পানপাতার ঘর? পর্ব ৫+৬

0
935

পানপাতার ঘর??
পর্বঃ০৫+৬
লেখা – Mahfuza_Monira

৪ দিন কেটে গেছে। এই ৪ দিনে মিশি নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে দূরেই রেখেছে নিজেকে উদয়ের থেকে।

মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষের থেকে দূরে থাকাও একটা পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় যারা পাশ করে তারা বুঝতে পারে তাদের ভালোবাসা টা কতটা মজবুত।

মিশিও বুঝতে পেরেছে। সে জেনে গেছে যে সে সত্যিই উদয় কে ভীষণ ভালোবাসে। এবং আজীবন বেসেও যাবে। কিন্তু উদয় কে জ্বালাতন করবে না। উদয় যেভাবে খুশি থাকতে চায় থাকুক। মিশির তা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই।

এই চারদিনে উদয় মিশিকে জ্বলানোর জন্য মিশিকে দেখিয়ে দেখিয়ে অনেক মেয়ের সাথে কথা বলেছে। আগে হলে মিশি মেরেই ফেলতো উদয় কে কিন্তু এখন পাত্তাই দিচ্ছে না। উদয় ভেবেছিল মিশিকে ছাড়া সে ভালো থাকবে কিন্তু হলো উল্টো টা।
উদয়ের যেন মিশির মার গুলো ছাড়া চলছে না। এক অজানা টান অনুভব করছে সে মিশির জন্য। কিন্তু কি সেই টান…..
তার জানা নেই।
.
.
স্কুল ছুটি হয়েছে। সবাই এক এক করে বেরিয়ে যাচ্ছে ক্লাসরুম থেকে। কিন্তু মিশি তখনো অংক করায় ব্যস্ত। উদয়ের উপর করা রাগ গুলো সে অংকের ঝাড়ছে। প্রতিটা অংক কে উদয় ভেবে কেটে কুটে একদম সমাধান করে দিচ্ছে। তার হঠাৎ এই পরিবর্তনে আলী বাবুও বেশ অবাক।

সবাই বের হওয়ার প্রায় ৬ মিনিট পর মিশি খাতা পত্র গুছিয়ে নেয়। সে কাধে ব্যাগ চাপিয়ে বের হতে নিলেই উদয় তার পথ আটকায়। মিশিকে ধাক্কা দিয়ে ক্লাসের ভেতরে ফেলে দিয়ে উদয় ক্লাসরুমের দরজা আটকে দেয়।
মিশির মেজাজ চটে যায়।
সে গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বলে-
– সমস্যা টা কী তোর!? অনেক ধরে মারি না দেখে বেশি পার পেয়ে গেছিস??
উদয় বাজখাঁই গলায় বলে-
– হ্যাঁ পেয়েছি। কেন মারিস না আমাকে!?
মিশি নিচু গলায় বলে-
– এমনি। সর,বাসায় যাবো।
উদয় মিশির হাত ধরে টেনে তাকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়া করায়। মিশির চোখে চোখ রেখে বলে-
– কি হয়েছে তোর? এত পর কি করে হয়ে গেলি হুট করেই? আগের মতো কথা বলিস না,মারিস না। কেন???

মিশি উদয় কে ধাক্কা দিয়ে বলে-
– যখন কথা বলতাম,জ্বালাতাম,মারতাম,তখনো সমস্যা হতো। আমাকে ছাড়াই নাকি তুই ভালো থাকবি, তো থাক না। ছেড়েই তো দিয়েছি তোকে। এখন তাহলে কেন আবার এসব বলছিস!

উদয় চুপ করে থাকে। কি বলবে সে!
মিশি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-
– তোরা ছেলেরা পারিস ও! নিজেরা একটা মেয়েকে ইগনোর করতে পারিস,মেয়েটাকে ছোট ফিল করাতে পারিস, আর একটা মেয়ে তোদের ইগনোর করলেই গায়ে লেগে যায়। নারে?

