প্রণয় ডায়েরি পর্ব-১৭

0
360

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ১৭

গম্ভীরমুখে বসে আছে সবাই৷ চারোপাশে থমথমে নিরবতা নিরবচ্ছিন্ন ছেয়ে আছে৷ আমি মাথা নিচু করে বড় চাচার পাশে বসে আছি তিশান আমার সামনের সোফায় ধাতস্থ হয়ে বসে আছে৷
মুখে না আছে চিন্তার ছাপ না আছে কোনো ভাবান্তর৷ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে আছে সে৷
নিরবতা ভেঙে মেঝ চাচা হাক ছেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বলেন,
“আমাদের বাড়ির মেয়েকে আপনাদের ছোট ছেলের জন্য পছন্দ হয়েছে তা আমাদের বাড়িতে গিয়েও জানালে পারতেন৷ এখানে তো আমরা এসেছিলাম আংটি পড়াতে সেই কাজটাই হলো না৷ উল্টো আপনাদের ছোট ছেলে বলছে আজই নাকি আংটি পরাবে তাফসি কে৷ এটা কি করে হয় বলুন তো? আমরা রাজি হলেই হলো নাকি? ওর বাবা মায়ের ও তো মেয়ের জন্য একটা পছন্দ আছে তাদের ছাড়া আমরা আমাদের মেয়ে কে আংটি পরাতে দিবো না৷”
মেঝো কাকা বেশ গুরুগম্ভীর মানুষ বড় কাকা বড় হলেও সে মেঝো কাকা কে ভয় পায় তাই কিছু বললো না হয়তো?
এর মাঝেই তিশান একটু নরেচরে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“হুম তাই হবে ফোন করুন ওর বাবা মা কে৷ কথা বলবো আমি তাদের সাথে৷ ”
তিশানের এরুপ কথায় বিরক্ত হলাম আমি৷ আমার থেকে মহা বিরক্ত তাঁর বাবা মা তা তাদের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে৷
ছেলের কথায় অতি বিরক্ত হয়ে তিশানের বাবা বলেন,
“আহ তিশান৷ হচ্ছে কি?
এমন তাড়াহুড়ো করে আর যাই হোক বিয়ে হয় না৷ তোমার তাফসি কে পছন্দ তুমি আগে বললে আমরা কথা বলতাম একদিনের মাঝে কিছু হয় না৷ রাত হয়ে যাচ্ছে ওনারা যা করতে এসেছেন তাই করবে আজ৷ ”
তিশান রাগী কন্ঠে বলে,
“কিন্তু বাবা৷”
তিশান কে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে আংকেল বলেন,
“বললাম তো? আমি কথার নড়চড় চাই না৷ ”
অতঃপর সে সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন৷ আমি একবার তিশানের দিকে তাকিয়ে উঠে আপুদের কাছে এলাম তাঁরা কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে৷ আমি তাসনিম আপুর সাথে বসতেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলো আমায়,
“প্রেম করছিস তুই?”
আমি থতমত খেলাম৷ আল্লাহ এতক্ষণ শুনেও এসব প্রশ্নের মানে কি এমনি অন্তর আত্মা কাঁপছে৷ ভাগ্য ভালো নিচে এসব জানায়নি৷ তিশানের বাবা শুধু চাচার কাছে আমার আর তিশানের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে বেশি কিছু জানায়নি৷ ভাইয়া আপুদের আরাভ ভাইয়া সবাইকে বলেছে এসব বড়দের না জানাতে৷
আমি আপুর কথার উত্তর দিলাম না৷ সে কিছুটা হেসে বলে,
“বড় হয়ে গেছিস রে পুচকি৷ ”
আমি যেন লজ্জায় পরে গেলাম আরো৷ আরাভ ভাইয়াকে স্বর্না আপুর নানি আংটি পরিয়ে দিলো অতঃপর খাওয়ার পর্ব শেষ হলো৷ তিশান নেই একটু আগে বেড়িয়েছে এখনো আসেনি৷ লোকটা আজ একটু বসলো না আমাদের সাথে৷ মাহতাব ভাইয়ার মুখটা এইটুকুনি হয়ে গেছে হৃদয় ভাইয়া কিছুক্ষণ পর পর মাহতাব ভাইয়ার সাথে এটা ওটা বলছে৷ হয়তো বন্ধুকে খুশি রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে?
খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই বড়রা বসলো আবার৷ একটুপর আমরা বেড়িয়ে যাবো এমনি অনেক রাত হয়ে যাবে যেতে যেতে৷ এক কোনে দাড়িয়েছিলাম হঠাৎ আমার সামনে তিশানের মা, তিহান, আর আফরা আপু এলো৷ এসে আমায় জরিয়ে ধরে বললো,
“আজ তোমাকে অস্বস্তি তে ফেলে দিলাম তাই না আম্মু? ঠিক মত খেতে ও পারলে না পাগল টার জন্য৷ ”
আমি মিনমিনিয়ে বলি,
” না আন্টি তেমন কিছুনা৷ ”
আন্টি হেসে বলেন,
“আমার মা পাগল ছেলেটা এবার বুঝি বউ পাগল হবে৷ যাক আমি একটু বাচবো এবার তোমার সামলানোর পালা৷ দেখেছি আমি ওর পাগলামি এতো দিন ভাবতাম আমাদের দেখা হওয়া কি শুধুই কাকতালীয়? কিন্তু না আল্লাহ কারণ ছাড়া কিছুই করে না ও যে নতুন কিছুর সূচনা ছিলো৷”
আন্টির এহেন কথা লজ্জা আমায় গভীর ভাবে অলিঙ্গন করলেন৷
অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেলো৷ অদ্ভুত সেই অনুভূতি নিঙরে পরছে যেন৷ সত্যি তা নতুন প্রণয়ের সূচনা ছিলো তা কি জানতাম আমরা? হসপিটালের বাইরে যার সাথে এমন ঝগড়া করলাম তাতেই ফেসে যাবো জানতাম নাকি?
তাঁর ইন্দ্রজালে আমায় আটকে দিয়েছে৷ এ জাল থেকে কি মুক্তি পাওয়া যায় নাকি?
হঠাৎ তিহান মেয়েটা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,
“হায় আল্লাহ তুমি আমার ছোট ভাবি হবে৷ ভাইয়ার সাথে ঝগড়া লাগলে তো সবসময় বরদোয়া দিতাম যেন ভাইয়ার একটা কালো পেত্নি বউ জুটে৷ কিন্তু তুমি তো খুব মিষ্টি এ তো পুরো উল্টো৷ ”
তিহানের কথায় আফরা আপু হেসে উঠলো৷ আমি লজ্জা পেলাম আরো৷ আমি তিশানের ‘বউ’ হবো? ‘বউ’ কথাটা শুনতেই ধক করে উঠলো বুকটা লজ্জায় নুয়ে পরলাম আমি৷ তিহান মেয়েটা মায়া মাখা কন্ঠে বলেন,
“ভাবি জড়িয়ে ধরি তোমায়?”
তিহানের এমন কথায় ভরকে গেলাম৷ ভাই বোন সব একই৷ আমার উত্তর পাওয়ার আগেই তিহান এসে জড়িয়ে ধরলো আমায়, তিহান সরে যেতেই আফরা আপু জড়িয়ে ধরলো৷ ক্ষানিক্ষণ বাদে সে সরে যেতেই আন্টি আমায় একটা চুরি পরিয়ে দিলেন৷ চুরিটা দেখে আমি কিছু বলবো এর আগেই মুচকি হেসে বলে,
“আমার ছেলে সব সময় যা চায় দেওয়ার চেষ্টা করি৷ ওর খুব ইচ্ছে ছিলো আজ তোমাকে আংটি পড়াবে কিন্তু তা হলো না৷ আংটি না হয় পরেই পরালাম ছেলের মন ভালো করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা তো করাই যায় বলো? জানি এটা তোমার হাতে দেখলে সবাই প্রশ্ন করবে৷ বাড়িতে গিয়ে নাহয় খুলে রেখে দিও? আমার তিশানের সাথে যখন দেখা হবে তখন পড়ে থাকলেই হলো৷ ”
ছেলের প্রতি মায়ের প্রগাঢ় ভালোবাসা দেখে মনের মাঝে প্রশান্তি বয়ে গেলো৷ ছেলের মন ক্ষুণ্ণ হয়ে আছে তাই অগোচরে ছেলের মন ভালো রাখার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা৷ বাহহ কি সুন্দর দৃশ্য না? কিন্তু সত্যি কেউ দেখে ফেললেই প্রশ্ন করবে তখন কি করবো? আর আম্মু বাড়িতে গেলেই যদি দেখে ফেলে? আন্টির মুখের উপর কি না করা যায়? এত যত্নে পরিয়ে দেওয়া ভালোবাসা মাখানো জিনিস ফিরিয়ে দেওয়া যায়?
