প্রণয় ডায়েরি পর্ব-১৬

0
367

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ১৬

মাহতাব ভাইয়া বাকি কথা শেষ করার আগেই হঠাৎ সে চিরচেনা কন্ঠ পেয়ে চমকে উঠলাম আমি৷ বুক ধক ধক করছে৷ আল্লাহ আজ বুঝি আমার শেষ দিন৷
সন্তপর্ণে পিছনে ঘুরলাম আমি হৃদয় ভাইয়ার সাথে তিশান কথা বলছে৷ ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমি মাহতাব ভাইয়া থেকে উরনা টা ছাড়িয়ে নিলাম৷ এর মাঝে ইশান ভাইয়া হৃদয় ভাইয়া কে নিয়ে গেলো মাহতাব ভাইয়া বাকা হেসে আমার সামনে দিয়ে হৃদয় ভাইয়ার সাথে গেলো৷
তিশান দাঁড়িয়ে আছে তাঁর অগোচরে শুকনো ঢোক গিললাম৷ হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার৷
সে আমার কাছে এসগিয়ে আসলেন অতঃপর শক্ত কন্ঠে বলেন,
“এই জন্যই আমার কল ধরা হচ্ছিলো না চাঁদ?”
তাঁর কথায় রাগ স্পষ্ট৷ সে কি আমায় ভুল বুঝছে? সে ভুল বুঝলে আমার কথা শুনবে কি?
ভয় করছে আমার কি করবো? কি বলবো? আর বললেই বুঝবে কি সে?
সে আবার একই কন্ঠে বলেন,
“ওর সাথে কেন এসেছেন চাঁদ? না করেছিলাম তো?”
কেঁপে উঠলাম আমি এবার একটু জোরেই বলেছিলো৷
আমার উত্তর না পেয়ে সে শক্ত কন্ঠে বলেন,
“ভেতরে যান৷ ”
ফের কেঁপে উঠলাম আমি৷ আমি কিছু না বলে কয়েকপা সামনে যেতেই সে কাউকে ফোন করলো অতঃপর শক্ত কন্ঠে বলেন,
“বাড়িতে আসো একবার মা কথা আছে৷ ”
বুঝলাম ওর মা কে ফোন করেছে৷ আন্টি কি বাড়িতে নেই?ওপর পাশ থেকে কি বললো শুনলাম না৷ তিশান আবার বলেন,
“মা বাড়িতে আসো কথা আছে বললাম তো? ও বাড়িতে সবার সামনে নিশ্চয়ই চাও না আমি সিনক্রিয়েট করি? প্লিজ বাড়িতে আসো৷”
আমি আর দাঁড়ালাম না ভিতরে গেলাম৷ আমি আরাভ ভাইয়াদের বাড়িতে ঢুকতেই দেখি তিশানের মা বের হচ্ছে৷ তারমানে আন্টি এখানে ছিলো? এখান থেকে ওনাদের বাড়িতে যেতে বললো তাহলে৷ লোকটা তো এখানে আসলেই পারতো কি এমন জরুরি কথা যে মানুষটা কে কষ্ট করে আবার ওবাড়ি নিয়ে যাচ্ছে৷ আমার রাগ অন্যের উপর ঝারছে ছেলেটা অদ্ভুত নাকি? আগে কখনো তাকে এমন রাগতে তো দেখি নি তো আজ এ কারণে এতো রাগ? আমাকে তো একটু জিগ্যেস করলেও পারতো নিজেই একা একা কথা বলে নিজেই ভিতরে আসতে বললো৷
আন্টি আমাকে দেখে কুশল বিনিময় করলো সে ও বেশ ভালো৷ আমার সাথে কথা বলার সময় আবার ফোন এলো সে নিশ্বাস ফেলে বলে,
“আসছি বাবা পাগল হচ্ছিস কেন?”