মিশির চোখ ছলছল করে উঠে। তার ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে মারুক উদয়ের গালে। তাতে গাল ফুলে গেলে যাক,ছিড়ে গেলে যাক। ডোন্ট কেয়ার….

মিশি আর কোনো কথা না বলে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় ক্লাসরুম থেকে। শুধু হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকে উদয়। সে এখনো বুঝতে পারছে না আসলেই কেন মিশি এমন টা করছে।
.
.
.
সোহেলা বেগম বেশ উত্তেজিত হয়ে আছেন। রাগে তার গা রিনরিন করছে। এই বুঝি বটি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে দিক নিজের ছেলে মেঘ কে!
এত বড় বংশের ছেলে হয়ে সামান্য ছোট ঘরের একটা মেয়েকে সে কিনা ভালোবাসে!!! আবার তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়েও নাকি করবে না।
ফালতু সব…
সোহেলা বেগম জোরে জোরে গোলাপী কে ডাকেন। গোলাপী তার বড় মেয়ে। মেঘের ৩ বছরের বড়।
গোলাপী আসতেই তাকে সবটা খুলে বললে গোলাপী মেঘ কে ডেকে কড়া গলায় তাকে বলে-
– কি শুনছি এসব তোর ব্যাপারে! তুই নাকি কোন ছোট লোকের মেয়েকে ভালোবাসিস! ন্যাকামো!! এসব ঢং ফং ছাড়। তোকে আমরা ভালো জায়গায় বিয়ে দেবো।

মেঘ শান্ত গলায় বলে-
– আমি তো মাকে বলেই দিয়েছি আমি কোথাও বিয়ে করবো না। তবুও এত উঠে পড়ে লেগে আছিস কেন! আর এত বিয়ে করার শখ থাকলে তুই কর।

গোলাপী সোহেলা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলে-
– দেখেছো মা! তোমার ছেলে কত বড় বেয়াদব হয়ে গিয়েছে! বড় বোনের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও ভুলে গেছে।

সোহেলা বেগম মুখ ব্যাকা করে বলেন-
– ঐ ডাইনি আমার ছেলেকে কোন জাদু করছে কে জানে! এই জন্যেই আমার ছেলের এই অবস্থা। নয়তো আমার এত চুপচাপ শান্ত ছেলেটা কি থেকে কি হয়ে গিয়েছে দেখ!

মেঘ সইতে পারেনা। সে সোহেলা বেগম কে বাজখাঁই গলায় বলে-
– মা,খবরদার আর একবারো ওকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবে না। তোমার মেয়ে এত ভালো দেখেই তো প্রথম স্বামীর ঘর করতে পারলো না। এখন এসে উঠেছে বাপের বাড়িতে! আর আমারই ভুল যে আমি তোমাদের সাথে আমার ভালোবাসার কথা শেয়ার করেছি। কান খুলে শুনো রাখো দুজনে,আমি বিয়ে করবো না। কোথাও না। মানলে থাকবো নয়তো চলে যাবো এখান থেকে।

মেঘ বাড়ির বাইরে চলে আসে। সোহেলা বেগম বিলাপ জুড়ে দেয়। সব যেন ঐ ডাইনির দোষ। ওর জন্যেই যেন মেঘ আজ উঁচু গলায় কথা বলতে শিখেছে।

মেঘ বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে চোখের কোণা থেকে আলগোছে জমা পানিটুকু মুছে নেয়। কেউ তার লিমার ব্যাপারে কিছু খারাপ বলুক,সে তা সইতে পারবে না। সে যেই হোক না কেন….
.
.
.
বাসায় ফিরেই নিজের রুমে চলে যায় মিশি। বিছানার তল থেকে গোলাপি রঙের ডাইরি টা বের করে সে।
এই ডাইরিতে উদয়ের সাথে কাটানো প্রতি টা মুহুর্ত সে লিখে রেখেছিল। সেগুলো বারবার উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে থাকে সে।
.
রাত ৩ টার দিকে উদয়ের বাসার সামনে গিয়ে হাজির হয় মিশি। গভীর নিশুতি রাত।চারিদিকে গা ছমছমে ভাব। তবুও মিশি একা একা সাহস করে এসেছে এত দূর। উদয়ের রুম টা একদম বড় রাস্তার সাইডে। উদয়ের রুমের সামনে গিয়ে জানালায় টোকা মারে মিশি।

