পারলে ঠেকাও পর্ব ১২

0
936

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মধুজা রডটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে বলে,
‘কিছু না। চলুন এখন। আপনার জন্য আমার কাচা ঘুম ভেঙে গেছে। না ঘুমালে আর শান্তি পাবো না।’

অক্ষরের কাছে মনে হয় মধুজা তার কাছে কিছু লুকাচ্ছে। তবুও সে এই ব্যাপারে মধুজাকে কিছু জিজ্ঞেস করে না। রুমে এসে অন্যদিনের মতো বকবক না করেই শুয়ে পড়ে অক্ষর। মধুজাও তাকে অনুসরণ করে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। দুজনেই নিজেদের ভাবনার জগতে ব্যস্ত। মধুজা ভাবছে, কে ছিল ঐ ছায়ামূর্তিটা? আর সে রড হাতে কেন এসেছিল? তার উদ্দ্যেশ আসলে কি?

অপরদিকে অক্ষর ভাবছে কে তাকে ফলো করছে। আজ তো স্পষ্ট তাকে দেখতে পেয়েছে। হুডি পড়ে থাকায় তার মুখ দেখা যায়নি। তার উপর কিছুটা অন্ধকার থাকায় ভালোভাবে তাকে দেখতেও পারে নি। শুধু এটুকু ভালোভাবে খেয়াল করেছে যে তার হাতে কেমিক্যাল পড়েছে। তাই সে যদি অক্ষরের চেনাজানা হয় তাহলে খুব সহজেই তাকে ধরে ফেলতে পারবে।

দীর্ঘক্ষণ চুপ থেকে সেই নিরবতা ভাঙে মধুজা নিজেই। মধুজা অক্ষরকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন?’

‘না। বউকে আদর না করে কি ঘুম আসে।’

কথাটা বলেই মধুজাকে নিজের দিকে টেনে নেয় অক্ষর। মধুজার কপালে আলতো করে স্পর্শ করে। মধুজার গালে বসিয়ে দেয় নিজের অধর। মধুজা অন্যদিনের মতো আড়ষ্টতায় ভোগে না। বরং আজ বেশ উপভোগই করছিল সে। হয়তোবা অক্ষরের প্রতি তারও দূর্বলতা কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ করে আজ যখন বুঝতে পারছে কেউ অক্ষরের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে তখন ভয় এসে ঘিরে ধরেছে তাকে। মধুজার মন হতে থাকে অক্ষরের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সে কি ঠিক থাকতে পারবে? যতোই পাগলা ডাক্তার বলুক আর ঝগড়া করুক অক্ষরের সাথে। এই কয়দিনে অক্ষরের প্রতি অদ্ভুত একটা টান তৈরি হয়েছে তার। এই টানটা হয়তো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের। যা উপেক্ষা করার সাধ্য কারো নেই।

মধুজা অক্ষরের চোখের দিকে তাকায়। এই চোখে তাকালেই চোখের মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। আজ অক্ষরকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে মধুজা। আসলেই তার পাগলা ডাক্তার অনেক বেশি সুদর্শন। যেকোন মেয়ে একবারের দেখাতেই তার প্রেমে পড়তে বাধ্য।

মধুজাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায় অক্ষর। টিপ্পনী কে’টে বলে,
‘এভাবে কি দেখছ হানি? তুমি আবার আমার প্রেমে-টেমে পড়ে গেলে নাকি?’

মধুজা ততক্ষণাৎ কোন উত্তর দেয়না। একটু পর বলে ওঠে,
‘আপনি কি আমায় ভালোবাসেন?’

অক্ষর মধুজার এমন প্রশ্নে হচকচিয়ে যায়। মধুজার কপালে হাত দিয়ে বলে,
‘তুমি ঠিক আছ তো? শরীর খারাপ করে নি তো?’

মধুজা আচমকা অক্ষরকে জড়িয়ে ধরে। তার বুকে মাথা রেখে বলে,
‘আজকের রাতটা আমাকে এভাবে একটু ঘুমাতে দেবেন?’

অক্ষর হতবাক হয়ে গেলেও কিছু বলে না। মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে তারপর মধুজার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। একসময় দুজনেই এভাবে ঘুমিয়ে যায়।

২৩.
মধুজা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে জরুরি কাজে চলে গেছে। অক্ষর মধুজাকে না দেখতে পেয়ে খুবই কষ্ট পায়। বিড়বিড় করে বলে,
‘আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে গেল। অথচ কাল রাতে কিভাবে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল। নিশ্চয়ই আদর খাওয়ার ভয়ে পালিয়ে গেছে হানি।’

আর বেশি না ভেবে অক্ষর নিজেও হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নেয়। নিচে এসে ব্রেকফাস্ট করার সময় দেখতে পায় মমতা চৌধুরী একা হাতে সব করছে। অক্ষর তার মাকে জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি একা কাজ করছ কেন? রাওনাফ কোথায়?’

