#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ১৭+১৮
#লেখনীতে_রেহানা_পুতুল
‘ ভালবাসি স্যার ‘ আপনার জন্য সাজিয়েছি আমার ছোট্ট হৃদয়ের চিলেকোঠায় প্রণয়ের জলসাঘর। আপনার মতো কারো জন্য অপেক্ষার সীমানায় দাঁড়িয়ে প্রতিক্ষার প্রহর গুনব অনন্তকাল। যে কালের কোন শেষ নেই। কিন্তু সময় গড়িয়ে যাচ্ছে শুভ স্যার কেন এখনো আসছেনা।
আলিশার মন খারাপ হতে লাগল ক্রমশ। বারবার শুভকে কল দিয়েও পাচ্ছেনা। সুইচড অফ। মেসেজ দিল। বাট নো রিপ্লাই। বাথরুমে ঢুকে আলিশা লুকিয়ে কাঁদল। সে কিন্তু কাঁদতে চায়নি। কিন্তু কেন যে চোখ ভিজে ভরা বর্ষার মতো টইটুম্বুর হয়ে গেল। তাহলে কি সে আসলেই অনেক বেশী ভালোবেসে ফেলছে শুভ স্যারকে। হ্যাঁ তাইতো দেখতে পাচ্ছে।
গায়ে হলুদের প্রায় মাঝামাঝির দিকে কলিংবেল বেজে উঠলো। শুভ এলো। আলিশা খুশীতে পাগল পাগল দশা।
নাও তোমার জন্য এটা।
আলিশা হাত বাড়িয়ে গোলাপগুচ্ছটি ধরলো। খুশীতে টগবগিয়ে উঠল সে। আগে বলেন লেট হলো কেন?
ইচ্ছে করেই। মুচকি হেসে জবাব দিল শুভ।
অনেক ধন্যবাদ স্যার। এটা কেমন কথা হলো। ইচ্ছে করেই। গাল ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো আলিশা।
আরেহ নাহ। ফুলের তোড়া দুটো রেডি করতেই দোকানে লেট হলো । লম্বা সিরিয়াল। আলিশার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলল শুভ। তোমাকে দূর বনের মায়াবিনীর মতো লাগছে।
পিয়াসার অন্তর নেচে উঠল পেখম তোলা ময়ুরের মতো। বলল,আপনাকেও পাঞ্জাবীতে দারুণ লাগছে ৷
ধন্যবাদ আলিশা।
ফুল ওগুলো আপুর জন্য?
হ্যাঁ। ওর জন্য নিতে গিয়েই ভাবলাম তোমার জন্যও নিই । বলেই শুভ পিয়াসার সামনে গিয়ে রজনীগন্ধা ফুলের ফুলের তোড়াটি এগিয়ে ধরলো। কংগ্রাচুলেশন পিয়াসা৷
পিয়াসা ফুল হাতে নিয়ে হাসিমুখে ধন্যবাদ জানালো শুভকে। আয়মান পাশাপাশি বসা ছিল তার গায়ে হলুদের স্টেজে। বাঁকা চোখে দেখল পিয়াসাকে। বিশেষ খুশী হলোনা পিয়াসা খুশী হলো বলে। ওর মন চাচ্ছে ঠিক সেদিনের মতো এই ফুলগুলোকে পায়ের নিচে ফেলে দুমড়েমুচড়ে দিতে। কিন্তু তা এখন সম্ভব নয়।
মনে মনে বলল, আগে আমার হও একবার। তখন ফুল কেন গাছের পাতাও কেউ তোমাকে দিতে পারবেনা। এখন হজম করি নিলাম কাশির সিরাপের মতো। আয়মানকে সবাই হলুদ দেয়া শেষ করলে সে উঠে চলে গেল। পিয়াসা উদাস চোখে বসে রইলো গায়ের হলুদের স্টেজে ।
রায়হান উপস্থিত নেই আজ। সে শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে দিয়ে দেশের বাইরে চলে গিয়েছে। পিয়াসার রায়হান স্যারের কথা মনে হলো। বাবার কথা মনে হলো। স্কুল কলেজের গ্লু বাহিনী নামের বন্ধুদের কথা মনে হলো। ভার্সিটিতে গিয়ে একেকজন একেকদিকে ছিটকে গিয়েছে। তারা কাছে থাকলে এখন খুব ভালো লাগতো পিয়াসার।
এই বুঝি জীবন। এই বুঝি জীবন নামক খেলা ঘর। এই ভালো এই মন্দ। এই হাসি এই কান্না। এই প্রণয় এই বিষাদ। এই মিলন এই বিরহ।
নিজের জীবনের ভগ্নদশা অতীতের কথা মনে হলো তার । দুই আঁখিকোন ভিজে উঠলো। আয়মানের মা হলুদ দেয়া শেষে পিয়াসার চোখের কোন নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিল।
বলল, এ অশ্রুর ভাষা আমি বুঝি মা। ভাগ্যের উপরে কারো হাত নেই। এখন বিয়ের সময়। এমন মনমরা হয়ে থেকনা। একটু হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করো।
গায়ে হলুদের সামনের চেয়ার গুলোতে বসে গানের কলি খেলছে আলিশার কাজিনেরা । সেখানে যোগ দিল আলিশা ও শুভ।
আলিশা বলল, এই গান কি শুধু বাংলায় হবে? নাকি মিক্স ?
