#পারমিতা
পর্ব—১৪(এবং শেষ)
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ
একটা অজানা ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো আকাঙখার।পারমিতার দাদাভাই কার নাম মুখে নিতে চলছেন একমাত্র খোদাই জানেন।
—-কি হলো,আপনি চুপ করে আছেন কেন??বলুন আর কে জড়িত আছে পারমিতার মৃত্যুর সাথে,বলুন?(আকাঙখা)
—-তুমি ওনার কোনো কথা বিশ্বাস করো না মা, উনি একটা ভুল তথ্য দিয়ে তোমার মনে সন্দেহের উদ্রেক করে দিতে চাইছেন।তোমায় এখন বিপথে পরিচালনা করাই ওনার একমাত্র উদ্দেশ্য।(পারমিতার মা)
—-আমি ছাড়বো না,তোমায়,তুমি আমার বিরুদ্ধাচরণ করছো,ছাড়বো না আমি তোমায়।
বৃদ্ধ ভদ্রলোক পারমিতার মাকে এসব বলে শাসাতে থাকে।
—-আমায় এখন ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই, আপনার সমস্ত কুকর্ম ফাঁস হয়ে গেছে বাবা। আপনি আমার মেয়ের খুনি,আমার মেয়েকে খুন করেছেন আপনি।আমি আপনায় ক্ষমা করে দিলেও সৃষ্টিকর্তা কোনোদিন ক্ষমা করবেন না আমায়।(পারমিতার মা কেঁদে কেঁদে বলে )
আকাঙখা আবারো এগিয়ে যায় বৃদ্ধের দিকে।
—আপনি কার কথা বলতে চেয়েছিলেন বলুন,দেরী করবেন না,বলুন পারমিতার মৃত্যুর পেছনে আর কে এমন আছে,যার নাম শুনলে আমি বিশ্বাস করতে পারবো না?
—তার নাম,শুনতে চাও,শুনতে চাও তো। তবে শোনো।সে আর কেউ নয়,তোমার স্বামী ডক্টর আরফান জামান আর আমি দুজনে প্লান করে খুন করাই পারমিতাকে।
এবার শুনলে তো তুমি।আমায় খুব বলেছিলে না আমি নিচ,ছোটলোক।এবার কি বলবে তুমি।
কিছু আছে কি বলার।
পারমিতার দাদুর কথা শুনে পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেলো আকাঙখার।
এটা কি শুনছে সে।
যে ভয়টা এতোদিন ধরে পাচ্ছিলো,সেই ভয়ানক তিক্ত কথাটা তার নিজের কানে শুনতেই হলো।
—না,এটা কিছুতেই হতে পারে না।আপনি মিথ্যে বলছেন,মিথ্যে বলছেন আপনি।
—আমি মিথ্যা বলছি না,তুমি যে তার প্রতি সন্দেহ বশত হয়ে পারমিতার আর তার সকল পূর্ব ইতিহাস জেনে ফেলেছো,এটা সে জানে। আমি নিজেই বলেছি তাকে।সেদিন যদি আমি বুঝতে পারতাম তুমি আরফানের স্ত্রী,কিছুতেই তোমায় আমাদের পরিবারের পূর্বের কোনো ঘটনা জানতে দিতাম না।ভুল করেছি আমি,মস্ত বড়ো ভুল করেছি।
সৌজন্য নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,সে কি বলবে,কি বলে আকাঙ্খাকে স্বান্তনা জানাবে নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না।
হঠাৎ পারমিতার ফোনে একটা মেসেজ আসলো।
ইনবক্স অন করতেই চোখ জোড়া কপালে আকাঙখার।
এতো আরফানের মেসেজ।
“সরি আকাঙখা,সরি পারমিতা!
এই ধরনের মেসেজ করার মানে কি হতে পারে।।
সৌজন্য,আকাঙখা,পারমিতার মা সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো।
—দেখুন ম্যাডাম,,আমাদের কিন্তু একবার আপনাদের বাসায় যেতে হবে,এক্ষুনি যেতে হবে।নয়তো আবার কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে যায়?