ঠক ঠক…
ঠক ঠক…

উদয় আড়মোড়া ছেড়ে ঘুম ভেঙে উঠে বসে। জানালায় কারো ছায়া দেখতে পেয়েই তার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় উদয় ডাকে-
– কে…কে ওখানে!

মিশি নিচু গলায় বলে-
– ওরে রামছাগল,আমি রে আমি। মিশি। এদিকে আয় দেখি।

উদয় চমকে যায়। মিশি!! এই এত রাতে…
উদয় উঠে দৌড়ে যায় জানালার কাছে। মিশি ৩২ টা দাত বের করে বলে-
– খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে। টাকা সাথে করে নিয়ে এসেছি। কিনে দে না…

উদয় বোকা বনে যায়। মেয়েটার মাথায় কি সিট টিট আছে নাকি!
উদয় দাতে দাত চেঁপে বলে-
– তোর বাপ চাচা কি স্বর্গে গেছে যে জ্বালানোর জন্যে আমাকেই পাইছিলি??
মিশি হেলে দুলে নাঁচতে নাঁচতে বলে-
– উঁহু তারা কোথাও যায়নি।

.
কিন্তু তুই থাকতে তাদের জ্বালাবো কেন? বলতো। এখন এনে দে না। আমার রামছাগল টা…গরুটা….তেলাচোরা টা….

উদয় হাত বারিয়ে টাকা নেয়। কি আর করার! না এনে দিলে যে বড্ড মারবে এই মেয়ে…
.
.
হাসিব চাচার ডাকে মিশি ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। হাসিব চাচা মিশিকে উদ্দেশ্য করে বলে-
– মিশি মা, একটু উঠোনে এসো তো। উদয় এসেছে।

চলবে…..

পানপাতার ঘর
পর্বঃ০৬
লেখা – Mahfuza_Monira

মিশি বেশ অবাক হয়। উদয় তার বাড়িতে…কেন!?
সে উঠে দাঁড়ায় বিছানা ছেড়ে। হাসিব চাচা কে উদ্দেশ্য করে বলে-
– কেন এসেছে সে?
– তা তো জানিনা মা,শুধু বললো তোমায় ডেকে দিতে। কি নাকি জরুরি কথা আছে তার।

মিশি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বিছানায় শুয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে বলে-
– তাকে বলে দাও আমি ঘুমোচ্ছি। সে যেন চলে যায়।

হাসিব চাচা অবাক হন। মিশি তো উদয় কে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো মেয়ে না। তবে….
হাসিব চাচা কাচুমাচু করে বলেন-
– কিন্তু মিশি মা….
হাসিব চাচা কে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে মিশি বলে-
– উঁহু না চাচা। কিচ্ছু জিজ্ঞেস করোনা। শুধু তাকে চলে যেতে বলো।

হাসিব চাচা ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বাহিরে বের হয়ে আসে। এক ছেলে মেয়ের কান্ড কারখানা তিনি কিছুই বুঝতে পারেন না…
.
.

উদয়ের এক মন বলছে মিশি তার সাথে দেখা করতে আসবে। আবার আরেক মন বলছে আসবে না।
উদয় চিন্তিত ভঙ্গিতে উঠোনে পায়চারি করতে থাকে। হাসিব চাচা কে এগিয়ে আসতে দেখে উদয় দ্রুত তার কাছে যায়।

– হাসিব চাচা,মিশি আসেনি?

