পারলে ঠেকাও পর্ব ৯

0
1013

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মধুজা আয়নার সামনে ঠোটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। একটু আগে অক্ষর কি করলো সেটাই ভাবছে মধুজা। তার মনটা কিরকম ছটফট করছে। মধুজা জোরে জোরে শ্বাস নেয়। নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বলে,
‘এই পাগলা ডাক্তারকে জ*ব্দ করা অসম্ভব। আমাকেই পাগল বানিয়ে দেবে একদম।’

অক্ষর হসপিটালে চলে গেছে। বর্ণ গেস্ট রুমে আছে। মিলন হাসানও অফিসের কাজে চলে গেছেন। একা বাড়িতে থাকতে মধুজার ভীষণ বোরিং লাগছে। কিছুক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটি করে বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে। আচমকা ফেসবুকে আরহাকে একটিভ দেখে তাকে নক করে মধুজা। কিছু কথাবার্তা বলে একপর্যায়ে বলে,
‘বাড়িতে কেউ নেই। আমার ভীষণ বোরিং লাগছে। তুই একটু আসতে পারবি?’

আরহা বলে দেয়,’
‘আমার খুব ঘুম পেয়েছে। আমি এখন যেতে পারবো না।’

মধুজা একটা বুদ্ধি কাজে লাগায়। সে আরহাকে ম্যাসেজে লিখে,
‘বর্ণ আমার হ্যান্ডসাম দেবর আমাদের সাথে এসেছে। এখন বাড়িতেই আছে সে। আমি তো ভাবলাম তুই বাড়িতে এসে ওকে পটানোর ট্রাই করতে পারিস। যাইহোক তুই যদি আসতে না চাস তাহলে কোন অসুবিধা নেই। তুই শান্তিতে ঘুমা।’

ম্যাসেজটা দেখামাত্রই আরহা লাফিয়ে উঠে। সাথে সাথে ম্যাসেজ করে,
‘আগে বলবি তো। আমি এক্ষুনি আসছি।’

ম্যাসেজটা দেখেই মধুজা হেসে লুটোপুটি খায়। বিড়বিড় করে বলে,
‘আমি ডাকলাম তখন আসল না আর বর্ণর কথা শোনামাত্রই দৌড়ে আসছে। আচ্ছা আমি ওকে বর্ণর কথা বলে ভুল কিছু করলাম না তো? এমনিতেই বর্ণর উপর দিয়ে যা ঝড় গেলো ওর মন মানসিকতা নিশ্চয়ই ভালো নেই। এখন আরহা এসে যদি ওকে বিরক্ত করে তাহলে রেগে যেতে পারে।’

মধুজা এসব ভাবছিল তখনই আরহা এসে কলিং বেল বাজায়। আরহাদের বাড়ি থেকে মধুজাদের বাড়ি বেশি দূরে নয়। হেটে আসতে পাচ মিনিট লাগে। মধুজা কলিং বেলের শব্দ শুনে নিচে নামে। দরজা খুলতেই আরহা মধুজাকে টাইট হাগ দেয়।
‘ইয়ার বিয়ের পর তুই মোটা হয়ে গেলি নাকি?’

‘মা’র খাবি কিন্তু।’

‘আচ্ছা বাদ দে,তোর দেবর কোথায়?’

‘ওর খবর নিয়ে তোর কি?’

‘আরে ইয়ার ওর জন্যই তো সাত সমুদ্র তেরো নদী পেড়িয়ে এখানে এলাম।’

‘বেশি নাটক করিস না। ও গেস্টরুমে আসে। তুই তো জানিস ওকে এরেস্ট করা হয়েছিল। বর্ণর মন মেজাজ ভালো নেই। ওকে বিরক্ত করিস না।’

‘তাহলে কেন এলাম আমি এখানে?’

‘চল আমরা বসে গল্প করি।’

‘আচ্ছা চল। কি আর করার।’

১৭.
আরহা বসে বসে মধুজার সাথে গল্প করছিল। এমন সময় বর্ণ সেখানে চলে আসে। বর্ণকে দেখেই আরহা খুশি হয়ে যায়। বর্ণর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে। বর্ণ ব্যাপারটাকে গুরুত্ব না দিয়ে মধুজাকে বলে,
‘ভাবি আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।’

‘যাবে? কিন্তু তুমি তো এখানকার কিছু চেনো না।’

আরহা লাফিয়ে উঠে বলে,
‘কোন ব্যাপার না আমি ওনাকে চারপাশটা ঘুরিয়ে আনব।’

‘তার কোন দরকার নেই। আমি ছোট বাচ্চা নই। একাই যেতে পারব।’

‘আপনি এরকম কেন করছেন মিস্টার বর্ণ? চলুন আমার সাথে। আমি আপনাকে আশেপাশের অনেক সুন্দর সুন্দর যায়গা ঘুরিয়ে দেখাব।’

আরহা একপ্রকার টেনে নিয়ে যায় বর্ণকে। মধুজা আবার একা হয়ে যায়। কপাল চা*পড়াতে চা*পড়াতে বলে,
‘আমি আবার সেই একাই হয়ে গেলাম। এই বান্ধবীরা এমনই। সুন্দর ছেলে দেখলেই তার পিছনে ছুটে নিজের বেস্টুর কথাই ভুলে যায়।’

আরহা বর্ণকে নিয়ে এদিক থেকে সেদিক ঘুরতে থাকে। বর্ণ বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারছিল না। কারণ আরহা তাকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছিল না। নিজের মতো বকবক করে যাচ্ছিল।

কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে রাস্তায় নেমে যায় আরহা। তার সেদিকে কোন খেয়াল নেই৷ সে বর্ণকে বিভিন্ন কথা বলেই যাচ্ছিল। আচমকা একটি গাড়ি তার দিকেই ছুটে আসছিল। আরহা অন্যমনস্ক ছিল জন্য খেয়াল করে নি। কিন্তু বর্ণর নজর যায় সেদিকে। গাড়িটা আরহাকে ধাক্কা দেওয়ার আগেই বর্ণ আরহাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আরহা বর্ণর একদম বুকের উপর এসে পড়ে। বর্ণর এত কাছে এসে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।

বর্ণ এরমধ্যে আরহাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে বলে,
‘দেখে চলতে পারেন না নাকি? শুধু মুখই চলে আপনার। অন্য কিছু বোধহয় চলে না। চোখ কান খোলা রেখে হাটবেন। আজ আমি ছিলাম জন্য বাচিয়ে নিলাম। প্রতিবার আমি থাকব না।’

আরহা আনমনে বলে দেয়,
‘থাকলে কি খুব অসুবিধা হবে?’

‘মানে?’

‘মানে কিছু না। আপনি বুঝবেন না। এখন চলুন। ঐদিকে একটা বড় সুইমিংপুল আছে।’

‘এখন আর কোথাও যাওয়ার মুড নেই। বাড়িতে ফিরে চলুন। আপনার মতো অসচেতন মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় চলার ঝুকি আর নিতে পারবো না।’

‘আরে আমার কথাটা তো শুনুন।’
বর্ণ কোন কথা না শুনে মধুজাদের বাড়ির দিকে হাটা লাগায়।

১৮.
মধুজা নিজের রুমে চুপচাপ বসে ছিল। আজ কেন জানি অক্ষরের কথা খুব মনে পড়ছে তার। অক্ষর থাকলে মধুজাকে এভাবে বোর হয়ে বসে থাকতে হতো না। কোন না কোনভাবে ঠিকই মধুজার সাথে মজা করে হলেও তাকে ব্যস্ত রাখত।

মধুজা এসবই ভাবছিল তখনই তার অগোচরে কেউ রুমে প্রবেশ করে। মধুজা অন্য চিন্তায় ব্যস্ত থাকায় বুঝতেও পারে না কিছু। অক্ষর রুমে এসে মধুজার পাশে বসে। মধুজা টের পাওয়ার আগেই তার গালে চুমু খায়। আচমকা এই ঘটনায় মধুজা ধড়ফড়িয়ে উঠে। অক্ষরকে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলেও রাগ দেখিয়ে বলে,
‘আপনি চলে এলেন আমাকে বিরক্ত করতে। উফ এত জ্বা’লা আর নেওয়া যাচ্ছেনা।’

অক্ষর নিজের এপ্রোনটা খুলতে খুলতে বলে,
‘তোমাকে নিতে হবে না। আমি তোমাকে নিবো। কোলে,,,’

বলেই উঠে দাড়িয়ে মধুজাকে কোলে তুলে নেয় অক্ষর। মধুজা থতমত খেয়ে বলে,
‘এ কি করছেন? নামান বলছি।’

‘নামাবো তার আগে একটা শর্ত আছে।’

‘কি শর্ত?’

‘আমার গালে খুব চুলকাচ্ছে।’

‘তো আমি কি করব?’

‘চুলকানি কমিয়ে দেও।’

‘কিভাবে’

‘হামি দিয়ে।’

‘ছি কি অশ্লীল!’

‘ছি বলছ কেন? দেখো যদি কোল থেকে নামতে চাও তাহলে হামি দিতেই হবে হানি।’

মধুজা সাহস করে অক্ষরের গালের কাছে মুখ নিয়ে যায়। অক্ষর চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। মধুজা চুমুর বদলে অক্ষরের গালে কামড় বসিয়ে দেয়। অক্ষর দাতে দাত চেপে সহ্য করে। মধুজার কামড়ে অক্ষরের গাল লাল হয়ে যায়। অক্ষর তবুও হেসে বলে,
‘বাহ,,,এটাও তো একপ্রকার আদরই। ঠিক আছে তোমায় নামিয়ে দিচ্ছি।’

মধুজাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় অক্ষর। মধুজা বিজয়ীর হাসি হাসে৷ এতদিনে অক্ষরকে জব্দ করতে পেরে সে খুব খুশি।

অক্ষরও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না। সে মধুজা’র অগোচরে তার ঠোট কামড়ে ধরে। একটু কামড়ে ধরে তারপর ছেড়ে দিয়ে বলে,
‘আমার গালে তুমি ভালোবাসার চিহ্ন দিলে। এখন আমিও তোমার ঠোটে ভালোবাসার চিহ্ন দিলাম। শোধ বোধ।’

মধুজা রক্তিম চোখে তাকায়। এই লোকটাকে কোন ভাবেই জব্দ করতে পারছে না সে। বরঞ্চ নিজেই জব্দ হয়ে যাচ্ছে। মধুজা বিড়বিড় করে বলে,
‘পাগলা ডাক্তারকে জব্দ করার জন্য আমাকে আরো দশবার জন্ম নিতে হবে।’


রাতে ডিনারের পর মধুজা সবাইকে ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত থাকতে বলেছে। কেউ বুঝতে পারছে না মধুজা ঠিক কি বলতে চাইছে। মিলন হাসান, বর্ণ, অক্ষর সবাই বসে আছে। মধুজা আচমকা এসে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মিলন হাসান জানতে চান,
‘কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তুই?’

মধুজা বলে,,,

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here