পরিপূর্ণতা পর্ব ৬

0
812

#পরিপূর্ণতা
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

অহনাকে আদিল ফোন করে জানায় তার মা তাদের বিয়ে বাতিল করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় আদিলের মা-বাবাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। এসব কথা শুনে অহনার মাথায় রাগ উঠে যায়। সে রাগে কাপতে থাকে। অপেক্ষা করতে থাকে মুক্তর আসার।

দুপুরে মুক্ত অহনার জন্য খাবার নিয়ে আসলে অহনা মুক্তকে এসব বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে।

মুক্ত অহনাকে খাবার বেড়ে দিলে অহনা খাবারের প্লেট ছু*ড়ে ফেলে বলে,এসব আমি কি শুনছি মুক্ত ভাইয়া? আম্মু নাকি আদিলের সাথে আমার বিয়ে বাতিল করে দিয়েছে। তুমি ছিলে না সেখানে? যদি থেকে থাকো তাহলে আটকালে না কেন?

তুমি আমার কথা শোন অহনা।

আর কি শুনব আমি। আমি কিছু শুনতে চাইনা। তুমি যে করেই হোক আম্মুকে বোঝাও। আম্মুকে যদি আদিলের মা-বাবার পা ধরে ক্ষমা চাইতে হয় তো আম্মু চাক৷ তবুও যেন বিয়েটা হয়।

মুক্ত এপর্যায়ে নিজেকে আর সামলাতে পারে না। অহনাকে থা*প্পড় বসিয়ে দেয়। অহনা হুংকার দিয়ে বলে, তুমি আমায় মা*রলে। কাজটা ঠিক করলে না।

আমি একদম ঠিক কাজ করেছি অহনা। তোমার মতো এত নিচু মনের মেয়ে আমি আর দুটো দেখিনি। তুমি নিজের আম্মুকে অন্য কারো পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলছ ছি!

আমি কি ভুল বলেছি? আম্মু কেন ওদের তাড়িয়ে দিয়েছে? আম্মু জানে না আমি আদিলকে কত ভালোবাসি।

দোষ তোমার আম্মুর নয়। দোষ হলো আদিলের বাবা-মা। তারা যৌতুক চেয়েছিল। তাই খালামনি

থাক তুমি আর নিজের খালামনির হয়ে ওকালতি করতে এসো না। কত টাকা চেয়েছে ওরা যে দিতে পারে নি? আম্মুর কাছে কি টাকা নেই? নাকি টাকা নিয়ে কবরে যাবে? সব অজুহাত। আমি জানি আম্মু আমাকে সহ্য করতে পারে না। আজ যদি আব্বু থাকত

ও আমি তো একটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম তোমার আব্বু ফিরে এসেছে।

অহনা রেগে যায় তার বাবার ফিরে আসার কথা শুনে। লোকটাকে অনেক ঘৃণা করে সে। অহনা রেগে বলে, আজই আমি বাড়িতে ফিরব। আমি এখন অনেকটাই সুস্থ আছি। আমাকে আব্বু আম্মুর সাথে অনেক জরুরি কথা বলতে হবে। বিশেষ করে ঐ আম্মুর একটা ব্যবস্থা করে তবে আমি দম নেবো। এরকম মা থাকার থেকে তো সৎ মা থাকা ভালো। আর ঐ আব্বু ও তো বাবা নামের কলঙ্ক। জন্ম দিয়েই ভেগে গেছে।

মুক্ত আর অহনাকে কিছু বলে না। ভালোবাসা যে মানুষকে অন্ধ করে দেয় সেটা শুনেছিল মুক্ত। নিজেকে দিয়ে তার প্রমাণও পেয়েছে। অহনাকে ভালোবেসে তার খুশির জন্য কতকিছু করল। অথচ অহনা নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যা করছে সেটা পাগলামী। ভালোবাসা আজ তার কাছে এত বড় হয়ে গেল যে নিজের মাকে আজ সে এভাবে বলছে। এতকিছুর পরেও মুক্ত পারছে না অহনাকে ঘৃণা করতে। কিন্তু সত্য হলো অহনার মতো মেয়েরা কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।

মুক্ত ভাবে, পৃথিবীর কোন মানুষই পারফেক্ট নয়। সবারই দোষ, গুণ আছে। সেরকম অহনাও হয়তো এখন নিজেকে সামলাতে না পেরে ভুল করে ফেলছে। তাই তাকে এখন ভালোভাবে বোঝাতে হবে। তাহলে তাকে সঠিক পথে ফেরানো যেতে পারে।

এসব ভেবেই মুক্ত অহনাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।

গাড়িতে করে ফেরার সময় অহনাকে মুক্ত অনেক বোঝায় যাতে সে নিজের মায়ের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার না করে। এছাড়া আরো অনেক নীতিকথা বলে। কথাগুলো অহনা গায়ে মাখে না। শুনেও না শোনার ভান করে থাকে। অহনার অঙ্গভঙ্গি দেখেই মুক্ত বুঝতে পারে তার মনোভাব। তাই চুপ করে থাকে। এখন হয়তো খুব খারাপ কিছু হবে।

গাড়ি থামামাত্রই অহনা গাড়ি থেকে নেমে যায়। সিরাজুল ইসলাম ও অহনার দাদি বাড়ির উঠোনে বসে গল্পগুজব করছিল। অহনাকে দেখেই তার দাদি সিরাজুল ইসলামকে বলে, দেখ তুংগো গ্যাদি(মেয়ে) আইছে অওনা।