কেউ বলল বাংলা গান। কেউ সজোরে বাধা দিল। বলল না মিক্স।
শুভ গলা তুলে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা গান কি বিয়ের গান হতে হবে? নাকি যে কোন রকম হলেই হবে?
আপনি চাইলে বিরহের গান ও গাইতে পারেন। কিটকিটিয়ে হেসে বলল আলিশার এক ভাবি।
যার যা ইচ্ছে বলল কেউ একজন।
সুখ সুখ গলায় বলল আলিশা। ওক্কে গাইস। শুরু হউক গায়ে হলুদের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্ব গানের কলি খেলা। যে বর্ণে গিয়ে গান শেষ হবে। ঠিক সেই বর্ণ বা আদ্যাক্ষর দিয়েই পরেরজন পরবর্তী গান গাইবে।
শুভ লুকিয়ে লুকিয়ে নেশাতুর চাহনিতে আলিশাকে দেখছে। চোখের কোণে দুষ্টময় হাসি খেলে যাচ্ছে ৷
এভাবে শাড়ি পরা আর কখনোই দেখেনি আলিশাকে । শাড়িতে মেয়েদের এত আবেদনময়ী লাগে এই প্রথম শুভ উপলব্ধি করতে পারলো। আলিশা ও আড়চোখে শুভকে দেখছে। ইসসস! কি রোমান্টিক প্রেমিক পুরুষ লাগছে আমার শুভ স্যারটাকে।
আচ্ছা স্যার জানে আমি তাকে পছন্দ করি। কিন্তু তবুও সে কেন আমাকে ভালোবাসতেছেনা। আমি কি দেখতে কিছুতেই কম নাকি। আগে একবার পটাই ভালো করে। পরে মজা দেখাব। আনমনা হয়ে গেল আলিশা। শুভ’র সাথে চোখাচোখি হতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল। অন্যকিছু দেখার বাহানায় ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে চাইলো।
গান শুরু করলো আলিশার মামাতো বোন,
” যদি বউ সাজোগো… তবে সুন্দর লাগবেগো…
বলো.. বলো..আরো বলো.. ”
‘ ল ‘ দিয়ে শুরু করতে হবে এনি ওয়ান। বলল আলিশার খালাতো বোন মিতু।
‘” লে যায়েঙ্গে লে যায়েঙ্গে , দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে।”
গানটি গাইলো শুভ। সবাই পুলকিত চোখে শুভ’র দিকে চেয়ে বলল,
এই ভাইয়া আপনিতো ভালোই গান দেখি।
শুভ হেসে বলল। শুকরিয়া শুকরিয়া। আপকা বহত বড়া শুকরিয়া
এবার ‘ গ ‘ দিয়ে কে বলবে?
