#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ১৪
অন্তরিক্ষে যখন আবছা আলোর রেশ ঘড়ির কাটা তখন ৬টার কোঠায়৷ ফেব্রুয়ারীর শেষ সপ্তাহ চলছে৷ না চলছে বললে ভুল হবে কাল থেকে ফেব্রুয়ারীর শেষ সপ্তাহের শুরু৷ আজ বৃহস্পতিবার৷ কিঞ্চিত গরম পরেছে সে শুক্রবারে ভাইয়া অসুস্থ ছিলো তাই আরাভ ভাইয়ার বাড়িতে যাওয়া হয়নি কাল যাবো৷
আরাভ ভাইয়ার বাড়িতে আপুকে নিয়ে যাবে না৷ আরাভ ভাইয়ার মা বলেছিলো নিয়ে যেতে কিন্তু আমার দাদী মানা করেছে৷ বিয়ের আগে নাকি নতুন বউ শশুর বাড়ি যেতে নেই৷
ছাদে দাঁড়িয়ে আছি এখনো আজান পরেছে আরো আগে৷ ভালো লাগছে বেশ তাই দাঁড়িয়ে আছি তিশানের সাথে এখন একটু কম কথা হয়৷ আমি এখন কথা বলতে পারি না খুব একটা রাতে ছাড়া৷ সারাদিন কেউ না কেউ পাশে থাকেই৷
তাঁর অভিমানের পাল্লা ভয়তো গভীর হচ্ছে?
পাশের ছাদে স্বর্না আপু হৃদয় ভাইয়া মাহতাব ভাইয়া আছেন৷ মাহতাব ভাইয়া কে আজ কাল বেশি দেখা যাচ্ছে এখানে হোস্টেল বন্ধ তাই৷
আম্মু বাবা ছাদের মাঝখানেই বসে আছে তিশান ফোন করেছিলো ধরতে পারিনি৷ কে জানে লোকটা কি রেগে আছে নাকি?
হয়তো রেগে আছে? রেগে থাকার কথাই আজ সারা দিন এক বার ও কথা হয়নি কাল নিশ্চয়ই রক্ষে নেই আমার? কে যানে রেগে আবার কি করবে?
আল্লাহ এ ছেলেকে একটু সু-বুদ্ধি দিও যখন তখন রেগে যায়৷
হঠাৎ আম্মুর কথায় হুশ ফিরে৷ আম্মু আব্বু নেমে গেলো আমাকে বললো নিচে চলে আসতে৷ আমি যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ কর্ণকুহরে ভেসে এলো হৃদয় ভাইয়ার কথা,
“ভালোবাসিস যে বলছিনা কেন আমার বোন কে?”
ভাইয়ার কথায় থমকে গেলাম আমি৷ নামলাম না আর সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম৷ পিছন ঘুরলাম সন্তপর্ণে মাহতাব ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে সে৷ তার ওষ্ঠদ্বয়ে জুলে আছে হাসির রেশ৷ তাঁর চাওনি আমার অচেনা৷ তাঁর এমন চাওনির সাথে আমি কখনো পরিচিত হইনি যে৷
হৃদয় ভাইয়া কি আমার কথা বললো? মাহতাব ভাইয়ার চাওনি আমায় বলে দিচ্ছে ভাইয়া আমার কথাই বলছে৷ তারমানে তিশান ঠিক বলেছিলো? মাহতাব ভাইয়া আমায় ভালোবাসে? হৃদয় ভাইয়া জানে? আমি এটা চাইনি তাহলে কেন এমন হলো?
হৃদয় ভাইয়া মাহতাব ভাইয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমার পানে তাকালো৷ দৃষ্টি নামিয়ে ফেললাম আমি৷
ভাইয়া অবাক হলো না আমায় দেখে উল্টো থমথমে গলায় বললো,
“তাফসি এদিক আয়৷ ”
আমি আমতা আমতা করে কিছু বলবো তাঁর আগেই ভাইয়া বললো,
“আসতে বললাম তো এদিকে আয়৷ ”
আমি ধীর পায়ে হেটে গেলাম আমাদের ছাদের শেষ প্রান্তে এখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা আছে যা টপকে সেই ছাদে যেতে হয়৷ আমি টপকাতে যাবো এর আগেই মাহতাব ভাইয়া এগিয়ে এলো আমার দিকে৷ অতঃপর হাত ধরলো আমি কেঁপে উঠলাম৷ হায় আল্লাহ কি করতে চাইছে সে?
