পারলে ঠেকাও পর্ব ৮

0
1111

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

অক্ষর, মধুজা, বর্ণ সবাই মিলে গাড়িতে উঠে পড়ে। মাহিম নিজের গাড়িতে করে চলে যায়। অক্ষর বর্ণকে অনেক বুঝিয়েও বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পারে না। তাই সিদ্ধান্ত নেয় তাকেও মধুজার বাড়িতে নিয়ে যাবে। অক্ষর একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়ি থামায়।
‘বর্ণ আমি শুনলাম কাল থেকে নাকি তুই কিচ্ছু খাস নি। এত জেদ ভালো না। এখন চল কিছু খেয়ে নিবি।’

বর্ণ বাধ্য ছেলের মতো গাড়ি থেকে নেমে যায়। মধুজা গাড়িতেই বসে থাকে। অক্ষর বিরক্ত হয়ে বলে,
‘তোমাকে কি আমার কোলে করে নামাতে হবে নাকি?’

‘আমি কেন নামব? আপনি তো বললেন আপনার ভাই কিছু খায়নি। ওকে গিয়ে খাইয়ে আনুন।’

‘তুমি এত বেরসিক কেন বলো তো? নাম তো মধুজা কিন্তু তোমার মধ্যে মধুর কোন লক্ষনই নেই। একটুও রস নেই। খালি পারো ঝগড়া করতে। তোমার নাম নিমজা রাখা উচিৎ ছিল হানি।’

‘আচ্ছা চলুন আমি যাচ্ছি। সোজা ভাবে কথা বলতে শিখেন নি? সবসময় খালি বাকা কথা।’

‘সোজাভাবে বলছি, চলো একসাথে হাত ধরে কফি খাই। অনেক ভালো ফিলিংস আসবে।’

বর্ণর সামনেই কথাগুলো বলে অক্ষর। মধুজা বেশ লজ্জা পায়। বর্ণ অবশ্য হাসছিল। অক্ষর বুঝতে পারে মধুজা লজ্জা পেয়েছে।
‘আরে লজ্জা পেওনা। বর্ণ কিছু মাইন্ড করে নি। ও আমার ভাই, আমার মতোই রোম্যান্টিক। ওর যে কতগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে তার কোন হিসাব নেই।’

‘এসব তুই কি বলছিস ভাইয়া? আমার মতো একটা পিওর সিঙ্গেল ছেলের ব্যাপারে এমন কথা বলতে পারলি তুই।’

দুই ভাই মিলে খুনশুটি করতে করতে রেস্টুরেন্টে যায়। মধুজাও তাদের সাথে আসে। অক্ষর বর্ণর জন্য চিকেন তন্দুরি আর নিজের ও মধুজার জন্য দুই কাপ কফি অর্ডার করে।

কফি আসার পর মধুজা দ্রুত খাওয়ার চেষ্টা করে। যার কারণে তার মুখে গরম লাগে। মধুজা বলে,
‘আমার জিহ্বা বোধহয় পুড়েই গেলো।’

অক্ষর ঠাট্টা করে বলে,
‘ঠিক হয়েছে। ঐদিকে দেখো, ঐ কাপল কি সুন্দর একে অপরের হাত ধরে, রোম্যান্টিক গল্প করতে করতে কফি খাচ্ছে। আর তুমি কিরকম নির্দয়ের মতো আমাকে ছাড়াই খেয়ে নিচ্ছ।’

মধুজা অক্ষরের দিকে রাগী চোখে তাকায়। অক্ষর নিজের কাপ থেকে কিছুটা কফি খেয়ে মধুজার দিকে বাড়িয়ে দেয়।
‘এই নাও খাও এখান থেকে। শেয়ার করে খেলে ভালোবাসা বাড়ে।’

বর্ণ নিজের মতো খাচ্ছিল। তবে ভাই আর ভাবির মধ্যে নিজেকে কাবাবমে হাড্ডি মনে হচ্ছিল তার। মধুজা বলে,
‘আমি নিজেরটা খেয়ে নেব।’

অক্ষর কফির কাপ সরিয়ে বলে,
‘তুমি যখন ভালোবাসা বাড়াতে চাইছ না তাহলে ঠিক আছে। পরে আবার আফসোস করিও না।’

‘পাগলা ডাক্তার।’

১৫.
মধুজাদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় অক্ষর। মধুজা গাড়ি থেকে যায়। অক্ষর এবং বর্ণও এক এক করে নামে। মধুজা বাড়িতে ঢোকামাত্রই তার বাবাকে দেখতে পায়। ‘আব্বু, আব্বু’ বলে দৌড়ে যায় মিলন হাসানের কাছে। মিলন হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
‘কেমন আছিস মধু?’