বুঝলাম তাঁর গুনধর ছোট ছেলে ফোন করেছে৷
আমাদের ছোট দের উপরে এনে বসালো এখানেও আরেকটা ড্রইং রুম৷ তিশানের ছোট বোন এসে আমাদের সাথে বসলো সাথে আরাভ ভাইয়ার কয়েকটা বন্ধু বান্ধবী৷ ইশান ভাইয়ার বউয়ের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলো আফরা আপু বেশ ভালো৷ ইশান ভাইয়া আর আফরা আপুর কাবিন হয়েছে এখনো আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয় নি৷ মার্চেই হবে এর পর আরাভ ভাইয়ার বিয়ে হবে৷ ইশান ভাইয়া বড় তাঁর এক বছরের ছোট আরাভ ভাইয়া তাঁর ছয় মাসের ছোট তিশান৷ এরা সবাই বেশ মিশুক অল্পতেই মিশে গেছে আমাদের সাথে৷ তিহান মেয়েটা বেশ মিষ্টি আফরা আপু ও অনেক ভালো৷
আড্ডার মাঝেই ইশান ভাইয়ার ফোন এলো সে রিসিভ করে কথা বলতে বলতে “আসছি আম্মু৷ ” বলেই এখান থেকে প্রস্থান করলেন৷ আফরা আপু সে দিকে তাকালো৷ ইশান ভাইয়াকেও আন্টি ডাকছে? কেন? কিছু হয়েছে কি? তিশান কি এমন বলবে তাদের? কে যানে৷ আমি আবার কথায় মনোনিবেশ করলাম৷ এখানে সবাই আমাদের পূর্ব পরিচিত তাই মেয়ের বাড়ি থেকে এসেছি তেমন কোনো ট্রিট করছে না সবাই পরিবারের লোক হিসেবেই ট্রিট করছে৷ হৃদয় ভাইয়া তো সবাইকেই চিনে সবার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ তাঁর৷ এখানে এসে ভাইয়ার খালামনি নানু মামিদের ও দেখলাম তাঁরাও এসেছে৷ সবার ডাকে আমরা নিচে নামলাম আরাভ ভাইয়া কে আংটি পরানো হবে৷ কিন্তু এখানে এসে ক্ষানিক্ষণ বসার পর শুনলাম একটু পর পরানো হবে৷ নিচে আসতেই দেখেছিলাম তিশানের বাবা বেরিয়ে যাচ্ছে সাথে তিশানের কাকা মানে আরাভ ভাইয়ার বাবাও৷ বুঝলাম না কিছু৷ চাপা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে৷ ভাইয়াকে একটু পর আংটি পড়াবে তাই আমরা আবার উপরে চলে এলাম৷ বড়রা আলোচনা করছে আমরা থেকে কি করবো৷ আফরা আপু তিহান কে পাঠালো ওদের বাড়িতে কি হলো তা দেখতে৷ তারমানে তিশানই কি ডেকেছে সবাইকে? কিন্তু কেন? আমি এখানে আর সে বাড়িতে বসে আছে রাগ দেখিয়ে, আজ একটু কম রাগ করলে কি হতো? কতো দিন পর দেখা হলো সে তো রাগ করেই বসে আছে৷ সব ওই মাহতাব এর কারণে, কি সুন্দর হেসে খেলে বেড়াচ্ছে আমাকে সমস্যায় ফাঁসিয়ে৷
আজ কেন যেন মন টা ভালোই হচ্ছে না৷ সেই অন্তরিক্ষের মতই কৃষ্ণ বর্ণে ছেয়ে আছে মনটা৷ সেই আসার পরপরি সন্ধ্যা নেমেছে এখন আকাশ নিভির আঁধারে ছেয়ে আছে৷ রজনি চলছে নিচে সোরগোল শোনা যাচ্ছে না আর থমথমে লাগছে সব৷ একটু পরি তিহান এলো এসে হৃদয় ভাইয়া কে বললো,
“তোমাকে নিচে ডাকছে৷ ”
হৃদয় মাইয়া মাহতাব ভাইয়া কে নিয়ে নেমে গেলো৷ তিহান আফরা আপুর পাশে বসতেই আফরা আপু প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
“তিহু কি হয়েছে ও বাড়ি?”
তিহান আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে কিছুটা হাসার চেষ্টা করে মিনমিনিয়ে বলে,
“ভাবিগো ছোট ভাইয়া পাগল হয়ে গেছে৷”
বুঝলাম না তিহানের কথা কিছু আফরা আপুও নিশ্চয়ই বুঝেনি আমার মতো সবার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কেউ বুঝেনি৷ নিচে তিশানের কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে মেঝো চাচা, বড় চাচা ও কিছু বলছে৷ এসেছে তিশান এ বাড়িতে? কি হচ্ছে এখানে বোধগম্য হচ্ছে না৷ আফরা আপু আবার বলে,
“কি হয়েছে স্পষ্ট বলো?”
তিহান কিছু বলবে এর আগেই উপরে এলো তিশান৷ যেমন তাড়াহুড়ো করে এলো অতঃপর আমার কাছে এসে হাত চেপে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
” চলুন চাঁদ৷ ”
আমি বড় বড় করে তিশানের দিকে তাকালাম অতঃপর সবার দিকে৷ তাসনিম আপুর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু বলবে তিশান কে৷ এর আগে আমি প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম,
“কি হচ্ছে? কোথায় যাবো আমি?”