মাহতাব ভাইয়া আমার হাত ধরে টান দিলো আমি এই ছাদে আসলাম অতঃপর আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে মাহতাব ভাইয়া তাঁর দিকে কিঞ্চিত ফাঁকা রেখে কিছুটা মিশিয়ে চেপে ধরে আমায়৷ আমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে তারপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“দেখতো হৃদয় তোর বোন কে আমার সাথে মানিয়েছে কি না৷ ”
তাঁর এহেন কথায় বিস্মিত হলাম আমি৷ শরীর শীতল হয়ে এলো লোম শিউরে উঠলে কি বলছে মাহতাব ভাইয়া? সে তো সে দিন বললো আমার ধারে কাছেও আর ঘেঁষবে না তাহলে আজ এমন করছে কেন? সে তো জানে আমি তিশান কে ভালোবাসি তাহলে এমন করছেন কেন?
মাহতাব ভাইয়ার ব্যাপার নিয়ে হৃদয় ভাইয়া গ্রাহ্য করলে আমার তিশানের ব্যপারটায় ঝামেলা হয়ে যাবে৷
আমি অসহায় চোখে মাহতাব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম৷ হৃদয় ভাইয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেস বলে,
“আমার পেতনি বোনের সাথে তোর মত গাধার না মানাবে আবার?”
মাহতাব ভাইয়া হাসলো আবার৷ তাচ্ছিল্য হাসি৷ এ হাসির কারণ বুঝলাম না৷ সে আরো শক্ত করে আমার বাহু চেপে ধরে বলে,
“দিয়ে দে না আমায় তোর বোনটা কে৷ কথা দিচ্ছি আগলে রাখবো৷ ”
আমার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো৷ কি শুরু করছে সে? রঙ বদলাচ্ছে তাঁর রঙ এখন বেরিয়ে আসছে৷
কি করে পারছে আমার সাথে এমনটা করতে?
ভাইয়া কে উষ্কাচ্ছে কেন? আমি জোর করে হাত ছাড়িয়ে দাতে দাত চেপে বলি,
“শুরু করেছেন কি আপনি?
যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছেন৷ পাগল হয়ে গেলেন নাকি মাহতাব ভাই৷”
মাহতাব ভাই আমার কথায় বাঁকা হাসলেন৷ হৃদয়ে ভাইয়া অবাক নয়নে আমার পানে তাকিয়ে আছে হয়তো ভাবতে পারেনি এভাবে রাগ দেখাবো৷
স্বর্না আপু অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷
মাহতাব ভাই হৃদয় ভাইয়ার সামনে গিয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি রেখেই তাঁর কাধে হাত দিয়ে বলে,
“তোর বোনের রাগ দেখেছিস হৃদয়? আমার তো এমন মেয়েই পছন্দ শান্ত মুন ভালো লাগে না৷ চাঁদের যেমন রুপ থাকে সে রুপ দিয়ে মানুষ কে ঝলসে দেওয়ার শক্তি ও থাকে৷ সে চাঁদের মানুষ কে ঝলসানোর ক্ষমতা থাকলে আমার চাঁদের থাকবে না কেন তাই না?”
মাহতাব ভাইয়ার কথা বুঝলাম না৷ নিশ্চয়ই হৃদয় ভাইয়াও বুঝেনি৷ মাহতাব ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন বোধক চাওনি দিয়ে তাকিয়ে আছে৷ কি বলছে মাহতাব ভাইয়া? আর চাইছেই বা কি? কেন এমন করছে?
