প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব ১৫+১৬

0
901

#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ১৫+১৬
#লেখনীতে_রেহানা_পুতুল

শুনে আয়মানের মাথার মগজ টগবগ করে ফুটতে শুরু করলো। পিয়াসাকে ছেড়ে দিয়ে খানিক দূরে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করলো, তাহলে আমার সাথে বিয়েতে রাজী হলে কেন ছলনাময়ী?

তো কার সাথে রাজি হবো? অনুযোগের ন্যায় বলল পিয়াসা।

যাকে ডুবে ডুবে ভালোবাস তার সাথেই রাজী হবে।

তার সাথেইতো রাজী হয়েছি। মিচকা বান্দর। এখনো মনে রেখেছে এটা। গোপনে ভেংচি কেটে বলল পিয়াসা।

আয়মান স্তব্দ হয়ে গেল। নিজের কানকে বিশ্বাস করতেই নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছে। চেয়ার টেনে বসে পড়ল।

কি বললে তুমি? আবার বল। বিষ্পোরিত দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো পিয়াসাকে।

পারবোনা বলতে।

পারবে কিভাবে তুমি? না পারাটাই স্বাভাবিক। মিথ্যে কথা বারবার বলা যায়না। রাগত স্বরে বলল আয়মান।

পিয়াসা গলায় হালকা তেজ ঢেলে বলল, আমি মিথ্যে বলছি?

নয়তো কি? কই কখনো তোমার আচরণে ভালোবাসার কিছুইতো প্রকাশ পায়নি পিয়াসা? বরং আমার মনে হয়েছে তুমি আমার প্রতি মাঝে মাঝে বিরক্ত হও।

আমি প্রকাশ হতে দেইনি তাই বুঝেন নি। মাথা নামিয়ে নিচু গলায় অধিকারসুলভ ভঙ্গিতে বলল পিয়াসা।

আয়মানের রাগ স্তিমিত হয়ে গেল পিয়াসার উপরে। আকুল করা ব্যাকুল কন্ঠে জানতে চাইলো। কেন দাওনি বুঝতে আমাকে। কি কারণে পিয়াসা?

কারণ আপনিও আমাকে শুরু থেকেই অপছন্দ করেন। এবং শুরু থেকেই একাধিকবার এমন কিছুই ঘটে যাচ্ছে৷ তাই প্রকাশ করার সাহস পাইনি।

আচ্ছা আমার বিষয় পরে বলছি। আগে তোমার চ্যাপ্টার শেষ হোক। তুমি বলছ তুমি আমাকে ভালোবাস। এইতো?

হুম । ছোট্ট করে জবাব দিল পিয়াসা।

আমি বিশ্বাস করিনা যে?

কি করতে হবে আমার বিশ্বাস করাতে হলে? মেঘমুখে জিজ্ঞেস করলো পিয়াসা?

যা বলব তা করতে হবে কিন্তু। বিশ্বাসটা পাকাপোক্ত হওয়া চাই। দুদিন বাদেই আমরা দাম্পত্য সঙ্গী হতে যাচ্ছি। মনে রেখ।

পিয়াসা চুপ হয়ে মনে মনে ফোঁড়ন কাটছে। ডুবে ডুবে কি শুধু আমিই ভালোবেসেছি প্রেমিক? তুমি ভালোবাসনি?

কি ভাবছ? শুভকে বিয়ে করবে? শুনো,
আমরা দুজনের যেকেউ চাইলেই আমাদের আসন্ন সম্পর্কটা চিরতরে গুড়িয়ে দিতে পারি। আবার সারাজীবনের জন্য এক ও করে ফেলতে পারি।

পিয়াসা ক্ষেপে গেল। আয়মানের দিকে চেয়ে,
শুভ ভাইয়ের সাথে আমার সব রিপ্লাই আপনি শুনছেন। সো তা নিয়ে দ্বিতীয় বাক্য বলা অসংগত, অযৌক্তিক,অশোভনীয়।

আয়মান ফুরফুরে মেজাজে বলল, ওকে বাদ দিলাম। এবার আমার প্রতি গভীর প্রণয়ের প্রমাণটা হয়ে যাক।

পিয়াসা কম্পিত কণ্ঠে, আমি বলছি গভীর প্রণয়?

