#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ১১
মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায় হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখলে যেমন বিস্মিত হয় তেমন বিস্মিত হয়ে আছি৷ এ করে সম্ভব? আজ কাল কি তিশান নামক ছেলেটাকে একটু বেশি চোখে হারাচ্ছি? ছেলেটা কি মাথাটা বিগ্রে দিলো আমার? ভ্রম কি এটা? নাকি সত্যি?
তিশান এখানে কি করে? আশেপাশে একবার দৃষ্টিপাত করলাম৷ ছেলেটার সাথে তিশানের চেহারা বেশ মিল৷ তিশানের দিকে দৃষ্টি দিলাম সে ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তাকে দেখে ধাতস্থ লাগছে৷
অবাক না হয়ে পারলাম না তো জানে এটা আমার বাড়ি তাহলে আমাকে বললো না কেন?
ছেলের মা এক এক করে পরিচয় করিয়ে দিলো সবার সাথে তখনই জানলাম তিশানের আপন চাচাতো ভাই আরাভ ভাইয়া৷
আর তিশানের বাবার চাচাতো বোনের বান্ধুবি আমার চাচি৷ সেই সুবাদে আপু তাদের বাড়িতে গিয়েছিলো অনুষ্ঠানে তখন আপুর শাশুরি আপুকে পছন্দ করেছে৷ আপুর নানু বাড়িও ধানমন্ডি৷
আমি এগিয়ে আম্মু আর চাচিদের সাথে দাঁড়ালাম অতঃপর আড়ষ্ট হয়ে মাহতাব ভাইয়ার দিকে তাকালাম৷ সে তো তিশান কে চিনে আল্লাহ ভাইয়া কে না কিছু বলে দেয় হুজুগে৷
মাহতাব ভাইয়া হৃদয় ভাইয়ার সাথে কথা বলছে৷ এর মধ্যে আরাভ ভাইয়ের মা আর তিশানের মা আপুকে তাদের মাঝখানে নিয়ে বসালো অতঃপর আরাভ ভাইয়ার মা আপুর অনামিকা আঙ্গুলে আংটিটা পড়িয়ে দিলো৷ আপু লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে৷ আপুর অনুভূতি কেমন হচ্ছে এখন? নিশ্চয়ই অন্যরকম? আপুর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তিশানের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম সে হৃদয় ভাইয়ার সামনে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলছেন৷ আরাভ ভাইয়া কে আমাদের বাড়ি আংটি পড়াতে যাবে শুক্রবারে৷ আমাদের এখানে আংটি পরানোর সময় ছেলে মেয়েদের নিয়ে যায় বা আনে না কিন্তু আজ আরাভ ভাইয়া কে আনিয়েছে হৃদয় ভাইয়া রাতে ছোট খাটো ঘরোয়া ভাবে অনুষ্ঠান হবে তাই৷
তিশানের মা হাঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে প্রসন্ন কন্ঠে বলে,
” তোমাদের এখানে দেখতে পাবো ভাবতেই পারিনি৷ কি অদ্ভুত ভাবে তোমাদের সাথে পরিচয় হলো এখন আবার সম্পর্ক ও গড়ে উঠলো অজান্তেই৷ ”
আন্টির কথায় আমিও প্রসন্ন হাসলাম৷ সত্যি আল্লাহ কি থেকে কি করে দেয় বুঝা বড় দায়৷ প্রথম থেকে এই পর্যন্ত সব কিছুর সাথেই সব কিছু মিলালাম সব কিছুই কাকতালীয় ভাবে ঘটেছে৷