‘আমি আছি আমার মতো। তোমার কথা বলো।’

‘আমিও আছি আমার মতো। তোকে ছাড়া বাড়িটা ফাকা ফাকা লাগে। আগে তুই থাকতে কথা বলার একজন মানুষ ছিল৷ এখন মনে হয় আমি একা।’

মধুজাও বুঝতে পারে তার বাবার মনের কষ্টটা। মধুজা যখন অনেক ছোট ছিল তখন তার মায়ের মৃত্যু হয়। সেইসময় মিলন হাসানকে অনেকেই দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য বলেছিল। কিন্তু মিলন হাসান নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ের কথা ভাবেন নি। তার ভয় ছিল যদি সৎ মা এসে মধুজার উপর অত্যা*চার করে। এই ভয় থেকেই একা নিজের মেয়েকে মানুষ করেছেন। অথচ আজ মধুজার বিয়ের পর তার বাবা সম্পূর্ণ একা হয়ে গেছে। মধুজার মনে হয় শুধুমাত্র তার জন্যই তার বাবা আজ এত একা।

মধুজাকে আপনমনে কোন ভাবনায় বিভোর দেখে মিলন হাসান বলেন,
‘কি ভাবছিস এত?’

‘তেমন কিছু না। ভাবছি তোমার একাকীত্ব দূর করার ব্যবস্থা করব। বাবা হিসেবে তুমি তোমার সব দায়িত্ব পালন করেছ৷ এবার আমিও মেয়ে হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করব।’

অক্ষর ও বর্ণ দাড়িয়ে বাবা-মেয়ের কথা শুনছে। সেদিকে খেয়াল করে মিলন হাসান বলেন,
‘দেখলি তোর সাথে বকবক করতে গিয়ে আমার খেয়ালই নেই যে ওরা দাড়িয়ে আছে। তোমরা কিছু মনে করো না। মধুজা তুই তোমার দেবরকে গেস্টরুমটা দেখিয়ে দে, আর অক্ষরকে নিয়ে নিজের রুমে যা।’

মধুজা তার বাবার কথামতো কাজ করে। মিলন হাসান বাড়ির কাজের লোক মুনিয়াকে বলে,
‘মুনিয়া সব রান্নাবান্না শেষ তো৷ একটু পরেই কিন্তু ওরা ফ্রেশ হয়ে খেতে আসবে।’

‘জ্বি, সব প্রায় তৈরি। শুধু গরুর ভুনা বাকি, আমি করে নিচ্ছি।’

মধুজা অক্ষরকে নিয়ে নিজের রুমে আসে। অক্ষরকে বলে,
‘যান ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।’

অক্ষর মধুজার রুমের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘তোমার রুমটা তো খুব সুন্দর। কিন্তু এটা কি তুমি এত বড় হয়েও টেডি বিয়ার নিয়ে ঘুমাও। হানি তুমি তো দেখি এখনো বাচ্চাই আছ। আর আমি কিনা আমাদের বাচ্চা নেওয়ার প্ল্যান করছি।’

মধুজার মাথা আবার গরম হয়ে যায় অক্ষরের কথা শুনে।
‘আপনি কি ফালতু কথা না বলে থাকতে পারেন না। অসভ্য লোক কোথাকার, পাগলা ডাক্তার।’

অক্ষর হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে যায়। মধুজা বিড়বিড় করে বলে,
‘আজ আপনাকে উচিৎ শিক্ষা দিবো।’

১৬.
ডিনারের উদ্দ্যেশ্যে সবাই টেবিলে এসে বসেছে। মুনিয়া সবার খাবার তৈরি করে পরিবেশনের জন্য তৈরি করছে। মধুজা এসেছে তাকে সাহায্য করতে। মুনিয়া মধুজাকে বলে,
‘আপনাকে হাত লাগাতে হবে না ছোট ম্যাডাম। আমি দিয়ে আসছি সবাইকে।’

‘আহ, তুমি যাও গিয়ে সবাইকে খাবার দাও। আচ্ছা পাগ,,মানে আমার বরের খাবার আমি নিয়ে যাচ্ছি।’

মুনিয়া সবার জন্য খাবার নিয়ে চলে যায়। সবাইকে খাবার দেয়। কিন্তু অক্ষরকে দেয় না। বর্ণর অনেক ক্ষিধে লাগায় সে খেতে শুরু করে। মিলন হাসান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন,
‘অক্ষরের খাবার কোথায়?’