তাহলে? তুমি না আমাকে চাও? বলে আয়মান চোখ বড় বড় করে তাকালো পিয়াসার দিকে।

পিয়াসা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেই একি স্থানে। বলল, চাই অল্প অল্প করে।

তাহলে অল্প করেই দাও কিছু।

কি দিব আমি? আমার অন্তরে কাউকে দেওয়ার মতো অবশিষ্ট আর কিছুই নেই। যা দেওয়ার আগেই দিয়ে দিয়েছি।

নিজে নিজে বললে হবে নাকি নেই? আমার চোখ নেই? আমি দেখিনা? অঢেল ধন সম্পদের মালিক তুমি। যা হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়, আমি এমন কিছু চাচ্ছিনা কিন্তু। আমি চাই যা ধরা যায়। ছোঁয়া যায়। এমন কিছু।

দূর আমি যাই। আপনি শুধু পচাঁ কথা বলছেন । পিয়াসা দরজা খুলতে যাচ্ছে। আয়মান বসা থেকেই দাঁড়িয়ে গেল নিমিষেই। পিয়াসাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিল কোলে। খাটে বিছানার উপর নিয়ে শুইয়ে দিল। পিয়াসা থ বনে গেল। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। আয়মান পিয়াসার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, তোমাকে এমন করেই আরেকবার কোলে নিয়েছি। মনে আছে?

জানিনা বলে পিয়াসা উসখুস করছে। কিন্তু আয়মানের বলিষ্ঠ বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারছেনা। আয়মান বন্ধনকে আরো ভিড়িয়ে নিল নিজের শরীদের দিকে৷ কাতর কন্ঠে পিয়াসার চোখে তাকিয়ে,
পিয়াসা মরুর বুকে ঝড় তুলবে একটু?

বিয়ের পরে ঝড় নয় শুধু টনের্ডোও সৃষ্টি করব। এখন যাই। প্লিজ ছাড়ুন বলছি।

ছাড়বো। একটু নমুনা দেখতে চাই। এমন করছ কেন। এমনিতেই অনেক ঠকিয়েছ আমাকে। ঠকবাজ প্রণয়িনী আমার। আচ্ছা এটা করো অন্তত । আমার শুকনো ঠোঁট দুটোকে একটু ভিজিয়ে দাওনা। বিয়ের আগে একটু উম্মাতাল প্রণয় হোক দুজনার। বঞ্চিত করোনা এই অধমকে।

আচ্ছা দিচ্ছি বলে পিয়াসা চট জলদি বিছানা ছেড়ে নেমে গেলো। আয়মানের দুচোখের পাতা বুঁজে দিল নিজ হাতে। তার কানের কাছে মুখ লাগিয়ে বলল,
নেত্র পল্লব মেলা যাবেনা কিন্তু। নইলে ভিজবেও অল্পস্বল্প। আয়মান চোখ বন্ধই রাখল। তার হার্টবিট অনবরত উঠানামা করছে।

পিয়াসা বিড়াল পায়ে এগিয়ে গিয়ে বেসিন থেকে হাত ভিজিয়ে নিল দ্রুত। আয়মানের ঠোঁটে ভেজা হাত বুলিয়ে ভিজিয়ে দিল। বলল চোখ খুলুন। পিয়াসা হাসতে হাসতে দরজা খুলে পালালো। আয়মান পিয়াসাকে না ধরার সুযোগ পেল। না কিছু বলার সুযোগ পেল। ভীষণ ক্রুদ্ধ হলো পিয়াসার উপরে।

পিয়াসা সুখ সুখ মনে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। রাত বাড়লে পিয়াসার পেটের ভিতর ক্ষুধায় ছোঁ ছোঁ শুরু হলো। একদিকে আয়মানকে আজ বলতে পেরেছে, বুকের ভিতর এতদিনের পুষে রাখা অব্যক্ত প্রণয়ের কথাটি।
আরেকদিকে শুভ ভাইয়ের কথাগুলোও বিরক্তি ধরিয়ে দিয়েছে মনে। তাই খেতে ইচ্ছে করেনি।

পিয়াসা ডিম লাইটের মৃদু আলোতে আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রান্নাঘরে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে ফ্রিজ খুলল। প্লেটে ভাত সবজি নিয়ে ওভেনে গরম করে খেয়ে নিল। পানি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলল মনে । আহ পেট শান্তিতো দুনিয়া শান্তি। নিজের রুমে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলনা।

দেখিতো আমার মদনে কি করে বলে পা টিপে টিপে আয়মানের রুমে গেল। চাপানো দরজা একটু ফাঁক করল। আয়মান ঘুমায়নি। জেগেই ছিল। টের পেল পিয়াসা দরজায় এসেছে। আয়মান ঘুমের ভান করে কাত হয়ে ছিলো।

পিয়াসা রুমে ঢুকে আয়মানকে দেখল। আয়মানকে ঘুমন্ত ভেবে মাথার কাছে গেল। ঘাড়ের কাছে গিয়ে ফুঁ দিল। পায়ের নিচে তালুতে সুড়সুড়ি দিতেই আয়মান নড়ে উঠল। ও বাবারে বলে পিয়াসা দৌড় দিল। আয়মান চোখ মেলে আপন মনে হেসে ফেলল।