বেশ কিছুক্ষন সবাই বসে আড্ডা দিলো, বিয়ের তারিখ ঠিক করলো মার্চ মাসের শেষ শুক্রবার হবে৷ অতঃপর আম্মু আর চাচিরা আরাভ ভাইয়ার মা-বাবা আর তিশানের মা-বাবা কে নিয়ে গেলেন আমাদের সবার বাড়ি ঘুরে দেখাতে৷ আমি আরাভ ভাইয়া আর আপুকে নিয়ে ছাদের জন্য হাটা ধরলাম এর মাঝেই হৃদয় ভাইয়া আর মাহতাব ভাইয়া নিচে গেলেন যেখানে কুক রান্না করছেন৷ আপু আর আরাভ ভাইয়ার মধ্যে এই এক মাসে ভালো প্রেম জমেছে ভালো লাগে তাদের দেখলে৷ অদ্ভুত প্রশান্তি মেলে ভাইয়ার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে৷ এতো দিন তো মোবাইলে কথা বলতে শুনেছি আজ দেখেও নিলাম ভাইয়ার সাথে আমার ফোনে কথা হলেও আজ প্রথম সামনাসামনি দেখলাম৷
আপু আর আরাভ ভাইয়া উঠে গেছেন আমি উঠতে উঠতে তাদের কথাই ভাবছিলাম হঠাৎ আঙ্গুলে কারো ছোয়া পেয়ে কেঁপে উঠলাম৷
পাশ ফিরলাম না জানি এটা তিশানই৷ ও এবার সন্তপর্নে আমার হাতের আঙুলের মাঝে তাঁর আঙুল গলিয়ে দিলেন৷ অতঃপর মিহি কন্ঠে বলেন,
“আমাদের জীবনের সাথে কি ” কাকতালীয়” কথাটা জুরে গেলো চাঁদ? আমরা কথাটা ‘কাকতালীয়’ ধরলেও আদৌ কি ব্যাপার গুলো কাকতালীয়? আল্লাহ সব কিছুর পিছনে কোন না কোন কারণ রাখেই৷ হুম কারণ তো আছেই আস্তে আস্তে সেই কারণ গুলো সামনে আসছে চাঁদ৷ আমার গাড়ির সাথে আপনার ধাক্কা খাওয়া অতঃপর ঝাঁসির রানীর ঝাঁঝালো কন্ঠে আমাকে ভস্ম করা৷ এর পরের দিন ও দেখা হওয়া তারপরের দিন ও দেখা হওয়া৷ আপনাকে নিয়ে আমার ভাবনা, লুকিয়ে আপনার ব্যাগে আমার নাম্বার রেখে দেওয়া আপনার সিএনজির পিছন পিছন আসা৷ আপনাকে ব্যতিব্যস্ত হয়ে খোঁজা একটা ফোন কলের আশায় পনেরোটা রাত নির্ঘুম কাটানো অতঃপর মাঝরাতে আপনার কান্না মাখা কন্ঠে নিজেকে আরো আপনারতে মত্ত করা৷ আজ আবার আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে আপনার চাচাতো বোনের বিয়ের ব্যপারটাও কাকতালীয়? সব কিছু কাকতালীয় না আল্লাহ যা করেণ তা সব সময় অন্যরকমই হয়৷ ”
আমি মুগ্ধ চোখে তাঁর পানে তাকালাম৷ অভিমান ছিলো খুব কিন্তু অভিমান করে থাকতে পারলাম কই? সে তো আমাকে তাঁর প্রণয়ের ইন্দ্রজালে ফাসিয়ে দিয়েছে৷ এর থেকে কি বের হওয়া যায়? এর থেকে বের হওয়া তো কঠিন৷ আর আমিও তো চাই না এর থেকে বের হতে৷
আমরা ছাদে আসতেই আরাভ ভাইয়া হেসে আমার উদ্দেশ্য করে বলেন,
” শালি সাহেবা আজ চুপ চাপ যে? এমনিতো মোবাইলে তোমার অনেক বকবক শুনি৷ ”
আরাভ ভাইয়ার কথা শুনে তিশান টিটকারি মেরে বলে,
“ওমা ভাইয়া সত্যি নাকি? তোর শালিকা বাচাল? তা এমনি তাঁর মুখ দেখলেই বুঝা যায় কিন্তু মানুষের সামনে ভিজা বিড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে৷”
তিশানের কথা শুনে রাগ হলো৷ ইচ্ছে করছে ছেলেটার মাথাটা ফাটিয়ে দেই৷ আমি ভিজা বিড়াল? আরাভ ভাইয়ার আর স্বর্না আপুর দৃষ্টিঅগোচরে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম তিশানের দিকে৷
তিশানের চেহারার পরিবর্তন হলো না৷ সে বুঝেছে কি না কে যানে? আমি চোখ রাঙালে বাচ্চারাই তো ভয় পায় না আর এই তিশান ভয় পাবে?
