প্রণয়ের সূচনা পর্ব ২

0
1177

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_০২
__________________________
–‘তখন আপনার পাশে যে বসেছিল,ওর নাম ইরা।আমার বোন।

মিনিট দুয়েক মৌনতা পালন করার পর বললো প্রণয়।

তার দিকে না তাকিয়ে ই সূচনা বললো-

–‘ওহ,,

–‘হ্যা,,বাচ্চা মানুষ। এজন্য তখন আপনাকে,,

সূচনা বুঝতে পারলো যে সে কি বলতে চাইছে তাই হালকা হেসে বললো-

–‘সমস্যা নেই আমি বুঝতে পেরেছি।

–‘আমার কিছু কথা আছে আপনার সাথে।

–‘জ্বি বলুন।

প্রণয় কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই ডাক পড়লো বাইরে থেকে। বারান্দা থেকে ড্রয়িং রুমে চলে গেলো দু’জন।
.
.
.
চোখ বন্ধ করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে সূচনা।রুমের দরজা লক।আপাদত কারো সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই তার।পাত্র পক্ষ চলে গেছে দুই ঘন্টার ও বেশি। তখন থেকে দরজা লক করে বসে আছে সে।ইতিমধ্যে মিসেস দিশা কয়েকবার এসেছেন তাকে ডাক’তে কিন্তু প্রতি বারই হতাশ হয়েছেন।মনের মধ্যে শ’খানেক প্রশ্ন।প্রণয় নামক ছেলেটার সাথে আসা সেই ভদ্র লোক আর মহিলা হচ্ছেন তার মামা-মামি।সেই মেয়েটা তার বোন, ইরা।তাহলে তার বাবা-মা কোথায়?তারা আসেন নি কেন?প্রণয় কি বলতে চায়ছিলো?বাব-মা ই বা কেন এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাইছেন?আর ইরা মেয়েটা তাকে ভাবি কেন ডেকেছিল?যাওয়ার সময় ও তো বললো-

–‘ভাবি আসি।

প্রণয়ের চোখ রাঙানিতে চুপ হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু সে দৃশ্য চোখ এড়ায়নি সূচনার।এমনিতেই পরীক্ষার চা’পে ছিল এক’য়টা দিন।কোথায় ভেবেছিলো পরীক্ষা শেষ হলে শান্তিতে শুধু ঘুমাবে।নিজের চিরচেনা একাকিত্বের জগৎ এ ডুব দিবে আবার।তা আর হলো কই নতুন করে এই উ’টকো ঝামেলা।

নাহ আর কিছু ভাবা যাবেনা।মাথা খা’রাপ হয়ে যাওয়ার উপক্রম একেবারে।ঘুমাতে হবে।চোখ বন্ধ করে শু’তেই ফোনের কর্কশ আওয়াজে লা’ফিয়ে উঠলো সূচনা।মেজাজ খা’রাপ হলো বটে।ফোন হাতে নিয়েই দেখলো মিহু নামটা জ্বলজ্বল করছে।সাথে সাথে রিসিভ করলো।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অভিমান আর উদিগ্ন মাখা কণ্ঠে করা উক্তি-

–‘বাসায় যেয়ে ফোন করলি না কেন সূচি?

সূচনা মনমরা কণ্ঠে উত্তর দিলো-

–‘সরি।আসলে আমার একদমই মনে ছিলনা।

–‘আচ্ছা।এমন শোনাচ্ছে কেন কণ্ঠ?কি হয়েছে তোর?

–‘কিছুনা,, ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম একটু।

–‘এখন ঘুমাবি কেন?সবে আটটা কি সাড়ে আটটা বাজে।তোর মন খা’রাপ?