” গভীর রাতে জেগে খুঁজি তোমারে।
দূর গগনে প্রিয় তিমির-পারে
গভীর রাতে জেগে খুঁজি তোমারে।
জেগে যবে দেখি হায় তুমি নাই কাছে।
আঙিনায় ফোঁটা ফুল ঝরে পড়ে আছে।
আহত এ মম তব লুটায়ে লুটায়ে কাঁদে আঁধারে। ”
ওমা কি জটিল গাইলে আলিশা। কবে থেকে প্রণয় সঙ্গীতের চর্চা করিস তুই? চাচাতো ভাই রিমন জিজ্ঞেস করল চোখ বড় বড় করে।
আলিশা চোখের ইশারায় ধমক দিয়ে থামালো তাকে।
এবার র বা এ দিয়ে শুরু হোক।
শুভ একটু ঘুরে বসল আলিশার দিকে। মুখোমুখি চেয়ে গাইলো,
” এই ভালোবাসা তোমাকেই পেতে চায়।
ওই দুটি চোখ যেন কিছু বলে যায়।
কবে তুমি নাম ধরে ডাকবে?
কবে তুমি হাতে হাত রাখবে? ”
সবার হাততালিতে মুখরিত হলো আয়মান পিয়াসার হলুদ সন্ধ্যা। আলিশা বিমোহিত শুভ স্যারের মুখে এমন প্রণয়মাখা রোমান্টিক গান শুনে। তার খুব ইচ্ছে করছে শুভ’র হাতে একটু হাত রাখতে।
অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল। সবাই একসাথে ডিনার করলো। বিফ তেহারি ছিল আয়োজনে। আলিশা ঘুরেফিরে শুভ’র কাছাকাছি যাচ্ছে একটু সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য। শুভ তা বুঝে মিটমিট করে হাসছে। চলে যাওয়ার সময় আলিশা সিঁড়িতে নেমে স্যার বলে ডাকল।
শুভ মুখ তুলে, কিই বল?
কিছু বললেন না যে?
শুভ বিষম খাওয়ার ভান করলো অনুধাবন করতে পেরেও। বলল ও হ্যাঁ। তেহারিটা দারুণ টেস্টি হয়েছে। বাবুর্চিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর রসগোল্লাটাও বেশ তুলতুলে ছিল।
আলিশা অনিমেষ চেয়ে রইলো শুভর পানে।
শুভ আলিশার বাম গালে তার চার আঙুলের পিঠের আদুরে ছোঁয়া বুলিয়ে দিয়ে নেমে গেল সিঁড়ি ভেঙ্গে। শুভ’র চলে যাওয়ার পিছন দিয়ে আলিশা মনে মনে বলল পঁচা শামুক তুমি।
আজ পিয়াসার বিয়ে। চোখ ধাঁধানো হরেক রকম বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে বাড়ির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত। বিয়ে হয়েছে পাশের
‘ বধু বরণ ‘ কমিউনিটি সেন্টারে। সাধ্যের ভিতরে সাজ সজ্জার কমতি রাখেনি আয়মান ও তার মা। পিয়াসা যেন নিজের বিয়ে নিয়ে কোন আক্ষেপ না থাকে। যদিও কিছু ধারদেনা করতে হয়েছে তাদের।
বিয়ের আনন্দ জীবনে একবারই আসে। তাই সেভাবেই সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছবি তোলা, ফটোগ্রাফার দিয়ে ভিডিও করা কিছুই বাকি থাকেনি। পিয়াসাকে ব্যয়বহুল বিউটি পার্লার থেকে গায়ে হলুদের মত করেই বউর সাজে সাজানো হয়েছে। দুই হাত ভর্তি মেহেদীর আলপনা আঁকা হয়েছে। পরানো হয়েছে লাল টুকটুক রক্ত জবার মতো কাতান শাড়ি। বাসর ঘর সাজানো হয়েছে মনোরম করে।