শুভ পড়াতে এলো আলিশাকে। আলিশা পড়ার ফাঁকে একটু গল্প করার বাহানা খুঁজছে। এটা ওটা বলছে। কিন্তু শুভর মাঝে তা নিয়ে কোন ভাবান্তর হলনা। কারণ শুভ যখন যে কাজ করে। তা পূর্ণ মনোযোগ দিয়েই করে। আলিশা মুখে তেমন কিছুই বলেনা শুভকে। পাছে মা ভাই বুঝে ফেলে সেই আশংকায়।

কলমের ভাষায় আকার ইংগিতে শুভকে বোঝাতে চায় তার ভালোলাগার কথা। আজ অংকের নিচে লিখে দিল,
স্যার আপনার কি রকম গান শুনতে ভালোলাগে? আর কোন কবির কবিতা বেশী পছন্দ করেন?

শুভ রিপ্লায় দিয়ে আলিশার সামনের দিকে খাতাটি ঠেলে দিল৷

” তুমি এমন ফাজলামো করা বন্ধ না করলে আমি তোমাকে পড়ানো বন্ধ করে দিব। ”

আলিশা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো এভাবে,
স্যার আপনার সাথে এভাবে কথা বললে আমি মনে খুব শান্তি পাই। কারো শান্তি হরণ করার অধিকার আপনার নেই।

খাতাটা এগিয়ে দিল শুভ’র সামনে। শুভ পড়ল। আলিশার টুকরো সাধকে ব্যর্থ করে দিল। কোন রিপ্লাই দিলনা। টেবিলে থাকা গ্লাস থেকে অর্ধেক পানি খেয়ে উঠে চলে গেল। আজ নাস্তাও খায়নি শুভ। আলিশা বাকি পানিটুকু নিমিষেই খেয়ে নিল দুচোখ বন্ধ করে।

পরের দিন পিয়াসা আলিশার মন খারাপের কারণ জানতে চাইলে, আলিশা শুভকে পছন্দ করে জানাল। এবং শুভ তাকে প্লেস দিচ্ছেনা তাও বলল।
আচ্ছা আপু কিভাবে ইমপ্রেস করতে হয় তুমি জান?

আমি কি কখনো প্রেম করেছি?কিভাবে জানব? মুচকি হেসে উত্তর দিল পিয়াসা।

তাহলে কোন হেল্প তোমার থেকে পাবনা?

পাবে। আমি শুভ ভাইকে বুঝিয়ে বলব। হয়তো কাজ হতেও পারে।

কখন কিভাবে বুঝিয়ে বলবে?

দেখি। তবে আমার বিয়ের পরে। এই কয়দিন বাসায় কাজ বেশী যে। দেখতে পাচ্ছনা?

আয়মান, তার মা,আলিশা ও পিয়াসা সহ শপিং করতে বের হলো। সবার পছন্দে সব কেনাকাটা সম্পন্ন হলো। আয়মানের মা ও বোন ওদের রেখে আগে চলে গেল বাসায়।

আয়মান পিয়াসার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলল,
পার্সোনাল জিনিসগুলো তুমি গিয়ে কিনে নাও। আমি এখানে অপেক্ষা করছি। পিয়াসার লজ্জায় মরি মরি দশা৷ আপনি কি বলছেন এসব? বাসায় চলেন বলছি।

ন্যাকামি দেখলে বিরক্ত লাগে পিয়াসা। খারাপ কি বললাম। আমি আন্দাজে কি ভাবে কিনব। তাইতো তোমাকে বললাম।

আমার কিছুরই দরকার নেই। মাথা নামিয়ে বলল পিয়াসা।

নো! এটা হবেনা। বিয়ের সময় শরীরের উপরে সব থাকবে নতুন। আর ভিতরে থাকবে পুরোনো ব্যবহৃত জিনিস। মানিনা। সব কিছুই টাটকা নতুন হওয়া চাই আমার।

আচ্ছা বাসায় চলুন। পরে কেনা যাবে।

আরেহ পরে সময় হবেনা। আচ্ছা বুঝেছি তুমি লজ্জা পাচ্ছ। এক কাজ করো মোবাইলে নাম্বার টা লিখে দাও আমি নিয়ে আসছি৷

পিয়াসা সংকোচবোধ করেও দুটো নাম্বার লিখে দিল মোবাইলে। আয়মান পিয়াসাকে দাঁড় করিয়ে গিয়ে কিনে নিয়ে আসল।

তারপর একটি ফাস্টফুড দোকানে ঢুকে তারা লাচ্ছি আর শর্মা খেল। মা বোনের জন্যও কিনে নিল।

