প্রণয়ের সূচনা পর্ব ১৫

0
608

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_১৫
______________________________
নিস্তব্ধ মধ্যরাত।নিকোশ কালো অন্ধকার আকাশে ক্লান্ত মেঘের আনাগোনা।নিস্তব্ধতায় ঘেরা৷ করিডরে ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস।ফিনাইলের তীব্র গন্ধে নাক জ্বলে যাওয়ার উপক্রম।হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে আছে সূচনা।সবার থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে সে। ফিনাইলের গন্ধ হিজাব ভেদ করে ও লাগছে নাকে।তাই দূরে দাড়িয়েছে।বাকিরা সবাই কেবিনের সামনে সারি করে রাখা চেয়ারে বসে আছে।মিসেস আফরোজা কান্না করতে করতে এখন একেবারে চুপ মে/রে আছে।মিসেস দিশা তার পাশে বসে আছেন।রিশা, হৃদুকে নিয়ে বাড়িতে আছে আফরিন।রিশা আর হৃদু জানেনা কিছু।সবাই যেন চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করছে ডক্টর কি বলে?কী অবস্থা ইরাদের? তা জানার জন্য।বাইক নিয়ে এই মধ্যরাতে বেড়িয়েছিল ইরাদ,হয়তো বেপোরায়া ভাবে চালাচ্ছিল বাইক।দুর্ভাগ্যবশত ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ।কিন্তু এত রাতে বাড়ি থেকে বের হলো কেন?আর বাড়ির লোকেরা ই বা দিল কেন?

–‘এটা পড়ে নাও,গন্ধ টা কম লাগবে।

ভাবনার মাঝে কানে আসলো প্রণয়ের শান্ত কণ্ঠে বলা কথাটা।সামনে তাকাতেই দেখা গেল তার দিকে বাড়ানো প্রণয়ের ডান হাত,সে হাতে একটা সার্জিক্যাল মাস্ক।সূচনাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রণয় আবার বললো –

–‘ধরো,,পড়ো এটা।

প্রণয়ের হাত থেকে মাস্কটা নিতে নিতে মৃদুস্বরে বললো-

–‘থ্যাঙ্কিউ,দরকার ছিল এটা।

জবাবে কিছু বললো না প্রণয়।তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ।একটু পরই পড়নে সাদা এপ্রোন,মুখে মাস্ক পড়া মধ্য বয়স্ক একজন লোক বের হলেন অপারেশন থিয়েটার থেকে।মাস্ক খুলতেই দর্শন হলো তার চিন্তিত মুখ।ঘাবড়ে গেল সবাই।নিহাদ, আরহাম সাহেব সামনে এগিয়ে গেলেন।প্রণয়ও গেল। ডাক্তার চিন্তিত মুখ নিয়ে গম্ভীর স্বরে বললেন-

–‘রোগীর অবস্থা খুব একটা ভালো না,প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে মাথা থেকে।এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি,তাই আপাদত কিছু বলতে পারবনা।যত দ্রুত সম্ভব জ্ঞান ফিরতে হবে।নাহলে

মাথা নিচু করে নিলেন ডক্টর।বুঝতে বাকি রইলো না কারো।আবার শুরু হলো মিসেস আফরোজার কান্না।উপায় না পেয়ে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হলো।
সূচনা দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাড়ালো।ইরাদের এই অবস্থার জন্য কী কোনোভাবে সে দায়ী? আচমকাই মস্তিষ্কে নাড়া দিল প্রশ্নটা।ফ্যাকাশে রূপ ধারন করল মুখশ্রী।তার জন্য কেউ মৃত্যুর দ্বারে?

–‘ ভাগ্যের লিখন কেউ টালতে পারেনা, তাই অযথা নিজেকে দোষারোপ করার কোনো প্রয়োজন ই নেই।

কথাটুকু কর্ণধার হতেই পাশ ফিরে তাকালো সূচনা।বু/কে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে প্রণয়।দৃষ্টি তার মধ্যেই নিবদ্ধ।প্রণয়ের দিকে ঘুরে সোজা হয়ে দাড়ালো সূচনা।তারপর নিচু হতে নিচু স্বরে বললো-

–‘ভয় করছে

–‘নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী।যা করবেন ভালোই করবেন,চিন্তা করো না।