আয়মান অন্যদিকে কাজ নিয়ে ব্যস্ত। পিয়াসাকে আলিশা ও তার কাজিনেরা মিলে আয়মানের রুমে বাসর ঘরে নিয়ে বসালো। তার আগে পিয়াসা বাসায় ঢুকেই শ্বাশুড়ির পা ধরে সালাম দিল। তিনি পিয়াসাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। ভেজা গলায় বললেন, আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন কত খুশী হতেন তোমার মতো মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে পেয়ে ৷ পিয়াসাকে মিষ্টি মুখ করালেন। পিয়াসা ও শ্বাশুড়িকে মিষ্টি খাওয়ালো। ননদ আলিশাকে ও খাওয়ালো।
তারা চলে গেল দরজা চাপিয়ে দিয়ে। পিয়াসা সীমাহীন লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বুকের ধুকপুকানি ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। আয়মানের ও কেমন যেন লাগছে। এদিক ওদিক ঘুরছে রুমে ঢুকছেনা। তা দেখে তার কাজিন আর ভাবিরা মিলে তাকে রুমের ভিতরে ঠেলে দিল।
আয়মান দরজা বন্ধ করে দিল ভিতর থেকে । গলা খাঁকারি দিয়ে বিছানার একপাশে গিয়ে বসল। পিয়াসা কিছুই বলছেনা। চুপটি হয়ে বসে আছে ঘোমটার ভিতরে। আয়মান পিয়াসার হাতের পিঠে উষ্ণ চুমু খেল। বলল, অনেক ভালোবাসি প্রণয়ীনি ।
সে চাচ্ছে পিয়াসাও বলুক অনেক ভালোবাসি। কিন্ত পিয়াসা কিছুই বলছেনা। আয়মান বলল, কিছু একটা বল।
পিয়াসার বুকের ভিতর টিপটিপ করছে৷ তার অনুভূতি কেমন যেন উড়ুউড়ু হয়ে গেল। ঠিক বুঝতেছেনা। তবুও ছোট্ট করে মিষ্টি গলায় বলল,
একটা ধাঁধা বলব। উত্তর দেন পারলে ” চারদিকে কাঁটা বেত। মাথায় মুকুট। খান সাহেবের নাম কি? ”
আয়মান ফিক করে হেসে ফেলল। বাসর করে আর কথা খুঁজে পেলেনা তুমি? আমি শুনছি বাসর ঘরে স্বামী স্ত্রীর গল্প ফুরোয়না। কিন্তু রাত ফুরিয়ে যায়। আর তুমি কি হাবিজাবি ধাঁধা নিয়ে আসছ। ফাজিল কোথাকার।
নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা। পারেন না সেটা বলেন।
পারিনা নাহ? বলে আয়মান পিয়াসার হাত ধরে উল্টো দিকে মোচড় দেওয়ার মতো করে জিজ্ঞেস করলো,
আগে বল সেদিন বইয়ের ভিতরে পাওয়া চিরকুটে ডুবে ডুবে ভালোবাসি কার উদ্দেশ্য নিয়ে লিখছ?
আহ লাগছেতো। ধাঁধা পারেন না?
না পারার কি। এটা কাঁঠাল। এবার বল।
জানিনা।
বল। নইলে ব্যথা দিব এভাবে।
আপনার জন্য লিখছি।
ইয়েহ! বলে আয়মান খুশীতে আত্মহারা হয়ে উঠলো। খুশীর ফল্গুধারার ভেসে যাচ্ছে তাদের দুজনের দুটি হৃদয়। পিয়াসার মুখের দুপাশে তার দুহাত দিয়ে চেপে ধরলো। মোহাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে ঠায় চেয়ে রইলো পিয়াসার দিকে। নড়োনা তুমি প্লিজ। মন ভরে দেখতে দাও আমার প্রণয়ের জলসাঘরের মধুবালাটাকে । লেখিকা রেহানা পুতুল এর সাথেই যুক্ত হোন দারুণ স্বাদের সব গল্প পেতে।
আয়মান পিয়াসার কোলে মাথা রাখল। পিয়াসা মাথায় হাত বোলাতে লাগল। এক অপার্থিব ভালোলাগায় আয়মানের আঁখিপল্লব বুঁজে এলো।
পিয়াসা বলল। নিজে ঘুমালে হবে? আমি ঘুমাবনা?