রিক্সায় বসে আয়মান পিয়াসাকে বলল,শুভ কে না করে দিব আলিশাকে যেন আর পড়াতে না আসে। তাহলে আর সে তোমাকে দেখতে পাবেনা। দেখলে হয়তো তার আফসোসের মাত্রা বেড়ে যাবে।

শুনে পিয়াসা বলল,
করতে পারেন। তবে আমি এটার প্রয়োজন মনে করিনা। আলিশা এখন অংক আগের চেয়ে ভালো বোঝে। আর উনার সাথে আমার তেমন কথাও হয়নি কখনো। তবে আব্বু যে বলছে,
এটা আমার বিশ্বাস হয়েছে। কারণ আব্বু প্রায়ই তার কথা আমার সাথে বলতো। কিন্তু আব্বু থাকলেও আমার অনভূতিকেই প্রাধান্য দিত।

তুমি শুভকে মন দিলেই পারতে। কেন আমাকে ভালো বাসতে গেলে? দুস্টমির ছলে হেয়ালি করে বলল পিয়াসা৷

একই কথা আমিও বলছি। উত্তর দেন।

আমি কি বলছি তোমাকে ভালোবাসি?

পিয়াসা আয়মানের হাতে চিমটি কেটে জিজ্ঞেস করলো। মানলাম। তাহলে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না এটার প্রমাণ দেন।

বাসায় চল দিব।
প্রমিজ?

প্রমিজ। রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমার কাছে এসো। তখন বলব। ভারী মুখে বলল আয়মান।

রাতে কেন? দিনেই বলতে হবে।

আচ্ছা তাই হবে।

বাসায় গিয়ে বাকি কেনাকাটার জিনিস টেবিলে রাখল আয়মান। মা বোনের জন্য আনা খাবার দিল মরিয়মের হাতে। ছুটা বুয়া মরিয়ম এই সপ্তাহ ধরে প্রায় সারাদিনই এ বাসায় থাকে। বিয়ে উপলক্ষে কাজ বেশী বাসায়। তাই তাকে রাখা হয়েছে। অন্য বাসাগুলোতে সে কাজ সেরেই চলে আসে।

আয়মান নিজের রুমে চলে গেল। পিয়াসা ও তার রুমে চলে গেল। আয়মানের মোবাইল বেজে উঠল। রিসিভ করতেই শুভ যৌক্তিক ভিন্ন কারণ দেখিয়ে জানিয়ে দিল আলিশাকে আর পড়াবেনা।

আয়মান আর কথা বাড়ালোনা। কোন সন্দেহ ও মনে দানা বাঁধলোনা। বরং শুভর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে এই ভেবে, শুভ খুব ভালো ছেলে। পিয়াসার প্রতি অন্যরকম টান অনুভব করলে ভুলেও এই টিউশনি ছাড়তোনা।

আলিশার আবেগের বয়স ৷ ভুলের বয়স। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাবার বয়স। জীবনের প্রথম ভালোলাগা শুভ স্যার। সেই প্রিয়র থেকেও প্রিয় শুভ স্যারকে সে আর কখনোই দেখতে পাবেনা। এটা ভেবেই সে কেঁদে কেঁদে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। সে শুভ ছাড়া আর কারো কাছেই পড়বেনা।

পিয়াসা আয়মানের কাছে গেল এক সন্ধ্যার পরে। এই যে হ্যালো, সেটা শুনতে আসছি?

আয়মান চোখের পাতা উল্টিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল কোনটা?

আমাকে আপনি ভালোবাসেন না এটার প্রমাণ দিবেন বলছেন।

ও হ্যাঁ। ভুলেই তো গেলাম। জানতে হলে কাছে আসতে হবে।

পিয়াসা এক পা আগাতেই আয়মান পিয়াসাকে হ্যাঁচকা টানে বিছানায় ফেলে দিল। পায়ের তালুতে সুড়সুড়ি দিতে দিতে লাগল।

পিয়াসা সুড়সুড়ি নিতেই পারছেনা। হেসেই খুন হয়ে যাচ্ছে। এপাশ ওপাশ করে মোচড় খাচ্ছে অনবরত। এভাবে বুকের উপর থেকে ওড়না খসে পড়ল। সেলোয়ারের উপর থেকে জামা পেটের উপর উঠে গেল। লেখিকা রেহানা পুতুলের সংগেই যুক্ত হবেন। প্লাজো হাঁটুর কাছাকাছি উঠে গেল। চোখ লাল হয়ে কাঁদো কাঁদো অবস্থা পিয়াসার। আয়মান এবার সুড়সুড়ি দেওয়া বন্ধ করল।

বলল, সেদিন রাতে আমার পায়ে কে সুড়সুড়ি দিলে কেন? আর এটা হলো তোমার পাওনা ন্যায্য শাস্তি। আমার ঠোঁট ভুল পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়ার প্রতারণার অভিযোগে। মজা লাগছে?