হাসিব চাচা কাচুমাচু করেন আবার।
উদয় এক মেট্রিকটন সমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

– বুঝেছি আসবে না সে। ঠিক আছে আসতে হবে না। তুমি শুধু এই কাগজ টা ওকে দিয়ে দিও। চলি।

উদয় একটা কাগজ হাসিব চাচার হাতে ধরিয়ে দিয়ে হনহন করে চলে যায় বড় রাস্তার দিকে।

হাসিব চাচা কাগজ টা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে বুঝেন এটা একটা চিঠি। তার ইচ্ছে করছে চিঠি টা খুলতে। পরমুহূর্তেই আবার ভাবে অন্যের চিঠি খোলা উচিত না।

হাসিব চাচা মনে মনে বলে-
– এত সৎ কেন রে হাসু তুই!

এরপর এগিয়ে যায় মিশির ঘরের দিকে।
.
.
বড় রাস্তায় একটা ছোট্ট পুল আছে। সেখানে একা একা উদাসী ভঙ্গিতে উদয় কে বসে থাকতে দেখে সাইকেল থামায় মেঘ। সে থানার দিকে যাচ্ছিলো তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। কিন্তু উদয় কে একা এভাবে দেখে সাইকেল না থামিয়ে পারে না সে।

রাস্তার পাশে সাইকেল পার্ক করে উদয়ের পাশে বসে পড়ে মেঘ। উদয় একবার তাকায় মেঘের দিকে। এরপর আবার দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সামনের খোলা মাঠের দিকে।

– কিছু হয়েছে নাকি তোর? কাকু বকেছে?

উদয় মাথা নাড়ায়।

– তবে? তোর মার কথা মনে পড়ছে?

মুচকি হেসে উদয় বলে-
– মার কথা কোনোদিন বাবা মনে করতেই দেয়না। আমার যখন ৬ বছর,মা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলো। এরপর কত লোকে কতবার বলেছে বাবাকে বিয়ে করতে। দাদীও কি কম চেষ্টা করলো নাকি! কিন্তু আমার বাবার এক কথা। সে বিয়ে করবে না । তার প্রথম ভালোবাসা, প্রথম প্রেম আমার মা ছিলেন,মা ই থাকবেন। বাবার সমস্ত জমানো ভালোবাসা আমি আমার মাকে দিতে দেখেছি। রাতের পর রাত মার ছবি হাতে নিয়ে কাঁদতে দেখেছি তাকে কিন্তু কোনোদিন অন্য নারীর দিকে চোখ তুলেও তাকাতে দেখিনি। তিনি পৃথিবীর সব থেকে ভালো বাবা আমার কাছে।

মেঘ মৃদু হাসে উদয়ের কথা শুনে। সে উদয়ের কাধে হাত রেখে বলে-
– সেই তোর ভালোবাবা যখন দেখবে তার একমাত্র ছেলের মুখ এরকম ফ্যাকাশে হয়ে আছে, কেমন লাগবে তার? ভেবে দেখেছিস?

উদয়ের মন টা আরো ছোট হয়ে যায়। তা দেখে মেঘ আবার বলে-
– আমাকে বলতে পারিস। আমি হয়তো কোনো সমাধান দিলেও দিতে পারি!

উদয় ভাবে এটাই ঠিক হবে। সে হয়তো মিশির ব্যবহার টা ঠিক ধরতে পারছে না। কিন্তু মেঘ ভাই তো পারবে। সে তো উদয়ের থেকেও কত বড়…..

উদয় নিচু গলায় বলতে শুরু করে-
– মিশি কে তো চেনোই ভাইয়া। ও আমাকে ছাড়া একটা সময়ও থাকতো না। আর এখন,কয়েকদিন ধরে কি হয়েছে ওর জানিনা। আমাকে পাত্তাই দেয়না। আমি কথা বলতে গেলেও ও কথা বলতে চায়না। আমি ওকে ডাকলেও ও পাত্তা দেয়না। আমি নিতে পারছি না ওর হঠাৎ এই পরিবর্তন গুলো ভাইয়া। আমি বুঝতেও পারছিনা ও কেন করছে এমন! ওকে জ্বলানোর জন্য আমি মেয়েদের সাথেও কম ঢলাঢলি করিনি এই কয়েকদিনে। আগে তো মেয়েদের সাথে কথা বলতে দেখলেও ও আমাকে মেরেই ফেলতো পারলে। আর এখন,এত ঢলাঢলি করার পরেও পাত্তাই দিলো না…!
ভাইয়া ওর সমস্যা টা কী। আমি বুঝতেছি না। এগুলা নিয়েই মেন্টালি ডিপ্রেসড আমি।