আয়মান শাড়ির উপর দিয়ে পিয়াসার পেটের উপর নাকমুখ ঘষতে ঘষতে বলল,
কিসের ঘুম? এতদিন ঘুমাওনি? আজ তোমার মাঝে গচ্ছিত থাকা সব নতুনের খুশবু নিব আমি। নিঃশ্বাস ভরে প্রাণ উজাড় করে। তুমি শুধুই আমার। একান্তই আমার। তোমার সমস্তটা আমি দখল করবো বীরদর্পে।
” ফুলের বনে দারুন খরা, চাই অনেক বৃষ্টি।
শুদ্ধ জলে চাই ভিজাতে কামনারই দৃষ্টি। ”
পিয়াসা আপ্লুত স্বরে জানতে চাইলো আয়মানের কাছে ,
এত প্রেম , এত অনুরাগ, এত নিবেদন,এত আরাধনা, হৃদয় কুঠিরে পুঞ্জীভূত রেখে এতদিন কিভাবে ছিলেন আপনি ?
চলবে ঃ
#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ১৮ #লেখনীতে_রেহানা_পুতুল
” ফুলের বনে দারুন খরা, চাই অনেক বৃষ্টি।
শুদ্ধ জলে চাই ভিজাতে কামনারই দৃষ্টি। ”
পিয়াসা আপ্লুত স্বরে ধীর গলায় জানতে চাইলো আয়মানের কাছে ,
এত প্রেম , এত অনুরাগ, এত নিবেদন,এত আরাধনা, হৃদয় কুঠিরে পুঞ্জীভূত রেখে এতদিন কিভাবে ছিলেন আপনি ?
আয়মান কামুক চাহনিতে পিয়াসার চোখে অপলক চেয়ে রইলো। পিয়াসা দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই আয়মান পিয়াসার দুগালে হাত দিয়ে তার দিকে তাক করে ধরলো।
বলল,
দেখি কতসময় ধরে তুমি স্থির চোখে আমার চোখে চোখ রাখতে পারো। চোখের পাতা পড়ে গেলেই খেলায় হেরে যাবে। দুজনের যে জিতে যাবে অর্থাৎ যার চোখের পাতা পরে নড়ে উঠবে। সে যা চাইবে এই বাসর রাতে তাই হবে।
দূর! আমি ঘুমাব। পারবোনা। কিভাবে চেয়ে থাকব। কেমন যেন লাগছে। আহ্লাদী ভঙ্গিতে বলল পিয়াসা।
তার মানে পরাজয় মেনে নিলে?
আমি খেলা বয়কট করলাম। গণতন্ত্র বলে কিছু আছে দেশে।
ওরে বাহানারে। গণতন্ত্র নাই এখন দেশে। একনায়কতন্ত্রেই দেশ চলে। সো আমিও এখন একনায়কতন্ত্রগিরি ফলাব।
খবরদার ভালো হবেনা বলছি স্যার। অধিকারের সাথে বলল পিয়াসা।
স্যারের খেতা পুড়ি। হালকা শীতে এই ঘোর নিশিতে আজ ডাকাত হবো আমি । শীত চলে যাচ্ছে। গ্রীষ্মে ডাকাতি করে এই সময়ের মতো মজা পাওয়া যাবেনা। এত ভয় কেন? তুমি না এই ডাকাতের কাছে স্বেচ্ছায় লুটপাট হতে চাও?
কই একদম নাতো। ঠোঁট উল্টিয়ে বলল পিয়াসা।
এমন পবিত্র মধুময় রাতে মিথ্যা বলতে নেই। জিহবা খসে পড়বে। শুন বলে, আয়মান পিয়াসার কোল থেকে মাথা সরিয়ে নিল। বালিশে মাথা রাখল। সিরিয়াস মুডে বলল,
এবার তোমার শুরুতে করা প্রশ্নের আনসার শুনো,
এই দুটি বছর জাস্ট তোমাকে মিস করতে হতো প্রতিটিমুহুর্তে। অনুভবে খুব চাইতাম তোমাকে । পেতাম ও। তখন তোমাকে খেয়ালমতে মিশে ফেলতাম আমার মানসপটের নরম গালিচায়।
উঁহু! আর শুনতে চাইনা। বলে পিয়াসা আয়মানের মুখ চেপে ধরলো হাতের তালু দিয়ে। আয়মান হাত সরিয়ে দিল পিয়াসার।
তপ্ত স্বাস ছেড়ে বলল,
” মানুষ হওয়ার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হলো কাউকে কিছু বলতে চেয়েও না বলতে পারা। ”
এই দহন ভারী ভয়ানক পিয়াসা। আচ্ছা বেশ রাত হয়ে গেল। আসো ঘুমাই। শাড়ি গহনা চেঞ্জ করো। নয়তো তুমিই আরাম পাবেনা। পিয়াসা হুম বলে বিছানা থেকে নামতে যাচ্ছে। আয়মান বাধা দিল। নামতে হবেনা বউ। বিছানার উপরেই চেঞ্জ করো।
পিয়াসা রাগী চোখে চাইতেই,
আয়মান হ্যাঁচকা টানে পিয়াসাকে তার পাশে শুইয়ে দিল।
আজব! কি সমস্যা আপনার?