ইসসস রে। কিসের ভুল পানি? সেটা কলের ফ্রেস পানি ছিল।
আর আমি যে এসেছি আপনি বলতে পারবেন? নাক কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো পিয়াসা।

আয়মায় পিয়াসার নাকের ডগায় নিজের নাক ঘষে বলল, সবই বলতে পারব। আমি কলের পানি চেয়েছি দুষ্ট? তখন চাইলেই আটকাতে পারতাম। কিন্তু আমি ভালোবাসিনা তোমাকে। তাই যেতে দিলাম।

থ্যাংক ইউ স্যার। বুঝতে পেরেছি। গেলাম টাটা বাই বাই বলে পিয়াসা আয়মানের চুল খামচি দিয়ে ধরে টান মারল।

আয়মান পিয়াসার হাত টেনে বলল,কেন যে শুক্রবার আসতেছেনা। সাত দিনকে সাত সহস্র বছর মনে হচ্ছে আমার কাছে। হাহ!

দরজায় ঠকঠক শব্দ হতেই পিয়াসা গেট খুলল। মরিয়ম আপা কিই?

ভাইয়া কই? আলিশা আপু কেমন জানি করতাছে। জলদি আসেন। জলদি।

চলবে

#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ১৬ #লেখনীতে_রেহানা_পুতুল
আয়মান ও পিয়াসা বেহুঁশের মতো দৌড়ে আসল। মরিয়ম ও আসল পিছন দিয়ে। নামাজ শেষে আয়মানের মা ছুটে এলো প্রবল উৎকন্ঠা নিয়ে।

আলিশা জোরে জোরে দম ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার দম আটকে আটকে যাচ্ছে৷ এই শীতেও দরদর করে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তাকে বেশ অস্বাভাবিক লাগছে।

আয়মান পিয়াসাকে আদেশ দিল,
তুমি ওকে নিয়ে নিচে আসো। আমি সিএনজি ঠিক করে গেটে আনছি। লেট করা যাবেনা।

আমিও যাব বলে আয়মানের মা তড়িঘড়ি করে বোরকা পরে নিল। আলিশাকে ধরে আস্তে করে নিচে নামালো। নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেল তৎক্ষনাৎ। ভর্তি করা হলো জরুরী ভাবে। পরিক্ষা নিরিক্ষার পর ডাক্তার রিপোর্ট দেখে জানালো,
দুঃশ্চিন্তার কিছুই নেই। পেশেন্ট দীর্ঘসময় অভুক্ত ছিল মনে হয়। তাই গ্যাস্টিকের পেইন ছিল এটা। আর অতিরিক্ত টেনশনের জন্য প্রেসার হাই হয়ে গিয়েছে। মেডিসিন দিয়ে দিচ্ছি। ঠিক হয়ে যাবে। ঘাবড়ানোর কিছুই নেই।
পরেরদিন বিকেলে আলিশাকে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে এলো ।

আয়মানের মা মেয়েকে খুব করে বকলেন। আয়মান ও শাসালো ধমক দিয়ে। বলল,তোর আবার কিসের টেনশন আমি বুঝিনা? খাবি দাবি ফূর্তি করবি। পড়াশোনা করবি এইতো।

ওরা চলে গেলে আলিশা পিয়াসার হাত ধরে মিনতি স্বরে বলল,
আপু, শুভ স্যারকে দেখতে পেলেই আমি বেশী ভালো থাকব। ভাইয়াকে বল আমি অন্য কারো কাছে অংক ভালো বুঝবোনা।

আচ্ছা বি কুল আলিশা। এনি হাউ আমি এটা করবই। ওয়েট, বলে পিয়াসা অন্য বারান্দায় চলে গেল। তার ফোনের রিসিভ নাম্বার থেকে শুভ’র নাম্বার বের করল।

ফোন দিতেই রিসিভ হলো ওপাশে। পিয়াসা সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করল শুভ’র সাথে।
বলল, আমার কিছু জরুরি কথা ছিল শুভ ভাই।

ফোনের বিপরীত পাশে শুভ উচ্ছল হাসি দিল। ভাবল পিয়াসা নিজেই তার সাথে বিয়েতে রাজি।

পিয়াসা, নিজের বিয়ে ঠিক হলো সে বিষয়ে বিস্তারিত জানালো শুভকে । আলিশার বিষয়েও সব খোলাসা করে জানালো। এবং পরে অনুরোধ করে বলল, প্লিইইজ শুভ ভাই আলিশার প্রতি একটু মনোযোগী হউন। ঠকবেন না বরং জিতেই যাবেন । আমার উপর ভরসা রাখুন।