—কিসের দূর্ঘটনা ঘটবে।
কি বলছো তুমি??(উদ্বিগ্ন হয়ে)
—আমি জানি না ,কিচ্ছু জানি না,শুধু এইটুকু জানি আমাদের এক্ষুনি আপনার বাসায় যেতে হবে।
আকাঙখা এতোকিছুর মাঝে পারমিতার কথা ভুলেই গেছে,সবার অগোচরে দাঁড়িয়ে পারমিতা যে সকল দৃশ্য অবলোকন করে যাচ্ছে এটা মাথাতেই নেই তার।
—আমার এখান থেকে উঠে যাবার মতো শক্তি নেই সৌজন্য,তুমি একটু ধরে তুলবে আমায়।
সৌজন্য আকাঙখার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছে,সত্যি পৃথিবীর সবকিছু মেনে নেয়া সম্ভব,কিন্তু ভালোবাসার মানুষ প্রতারনা করলে সেটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
মানসিক ভাবে প্রচন্ড ভেঙে পড়েছে আকাঙখা,মুখের সমস্ত ভাষা হারিয়ে যেন বোবা হয়ে পড়েছে সে।
আসার সময়ে পারমিতার দাদাভাইকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হলো,তাকে যথোদ্রুত সম্ভব হাসটাতালে শিফট করার ব্যবস্থা করে সৌজন্য,পারমিতার মা,আর আকঙ্খা বাসার উদ্দেশ্য ছুটে চললো।
বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় আধা ঘন্টা লেগে গেলো।
পথে বহুবার আযফানকে ফোনকল করেছে সৌজন্য।কিন্তু সে ফোন রিসিভ করে নি।এতে সবার চিন্তা আরো বেড়ে যায়।
বাসায় পৌঁছে দেখলো দরজা ভেতর থেকে লক করা,
বহুবার দরজা নক করার পরেও কোনোপ্রকার সারা শব্দ আসছে না ভেতর থেকে!
ভয় আর দুশ্চিন্তায় বুক কাঁপতে শুরু করলো আকাঙখার।
—আরফান,কি হলো।দরজা খুলছো না কেন?
আরে কি হলো তোমার।(আকাঙখা। )
—স্যার,আপনি কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন।দরজাটা খুলুন প্লিজ।স্যার।
দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলতে থাকে সৌজন্য।
ভেতর থেকে বরাবরের মতো কোনো সাড়াশব্দ আসছে না।
শেষে বহুচেষ্টা করে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পড়ে সবাই।
ড্রয়িং রুম ফাঁকা,,আকাঙখা ছুটে তাদের বেডরুমের দিকে ছুটে চলে।
তার পেছন পেছন সৌজন্য আর পারমিতার মা।
বেডরুমে ঢুকেই চিৎকার দিয়ে উঠলো আকাঙখা।
এমন ভয়ানক একটা দৃশ্য দেখার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলো না সে,
আরফান নিজেই নিজেকে শুট করে দিয়েছে, মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে সে,
আকাঙখা ছুটে ওর পাশে গিয়ে বসলো, বাকিরা সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
—এটা কি করলে আরফান,এটা কি করলে তুমি.?কেন নিজেকে গুলি করে দিলে?কেন করলে এটা?(আকাঙ্খা)
—আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই আকাঙখা,আমার মতো মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।আমি একটা নরপিশাচ, প্লিজ ছুঁয়ো না আমায়,অপবিত্র হয়ে যাবে।
কথাটা শেষ হতে না হতেই সবাই লক্ষ্য করছে আরফান তার চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে সামনে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।অস্ফুট স্বরে সে বলে উঠলো।
—পারমিতা!পারমিতা তুমি এসেছো।
সবাই পেছনে ঘুরে তাকায়।সত্যি পারমিতা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।এবার সবাই দেখতে পাচ্ছে পারমিতাকে।
সৌজন্য দেখতে পাচ্ছে, পারমিতার মা, আরফান,সবাই দেখতে পাচ্ছে ।
কিন্তু সে বড্ড অস্পষ্ট,মানুষকে যেমন স্পষ্ট দেখা যায় কিন্তু তাকে সেইভাবে দেখা যাচ্ছে না।
ধীরে ধীরে ঘরের ভিতর ঢুকলো পারমিতা।
একপর্যায়ে আরফানের সামনে এসে দাঁড়ায় সে।
—কেন করলে এটা আমার সাথে,কি দোষ করেছিলাম আমি বলো?