সমস্যা গুরুতর। চুপ বলছি। একদম চুপ। আমিই সব খুলে নিচ্ছি একে একে।
আয়মানের পেশীশক্তির কাছে পিয়াসা হেরে গেল। ছোট্ট অবোধ শিশুর মতো একপাশ হয়ে চুপটি করে শুয়ে রইলো। আয়মান যত্ন করে পিয়াসার কানের দুল জোড়া খুলে নিল। গলা থেকে নেকলেস খুলে নিল। হাত থেকে বালা গুলো খুলে নিল। মাথা থেকে বিয়ের লাল ওড়নাটি সরিয়ে নিল। খোঁপা থেকে চুলের কাঁটাগুলো খুলে চুলকে পিয়াসার সারা পিঠে ছড়িয়ে দিল। চুলের ভাঁজে নাক ডুবিয়ে দিল।
মনে মনে, আহ! কি সোঁদা গন্ধ। মুখ ফিরানো দায়। আমার প্রেমিক হৃদয়ে ঝড় তুলতে এমন কেশবতীর কেশই যথেষ্ট। চুল সরিয়ে পিয়াসার ঘাড়ে নাক মুখ ঘষতে লাগল। পিয়াসা কেঁপে উঠলো। আয়মান টের পেল কিছু। পিয়াসার শাড়ি খুলে একপাশে রেখে দিল। কম্বলের নিচে পিয়াসাকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। পিয়াসার দুই হাতের আঙ্গুলের ভিতর নিজের দুই হাতের সব আঙ্গুল ঢুকিয়ে পেরেকের মতো আটকে ফেলল।
পিয়াসা আস্তে করে বলল,
এমন করছেন কেন? কি করবেন?
তেমন কিছুইনা। জাস্ট চোরের মতন অল্পস্বল্প কিছু নিব। ডাকাতের মতো লুটপাট করবো যেদিন স্বইচ্ছায় তুমি ধরা দিবে। ঠিক সেদিন। হাত ছেড়ে দিল আয়মান। পিয়াসার কোমরে হাত দিয়ে খামচি দিয়ে ধরল। পিয়াসা কুঁকিয়ে উঠল। আঃ লাগছেতো। রাক্ষস নাকি আপনি?
হ্যাঁ ঠিক তাই। যা মন চায় বল। কোন রক্ষা তাই।
প্লিজ আমি ঘুমাব। আপনিও ঘুমান না। আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি?