এরপর পিয়াসা আয়মানকে নিজের মতো করে বুঝিয়ে রাজী করাল শুভকে আবার রাখার জন্য। কিন্তু নিজে যে আলিশার জন্য আগেই কথা বলে নিল। তা আয়মানের কাছে গোপন রাখল আলিশার কথা ভেবেই। অনুরোধ করলো, স্যার আপনি শুভ ভাইকে ফোন দিয়ে আসতে বলুন।

আয়মান বলল, যেখানে সে না করে দিল। আমিও মেনে নিলাম। এখন আবার পড়াতে বললে কেমন দেখায়।

কিসের কেমন দেখাবে? বলবেন আলিশা তোমার কাছেই অংক ভালো বোঝে। শুভ ভাই আপনার কাছে বলেই পড়া ছেড়েছে। কারণ তাকে আপনিই ঠিক করেছেন। তাই আপনি না বললেতো আর সে আসবেনা।

আচ্ছা বলছি। পিয়াসা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই, পিয়াসা বলে ডাক দিল আয়মান।

কেমন লাগছে তোমার ?

বুঝিনি। কি কেমন লাগছে স্যার?

এই যে দুদিন পরে বধু সাজবে। সেই অনুভূতি জানতে চাচ্ছি।

এটা জানা কি খুব জরুরী?

হ্যাঁ জরুরী। জীবনের এমন
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো মানুষকে আনন্দ দেয়। পরিপূর্ণতা দান করে । কন্ঠে শীতলতা এনে বলল আয়মান।

হুম বুঝলাম।

তাহলে বল প্লিজ।

অনুভূতি মিশ্র এলোমেলো। এই বলেই পুলকিত হাসি ছড়িয়ে পিয়াসা চলে গেল।

আয়মান মনে মনে বলছে,

” তুমি ছিলে মেঘে ঢাকা চাঁদ
এ বুকে ছিল বড় সাধ।
একবার তোমাকে দেখার
একবার তোমাকে পাওয়ার। ”

আয়মান শুভকে ফোন দিয়ে বলার পর সে আলিশাকে পড়াতে আসল বিকেলে। আজ আলিশা একদম চুপ। জমে আছে বরফের মতো। পড়ার প্রসঙ্গ বাদে অতিরিক্ত কোন কথাই বলছেনা শুভ স্যারের সাথে। সে বুঝতে চায় শুভ স্যার তার প্রতি কতটা আন্তরিক। আবার লজ্জাও লাগছে শুভ স্যারের চোখাচোখি হতে। লেখিকা রেহানা পুতুল এর সাথে যুক্ত হউন দারুণ স্বাদের গল্প পেতে হলে।

শুভ অবাক হলো আলিশার নিরবতা দেখে। ভাবল যে মেয়ে আমাকে গোপনে ভালোবাসে। আমার অনুপস্থিতিতে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে গেল। সেই মেয়ে আমাকে সামনে পেয়ে এত শান্ত দিঘির জল হয়ে আছে কিভাবে। সত্যিই সেলুকাস কি বিচিত্র!

শুভ আলিশার খাতায় অংকের নিচে শুধু লিখল,
কেমন আছ তুমি এখন ?

এর বেশীকিছু লিখা তার হাত দিয়ে বের হলনা। শুভ মনে করে মার্জিত শালীন আচরণের মাঝে অন্যরকম সৌন্দর্য আছে। যেমনি আছে লজ্জার ও সুমিষ্ট সৌন্দর্য।

আলিশা উৎফুল্ল হয়ে গেল মনে মনে। এ বাক্যটির অপেক্ষায় ছিল এতক্ষণ। একরাশ ভালোলাগা তার মনে দোল দিয়ে গেল। ভালোবাসা বুঝি এমনি। সামান্য সাধারণ একটি বাক্যও ঝিমিয়ে পড়া অন্তরকে উজ্জীবিত করে তুলতে পারে। অসাধারণ সুখ দিতে পারে।প্রশান্তি এনে দিতে পারে দুর্নিবার।

রিপ্লায় দিল। আলহামদুলিল্লাহ স্যার। এখন বেশী ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

হুম আমিও ভালো আছি। নিজের প্রতি যত্ন নিবে। নিজের জীবন নিয়ে তামাসা করার অধিকার কাউকেই স্রস্টা দেননি।

আলিশা চেয়েছিল স্যার তাকে জিজ্ঞেস করুক এখন বেশী ভালো থাকার কারণ? তার প্রতিত্তোর সে আগেই তৈরি করে রেখেছে ফুলদানিতে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার ফুলের ন্যায়। মনটা কিঞ্চিৎ ভার হয়ে গেল আলিশার। কিন্তু তা শুভকে টের পেতে দিলনা।