পারমিতার চোখ জলে ছলছল করছে।কোনো মৃত মানুষ কাঁদতে পারে এটা নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।আকাঙখা, সৌজন্য, মা, আরফান সবাই মৃত পারমিতাকে কান্না করতে দেখছে।
ওর প্রশ্নের ভেতরে এখনো যেন কোথাও অভিমান মিশে আছে,যা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আকাঙখা।পারমিতা আযফানকে ঘৃনা করতে পারে নি কখনো,কারন পারমিতা এখনো আরফানকে ভালোবাসে।ভালোবাসার মানুষকে কখনোই ঘৃনা করা যায় না,আর মানুষ যাকে ঘৃনা করে তার ওপর অভিমান বোধ কাজ করে না কখনো।
—আমায় ক্ষমা করে দাও পারমিতা,আমি জানি তুমি আমায় ক্ষমা করে দিলেও আল্লাহ আমায় আমার পাপের শাস্তি অবশ্যই দেবেন।আর তাতে এখন ভয় ও পাই না আমি।আমার মতো মানুষের আরো বেশী কঠিন শাস্তি পাওয়া উচিত।
—তুমি কিন্তু এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না।
—কি উত্তর দেবো আমি তোমায় পারমিতা, যখন তোমার দাদাভাইয়ের মুখে প্রথম শুনতে পাই তুমি বাস্তবে একজন জ ন্ম পরিচয় হীন মেয়ে,যে কিনা নিজের বাবার পরিচয় পর্যন্ত জানে না।তোমায় যে জন্ম দিয়েছে সে কে,এমনকি সে কোন ধর্মের,কিছুই কেউ জানতো না।
এটা শোনার পরে তোমার প্রতি এক প্রকার ঘৃনা বোধ কাজ করে আমার,আমি ঘৃনা করতে শুরু করি তোমায়।হয়তো তোমায় কোনোদিন সত্যিকার অর্থে ভালোবাসলে এই ঘৃনার জ ন্ম ই হতো না আমার ভেতরে,কিন্তু আমি তোমায় কোনোদিন মন থেকে ভালোই বাসতে পারি নি।
তোমার প্রতি যতটা ঘৃণা হচ্ছিল আমার তার থেকে বেশী রাগ হতো।
কেন তুমি সবটা জেনে আমার থেকে লুকোলে,কেন তুমি আগেই নিজের সমস্ত কথা খুলে বললে না আমায়।
তবে হয়তো তোমার সাথে বিয়ে অবধি সম্পর্ক টা জড়াতো না আমার,ঐ সময়ে আর বিয়েতে না করার মতো কোনো উপায় ছিলো না।
একবার চেলেছিলাম সবাইকে সবটা বলে দেবো,কিন্তু ভেবে দেখলাম তাতে বিয়েটা কি আদৌ ভাঙ্গবে!
আমি তোমায় কিছুতেই বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না,যে কোনো প্রকারে সেটা আমাকে বন্ধ করতেই হতো।
এরপর তোমার দাদাভাই আমায় একটা বেশ শক্তপোক্ত বুদ্ধি দিলো,তোমায় বিয়ের রাতে বিষ খাইয়ে মারার পরিকল্পনা করি আমরা। ঐ রাতে আমিই ফোন করে তাড়া দিচ্ছিলাম নিজের ভাড়া করা লোকদের,আর এই জন্য বিয়ের রাতে মারার প্লান করি যাতে ভুলেও কেউ আমাকে সন্দেহ না করতে পারে।
আর সেটাই হলো,সবার অন্তরালে লোক মারফত তোমায় খুন করলাম,অথচ কেউ সেটা জানতেই পারলো না,তোমার দাদাভাইয়ের কথাও কেউ জানতে পারলো না।
দেখো,পাপ কি বেশী দিন চাপা থাকে,এক সময় সে বাইরে বেরিয়ে আসেই।।আজ আমাকে নিজের মুখে সবটা স্বীকার করতে হচ্ছে,কিন্তু তাতে আমার মনে কোনো দুঃখ নেই।
তোমার প্রতি করা অন্যায়ের অনুতাপবোধ প্রতিদিন, প্রতিক্ষন,প্রতিমুহূর্তে কুড়ে কুড়ে মারতো আমায়।আমি চোখ বুজলেই তোমার সাথে করা সকল কুকর্মের দৃশ্য সামনে ভেসে উঠতো।
