#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মধুজা আজ প্রথমদিনের মতো নিজের কাজে যাচ্ছে। এই নিয়ে খুব এক্সাইটেড সে। বাড়ির সবাইকে খুশির খবরটা জানানোর পর সবাই মধুজার এই সাফল্যে খুশি। অনীল চৌধুরী যদিওবা একটু মনোক্ষুণ্ণ ছিলেন কারণ সাংবাদিক পেশাটা ভীষণ বিপজ্জনক হতে পারে। তবে মমতা চৌধুরী তাকে বুঝিয়েছেন যে, মধুজা যদি চায়, ওর যদি নিজের উপর ভরসা থাকে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। যার ফলে, তিনিও আর দ্বিমত করতে পারেন নি। তাছাড়া অক্ষরও পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে মধুজাকে।
আজ প্রথমদিন অক্ষরই মধুজাকে তার কার্যালয়ে পৌছে দেয়। মধুজা খুশি মনে কাজে যোগ দেয়। প্রথমদিন সবার সাথে পরিচয়টা সেরে নেয়। মধুজা বিভিন্ন ধরনের সংবাদ সংগ্রহের কাজ করবে। তার সাথে একজন ক্যামেরাম্যানকেও ঠিক করে দেওয়া হয়। মধুজার ক্যামেরাম্যান আর কেউ নয়, তারই বন্ধু লাবিব। লাবিবের সাথে কলেজ থেকেই বন্ধুত্ব মধুজার। কলেজে তো তারা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। আজ আবার অনেকদিন পর একসাথে কাজ করতে পেরে খুশি তারা।
মধুজার উপর আজ দায়িত্ব পড়ে রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করার। তাই মধুজা লাবিবকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় তৈরি বিভিন্ন গর্ত, এবং জ্যাম পর্যালোচনা করে। লাবিব কিছু ছবিও তোলে। কিছু মানুষের সাথে এসবের ভোগান্তি নিয়ে কথাবার্তা বলে। অবশেষে সবমিলিয়ে খুব সুন্দরভাবে একটি রিপোর্ট তৈরি করে মধুজা।
সম্পাদক খুব খুশি হয় মধুজার এই কাজে। তিনি মধুজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
‘তুমি যথেষ্ট ভালো কাজ করেছ। এভাবে কাজ করে যেতে পারলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো একজন সাংবাদিক হতে পারবে। তবে একটা কথা মনে রাখবে, সাংবাদিক হতে গেলে সাহসের প্রয়োজন। কাউকে ভয় করবে না। অনেক প্রভাবশালী লোকের বিরুদ্ধে তোমায় খবর তৈরি করতে হতে পারে। সেই নিয়ে অনেক চাপের সম্মুখীন হতে পারো। সব কিছু পাশে রেখে নিজের কাজটা ভালো ভাবে করবে।’
মধুজা বলে,
‘জ্বি, আমি নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করব ইনশাআল্লাহ।’
মধুজা আজ সব কাজ শেষে বাড়িতে ফেরে। বাড়িতে ফিরেই দেখে মমতা চৌধুরী খাবার নিয়ে বসে আছেন। মধুজাকে দেখামাত্র তিনি বলেন,
‘এসো। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম এতক্ষণ। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো। খাবারগুলো এখনো গরমই আছে।’
মধুজার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয় মমতা চৌধুরীর মতো একজন শাশুড়ি পেয়ে। তার কাছে মনে হয় তার মা’ই যেন আবার তার কাছে ফিরে এসেছে।
মধুজা ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসে পড়ে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে যায় ঘুমানোর জন্য। অক্ষরের আজ তাড়াতাড়ি ফেরার কথা। মধুজা যেন তার অপেক্ষাতেই আছে। নিজের বুঝতে পারছে না তার হয়েছে কি। যেই লোকটাকে একদম সহ্য করতে পারে না, তার জন্য কিনা অপেক্ষা করছে। মধুজার হচ্ছেটা কি?
২১.