আচ্ছা স্যার মনে থাকবে। অংক করতে করতে সম্মতি জানাল আলিশা।

মাঝখানের যে কয়দিন পড়া গ্যাপ গিয়েছে। তা ফিলাপ করার জন্য শুভ এই সপ্তাহে পরপর তিনদিন এসেছে। তার একান্ত ইচ্ছে ছিল পিয়াসাকে বিয়ে করার। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি বলে মনে ছোট্ট একটা ধাক্কা খেল। তা সামলিয়ে স্বাভাবিক হতে একটু সময় লেগে যাচ্ছে। তাই আলিশার প্রতি আলাদা কোন অনুভূতিই কাজ করছেনা শুভ’র মনে।

পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কলম দেওয়া নেওয়ার সময় আলিশা ও শুভ’র আঙ্গুলের টুকটাক ঠোকাঠুকি হয়। আলিঙ্গনও হয় উষ্ণতার। শুভ প্রশ্রয় দেয়না নিজের অনুভবকে। কিন্তু আলিশা গোপনে অস্থির হয়ে উঠে। শুভ ‘র বলিষ্ঠ আঙ্গুলের তাপ বয়ে যায় তার কোমল হৃদয়ের সমস্ত অলিগলিতে।

আড়চোখে শুভকে দেখে। চোখে মুখে থাকে দুষ্ট মিষ্ট ভাব। তার মাঝে ফিরে এসেছে আগের ন্যায় অস্থিরতা। যেন চঞ্চল চড়ুই।

আজ আলিশা ধৈর্য হারা হয়ে গিয়েছে। মনে মনে বলল, এটা কোন কথা। রোবট নাকি। ইনিয়ে বিনিয়েতো কতভাবেই বোঝালাম ভালোলাগে। ভালোবাসি। প্রণয় অনুভব করি। কিন্তু নিজের থেকে কোন রেসপন্স দিচ্ছেনা কেন। মন চায় হাতুড়ি দিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দিই। অংকের করা শেষ হলে নিচে দিয়ে আলিশা লিখল,

স্যার আপনার প্রিয় দুইটি যেকোন বাংলা গানের কলি লিখেনতো।

শুভ মুখে বলল , এমন করলে তুমি অংকে খারাপ করবে। স্টপ ইট আলিশা।

আলিশা গোমড়া মুখে গাল ফুলিয়ে উত্তর দিল, ভুল স্যার ভুল। এসব দুষ্টমি করতে পারলেই আমার অংকের রেজাল্ট ও ভালো হবে। আমিও ভালো থাকব খুব।
মন ভালো না থাকলে কোন কিছুতেই মন বসানো যায়না। যে যেভাবে ভালো থাকতে চায়, তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া মানুষ হিসেবে আপনার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

শুভ কি আর করবে। সায়সারা হয়ে খাতা টেনে নিজের সামনে আনল। লিখল,
১/ ” অলির ও কথা শুনে বকুল হাসে… কই তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসোনাতো।”

২/” ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো..তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো– তোমার
চরণও মঞ্জীরে..।
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি– তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণে।
……
আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো– তোমার অঙ্গসৌরভে।”

খাতাটি আলিশার দিলে ঠেলে দিয়েই শুভ উঠে চলে গেল। আলিশা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলনা।

মাঝ রাতে শুভ’র ফোনে মেসেজ এলো।
শুভ মেসেজ পড়ল,
“স্যার অজস্র ধন্যবাদ। এত চমৎকার গান শেয়ার করার জন্য। আমার ও ভীষণ প্রিয় এ দুটো গান। পনেরোবার করে ত্রিশবার শুনা হয়ে গিয়েছে স্যার। তবুও এ ভালোলাগা ফুরাবার নয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো কি স্যার জানেন। আমার দুচোখে গড়িয়ে বিরতিহীনভাবে অশ্রুরা গড়িয়ে পড়ছে।
আমার কল্পলোকে কেবলই মনে হচ্ছে কোন এক নির্জনতার রাত্রিতে কুঞ্জ ছায়ায় বসে আপনিই আমাকে এই গান দুটো গেয়ে শোনাচ্ছেন। আরও অনেক কিছুই মনে হচ্ছে স্যার। তবে বলা যাবেনা। বাই। আমাদের দেখা হবে। আপনার অনুরাগী আলিশা। ”

নির্জন নিশুতি রাত। ধরনীর বুকে জেগে আছে কত জোড়া জোড়া নিদ্রাবিহীন আঁখি। কত রঙিন স্বপ্নে বিভোর সেই আঁখিগুলো। তন্দ্রাঘোরে ডুবেও তারা সুখবোধ করে সেই স্বপ্নের মায়াজালে আটকে গিয়ে।

