পারলে ঠেকাও পর্ব ১

0
2352

১.
এম্বুলেন্সে করে বিয়ে করতে এসেছে ডাক্তার অক্ষর চৌধুরী। আর তার হবু বউ মধুজা জেদ ধরে বসে আছে কোনভাবেই বিয়ে করবে না। মধুজার বাবা অনেক চেষ্টা করেও নিজের মেয়েকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারছে না। মধুজার একটাই কথা।
‘আমি ঐ পাগলা ডাক্তারকে বিয়ে করতে পারবো না। এম্বুলেন্সে করে বিয়ে করতে এসেছে। এটা কি ধরনের পাগলামি। আমার বান্ধবীরা ইতিমধ্যেই হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে।’

মিলন হাসান নিজের মেয়েকে কি বোঝাবেন নিজেই তো থতমত খেয়ে বসে আছেন। অনেক শখ করে শহরের সেরা কার্ডিওলজিস্ট অক্ষর চৌধুরীর সাথে নিজের একমাত্র মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন তিনি। আর এখন এসব দেখে তার নিজেরই নিজের সিদ্ধান্তের উপর রাগ হচ্ছে।

অক্ষর কারো কোন বাধা না মেনে মধুজার কক্ষে ঢুকে যায়। মধুজাকে বসে থাকতে দেখে রাগী কন্ঠে বলে,
‘১০ মিনিট। মাত্র ১০ মিনিট সময় দিলাম তোমাকে। হয় চুপচাপ আমায় বিয়ে করে নেও আর নাহলে তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করব।’

মধুজা ভয় পেয়ে গেলেও অক্ষরের সামনে সেটা প্রকাশ করে না। বেশ জোরালোভাবে বলে,
‘মিস্টার হার্টের ডাক্তার আপনি আগে মাথার ডাক্তার দেখান। এম্বুলেন্সে করে বিয়ে করতে এসেছেন পরে দেখা যাবে বিয়ের পর আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে রাখবেন, আমাদের বাসর হবে আইসিইউতে। না বাবা না। আমি কোন রিস্ক নিতে পারব না। আমি আপনাকে বিয়ে করবোনা। পারলে ঠেকাও।’

অক্ষরের খুব বিরক্ত লাগছিল মধুজাকে। নেহাত তার মা-বাবা বিয়েটা ঠিক করেছিল। নাহলে এখনই বিয়ে করার কোন ইচ্ছা তার ছিলনা। তার উপর এই মেয়েটাকে তো কোনদিনও করত না। শুনেছে মেয়েটা নাকি জার্নালিজম নিয়ে পড়ছে। আর সাংবাদিক পেশাটা অক্ষরের বরাবরই অপছন্দের তালিকায় শীর্ষে। কারণ অক্ষরের মতে সাংবাদিকরা রংচঙ মিশিয়ে যেভাবে খবর তৈরি করে ঠিক তেমনি জিবনটাকেও তারা এভাবে কা’টায়।

অক্ষর কোন উপায় না দেখে মধুজার হাত ধরে ফেলল। একেবারে তাকে নিজের কোলে নিয়ে নিল। মধুজা আচমকা এই ঘটনার ফলে হতভম্ব হয়ে যায়। কিছু বলতে যাবে তখন অক্ষর বলে ওঠে,
‘চুপ আর কোন কথা নয়। একেবারে কবুল বলে আমার বউ হবে। তার আগে যদি কোন কথা বলো তাহলে তোমার মুখ একদম সেলাই করে দেবো। তারপর আর এই মুখ দিয়ে টু শব্দ পর্যন্ত করতে পারবা না।’

মধুজা আর কিছু বলার সাহস পায়না। অক্ষর তাকে তুলে নিয়ে যায় বিয়ের আসরে। সব আত্মীয়-স্বজন হা করে দেখতে থাকে অদ্ভুত এই বিয়ে। যেখানে কিনা বর বউকে কোলে করে বিয়ে করতে এনেছে। মিলন হাসানও মধুজার পিছুপিছু এসে গেছেন। নিজের মেয়ের মতো এখন তারও অক্ষরকে বলতে ইচ্ছা করছে ‘পাগলা ডাক্তার’। কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কি এরকম কাজ করে?