অক্ষর আজ আগের দিনের থেকে বেশ তাড়াতাড়ি করেই হাসপাতাল থেকে ফিরছে। গতকালের ঘটনাটা এখনো তাকে ভাবাচ্ছে। কে বা কারা তার পিছু নিচ্ছিল। তাই আজ ঝুকি না নিয়ে তাড়াতাড়িই ফিরেছে অক্ষর৷ তবে আজ সে ঠিক করেছে যদি কেউ তার পিছু নিয়ে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই হাতেনাতে ধরবে।
গাড়ি গ্যারেজে রেখে আসার সময় আজও অক্ষরের সাথে একই ঘটনা ঘটল। তবে আজ অক্ষর একটু বুদ্ধি করে না জানার ভান করে হাটতে লাগল৷ একটু এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারল কেউ তার খুব কাছে এসে গেছে। অক্ষর ভাবল এটাই সঠিক সময়। এপ্রোন থেকে কিছু একটা বের করে নিল অক্ষর। পিছনে ঘুরে সেই তরল বস্তুতা ছু’ড়ে মা’রল। বস্তুটা কারো হাতে গিয়ে পড়ল৷ সেই আগন্তুক ততক্ষণাৎ দৌড়ে পালাল। অক্ষর তার পিছু নিল কিন্তু বেশি দূর অব্দি যেতে পারল না৷ তার আগেই সে কোথাও যেন মিলিয়ে গেল।
অক্ষর দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে তার হাতে থাকা কেমিক্যালটির দিকে তাকায়। এই কেমিক্যাল কারো শরীরে পড়লে সেখানে র্যাশ উঠবে। অক্ষর খুব ভালোভাবেই খেয়াল করেছে আগন্তুকের হাতে কেমিক্যাল পড়েছে। এটাই তো চেয়েছিল সে। এখন সেই আগন্তুক যদি চেনা কেউ হয় তাহলে খুব সহজেই তাকে পাকড়াও করা যাবে। এটা ভেবে মৃদু হাসে অক্ষর।
সাবধানতা অবলম্বন করে বাড়িতে প্রবেশ করে অক্ষর। সিড়ি বিয়ে দোতলায় গিয়ে নিজের রুমের বাইরে দাড়িয়ে থাকে। দরজা ভেতর থেকেই বন্ধ। অক্ষর দরজায় নক করতে যাবে তখনই কিছু একটা মনে করে হাত সরিয়ে আনে। অক্ষর ভাবে মধুজা নিশ্চয়ই তাকে জব্দ করার জন্যই এভাবে দরজা লাগিয়ে রেখেছে৷ সে এটাও বুঝতে পারে মধুজা এত সহজে দরজা খুলবে না। তাই অন্য পরিকল্পনা করে অক্ষর।
মধুজা এখনো জেগে ছিল। তার চোখে ঘুম আসছে না। ইদানীং পাগলা ডাক্তারের সাথে ঝগড়া না করে সে যেন শান্তিই পায় না। এখনো পাগলা ডাক্তারকে জব্দ করারই পায়তারা করছে৷ তাই তো ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে মধুজা। বিড়বিড় করে বলে,
‘পাগলা ডাক্তারের আসার সময় তো হয়ে গেছে। তাহলে এখনো আসছে না কেন? হোয়াট এভার, আসলেও আমি দরজা এত সহজে খুলব না। মিনিমাম ৩০ মিনিট তো বাইরে দাড় করিয়ে রাখবোই। আমাকে যখন তখন অস্বস্তিতে ফেলার জন্য এটুকু শাস্তি তো দেওয়াই যায়।’
আচমকা দরজার বাইরে থেকে অদ্ভুত শব্দ শুনে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায় মধুজা! বাইরে থেকে কিরকম ভূতুড়ে আওয়াজ আসতে থাকে। মধুজা ভয় পায় খানিকটা। কিছুক্ষণ পরেই জোরে জোরে শব্দ হতে থাকে। মধুজা ভয়ে কম্বল মোড়া দিয়ে শুয়ে দোয়া দরুদ পড়তে থাকে।
২২.
কিছু একটা মনে আসতেই কম্বল সরিয়ে ফেলে মধুজা। সাহস সঞ্চার করে বলে,
‘আমি একজন সাংবাদিক। এত ভিতু হলে আমার চলবে না। আজ এই শব্দের রহস্য আমি ভেদ করেই ছাড়ব। কেউ ঠেকাতে পারবে না আমায়।’
মধুজা সাহস করে উঠে দাড়ায়। গুটি গুটি পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজাটা খোলা মাত্রই নিজের চোখের সামনে অক্ষরকে দেখে ভড়কে যায় মধুজা। অক্ষর মধুজার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিল৷ মধুজা রাগী স্বরে ধমক দিয়ে বলে,
‘তার মানে আপনি আমায় ভয় দেখানোর জন্য এমন করছিলেন? কি ভেবেছিলেন আপনি ভয় পেয়ে যাবো? আমি হলাম মধুজা। আমি কাউকে ভয় পাই না।’
‘সেটা তো জানি আমি। তাই তো ভেবেছিলাম এরকম শব্দ শুনে সাহস করে দরজা খুলে দেখবে কে এসেছে। তাই তো ফোনে একটা ভূতুড়ে গান ছাড়লাম আর কিছু শব্দ ভাইব্রেট করতে লাগলাম। কিন্তু তুমি তো অনেক দেরি করে দিলে। এতক্ষণ কি ভয়ে ছিলে নাকি?’
মধুজা আমতাআমতা করে বলে,
‘আ,,আমি মো,,,টেই ভয় পাই নি। ঘুমিয়ে ছিলাম তাই শুনতে পাইনি৷ ঘুম থেকে উঠেই শব্দ শোনামাত্র দরজা খুলে দিলাম।’
‘তাহলে তো তুমি খুব সাহসী। আচ্ছা চলো এখন ভিতরে।’
অক্ষর রুমে প্রবেশ করে। মধুজা দরজার কাছেই দাড়িয়ে ছিল। কিছুটা দূরে কারো একটা ছায়া দেখতে পায় সে। সাহস করে এগিয়ে আসতেই ছায়াটা পিছিয়ে যায়। মধুজার মনে সন্দেহ হতে থাকে যে কি দেখল এটা। সে নিশ্চিত এখানে কেউ ছিল। মধুজা এসব ভাবতে ভাবতে একটু এগিয়ে এসে পায়ের কাছে কিছু পড়ে থাকতে দেখতে পায়। পায়ের কাছ থেকে তুলে দেখে একটা রড। এই রডটা কে এনেছে এখানে? আর কেনোই বা এনেছে?-এটাই ভাবছিল মধুজা। মধুজা মনে মনে বলে,
‘তাহলে কি কেউ পাগলা ডাক্তারকে আঘাত করার জন্য,,,কিন্তু কেউ কেন এমন করবে? ওনার মতো মানুষের শত্রু আসবে কোথা থেকে? আমি কি ওনাকে এই ব্যাপারে কিছু বলব?’
অক্ষর ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে মধুজাকে না দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। বাইরে এসে মধুজাকে হাতে রড নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
‘তুমি কি করছ এখানে? আর তোমার হাতে ওটা কি?’
মধুজা নড়েচড়ে ওঠে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