উদয় দুহাতে নিজের মাথা চেঁপে ধরে। মিশির কথা ভাবতে গেলেই তার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।

মেঘ হোহো করে হেসে উঠে।
তার হাসি যেন উদয়ের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
উদয় মেঘের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়বড় করে বলে-
– আমার এই অবস্থা! আর তুমি হাসতেছো মেঘ ভাইয়া!??

মেঘ কোনো রকমে নিজের হাসি থামায়। উদয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বলে-
আমি তোর কথা শুনেই সব বুঝে গেলাম আর তুই কিনা মেয়েটার সাথে থেকেও বুঝতে পারলি না!! আসলেই তুই একটা গাধা রে। মিশি যে কেন তোকেই ভালোবাসতে গেলো কে জানে!

উদয় চমকে উঠে।

– কি! মিশি ভালোবাসতে গেলো মানে…!
– তোকে ভালোবাসে মেয়েটা। তাইতো আগে তোর উপর অধিকার ফলাতো। তুই ই তো ওকে পাত্তা দিস নি দেখে ও এখন এমন করতেছে। ও অনেক কষ্ট পেয়েছে রে উদয়।

উদয়ের মাথা ঝিমঝিম করছে। কানের ভেতর ভনভন করছে। কোথা থেকে এক ঝাঁক বোলতা কানের ভেতর ঢুকে গেলো নাকি!

মেঘ উঠে দাঁড়ায়। প্যান্টের ধুলো ঝেড়ে সাইকেল টা সোজা করে বলে-
– পারলে মেয়েটাকে আপন করে নিস। হয়তো অংক পারেনা,কিন্তু ভালোবাসতে পারে।
চলি রে। বন্ধুরা অপেক্ষা করছে।

মেঘ শাঁ করে সাইকেল চালিয়ে চলে যায়। উদয় তখনো চুপ করে বসে থাকে রাস্তার পাশে। আচ্ছা, ভালোবাসা কী! কেমনে ভালোবাসতে হয়….!
.
.
.
‘প্রিয় টিয় কিছু লিখতে পারবো না। প্রেম পত্র লিখতে বসেনি যে এত গুছিয়ে বলবো। সোজাসুজি বলছি,তুই ও সোজাসুজি এসে উত্তর দিয়ে যাবি আশা করি। তো আমার প্রশ্ন হলো তোর কাছে যে,তোর কি হয়েছে? আমি কি কিছু করেছি!? যদি করে থাকি,ওকে ফাইন কথা বলতে হবেনা,পাত্তা দিতে হবেনা,শুধু এটুকু বল কি দোষ আমার? আমি সেটাই জানতে চাই শুধু। ওটুকু না জানা পর্যন্ত আমার শান্তি হবেনা। কিছুতেই না।
ইতি,
তোর অংক শেখানোর এক্স- মাস্টার’

শেষ কথা টা পড়ে টলমল চোখ নিয়েও মিশি হেসে ফেলে। ছেলেটা কিনা এই চিঠি দিয়েছে! আর মিশি ভেবেছিল, না জানি কি লিখেছে চিঠিতে….!
মিশির রাগ হয়। গা ঝাড়া মেরে উঠে রাগে।
সে রাগ নিয়ে এক সহস্র এলোমেলো চুমু খায় চিঠির গায়ে। তারপর সেটাকে শক্ত করে বুকে ধরে বলে-
– তুই আমার ভালোবাসা টা কখনোই কী বুঝবি না উদু…!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here