সে তো এমন ছিলো না আজ তাকে বড্ড উন্মাদ লাগছে তাঁর নেত্র যুগোল স্থীর কিন্তু তাঁর কন্ঠে তাচ্ছিল্যতা৷ তাঁর নেত্র দেখে তাকে বড্ড শান্ত লাগছে কিন্তু তাঁর কথা শুনে মনে হচ্ছে অশান্ত সে৷ কি চলছে তাঁর মস্তিষ্কে? কেন তাঁর নেত্র এক কথা বলছে আর তাঁর ওষ্ঠ অন্য কথা বলছে? হঠাৎ মুঠোফোন টা অশান্ত ভঙ্গিতে বেজে উঠলো৷ ভাবনার সুতো কাটলো আমার, যার মাঝে আমার প্রশান্তি জুরে আছে সে ফোন করেছে৷
ফোনটা ধরতে যাবো ঠিক তখনি মাহতাব ভাইয়া ফোন টা ছিনিয়ে নিলো৷ বুক টা কেঁপে উঠলো আমার৷ হায় আল্লাহ কি করবে সে? ভাইয়া এখানে ভাইয়া জানলে সবাই জানাজানি হয়ে যাবে৷
মাহতাব ভাইয়ার উদ্দেশ্য কি? ভাইয়াকে কি বলে দিবে নাকি দেখাবে?
কেটে গেলো ফোনটা মাহতাব ভাই দেখার আগেই৷ হাফ ছেড়ে বাচলাম আমি৷ যাক আর যেন না দেয়৷ কিন্তু না আমার কথা মুখেই রয়ে গেলো আমাকে ভুল প্রমান করে আবার ফোনটা অশান্ত হয়ে বেজে উঠলো হৃদয় ভাইয়া তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোবাইলের দিকে আরেক বার মাহতাব ভাইয়ার দিকে৷
হয়তো বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছে কি হচ্ছে? হৃদয় ভাইয়া মাহতাব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“এমন করছিস কেন মাহতাব? যা বলার ওকে সোজাসাপ্টা বলে দিলেই পারিশ কেন রাগাচ্ছিস ওকে? আর ফোন টা ছিনিয়ে নিলি কেন কে ফোন করেছে?”
ভাইয়ার প্রশ্নে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো৷ ভাইয়ার প্রশ্ন শুনে মাহতাব ভাইয়া তাচ্ছিল্য চাওনি দিয়ে মোবাইলের পানে তাকালো৷ অতঃপর নিজ থেকে ফোন টা কেটে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো৷
বুঝলাম না কিছু তবে মোবাইল হাতে পেয়েও প্রসন্ন হতে পারলাম না৷
কি করবে এখন? আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মাহতাব ভাইয়া বলে,
“আরে সিম কোম্পানি থেকে৷ ”
ভাইয়ার কথায় অবাক চাওনিতে তাকালাম তাঁর দিকে৷ হাফ ছাড়লাম৷ তবে তাঁর কর্মকাণ্ড বোধহম্য হলো না৷ মানুষ টা গিরগিটি নাকি? যেমন সময় অসময় রঙ বদলায়৷ কি করছে কিছু বুঝতে পারছি না৷
মাহতাব ভাইয়া আমার পাশ থেকে সরে এক কর্নারে গিয়ে দাঁড়ালো অতঃপর অন্তরিক্ষের সেই রুপোর থালার ন্যায় চাদের পানে তাকিয়ে বলে,
” কি জানি বললি এমন করছি কেন? আমি নিজেও জানি না কেন এমন করছি৷ আর কি যেন বলে দিতে বললি? কি সোজাসাপটা বলে দিবো? তা তো তোর বোন আগেই জানে ভাই৷ কেউ তাকে আগেই জানিয়েছে৷ আচ্ছা একটা কথা বলতো অন্তরিক্ষের ওই চাঁদ টা কি কেউ ছুঁতে পারে? তাঁর রুপে আর তাতে নিজেকে শুধু মত্তই করতে পারে ছুঁতে কেউ পারে না আমি কি করে ছুঁই বল তো? সে চাঁদ আর এ চাঁদ কোনটাই আমার নয়৷ চাঁদ কে পাওয়ার ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা শুধু কল্পনা জল্পনাতেই মানায়৷ আমি নাহয় কল্পনাতেই সুখি মানব হলাম৷ আর আমার কল্পনার মুন শুধু আমারই৷ ”
চলবে,