হারাতে দিবনা কভু তোমায়। তুমি আমার আরাধ্য। তুমি আমার ঘোর লাগা ভোর। তুমি আমার নেশা।
তুমি ঘুমাও পিয়াসা। আমি একটু ভালোবাসার সুরা পান করেই ঘুমিয়ে যাব। এর অতিরিক্ত কিছুই আজ হবেনা। প্রমিজ কেশবতী আমার।
আচ্ছা তাই যেন হয়। পিয়াসা অবসাদগ্রস্ত শরীর এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে খানিক বাদেই । আয়মান নেশাতুর চোখে চোরের মতো পিয়াসাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। তার প্রচন্ডভাবে মন চাচ্ছে পিয়াসার পা দুটো দেখা। গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে থাকা পিয়াসার উদাম পায়ের কথা মনে হলো তার। দুষ্ট দুষ্ট মন নিয়ে বিড়াল পায়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
দেখল পিয়াসা গভীর তন্দ্রায় নিমগ্ন হয়ে আছে। আয়মান পিয়াসার পায়ের কাছে গিয়ে অতি সন্তপর্ণে কম্বল সরিয়ে নিল। লাল পেটিকোটটি হাঁটু অবধি তুলে নিল। সুবহানাল্লাহ! এত মোহনীয় হয় নারীর পা*যুগল। আমিতো খুন হয়ে গেলাম।
লেখিকা রেহানা পুতুল এর সাথেই যুক্ত হবেন দারুণ স্বাদের সব গল্প পেতে। আয়মান পিয়াসার ফর্সা ধবধবে পায়ের পাতায় ও আঙ্গুলগুলোতে অজস্র চুমু খেল। মোলায়েল করে চুমু খেতে খেতে হাঁটু অবধি ঠোঁট নিয়ে গেল। পিয়াসা নড়েচড়ে উঠলে আয়মান তার পা ঢেকে দিয়ে সরে গেল।
আয়মানের পিপাসায় গলা শুকিয়ে চৈত্রের মাঠ হয়ে গেল। টেবিল থাকা মগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে নিল। গলা উঁচিয়ে ঢকঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নিল। বারান্দায় চলে গেল। পরপর দুটো সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে নিজেকে নেশা থেকে মুক্ত করলো। বেশ সময় পার হয়ে গেলে পিয়াসার পাশে এসে ঘুমিয়ে পড়ল।
আলো ফোটা ভোরেই পিয়াসা জেগে গেল। দেখল আয়মান ঘুমিয়ে আছে। মিষ্টি হাসি দিয়ে নেমে গেল লাজুক লাজুক মুখে। ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে একটি জামদানি শাড়ি পরে নিল। কারণ তার শাশুড়ী আগেই বলে দিয়েছে বিয়ের পর কিছুদিন যেন বাসায় শাড়িই পরে। নতুন বউ শাড়ি পরা দেখতেই আকর্ষণীয় লাগে। তাছাড়া বাঙালী মেয়েদের শাড়িতেই বেশ মানায়।
পিয়াসা রুম থেকে বের হয়ে গেল। শাশুড়ীকে পা ধরে সালাম দিল। বিয়ে উপলক্ষে বাসায় নিকটাত্মীয় মুরুব্বি যারা ছিল,
তাদের ও পা ধরে সালাম দিল।
আলিশা সামনে এসেই,
গুড় মনিং হানি। শুভ বিবাহ আনন্দময় হউক।
মনিং কাল ননদী।
কি বললা আমি কাল ননদী? দেখলে আম্মু তোমার পেয়ারের পুত্রবধূ দিন না গড়াতেই আমাকে বিষ নজরে দেখছে।
ভালো হইছে দেখছে। ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ আয় নাস্তা খেতে।
তুমিও পটে গেলে বউর তালে? এই বলে আলিশা পিয়াসাকে এক পাশে টেনে নিয়ে,
এই ভাবি গোসল করেছ? চুল দেখি?
খুব পেকে গিয়েছো । কোন দুঃখে এই সাতসকালে গোসল করব আমি। দুষ্ট হাসি দিয়ে আলিশার চিবুক নেড়ে বলল পিয়াসা।
আমার যে কবে বিয়ে হবে?