মাথা ঝাকালো সূচনা।তবে বললেই কী হয়।ভেতরে ভেতরে যে খচখচ করছে তার।
_________________________________
রাতের অন্ধকার ছাপিয়ে রজনীর আগমন।চারদিকে আলোতো ফুটে গেছে অনেক আগেই এখন তীব্র হচ্ছে রোদের আলো। বেলা এগারোটা এখন। ইরাদ এখনো অজ্ঞান অবস্থাতেই আছে।মিসেস আফরোজাও ঘুৃমে বিভোর।মিসেস দিশা বাসায় গিয়েছেন।আরহাম সাহেব ও অফিসে গিয়েছেন কিছুক্ষণের জন্য।ইরাদ,নিহাদ,রিশার বাবা নেই।মা/রা গিয়েছেন বছর চারেক আগে।হাইওয়েতে বাস এক্সিডেন্ট করে,গুরুতর আহ/ত অবস্থায় হসপিটালে নেয়া হলেও ফিরতে হয় মৃত লা/শ নিয়ে। এই অবস্থায় এভাবে তাদের রেখে যেতে মন মানছিল না আরহাম সাহেবের।তবে না যেয়ে উপায়?তার তো আর ছেলে নেই যে সে সামলাবে।অগ্যতা যেতে হয়েছে।নিহাদ আর প্রণয় আছে।সূচনা মিসেস দিশার সাথে চলে গিয়েছে।দম বন্ধ লাগছিল তার এখানে থাকতে।মানুষ ঠিকই বলে হসপিটালে থাকলে মানুষ অর্ধেক অসুস্থ হয়ে যায়। আফরিন এসেছে।রিশা হৃদু সূচনাদের বাসায় এখন।
.
.
বাসায় এসেই সূচনা শাওয়ার নিয়েছে।কোনোরকম চুল মুছে রিশা আর হৃদুর কাছে গেল। হৃদু ঘুমিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। রিশা তার পাশেই মনমরা হয়ে বসে আছে। সূচনা শব্দহীনভাবে তার পাশে যেয়ে বসল।রিশার মাথায় হাত রেখে আলতো স্বরে বললো-

–‘এমন মন মরা হয়ে আছিস কেন রিশু?

–‘ কি হয়েছে মিষ্টিপু?ভাইয়া কী খুব বেশিই ব্যথা পেয়েছে?ঠিক হয়ে যাবেনা?

সূচনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচুস্বরে বললো-

–‘কিছু হয়নি তো।ইরাদ ভাইয়া ঠিক হ’য়ে যাবেন তবে একটু সময় লাগবে,তুই চিন্তা করিস না।সামনে পরীক্ষা না,ঠিকমতো পড়তে থাক।

–‘আমি দেখা করব ভাইয়ার সাথে।

বিপা/কে পড়লো সূচনা।কী বলবে এখন?ইরাদের তো এখনো জ্ঞান ই ফিরল না আর বলছে দেখা করবে।অনেক ভেবেচিন্তে সূচনা জবাব দিল-

–‘ঠিক আছে কিন্তু সময় লাগবে।পুরোপুরি ঠিক হলে ডাক্তার দেখা করতে দিবেন না হয় দিবেন না।

–‘কিন্তু আপু

–‘আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?

–‘হয়েছে তো।

–‘তাহলে এখন চুপচাপ চল আমার সাথে, কিছু খাবি।

–‘হু।

ফোন হাতে নিয়ে ব্যস্ত পায়ে রুমে পায়চারী করছে সূচনা।হসপিটাল থেকে এসেছে প্রায় দুই ঘন্টার বেশি। প্রণয়কে কল দিচ্ছে কিন্তু রিসিভ করার খবর ই নেই। মেজাজ চরম পর্যায়ে গর/ম এখন।ফোন কেন রিসিভ করেনা।আশ্চর্য!কলিং বেলের আওয়াজে বিরক্তি তে চোখমুখ কুঁচকালো সূচনা।রুম থেকে দ্রুত পায়ে ড্রয়িং রুমে গেল।সদর দরজা খুলতেই দর্শন হলো প্রণয়,মিসেস আফরোজা আর আফরিনের মুখ।মিসেস আফরোজাকে একহাতে ধরে আছে আফরিন। মিসেস আফরোজার চোখমুখ শান্ত।আফরিন ধরে সোফায় বসিয়ে দিল তাকে।ইতিমধ্যে রিশা আর মিসেস দিশাও উপস্থিত হলেন সেখানে। মিসেস দিশাকে দেখে আফরিন বললো-