‘ও তো স্কুলে গেছে। রান্নার কাজে আমাকে মধুজা সাহায্য করে গেছে। রাওনাফের তো সামনে পরীক্ষা। তাই ওকে কাজ কম করতে বলেছি। এটুকু কাজ আমি নিজেই করতে পারব।’

অক্ষর আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মনযোগ দিয়ে খেতে থাকে। একটু পরেই বর্ণও চলে আসে খাওয়ার জন্য৷ বর্ণ এই গরমের দিনেও ফুলহাতা শার্ট পড়েছে দেখে অবাক হয়ে যায় অক্ষর৷ বর্ণ এসে অক্ষরেরই পাশে বসে। অক্ষর বর্ণকে জিজ্ঞেস করে,
‘তুই এই গরমে এরকম পোশাক কেন পড়েছিস? তোর হাতে কি হয়েছে?’

বর্ণ নিজের হাত ভালোভাবে ঢেকে নেয়৷ অক্ষর দেখতে পায় যে, বর্ণর হাতে লালচে দাগ। অক্ষরের মনে কিছুটা সন্দেহ হয়। তবে সে ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয় না। বর্ণ যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অক্ষর খেয়ে উঠে যাওয়ার সময় বর্ণকে বলে,
‘তোর হাতে কি কোন সমস্যা হয়েছে?’

বর্ণ আমতাআমতা করে বলে,
‘ন,,না কোন সমস্যা হয়নি।’

অক্ষর আর কিছু না বলে উঠে চলে যায়। অক্ষর যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বর্ণ নিজেও চলে যায়। মমতা চৌধুরী ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারেন না। তবে তার মনে হয় কোন ব্যাপার তো আছেই।

আচমকা বাড়িতে কাউকে প্রবেশ করতে দেখে চমকে যান মমতা চৌধুরী। মধুজা দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়িতে এসেছে। মমতা চৌধুরী জানতে চান,
‘তুমি এত তাড়াতাড়ি এলে কেন? তুমি তো বলেছিলে যে তোমার ফিরতে লেইট হবে।’

মধুজা হাফাতে হাফাতে বলে,
‘বলছি,,আচ্ছা পা,, মানে আপনার ছেলে কোথায়?’

‘অক্ষর তো একটু আগেই হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে বেড়িয়ে গেল।’

‘ওহ শিট। আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে। অক্ষরের সামনে অনেক বড় বিপদ।’

মমতা চৌধুরী ভয় পেয়ে যান। জিজ্ঞেস করেন,
‘কি বিপদ অক্ষরের?’

‘আমি পরে এসে আপনাকে সব বলছি। আমার আর দেরি করলে চলবে না, এক্ষুনি যেতে হবে।’

২৪.
অক্ষর সবেমাত্র হাসপাতালে এসে পৌছেছে। হাসপাতালে এসেই একটা গুরুতর রোগীকে দেখতে হয়েছে। অক্ষর নিজের কেবিনে এসে একটু বসতেই ডাক্তার কেয়া তার কেবিনে আসার অনুমতি চায়। ডাক্তার কেয়া একজন ডাক্তার৷ অক্ষরের সাথেই মেডিকেলে পড়াশোনা করায় তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আছে। অক্ষর আসার অনুমতি দিলে কেয়া ভেতরে আসে। এসেই অক্ষরকে বলে,
‘শুনলাম আপনি নাকি বিয়ে করে নিয়েছেন? আমাকে জানালেন না। দ্যাটস নট ফেয়ার।’

অক্ষর মৃদু হেসে বলে,
‘আপনি তো বিদেশে ছিলেন তাই আর জানানোর সুযোগ পাই নি।’

‘ওয়েল,, এখন তো আমি আবার বাংলাদেশে ব্যাক করেছি৷ এবার কিন্তু আমি আপনার ওয়াইফকে দেখতে চাই। দেখি কে সেই লাকি গার্ল যে আপনার মন জয় করতে পেরেছে।’

‘আচ্ছা দেখা করাবো একদিন।’

অক্ষরের নজর যায় ডাক্তার কেয়ার হাতের দিকে। তার হাতে লাল লাল র‍্যাশ উঠেছে। অক্ষর কৌতুহলবশত অক্ষরকে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনার হাতে কি হয়েছে?’

কেয়া নিজের হাত আড়াল করে বলে,
‘সামান্য র‍্যাশ উঠেছে। নট আ বিগ ডিল। হোয়াট এভার, আমি আসছি। আমার একটা পেশেন্টকে দেখতে যেতে হবে।’

‘আচ্ছা আপনি যান।’

যাওয়ার সময় কেয়া হঠাৎ করে পা মচকে পড়ে যেতে ধরছিল। তখন অক্ষর তাকে আগলে নেয়।

মধুজা দৌড়ে দৌড়ে হাসপাতালে চলে এসেছে। অক্ষরের বিপদ হতে চলেছে এটা শোনার পর থেকে তার মনে শান্তি নেই। মধুজা একজন নার্সের থেকে মধুজার কেবিন কোনদিকে সেটা জেনে নেয়। তারপর অক্ষরের কেবিনের দিকে যায়। অক্ষরের কেবিনে এসেই মধুজা দেখতে পায় অক্ষর কেয়াকে এভাবে ধরে আছে!

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here