শুভ নামের একটি যুবকের মুঠোফোনে বার্তা হয়ে এলো আলিশা নামের এক অষ্টাদশী তরুণীর অব্যক্ত প্রণয়গাঁথা। যুবক মন খানিক পুলকিত ও রোমাঞ্চিত অনুভব করা অবাঞ্চনীয় নয়। বরং এটাই যুক্তিসংগত। শুভ’র মনজমিনে উল্কার মতো খসে পড়ল আলিশা নামের মেয়েটি। এই প্রথম অসীম ভালোলাগা কাজ করলো তার প্রতি। এই প্রথম তাকে নিয়ে অতল ভাবনায় ডুব দিলো শুভ। ঠিক করলো তবে বুঝতে দেওয়া যাবেনা। প্রশ্রয় দেয়াও যাবেনা আলিশাকে। নয়তো পরিক্ষা খারাপ হতে পারে।

শুভ পড়াতে এলে আয়মানের মা তার সামনে এলো দেখা করতে । আলিশার পড়াশোনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বলল,
আন্টি ও মনে হয় মাঝে মাঝে অমনোযোগী হয়ে যায়।

তুমি একটু বাকি বিষয়গুলোর ব্যাপারে ওর থেকে খোঁজ খবর নিও বাবা। তার পর আয়মানের বিয়ের কার্ড দিয়ে দাওয়াত দিল। বলল গায়ে হলুদেও এসো । তোমার এলাকার মেয়ের বিয়ে কিন্তু।

আন্টি অবশ্যই আসব। একদম মিস হবেনা।

শুভ যে পিয়াসাকে বিয়ে করতে উম্মুখ ছিল। এটা আলিশা ও তার মা জানেনা। কিছু কিছু বিষয় সবার জানাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং জেনে গেলে পরবর্তী জীবনে তা হিতে বিপরীত কিছু ঘটার সম্ভাবনা প্রবল থাকে।

আয়মানের মা চলে গেলে আলিশা আহ্লাদী স্বরে জিজ্ঞেস করল,
আমি কোন বিষয়ে অমনোযোগী? আপনি যে আম্মুর কাছে নালিশ দিলেন আমার নামে?

তুমি একটা বিষয় ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন বিষয়ে মনোযোগী একবার বলতো? সিরিয়াস মুডে জিজ্ঞেস করলো শুভ।

আমি কোন বিষয়ে মনোযোগী?

তা তুমিই আমার চেয়ে ভালো জানো।
নাহ! যেহেতু আপনি বলছেন। তার মানে আপনি ও জানেন আমার এই বিষয়টা। বলেন?

টপিক চেঞ্জ আলিশা অংক করো বলছি।

নাহ করবোনা এটার উত্তর না দিলে । আগে খাতায় লিখে দেন। দেন অংক করছি। অধিকারসুলভ ভঙ্গিতে বলল আলিশা।

এই একরোখা মেয়েকে নিয়ে আর পারা যায়না। শুভ খাতা টেনে লিখল,
তুমি প্রেমের বিষয়ে খুব মনোযোগী।

আলিশা গোপনে কেঁপে উঠলো। লিখল,
কিভাবে মনে হলো স্যার ?

কেন রাতে কার মোবাইলে প্রেমের প্যারাগ্রাফ দিয়েছ জাননা?

আলিশা ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল। স্যার সরাসরি এভাবে বলতে পারলো। হঠাৎ করে বাসায় বিদ্যুৎ চলে গেল অন্ধকার হয়ে গেল। আলিশা উঠে যাচ্ছে চার্জের লাইট আনতে। চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে লাগলে শুভ আলিশার কোমরে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে ফেলে। আলিশা হাত ছাড়িয়ে সরে যায়। শুভও অস্বস্তিবোধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যায়।

আজ পিয়াসার গায়ে হলুদ। বাসা জুড়ে সাজ সাজ রব। নিকটস্থ আত্মীয়দের উপস্থিতি পুরো বাসাকে মুখরিত করে তুলেছে। ডাইনিং টেবিল সরিয়ে গায়ে হলুদের স্টেজ করা হয়েছে। আয়োজন চলছে ঘরোয়াভাবে৷

আলিশা ঠিক করেছে আজ শুভ স্যারকে সরাসরি বলবে
‘ ভালবাসি স্যার ‘ আপনার জন্য সাজিয়েছি প্রণয়ের জলসাঘর। আপনার মতো কারো জন্য অপেক্ষার সীমানায় দাঁড়িয়ে প্রতিক্ষার প্রহর গুনব অনন্তকাল। যে কালের কোন শেষ নেই। কিন্তু সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। শুভ স্যার কেন এখনো আসছেনা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here