অক্ষর মধুজাকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে দেয়। কাজি হা করে তাকিয়ে ছিল। অক্ষর মৃদু হেসে বলে,
‘হা করে থাকবেন না কাজি সাহেব মুখে মাছি ঢুকে যাবে। নিন আর সময় নষ্ট না করে বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। পাত্র-পাত্রী দুজনেই উপস্থিত। এবার নিশ্চয়ই আপনার বিয়ে পড়াতে কোন অসুবিধা নাই?’

কাজি মাথা নাড়ায়। যার অর্থ না। মধুজা চোখ বড় বড় করে তাকায় অক্ষরের দিকে। এই লোকটার কথা শুনে এখন মধুজার নিজেকেই পাগল বলতে ইচ্ছা করছে। মধুজা নিজের মনে মনে বলে,
‘এই পাগলাটার সাথে সারাজীবন কিভাবে থাকব? আল্লাহ বাচাও।’

কাজি বিয়ে পড়ানো শেষ করে মধুজাকে কবুল বলতে বলে। মধুজা কবুল না বলে তার বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল। মিলন হাসান এখন খুবই দোটানায় ভুগছিলেন। একবার তার মনে হচ্ছিল বিয়েটা হোক, তো আরেকবার না হোক। তাই তিনিও কোন সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারছিলেন না।

অক্ষর মধুজার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
‘কবুল বলে দেও। আমার হাতে বেশি সময় নাই। আজ রাত ৮ টায় একটা খুব জরুরি অপারেশন করতে হবে। ৮ টা বাজতে আর ২ ঘন্টা বাকি। যদি সত্যি তুমি না চাও যে তোমার বাসর আইসিউতে হোক তাহলে তাড়াতাড়ি কবুল বলে দেও।’

মধুজার ইচ্ছা করছিল দৌড়ে পালিয়ে যেতে। আর মধুজা ঠিক তাই করার চেষ্টা করে। তখন অক্ষর তার হাত টেনে ধরে। এতক্ষণ বিয়ে বাড়ির সবাই চুপ থাকলেও এবার মুখ খুলতে শুরু করে। মধুজার কয়েকজন বন্ধু ও কাজিন এগিয়ে আসে। তারা সাফ বলে দেয়,
‘মধুজা না চাইলে এই বিয়েটা হবে না। আপনার ব্যবহার দেখে তো ডাক্তার না পাগল মনে হচ্ছে। নাহলে কেউ এম্বুলেন্সে করে বিয়ে করতে আসে?’

২.
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল বিয়েটা বোধহয় হবেই না। তবে পরিস্থিতির মোড় ঘুরতে বেশি সময় লাগে না। অক্ষরের বাবা অনীল চৌধুরী বিয়ে বাড়িতে এসে উপস্থিত হন। এখানে এসে সব কথাই শোনেন তিনি। সব শোনার পর বলেন,
‘আপনারা সবাই ভুল বুঝছেন। আমার ছেলে একটু একগুয়ে জেদি হতে পারে কিন্তু পাগল নয়। ওর কথা কেউ না শুনলে ওর মেজাজ গরম হয়ে যায়। তখন ও এইরকম পাগলামো করে ফেলে।’

মধুজার মামা বলে,
‘আপনি আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করিয়েন না। আমার ভাগ্নি এতটা ফেলনা হয়ে যায়নি যে আপনার পাগল ছেলের সাথে ওর বিয়ে দিব। আমি একটু আগেই এখানে আসলাম। এসে সবই তো শুনলাম। আমি তো এটা ভেবে পাচ্ছি না দুলাভাই কিভাবে চুপ করে সবকিছু দেখলেন। আজকে আপু বেচে থাকলে এই দিন দেখতে হতো না।’

‘বললাম তো আমার ছেলে পাগল নয়।’

‘পাগল না হলে কেউ কি এম্বুলেন্সে করে বিয়ে করতে আসে?’