এর মধ্যেই তিশান এলো ক্ষানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে মায়ের কান্ড দেখছে৷ ঠোঁটে তাঁর কাঞ্চি হাসির রেশ৷ মা বোনের কথা শুনে হয়তো ভালো লাগছে? হঠাৎ আমার সাথে চোখাচোখি হলো৷ লজ্জায় নুয়ে পরলাম আমি সে সন্তপর্ণে সামনে এসে আমার দিকে না তাকিয়েই আন্টিকে বলে,
“চাবি দাও মা৷ ”
তখন চোখাচোখি হলেও এখন একবার ও তাকালো না৷
থমথমে কন্ঠ তাঁর৷ এর আবার কি হলো? তাকালোও না একবার৷ একটু আগে তো ঠিকি ছিলো নিজে এসে জড়িয়ে ধরলো৷ এখন আবার কি হলো লোকটার? হুটহাট রেগে যায় কেন? আমাকে লজ্জায় ফেলে নিজে এমন রাগী রাগী ভাব করে আছে৷ সবার সামনে এমন পাগলামি কেউ করে? লজ্জা লাগে না বুঝি? আন্টি চাবি খুলে দিলো৷
চাবি নিয়ে যাওয়ার আগে মৃদু কন্ঠে বলেন,
“বাইরে আসুন চাঁদ৷ ”
তাঁর শীতল কন্ঠে কেঁপে উঠলাম আমি৷ সবার মুখে ফুটে উঠলো হাসির রেশ৷ লজ্জায় আরো মিহিয়ে গেলাম ইস মাটি খুরে লুকিয়ে পড়তে ইচ্ছে হলো৷
এমন কেউ করে? তাঁর মা আছে এখানে সে তো দেখলো তবুও লজ্জায় ফেললো আমায়৷ কিছুটা গিয়ে সে দাঁড়ালো অতঃপর পিছনে ফিরলো তাঁর ইশারায় আবার ডাকলো আমায়৷ আমি নিচু হয়েই সে দিকে এগিয়ে গেলাম অতঃপর বাড়ির বাইরে এলাম৷ তিশানের পিছু পিছু তাদের বাড়ির সীমানা পর্যন্ত এলাম৷ এপাশটায় অনেক ফুলের গাছ বেশ সুন্দর ওদের বাড়িটা বিশাল জায়গা এ বাড়ির ভিতর যে দুইটা বিল্ডিং কেউ বলবেই না আমাদের বাড়ির মত আমাদের এক বাড়িতে চারটা বিল্ডিং এক ছাদ দিয়ে আরেক ছাদে যাওয়া যায় এখানেও তেমন৷
হঠাৎ তিশান আমার পিছনে গিয়ে আলতো হস্তে কিঞ্চিৎ ফাঁকা রেখে অলঙ্গন করলেন৷ তাঁর এহেন কাজে ভরকে গেলাম আমি শিউরে উঠলো শরীর অতঃপর শীতল হতে শুরু করলো৷ বিনা অনুমতি লজ্জাটাও গভীর ভাবে অলিঙ্গন করলো আমায় উরনা খামচে ধরলাম অনুভূতি গুলো প্রগাঢ় হলো আরো৷ আমি তো ভাবলাম লোকটা বুঝি রেগে আছে৷ কিন্তু না৷ তিশান আমার কাধে তার থুতনি রেখে উরনা থেকে হাত টা সরিয়ে নিজের হাতেই মুঠোয় নিলো অতঃপর মিনমিনিয়ে বলেন,
“মা বললো না সে তাঁর ছেলের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখে না? তাই হাতের চুরি টা পরিয়ে দিলো৷ এখন আমি বলছি চাঁদ আমিও আমার চাওয়া অপূর্ণ রাখি না চাঁদ৷”
বলে আমার বা হাতের অনামিকায় পকেট থেকে একটা চকচকে সাদা পাথরের আংটি বের করে পরিয়ে দিলো আমায়৷ আমি বিস্ময় চোখে তাকালাম সে দিকে সে আমার অনামিকায় উষ্ঠ ছুইয়ে বলেন,
“আজ পূর্নিমা নয় তাই পুরো চাঁদ টা আমার হলো না৷ আজ না হয় অর্ধ আমার করলাম? কোনো এক পূর্নিমায় সে চাঁদটা পুরোপুরি আমারই হবে কথা দিলাম৷ একান্ত আমার৷ ”

চলবে,

বি.দ্রঃ আজ রি চেক হয়নি বুঝে নিবেন দয়া করে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here