তিশান এবারো দাতে দাত চেপে বলে,
” এতো কথা পছন্দ নয় চলুন আমার সাথে৷ ”
কি বলছে এই ছেলে? পাগল হয়ে গেলো কি? সবার সামনে কি আচরণ করছে? নিচে চাচারা আছে ভাইয়া আছে জানলে রক্ষে নেই৷ কি করবো আমি? আপুরা নিশ্চয়ই কিছু সন্দেহ করছে? হঠাৎ কি হলো আবার? কিছু বুঝতে পারছি না৷ সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ হাত পা আমার ঠান্ডা হয়ে আসছে কি হবে এর পর?
আমার ভাবনার মাঝেই হৃদয় ভাইয়া আর মাহতাবকে ভাইয়া এলো৷ সবার মুখ স্বাভাবিক লাগছে তিশান হাতটা ছেড়ে দিলো স্বাভাবিক ভাবেই আমার পাশে এসে দাঁড়ালো৷ হৃদয় ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়ালো অতঃপর থম থমে গলায় বলেন,
“পছন্দ করিস তিশান কে?”
ভাইয়ার এহেন প্রশ্নে বিস্মিত চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম৷ এ প্রশ্ন করছে কেন ভাইয়া? মাহতাব ভাইয়া কি কিছু বলেছে? না এখানে এসে সে হয়তো এসব বলবে না? তাহলে কি তিশান? হায় আল্লাহ৷ কিছু বললাম না আমি৷ কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছি না৷ ‘না’ বলা আমার কাম্য নয় কিন্তু ভাইয়ার সামনে ‘হ্যা’ ও বলতে পারছি না৷
ভাইয়া আবার বললো,
“নিরবতা কি সম্মতির লক্ষণ ধরে নিবো আমি?”
এবারো উত্তর দিলাম না৷ ভাইয়া মাহতাব ভাইয়ার দিকে তাকালো সে কেমন করে হাসলো৷ যেন তাঁর ইচ্ছে করছে না হাসিটা দিতে৷
তিশান আবার ভাইয়ার সামনে আমার হাত ধরে বলে,
“চলো কথা আছে৷”
তিশান প্রথম তুমি সম্বোধন করলো৷ কিন্তু ‘তুমিটায়’ ভালোবাসা মিশানো ছিলো না রুষ্টতা ছিলো৷ আমি শুকনো ঢোক গিলে ভাইয়ার দিকে তাকালাম৷ সে স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে সে যেন জানতো তিশান আমাকে নিয়ে যাবে একা কথা জন্য৷ মাহতাব ভাইয়া নির্বোধের মতো গিয়ে সোফায় বসে পরলো৷ আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়েই আছি ভাইয়া ইশারা করে যেতে বললো৷ সাথে সাথেই তিশান হাত ধরে নিয়ে এলো ছাদের মত বড় একটা বারান্দার এখানে৷ অতঃপর থাই বিশিষ্ট দরজাটা ‘ধাপ’ করে লাগিয়ে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো অতঃপর মাঝে কিঞ্চিত ফাকা রেখে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
” বাইকে উঠার এতো সখ? মাহতাবের সাথে বাইকে এসেছো কেন?”
আমি আমতা আমতা করে বলি,
“আমি ইচ্ছে করে আসিনি ভাইয়া,,”
বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই আমার কথা ছিনিয়ে নিয়ে সে শক্ত কন্ঠে বলে,
“আমি অজুহাত চাই না চাঁদ৷ সে আপনাকে তাঁর করার কথা বলছিলো আমার সাধ্যি থাকলে ওখানেই ওকে শেষ করে দিতাম৷”
অতঃপর একটু থেমে ক্ষানিকটা ফিসফিসিয়ে বলেন,
” অন্য কেউ আপনাকে তাঁর করবে তা ভাবার আগে আমার নামে করে নিবো আপনাকে৷ বলেছিলাম না সময় হোক কেউ না দিলেও জোর করে তুলে নিয়ে আসবো সেই সময় টা বোধহয় হয়েই গেছে চাঁদ৷ ”
বুঝলাম না তাঁর কথা আমি৷ থম মেরে রইলাম কিছুক্ষণ৷ অতঃপর তার মোলায়েম কন্ঠ আবার কানে এলো,
“আমার বুকে আসুন চাঁদ৷ রাগে আপনাকে দেখতেই পারিনি ঠিক মতো৷ কেন আমাকে রাগান চাঁদ? কত বার বলবো আপনি আমার? এখন আমার মন টা কে শান্তি করে দিন চাঁদ বুকে আসুন আমার৷ ফাস্ট চাঁদ৷ ”
অতঃপর আমি যাওয়ার আগেই সে প্রতিবারের মত জরিয়ে নিলো তাঁর বক্ষপিঞ্জিরায়৷

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here