দীর্ঘ নয়টি বছরে এক মুহূর্তের জন্য আমি সেদিনের কথা ভুলতে পারি নি,মনের ভেতরে একটা চাপা কষ্ট আর যন্ত্রনা নিয়ে দিন অতিবাহিত করেছি।মাঝে মাঝে মনে হতো সবটা বলে দেই নিজের স্ত্রীকে।কিন্তু পরে নিজের সুখের সংসারটা ভেঙে যাবার ভয়ে চুপ হয়ে যেতাম।
কিন্তু আজ আর আমার কোনো পিছুটান নেই, নেই কোনো ভয়,দ্বিধা।।
আজ আমি মুক্ত,কোনো বাঁধা নেই এখন আর। আমি জানি আর হয়তো বেশি সময় বাঁচবো না আমি,মরে যাবার আগে আকাঙখার সামনে, তোমার সামনে সত্যি টা স্বীকার করার সুযোগ পেলাম,আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ সেই কারনে। উনি নিজেই আমায় সুযোগ টা করে দিয়েছেন। এবার মরেও শান্তি পাবো আমি।
—চুপ করো,একদম মারা যাবার কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।(আকাঙখা)
—আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না আকাঙখা,, তোমরা প্লিজ কেউ বাঁচানোর চেষ্টা করো না আমায়।একটাই অনুরোধ সবার কাছে।
পারমিতার মা এতোক্ষণ চুপ ছিলেন,কিন্তু ভদ্রমহিলা আর আটকে রাখতে পারলেন না নিজেকে।
—মা,মা রে!
তুই সেই কবে আমায় ছেড়ে চলে গেছিস।।।তুই জানিস তোকে ছেড়ে মরার মতো বেঁচে আছি আমি,এমন একটা দিন ছিলো না যে তোকে ভেবে চোখের পানি পড়ে নি আমার।
—আমার জন্য আর কষ্ট পেও না মা।আমি আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জেনে গেছি।আজ আমার আত্মা মুক্তি পেলো।এই দুনিয়ার প্রতি আর কোনো পিছুটান নেই আমার।একটাই দুঃখ মা,আজ এই সত্যটা জেনে আরো একবার মৃত্যু হলো আমার,সেদিন ঐ মারাত্মক বিষের আঘাতে খুন হতেও এতোটা কষ্ট হয় নি, যতোটা আজ হচ্ছে মা।
আমার নিজের পরিবার,আমার দাদাভাই দাদাভাই,আমার ভালবাসা খু ন করেছে আমায়।।আমি যে দুদিক থেকেই হেরে গেলাম।। এটা জানার জন্যই কি দীর্ঘ নয় বছর যাবত আমার আমার অতৃপ্ত আত্মা মৃতদেহের সাথে আটকে ছিলো?
আমি বুঝে গেছি এই দুষিত পৃথিবী আমার জন্য নেই,এই পৃথিবীতে ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই।আর এখানে আটকে থাকতে চাই না আমি।
তুমি ভালো থেকো মা,আকাঙখা তুমি ভালো থেকো।তোমার কারনেই আজ আমার মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন হলো,আমার অতৃপ্ত আত্মাকে মুক্তি দিয়েছো তুমি,কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছোট করবো না তোমায়।
যদি ভাগ্যে থাকে পরকালে আবার দেখা হবে আমাদের।
সবাই ভালো থাকো,আরফান তুমিও ভালো থাকো।আর মা,আমার ভাইটা নিশ্চয়ই এতোদিনে অনেক বড়ো হয়ে গেছে তাই না, ওকে কষ্ট দিও না কোনোদিন।
আমার লাশটা মর্গ থেকে নিয়ে আব্বার কবরের পাশে দাফন করো।
একরাশ বুকভরা ব্যথা কষ্ট,যন্ত্রণা,আর অভিমান নিয়ে ধীরে ধীরে পারমিতার অবয়ব অদৃশ্য হয়ে গেলো।
পারমিতার মা হুহু করে কেঁদে উঠলেন আবারো।
—মা,কোথায় চলে গেলি,ফিরে আয় মা ফিরে আয় পারি।
এখন থেকে পারমিতার মৃতদেহ আর নড়াচড়া করবে না,আজ থেকে পঁচতে গলতে আরম্ভ করবে, আর পিরিয়ড হবে না তার,পারমিতার মৃত শরীরের রক্ত বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে এখন, আর উষ্ণ থাকবে না।পারমিতা এখন আর জীবিত মানুষের রুপ নিয়ে কারো সামনে এসে দাঁড়াবে না।
