসলো৷ তাঁর হাসি চওরা হওয়ার কারণ খুঁজে পেলাম না আমি৷ সে প্রসন্ন কন্ঠে বলেন,
“নিরবতা সম্মতির লক্ষন?”
অতঃপর বাবা আমাদের সম্পর্কের কথা সব টা বললো, সাথে তিশানের করা পাগলামো গুলোর কথাও৷ এমনকি একদিন তিশান কে বলেছিলাম “আমার বাবা রাজি না থাকলে এগোবো না৷ ” সেটাও, আচ্ছা বাবা জানলো কি করে এতসব? ভয় করছে আমার এরপর কি হবে? আম্মুর দিকে ভীতু চোখে তাকালাম৷ তার মুখভঙ্গি বুঝলাম না৷ আজ বুঝি আমার শেষ দিন৷ বাবা এসব জানলো কি করে? কে বললো? চাচারা ও তো আমাদের রিলেশনের কথা জানতো না তাহলে?
কিছু মাথায় ঢুকছে না সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷
আমার উত্তর না পেয়ে বাবা মুচকি হেসে বলেন,
“তিশানের বাবার সাথে কথা হয়েছে আমার৷ সে সকালে ফোন করেছিলেন৷”
বাবার হাসি হাসি মুখ দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলাম৷ আমি উঠে সন্তপর্ণে চলে আসলাম৷
আজ বিকেলে তিশানরা আসবে তাই হৃদয় ভাইয়াকে ফোন করে বললো কি কি লাগবে৷ চাচারা চলে গেলো কি যেন বলছিলো যাওয়ার আগে বাবা তাদের৷ কি যেন তিশানের বাবা বলেছে তাই বলছিলো আমি শুনলাম না অস্পষ্ট কথা৷ বাবার নিশ্চয়ই সম্মতি আছে হয়তো রেগে থাকতো নিশ্চই?
বাবাকে আমি খুব ভালো বাসি তাই বাবাকে নিয়েই আমার চিন্তা ছিলো যদি ভুল বুঝতো?
বেশক্ষানিক্ষণ পর চা আনার জন্য যাবো ঠিক তখন আবার বাবার কন্ঠ ভেসে এলো আমি একটু এগিয়ে গেলাম৷
বাবা ব্যাথাতুর কন্ঠে মুখে হাসি রেখে আম্মু কে বলছে,
” আমার আম্মাজান বড় হয়ে গেছে৷ আমার যেন মনে হচ্ছে এই তো সে দিন আম্মাজান কে নার্স প্রথম আমার কোলে দিলো সাদা তোয়ালেতে পেচিয়ে৷ প্রথম বাবা হওয়ার স্বাদ পেলাম তাঁর কান্নায় আমার বুকটা ধরে আসতো৷ তাঁর হাসির শব্দে ঘুম ভাঙতো ইচ্ছে করে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকলে খিলখিল করে হাসতে হাসতে মুখের লালা দিয়ে আমার মুখ ভরে দিতো ছোট ছোট হাত দিয়ে আমার মুখে হাত বুলাতো৷ এই তো সে দিন আদো আদো কন্ঠে বাববা বাববা বললো, এই তো সে দিন এক পা দু পা করে হেটে আমার বুকে এলো৷ আমার আম্মাজানের নাকি এখন বিয়ে হবে? আম্মাজানের গুঞ্জন আর আমার বাড়িতে শুনবো না? আমার বুকটা খালি হয়ে যাবে তাই না?”
চলবে?