লম্বা করে শ্বাস ছাড়লো সূচনা।তারপর বিরস কণ্ঠে বললো –

–‘মা-বাবা আমার বিয়ে দিতে চাইছে মিহু।আজকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছিল।

ওপাশ থেকে মিহু বিস্ময়াহত গলায় বললো –

–‘আমি কি ভুল কিছু শুনলাম? কি বলছিস তুই,,এত তাড়াতাড়ি? আজকে হুট করে যে,,

–‘জানিনা কিছু।আমার ভালো লাগছে না এই ঝামেলা।

–‘পাত্র পক্ষ কিছু বলেছে?

–‘না বলেনি এখনো।

–‘ছেলে কেমন?

–‘জানিনা।অল্প কিছু কথা হয়েছে,কথা শুনে মনে হয়নি খা’রাপ।আর বড় কথা হচ্ছে আব্বুর নাকি ছেলেকে সেই লেভেলের পছন্দ হয়েছে।

–‘তার মানে নিশ্চিত ছেলে ভালোই হবে।বিয়ে করে নে।হিহি।

–‘তোর মাথা খারাপ?

–‘কেন সমস্যা কি?এখনো ওখানেই আটকে আছিস?

নিশ্চুপ সূচনা।তার কাছ থেকে জবাব না পেয়ে মিহু বলতে লাগলো-

–‘যা হওয়ার হয়ে গেছে সূচি।আর কত পড়ে থাকবি সেটা নিয়ে?যে যাওয়ার চলে গেছে। আজ হোক আর কাল হোক বিয়ে তো করতেই হবে।তুই ভেবে চিন্তে দেখ তো অতীত নিয়ে পড়ে থেকে কি পেয়েছিস তুই?শুধু নিজেই কষ্ট পেয়েছিস আর কিছু ই না। এবার একটু বুঝা নিজেকে।সে আসার হলে আসতো।তিনবছর তো কম না।সে তো তোকে ভুলেই গেছে, ফেরার ও কোনো সূযোগ নেই।তাই তুইও ভুলে যা পুরোপুরি।

–‘সে বিয়ে করে ফেলেছে মিহু।

মিহুর কথার মাঝেই সূচনা ভাবলেশহীন গলায় বললো –

–‘কিহ?কবে?

–‘হ্যা আরও এক বছর আগে।

–‘আর তুই অপেক্ষা করছিস এই মানুষটার জন্য।

–‘আচ্ছা এখন রাখি।একটু ঘুমাবো,মাথা ধ’রেছে।

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।

কল কে’টে সাইড টেবিলে ফোন রেখে দিয়ে স’টান হয়ে শুয়ে পরলো সূচনা।ওপরে অনবরত ঘুরতে থাকা
সিলিং ফ্যানের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো।আস্তে আস্তে চোখে এসে ভিড় করলো ঘুম।
.
.
রাত দশটা।দরজায় কড়া ধা’ক্কার শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠলো সূচনা।দরজার বাইরে থেকে মিসেস দিশা কড়া গলায় বলছেন-

–‘সূচি এবার যদি তুই দরজা না খুলিস তা হলে আ’গুন ধরিয়ে দিব তোর রুমে।সময় নেই,কাজ নেই, কাম নেই পেয়েছে নিজের একটা রুম খালি দরজা বন্ধ করে বসে থাকা।রুমই জ্বালি’য়ে দিব।না থাকবে রুম আর না পারবি দরজা আটকে বসে থাকতে।

মায়ের হুমকি ধামকি শুনে ঢুলুঢুলু চোখে টলমলে পায়ে বিছানা থেকে নেমে যেয়ে দরজা খুলে দিল সূচনা।মিসেস সূচনা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তার দিকে।তার দিকে তাকিয়ে সূচনা ঘুমুঘুমু কণ্ঠে বললো –

–‘উফফ আম্মু এতদিন পরীক্ষার জন্য ঘুমোতে দাওনি।এখন একটু ঘুমাতে দাও।কেন ডাকছো?