আমি রাগ দেখিয়ে তিশান কে পাশ কাটিয়ে এক কোনে এসে দাঁড়ালাম৷ কিছুক্ষণ পর সে ও আমার পাশে আসলো৷ অতঃপর একবার পিছন ঘরে তাকালো হয়তো আপু আর ভাইয়া কে দেখলো৷ সামনের দিকে তাকিয়ে পিছন দিয়ে আমার বাহুতে হাত রাখলো এক হাত দিয়ে জরিয়ে নিলো তাঁর বুকের কাছটায়৷
অতঃপর বাইরে দৃষ্টি রেখেই মিহি কন্ঠে বললো,
“রেগে আছেন চাঁদ?”
ধক করে উঠলো বুকটা৷ তার কন্ঠ ধ্বনি যেন আমার কানে পৌঁছানোর আগে তীর হয়ে বুকের মাঝে বিধলো৷ আর অনুভূতিটা প্রগাঢ় হলো৷ তাঁর এমন মোলায়েম কন্ঠ আমাকে কাঁপিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো৷
তাঁর হাতের বাধন শক্ত হলো সে আরেকটু মিশিয়ে নিলো তাঁর সাথে আমায়৷ এখন আমাদের মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমানেও খালি নেই৷ আমি হাত ছাড়ানোর জন্য তিন বার চেষ্টা করলাম কিন্তু তাঁর সাথে কি আমি পেরে উঠতে পারি? ব্যর্থ হলাম যে তিনবারই৷
আমি এবার ঘার হাল্কা পিছন ঘুরিয়ে আপুদের দিকে তাকালাম তারা অন্য দিকে মুখ করে আছেন৷ আবার ছাদের দরজার দিকে তাকালাম তখনই তিশান শান্ত কন্ঠে বললো,
“ছটফট করবেন না চাঁদ৷ আসবে না কেউ আপনাকে এখন আমার বুকে প্রয়োজন৷ ”
আমার এবার ভয় আর অস্বস্তি দুটোই আমাকে ঝেঁকে ধরলো৷ আবার সরে আসার চেষ্টা করলাম৷ তিশান এবার কন্ঠে গম্ভীর্যতা ফুটিয়ে আবার বললো,
” ছটফট করতে না করলাম তো? কেউ আসবে না চাঁদ এখন আপনাকে আমার বুকে প্রয়োজন বললাম তো?”
ইসস বুকে প্রয়োজন এতোক্ষণ তো সময়ই ছিলো না, এখন দেখে ভালোবাসা উতলে পরছে?
এবার আমি কিছুটা রাগ নিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকলেই তিশান বললো,
“রেগে থাকার কারণ কি জানতে পারি? এতো রাগের কারণ কি সারাদিন কথা না বলা? আমি ইচ্ছে করেই বলিনি চাঁদ৷ আমি কাল রাতে আম্মুর থেকে এখানে আসার কথা শুনে অবাক হয়েছিলাম সিউওর হওয়ার জন্য পুরো এড্রেস জানলাম আরাভ ভাইয়া থেকে৷ তারপর সিউওর হলাম আপনাদের বাড়িরই এড্রেস ওটা৷ তারপর জানলাম আপনারর চাচি আমাদের ফুপিও হয়৷ জানার পরেও আপনাকে আমি বলিনি কারণ আপনার রিয়েকশন টা দেখার জন্য৷”
এইটুকু বলেই ক্ষীন থামলেন অতঃপর আবার প্রেমময় কন্ঠে বললেন,
” আমার প্রাননাশিনী কি জানে তাঁর রাগী মুখশ্রী খানাও আমার মনে ধরেছে আজ৷ রাগ করলে আপনাকে হৃদয় হরনী লাগে৷ এমনি তো হৃদয়টা হরন করে নিয়েছেন আর কতো ক্ষত বিক্ষত করবেন আমায়? হৃদয়টা তো আপনার কাছে এবার কি শরীর টা নিস্তেজ করে দিতে চাইছেন?”
চলবে,