অনীল চৌধুরী এবার বিস্তারিত ঘটনা বলেন,
‘আসলে আমার ছোট ছেলে খুব অসুস্থ হয়ে গেছিল। আমি কিছু কাজে বাইরে ছিলাম। এমতাবস্থায় আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার ছিল। কোন উপায় না পেয়ে অক্ষরই ওর ভাইকে এম্বুলেন্সে করে হসপিটালে নিয়ে যায়। হসপিটালে পৌছে সব ফরমালিটি পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। এদিকে বিয়ের টাইমও হয়ে যায়। তাই অক্ষর একপ্রকার বাধ্য হয়ে এম্বুলেন্সে করেই বিয়ে করতে আসে। এর বেশি কিছু না।’

পুরো ঘটনাটা এবার সবার কাছে পরিস্কার হতে থাকে। অক্ষর এবার বেশ রেগেই সবার সামনে বলে,
‘আজ এখানে আমি যখন বিয়ে করতে এসেছি তখন আমি বিয়ে করে বউ নিয়েই ঘরে ফিরব। পারলে ঠেকাও আমাকে।’

অক্ষর দৌড়ে এসে মধুজার হাত ধরে ফেলল। মধুজা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে অক্ষর চোখ রাঙিয়ে বলে,
‘ভালোয় ভালোয় বিয়েটা করে নেও বলছি। নাহলে আমি সত্যি তোমার মুখ সেলাই করে দিবো।’

মধুজা ভয়ে চোখ বন্ধ করে বলে,
‘আমি রাজি, এই বিয়েতে আমি রাজি। এই পাগলা ডাক্তারকেই আমি বিয়ে করবো।’

অক্ষর মধুজার গাল টেনে বলে,
‘গুড গার্ল। আর খবরদার আমাকে পাগলা ডাক্তার বলবে না। কল মি ডক্টর অক্ষর।’

‘একশোবার ডাকব। হাজারবার ডাকব। পারলে ঠেকাও।’

‘সেলাই মেশিনটা আনতে হবে মনে হচ্ছে।’

মধুজা ভয়ে মুখে আঙ্গুল দেয়। মধুজার মামা মধুজার কাছে আসে।
‘তুই কি সত্যি এই বিয়েতে রাজি মধু?’

মধুজা মাথা নাড়ায়। যার অর্থ হ্যা। মধুজার মামাও তাই আর অমত করতে পারেন না। অন্যদিকে মিলন হাসান তো অনীল চৌধুরীর সাথে কথা বলেই বিয়েতে একপ্রকার রাজি হয়েই গেছেন।

কাজি উঠে যেতে ধরছিলেন। তখন অক্ষর এসে তাকে বলে,
‘নিন আবার বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।’

কাজি বিরক্ত কন্ঠে বলেন,
‘আবার বউ পালাবে না তো?’

অক্ষর মধুজার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘পালাতে দিলে তো পালাবে।’

মধুজা বিড়বিড় করে বলে,
‘পাগলা ডাক্তার কোথাকার।’

কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। মধুজাকে কবুল বলতে বলা হলে সে কিছু সময় নিয়ে কবুল বলে দেয়। অক্ষরও কবুল বলে দেয়৷ যার ফলে এবার বিয়েটা স্বাভাবিকভাবেই সম্পন্ন হয়। কাজি হাফ ছেড়ে বাচে।
‘জিবনে অনেক বিয়ে পড়িয়েছি। এমন কাহিনি জিবনে প্রথম দেখলাম।’

অক্ষর মধুজার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
‘আজ থেকে তুমি ডক্টর অক্ষর চৌধুরীর স্ত্রী। খুব লাকি তুমি। জানো আমাকে পাওয়ার জন্য কত মেয়ে সাধনা করেছে। কত মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ আমি।’

মধুজা এতক্ষণ রাগে অক্ষরের দিকে না তাকাতেও এবার খুব ভালোভাবেই দেখে নেয়। সত্যি অনেক বেশি সুদর্শন অক্ষর। টকটকে ফর্সা শরীর, বলিষ্ঠ চেহারা, মুখে ট্রিম করা চাপ দাড়ি। সবমিলিয়ে যেকোন মেয়ের ক্রাশবয় হওয়ার মতোই চেহারা। মধুজা মনে মনে বলল,
‘পাগলা ডাক্তার হ্যান্ডসাম আছে। কিন্তু তাতে কি এরকম একটা লোককে আমি কিভাবে সহ্য করব? একদিন এনার সাথে থাকলে যে আমি পাগল হয়ে যাবো।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
>>আসসালামু আলাইকুম। ফিরে এলাম নতুন গল্প নিয়ে। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক তাই কেউ বাস্তবতার সাথে মেলাবেন না। গল্পটা প্রথম পর্ব আপনাদের কেমন লাগল কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের থেকে ভালো রেসপন্স পেলে দ্বিতীয় পর্ব দিবো ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here