আমার মেয়ে অহনা।

সিরাজুল ইসলাম অহনার দিকে দেখেন। তার মুখের সাথে অনেক মিল আছে অহনার। অহনার নিজের বাবাকে দেখে। প্রথমে চিনতে পারে না। সিরাজুল ইসলাম যখন এসে অহনাকে আলিঙ্গন করে তখন বুঝতে পারে ইনিই তার জন্মদাতা পিতা।

অহনা তার বাবাকে আলিঙ্গন করে কাঁদতে থাকে। অভিযোগ করে বলে, এতদিন পর তোমার আসার সময় হলো আব্বু।

আমাকে ক্ষমা করে দিস অহনা। আমি জানি তোর আর তোর মায়ের সাথে আমি অনেক অন্যায় করেছি। সেসব ভুলের জন্য মন থেকে ক্ষমা চাইছি।

অহনা তার বাবাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করব না৷ আর না তোমার বউকে। তোমরা দুজনে আমার জীবনটা শে*ষ করে দিয়েছ। তোমাদের মতো মা-বাবা আল্লাহ যেন আমার শত্রুকেও না দেয়।

বাইরে থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনে অহিমা বেগম রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। অহনাকে বাড়িতে দেখে তিনি বলেন, তুই ফিরে এসেছিস।

হ্যাঁ, অবশেষে আসলাম। তোমার সাথে ফয়সালা করতে।

আমি জানি তুই কি বলবি। দেখ অহনা ঐ আদিল

আমি আদিলের ব্যাপারে কোন বাজে কথা শুনতে চাইনা। আমি জানি তুমি কেন এমন করেছ। ছোটবেলা থেকে এই লোকটার জন্য(সিরাজুল ইসলামের দিকে ইশারা করে) আমাকে তুমি সহ্য করতে পারো না। এই লোক তোমাকে ছেড়ে গেছে এখন সেইজন্য আমাকে শাস্তি দিচ্ছ। এই লোকের রাগ আমার উপর মিটাচ্ছ। তুমি কেমন মা? তোমার মতো মা আমার দরকার নেই। আমি তোমাকে মা বলে অস্বীকার করলাম।

অহিমা বেগম ভেঙে পড়েন খুব। এটা ঠিক অনেক সময় তিনি স্বামীর রাগ মেয়ের উপর তুলেছেন কিন্তু তার মানে এই নয় তিনি নিজের মেয়েকে ভালোবাসেন না। তার খারাপ চান। যদি এমনটাই হতো তাহলে অনেক আগেই অহনাকে ছেড়ে চলে যেতেন। অহিমা বেগম শুধু নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই এতগুলো দিন সমাজের লোকের কত কথা সহ্য করেছেন। আত আজ সেই মেয়েই তাকে এভাবে বলতে পারল।

অহিমা বেগম অহনার কাছে ছুটে এসে বললেন, অহনা আমার কথা শোন। তুই আমাকে ভুল বুঝছিস।

আমি ভুল বুঝছি না। তুমি আমাকে টাচ করবে না। দূর হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। ডা*ইনি কোথাকার।

অহনা বেগম এবার ডুকরে কেঁদে ওঠেন। আহাজারি করে বলেন, তুই আমার মেয়ে অহনা। আমি জানি কত কষ্ট করে তোকে বড় করেছি। আর আজ তুই আমাকে এভাবে বললি। তাও একটা বাইরের ছেলের জন্য।

এসব নাটক অন্য কোথায় গিয়ে করো।

অহনা আর না দাঁড়িয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। সিরাজুল ইসলামের খারাপ লাগে নিজের স্ত্রীর জন্য। তিনি জানেন তিনি অনেক অন্যায় করেছেন তাই অহনা তার প্রতি যা আচরণ করেছে তা নিয়ে তার কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু তার স্ত্রীর প্রতি যে আচরণ করল সেটা একেবারেই অন্যায়।

অহিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে যান। মুক্তরও মন খারাপ হয়ে যায় এসব দেখে। তাই সেও নিজের গাড়িতে উঠে ঢাকার দিকে রওনা দেয় কাউকে কিছু না বলেই।

❤️
সকালে অহনার ঘুম ভাঙে তার দাদির আহাজারি শুনে। কি হয়েছে বুঝতে না পেরে বাইরে আসে অহনা। বাইরে এসে দেখে সাদা কাপড়ে মোড়ানো অহিমা বেগমের মৃতদেহ। অহনা পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়। রাগের মাথায় নিজের মাকে অনেক কিছু বলে দিয়েছিল। পরিণতি যে এমন হবে সেটা ভাবতে পারেনি।

মায়ের নিথর দেহের সামনে বসে অহনা বলতে থাকে, চোখ খোল আম্মু। ও আম্মু তাকাও আমার দিকে। আমি জানি আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু সেই কারণে আমাকে এত বড় শাস্তি দিওনা। ও আম্মু আমাকে ক্ষমা করে দেও। আম্মু গো

অহিমা বেগম আর ওঠেন না। কারণ গতরাতেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। নিজের মেয়ের দেওয়া কষ্ট তিনি মেনে নিতে পারেন নি। একবুক কষ্ট নিয়েই চলে গেলেন নি। এখন আফসোস করেও আর কোন লাভ নেই অহনার।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here