–‘ক’টা বাজে হ্যা।শুধু ঘুৃমালেই চলবে।দিন দিন শরীরের যা অবস্থা করছিস দেখলে মনে হয় যেন ফুক মা’রলেই উড়ে যাবি।তাড়াতাড়ি খেতে আয়।

রুমে ঢুকে বিছানায় বসতে বসতে বললেন-

–‘আমি বসলাম এখানে যা ফ্রেশ হয়ে আয়।

সূচনা চোখ মুখ কুচকে বললো –

–‘উফফ,,আম্মু এমন করোনা তো।

–‘যাবি নাকি।

–‘যাচ্ছি (মুখ বাকিয়ে)
.
.
খাওয়া শেষে রুমে এসে বসার একটু পরই আরহাম সাহেব রুমে আসলেন।

–‘বাবা তুমি এত রাতে?

–‘হ্যা একটু কথা ছিল।বারান্দায় আয়। অনেকদিন বা’প মেয়ে একসাথে আড্ডা দেইনা।

–‘হুম।

বারান্দায় পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে দু’জন।সূচনা বাবার দিকে তাকিয়ে আছে উৎসুক দৃষ্টিতে।হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করলেন।তারপর বললেন-

–‘আমি জানি তোর মনে এখন অনেক প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় আর অবাক করার মতো প্রশ্ন টা হচ্ছে যে এত তাড়াতাড়ি কেন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।প্রণয়কে আরও আগে থেকেই চিনি আমি।ওর মতো ছেলের হাতের যে কোনো বাবা ই চাইবে নিজের মেয়েকে তুলে দিতে।আমিও চাইছি।তোর হয়তো এখন আমাকে খা’রপ মনে হবে কিন্তু একটা সময় এসে তুই নিজেই বুঝতে পারবি যে তোর বাবা সঠিক মানুষের হাতেই তুলে দিয়েছে তোকে।তুই ভেবে দেখিস একটু।

–‘ঠি,,ঠিক আছে বাবা।

–‘আরেকটা কথা কালকে প্রণয় তোর সাথে একটু দেখা করতে চায়।আমাদের কাছেই যে ছোট রেস্টুরেন্ট টা আছে সেখানে।মিহুকে নিয়ে যাস।

সূচনা অবাক হয়ে তাকালো তার বাবার দিকে। তার দৃষ্টি বুঝতে পেরে আরহাম সাহেব বললেন-

–‘চিন্তা করিস না।ভেবেই বলেছি। এখন তাহলে আসি।ঘুমিয়ে পড়।

মাথা নাড়ালো সূচনা।সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন আরহাম সাহেব।সূচনা ঠায় বসে রইলো সেখানে।কি করবে সে?যাবে?নাকি যাবে না?কি সিদ্ধান্ত নেবে?মনে শত প্রশ্ন তার।অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে দৃষ্টি রেখে আপনমনে বিড়বিড় করে বললো-

–‘তার আগমন না ঘটাই তো শ্রেয় ছিল।
.
.
ফজরের নামাজ পরে ঘুমিয়েছিল সূচনা।সকালে ঘুম ভাঙতে ভাঙতে আটটা প্রায়। বিছানা থেকে ফোন হাতরে বের করে কল লাগালো মিহুকে।রাতে অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেখা করতে যাবে।মিহুকে কল করে সব বললে রাজি হলো সে।কল কেটে কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে রইলো বিছানায়।তারপর উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
.
.
বিকেল চারটা।রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে প্রণয় আর সূচনা।তার পাশে মিহু।সূচনা কাচুমাচু মুখ করে বসে আছে।তাদের চুপ থাকতে দেখে মিহু বললো-

–‘সূচনা আমি পাশের টেবিলে আছি।তোরা কথা বল।

দু’জনকে কিছু বলতে না দিয়েই মিহু উঠে চলে গেল।সূচনার দিকে পূর্ন দৃষ্টি রাখলো প্রণয়।বেগুনি রঙের চূড়িদার, তার সাথে ম্যাচিং করে হিজাব পড়া।চোখে হালকা করে কাজল দেয়া।

–‘আপনি কিছু বলবেন বলছিলেন।

সূচনার কথায় ঘোর ভাঙলো প্রণয়ের।মাথা নাড়িয়ে বললো-

–‘হ্যা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here