–‘আসতে চাইছিলেন না।অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে এনেছি,বিকেলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে।

মিসেস দিশা ব্যস্ত গলায় বললেন-

–‘ভালো করেছো নিয়ে এসেছো।

প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে সূচনাকে বললেন-

–‘সূচনা প্রণয়কে নিয়ে যা রুমে।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো বাবা।

মাথা নাড়ালো প্রণয়।তাকে উদ্দেশ্য করে সূচনা ছোট্ট করে বললো –

–‘চলুন।

সূচনার পেছন পেছন প্রণয় পা বাড়ালো।আফরিন
মিসেস আফরোজা কে নিয়ে গেল,রিশা ও গেল তাদের পেছনে।
.
.
ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল প্রণয়। ঘুম হয়নি রাতে,তারওপর এত বেলা হয়ে গেলেও এক মুহূর্তের জন্য বিছানায় পিঠ লাগাতে পারেনি।মাথা ধরেছে,সাথে মেজাজ ও খিটখি/টে হয়ে আছে।ঘুমানো প্রয়োজন একটু।কিন্তু তারও চিন্তা হচ্ছে এখন।মনে প্রাণে প্রার্থণা করছে যেন ইরাদের জ্ঞান ফিরে আসে।অকালে ঝরে না যায় প্রাণ।আর তারওপর সূচনা ও তো মনে মনে দোষারোপ করবে নিজেকে, তা ঢের জানে সে।

–‘আপনি শুয়ে পড়লেন কেন? খাবেন না?

সবে চোখ বন্ধ করতে নিয়েছিল প্রণয় তখনই হন্তদন্ত হয়ে রুমে এসে সূচনা উক্ত কথাটুকু বললো।উঠে বসলো প্রণয়। মিহি স্বরে বললো-

–‘একটু ঘুমানো দরকার,মাথা ধরেছে।খাবনা এখন পরে খাব।

–‘অল্প কিছু খেয়ে নিন।তারপর চা করে দিব।

–‘পরে দিও এখন ঘুমাই।

–‘আম্মু বারবার বলে দিয়েছে, খেয়ে নিন একটু। না-হয় রুমে নিয়ে আসি?

মিনিটের নীরবতা।তারপর উঠে দাড়িয়ে বললো-

–‘চলো।
.
.
ড্রয়িং রুমে বসে আছে সূচনা।প্রণয় রুমে, হসপিটালে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।সূচনার সাথে বসে আছে আফরিন।মিসেস আফরোজা দুপুরের পরে রুম থেকে একবার ও বের হননি।তাকে পছন্দ না করলেও তার জন্য খা/রাপ লাগছে সূচনার। আর যাই হোক সে একজন মা, আর তার ছেলের অবস্থা যেখানে এমন সেখানে তার অবস্থা তো সে আর আল্লাহ ই ভালো জানেন।আফরিনের মুখশ্রী ও মলিন।এখন সাঝ বেলা।ধরনীতে আলোর বিচরণ থেমে গেছে প্রায়।মেঘেরা ও ক্লান্ত বোধহয় তাই তাদের গতি ও কমে গেছে।আযান পড়লেই বেরোবে প্রণয় আর আরহাম সাহেব।নামাজ পরে হসপিটালে যাবে।সময় যেন কেমন পলকেই কেটে গেল।সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে এখন সন্ধ্যা।ইরাদের অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি তবে সে রেসপন্স করছে এখন ট্রিটমেন্টের।নিহাদ এসেছিল বাসায় চলে গেছে আবার।রুম থেকে প্রণয় ড্রয়িং রুমে আসতেই ফোন বেজে উঠলো তার। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল নিহাদের ফোন।রিসিভ করল অবিলম্বে। ওপাশ থেকে নিহাদ ব্যস্ত গলায় বললো কিছু। প্রণয় ফোন রাখতেই চোখে পড়লো উৎসুক কয়েক জোড়া চোখ তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরহাম সাহেব কিছুটা ভীত গলায় জিজ্ঞেস করলেন-

–‘কী হয়েছে প্রণয়?নিহাদ কী বললো?

–‘ বাবা ইরাদ,,

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here