সময় হলেই হবে। আগে পড়াশোনা। ক্যারিয়ার। দেন বিয়েসাদি।
শ্বাশুড়ির আদেশে পিয়াসা নাস্তার ট্রে নিয়ে নিজেদের রুমে গেল। আয়মান ঘুমিয়ে আছে। পিয়াসা হাতে করে পানি এনে আয়মানের মুখে ছিটিয়ে দিল। আয়মান গড়িমসি করে জেগে গেল। পিয়াসা চোখের পাতা তুলে ইশারায় নাস্তার ট্রে দেখাল।
ওয়াও! মাইন্ডব্লোয়িং পিয়াসা। শাড়িতে তোমাকে ইন্ডিয়ান নায়িকার মতো লাগছে। পেট দেখা যাচ্ছে কেন। এত পাতলা শাড়ি বেশী সময় পরবেনা। পরে পর পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি যাবে আমার বউয়ের দিকে।
পিয়াসা নাক কুঁচকে। ইসসরে! পেয়েছে এক সম্পত্তি।
হুম ঠিক তাই। আয়মান উঠে ফ্রেস হয়ে পিয়াসা সহ নাস্তা খেয়ে নিল।
পিয়াসাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিল বেশ খানিকটা নাস্তা। নিজেও খেতে চাইলো পিয়াসার হাতে। পিয়াসা খেতে চাইলনা। খাওয়ালোওনা আয়মানকে। বলল আমার কারো হাতে খেতে ভালো লাগেনা। আবার খাওয়াতেও ভালো লাগেনা।
আয়মান মাইন্ড করলো শুনে। চুপচাপ উঠে গেল নাস্তা খেয়ে।
শুভ পড়াতে এলো বিকেলে। আলিশা অংক করছে আর মনে মনে অনুযোগের সুরে বলছে,
রোবট নাকি। রসকষহীন একটা মানব। একটু দুষ্টমি করলে কি হয়।
অংকের খাতার শেষে এক পৃষ্ঠায় আলিশা ,
‘ স্যার আপনাকে খুব লাইক করিই।’
শুভ রিপ্লায় দিলো,
‘ তা আমি ইতঃপূর্বেই জেনেছি। ‘
‘ তাহলে আপনিও কি আমাকে…? ‘
খাতা ঠেলে দিল শুভ’র সামনে।
‘ হুম আমিও লাইক করি একজনকে। ‘
‘ তার নাম স্যার? ‘
‘ কলাবতী তার নাম ‘ অংক কাটাছেঁড়া করতে করতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল শুভ।
‘ সেই মেয়ে কি সারাদিন কলা খায়? কলাবতী নাম যে?,
জানিনা। মনে হয় খায়। অংক করো বলছি আলিশা।
‘ না করবোনা। সেই কলাবতী কি আমিই স্যার? ‘
‘ তুমি কি সারাদিন কলা খাও? ‘ চোখের কোণে হাসির আবরণ ছড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো শুভ।
‘ নাতো। তেমন খাইনা। ‘
‘তাহলে তুমি কিভাবে আমার কলাবতী হও? ‘
আলিশার মন বেজায় ভার হয়ে গেলো। এভাবে খাতায় ও কলমের ভাষায় ব্যাক্য বিনিময়ের মাধ্যমেই আলিশা ও শুভ’র প্রণয়ের সূচনা পর্ব শুরু হওয়ার দিগন্তে এগিয়ে যেতে লাগল।
বিয়ের দ্বিতীয় রাতে আয়মান মন খারাপ করে শুয়ে আছে। তার আগে পিয়াসার মোবাইল হাতে নিল ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে। নেড়েচেড়ে দেখল বেশ কিছুক্ষণ ।
এর আগে পিয়াসার মোবাইল চেক করার মতো সিচুয়েশন হয়নি। তাই বহুবার তার ইচ্ছে হলেও বাদ দিতে হয়েছে। পিয়াসার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ঢুকলো। দেখলো একাধিক ছেলের প্রেমের প্রপোজাল পিয়াসাকে। গান, কবিতাও পেল কিছু।
পিয়াসা রুমে ঢুকেই বুঝলো কোন এক অজ্ঞাত কারণে পরিস্থিতি বেগতিক। অমাবস্যা নেমেছে কারো মৌনাকাশে।
কন্ঠে মায়া ঢেলে জানতে চাইলো,
কোন কারণে স্যারের মুড অফ মনে হচ্ছে। কি আমি রুমে আসতে দেরী করাতে?
আয়মান তেজী কণ্ঠে বলল,
যার জন্য চারদিকে হাজারো প্রেমিকের ঢল । আর তারা প্রেমের ঢালি সাজিয়ে অপেক্ষা করে কারো জন্য। তার আমাকে না হলেও চলবে!
শুনে পিয়াসা স্তব্দ হয়ে গেল। দুচোখ ভিজে গেল প্রবল অশ্রুবর্ষণে।
চলবে ঃ