‘ছোট ম্যাডাম বললেন উনি নিয়ে আসবেন।’

‘আসবেন না, এসে গেছি।’
মৃদু এসে খাবারের থালা এনে অক্ষরের সামনে রাখে মধুজা। মিলন হাসান এটা দেখে খুশি হন যে তার মেয়ে,স্বামীর এত খেয়াল রাখছে। তার মনে পড়ে যায় মধুজার মাও এভাবেই তার খেয়াল রাখত।

অক্ষরের কেন জানিনা ব্যাপারটা ঠিক হজম হয়না। মধুজা তার এত খেয়াল করার মতো মেয়ে না। নিশ্চয়ই কোন প্ল্যান করছে। অক্ষর বেশি কিছু না ভেবে খেতে শুরু করে।

গরুর ভুনা দিয়ে ভাত মেখে এক লোকমা মুখে তুলতেই অক্ষর বুঝতে পারে মধুজার এত ভালো মানুষির কারণ। ঝালে অক্ষরের মুখ পু’ড়ে যাচ্ছে। অক্ষর একদমই ঝাল খেতে পারে না। মমতা চৌধুরীর থেকে কথাটা শুনেছে মধুজা। তাই অক্ষরকে জব্দ করার জন্য তার খাবারে ঝাল মিশিয়ে এনেছে।

অক্ষর মধুজার দিকে তাকায়। মধুজা দুষ্টু হাসে। মনে মনে বলে,
‘আমাকে সবসময় অস্বস্তিতে ফেলার ফল এটা। এটা হলো আমার সুইট রিভেঞ্জ না মানে স্পাইসি রিভেঞ্জ।’

অক্ষরকে খাবার নিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মিলন হাসান বলেন,
‘তুমি খাচ্ছ না কেন? খাবার কি ভালো হয়নি?’

অক্ষর হালকা হেসে বলে,
‘খাবার তো ভালোই হয়েছে। কিন্তু আমি আম্মুর থেকে শুনেছি স্বামী-স্ত্রী একসাথে খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে। তাই,,,’

অক্ষরের কথা সম্পূর্ণ না হতেই মধুজা বলে,
‘আমি কেন আপনার থেকে খাবো? মুনিয়া খালা তুমি আমায় খাবার বেড়ে দাও তো।’

মিলন হাসান মধুজার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
‘অক্ষর তো ঠিকই বলেছে। আমি আর তোর আম্মুও অনেক সময় একই প্লেট থেকে খাবার খেতাম। এখানে তো কোন অসুবিধা নাই। তুমি খা ওর প্লেট থেকে। ‘

মধুজা নিজের পাতা জালে নিজেই যেন ফেসে যায়। অক্ষর মৃদু হেসে মধুজাকে তার পাশে বসতে বলে। মিলন হাসান চোখ দিয়ে ইশারা করতেই মধুজা বাধ্য মেয়ের মতো বসে পড়ে। অক্ষর এক লোকমা ভাত মেখে মধুজার দিকে বাড়িয়ে দেয়। মধুজা বাধ্য হয়ে মুখে দেয়। মুখে দিতেই ঝালে তার মুখ লাল হয়ে যায়। অক্ষর নিজেও খাচ্ছিল আর মধুজাকেও খাওয়াচ্ছিল। সবার সামনে মধুজা কিছু করতেই পারছিল না। শুধু ঢকঢক করে পানি খাচ্ছিল।

খাওয়া শেষ করে অক্ষর ও মধুজা উঠে যায়। মধুজা রুমে গিয়ে ঝালে শোসাতে থাকে। অক্ষরেরও ঝাল লেগেছে খুব। সে রুমে এসেই মধুজাকে বলে,
‘তোমার জন্য আমাকে ঝাল খাবার খেতে হলো। এবার আমি এর সুইট রিভেঞ্জ নেব। এটাকে ঝাল কা*টানোর উপায়ও বলতে পারো।’

‘কি উপায়? আমাকেও বলুন আমিও কাজে লাগাতে চাই।’

‘সত্যি তো?’

‘হুম। ঝাল আর সহ্য করতে পারছি না।’

অক্ষর মধুজার অধরে অধর ছুইয়ে দিয়ে তাকে লিপকিস করতে থাকে। মধুজা পুরো স্ট্যাচু হয়ে যায়। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর মধুজাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
‘এটাই হলো ঝাল কমানোর উপায়। আমার এখন আর ঝাল লাগছে না তোমার কি অবস্থা?’

মধুজা ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে থাকে অক্ষরের দিকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here