পারমিতাকে চলে যেতে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো আরফান।
—পারমিতা,তুমি আমায় ক্ষমা করতে পারলে না,পারলে না আমায় ক্ষমা করতে।
এরপর ধীরে ধীরে তার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসে,তারপর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো আরফান।
মানুষের অন্যায় আর অপরাধ হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখা যায়,কিন্তু পরবর্তীতে সেই অন্যায় শতগুন প্রায়শ্চিত্ত আর শাস্তির রুপ নিয়ে ফিরে আসে যা ব্যক্তি নিজেও বুঝতে পারে না।
আরফান আর পারমিতার দাদাভাইয়ের সাথে সেটাই হয়েছে,দুজনেই নিজেদের অপরাধের শাস্তি পেয়েছে।একজন নিজের জীবন দিয়ে (আরফান),অপরজন সারাজীবন বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে (পারমিতার দাদু)।
মর্গ থেকে পারমিতার লাশ নিয়ে তার বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
এর আট মাস পর….
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আকাঙখা,,,তবে সে একা নয়।তার কোল জুড়ে এসেছে ফুটফুটে একা বাচ্চা।
আরফান মারা যাবার সময়ে আকাঙখা দুই মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলো,আরফানের দুর্ভাগ্য সে মারা যাবার আগে নিজের আগত সন্তানের কথা জেনে যেতে পারলো না।
এই দীর্ঘ আটটা মাস আকাঙখার দেখাশুনা ডক্টর সৌজন্যই করেছে।
একজন স্বামী যেভাবে এই সময়ে নিজের স্ত্রীর পাশে থেকে সমস্ত দ্বায়িত্ব পালন করে,সেও আকাঙখার প্রতি একই দ্বায়িত্ব পালন করে এসেছে।
এমনকি আকাঙখা অপারেশন তার হাতেই হয়েছে,আকাঙখার ছেলের জন্ম সে নিজের হাতেই দিয়েছে।
দীর্ঘ আটটা মাস ধরে তারা পরস্পর পরস্পরকে চিনেছে,বুঝেছে,দেখেছে।
কর্মক্ষেত্রে জুনিয়র হলেও বয়সে সৌজন্য আকাঙখা দুজনেই প্রায় সমান বয়সী।
আকাঙখার কেবিনের ভেতরে এসে ঢুকলো সৌজন্য।
–কি ব্যাপার,তিয়াশ বাবু কেমন আছে?
(আরফান -আকাঙখার সন্তানের নাম তিয়াশ রাখা হয়েছে)
—এইতো একটু আগেও খুব কান্না করছিলো, এইমাত্র ঘুমিয়েছে।
—বাহহহ!তিয়াশকে একটু আদর করে সৌজন্য ঘুরে বেরিয়ে যাবে ঠিক তখন আকাঙখা পেছন থেকে তার হাতটা ধরলো।
সৌজন্য ঘুরে আকাঙখার দিকে তাকালো.সে লক্ষ্য করছে তার ম্যাডাম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে,তার চোখ যেন কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু বলতে পারছে না।
সৌজন্য চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আকাঙখা ধীরে ধীরে তার মুখ খুললো।
—-আমার সন্তানের বাবা হবে,আমার তিয়াশের বাবা হবে?
সৌজন্য কি উত্তর দেবে তার নিজের ও জানা নেই,এতোগুলো দিনে সৌজন্যর যে আকঙ্খার প্রতি একটা দূর্বলতা তৈরী হয়নি এমন নয়।
মুখে হ্যাঁ বলতে হয়তো লজ্জা বোধ হচ্ছে তার,
আকাঙ্খার প্রশ্নের উত্তর এক ফালি স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলো,আকাঙখা ঠোঁটে চাপা হাসির রেখা ফুটে ওঠে।💙
(শুভ সমাপ্ত)