পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্ব ১২

0
214

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১২
#Jhorna_Islam

দোস্ত প্লিজ দোস্ত বের কর আমায়।

-‘ তুই আগে বল ওখানে গেছিস কি জন্য?
চোখে কি কম দেখিস নাকি মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর কোনটা?

-‘ আরে আমি কি ইচ্ছে করে এখানে এসে আঁটকেছি বলে তোর মনে হয়? আমার কলম পরে গেছে সেটা উঠাতেই তো এসেছিলাম।কে জানতো এমন কিছু ঘটবে? প্লিজ কিছু কর।

-‘তুই আমাকে অনেক জ্বালাস ইসু।

-‘ তোকে জ্বালাবো না তো কাকে জ্বালাবো রে?

নূর ইসরাত কে টান দিয়ে উঠাতে যায় কিন্তু পারে না। উল্টো ব্যাথা পায় ইসরাত। কিছু সময় ভেবে নূর সামনের দুটো বেঞ্চ টেনে ইসরাত যেই তৃতীয় বেঞ্চে বসেছে ঐটার সামনে জায়গা করে দেয়। ইসরাত পরে বেরিয়ে আসে।

বাপরে দোস্ত বাঁচলাম। কে জানতো এমন করে আঁটকে যাবো।

-‘ হয়েছে হয়েছে বুঝে শুনে সব করতে হয় ব’ল’দ একটা।

-‘ ওমাগো কে আমাকে ব’ল’দ বলে।তুমি কি? তুমি বুঝি খুব চা’লাক? বলেই ইসরাত জোরে জোরে হেঁসে উঠে।

নূর ইসরাত কে চাপা ধমক দিয়ে বলে,, তোর এমন বিশ্রি হাসি বন্ধ কর।এটা স্কুল। ক্লাস চলছে সো কিপ কোয়াইট।🤫

ইসরাত নিজের হাসি বন্ধ করে দেয় নূরের কথায়।
তবে যাই বলিস না কেন নূর আমি একটা কথা মনে মনে ভাবলাম জানিস কি?

কি?

ইসসসস দোস্ত তালহা স্যার যদি আমার প্রেমে এমন করে আঁটকে যেতোরে। কি যে ভালো হতো।

-‘ হ্যা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। সারাক্ষণ তালহা স্যার, তালতা স্যার করা লাগে? আমি বুঝি না স্যারকে কেন এতো বিরক্ত করিস তুই। কচুর ভালোবাসা। স্যার পাত্তা দেয় না তাও পিছন পিছন ঘুরে।

-‘ কচুর ভালোবাসা না কি সেদিন তুমি ও বুঝবে যেদিন সৌন্দর্য স্যারের প্রেমে পিছলে পরবে হুহ।

-‘ সে গুড়ে বালি। এমন কোনোদিন ও হবে না, আমি ঐ ব’জ্জাত ব’দমেজাজী স্যারের প্রেমে কখনো পরবো না।

-‘হুম হুম দেখা যাবে।

-‘ হুম চোখ খুলে রাখিস দেখতে পাবি।

**********
সৌন্দর্য ভার্সিটির কিছু অফিসিয়ালি কাজ শেষ করে মাত্রই বের হয়েছে । খিদে লেগেছে প্রচুর কাজের মাঝে ঢুকলে আর খাওয়ার কথা মনে থাকে না। ঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। এরমধ্যে সৌন্দর্যের ফোনে মেসেজ আসে সৌন্দর্য পকেট থেকে ফোনটা বের করে মেসেজ অপশনে ঢুকে।
মেসেজ পরে আবার ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে বারান্দা দিয়ে হেঁটে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।

দরজায় টো’কা দিয়ে বলে,,”মে আই কামিং স্যার?”

-‘ ইয়েস কাম গম্ভীর কন্ঠে আওয়াজ আসে।

সৌন্দর্য মনে মনে ভাবলো হাওয়া আজ মনে হচ্ছে গরম। কি হয়েছে কে জানে তাছাড়া পিওনের থেকে খবর পেয়েছে নূর কে ডেকে পাঠিয়ে কি যেনো বলেছে। ঐ ‘ব’ল’দ মেয়ে আবার কিছু উল্টো পাল্টা বলেনি তো? কে জানে কি কথা হয়েছে দুইজনের মধ্যে।

-‘কি হলো? সব ভাবনা কি দরজার সামনে দাঁড়িয়েই ভেবে ফেলা হচ্ছে নাকি? (প্রিন্সিপাল স্যার)

সৌন্দর্যের ভাবনার ঘোর কাটে।গলা খে’কাড়ি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।

-‘ বসো। খবরের কাগজে চোখ রেখেই বলেন প্রিন্সিপাল স্যার।

সৌন্দর্য চুপ করে বসে পরে।

-‘ কিছু বলবেন ব- না মানে স্যার?

-‘ না বললে কি ডাকা যাবে না?

-‘ আমি কি তা বলেছি? ভার্সিটিতে তো কোনো কারণ ছাড়া আমাকে ডাকা হয় বলে মনে পরছে না আমার।

-‘ কথায় পারা যাবে না তোমার সাথে।

-‘ দেখতে হবে না আমি কে! ভুলে গেছো নাকি আমি মি.ওয়াহিদ।

-‘ হ্যা জুনিয়র ওয়াহিদ। তা মি. ওয়াহিদ আপনি বোধয় ভুলে গেছেন আপনি মি.ওয়াহিদ হলে আমিও মি.ওয়াহিদ। সিনিয়র ওয়াহিদ।

-‘ ভুলবো কেন? আমার স্মৃতি শক্তি এতো দূর্বল না বুঝলে বড়ো আব্বু? ওপস সরি এখন তো বলা যাবে না বুঝলেন স্যার?

-‘ একটা ভুল হয়ে গেছে। সময় টা দেখে নাও এখন অফ পিরিওড চলছে। সো বড় আব্বু বলতেই পারো।

-‘ ইয়াহ!

-‘ বাই দা ওয়ে তোমার মতো পিওন কিন্তু আমাকেও একটা খবর দিয়েছে। কোথায় পাঠিয়েছো?

-‘ মা কে তার মেয়ের কাছে পাঠিয়েছি।

-‘ এটা একটু জোর জবরদস্তি হয়ে গেলো না? নূর কে ও একটু সময় দেওয়া দরকার আর তাছাড়া আমার কানে কিন্তু আসছে তুমি রু’ডলি বিহেভ করেছো তার সাথে।

-‘ ব’ল’দ টা তোমাকে এটাও বলেছে?

-‘ সৌন্দর্য? চোখ গরম করে বলে মি. রুপম ওয়াহিদ।

-‘ বড় আব্বু তুমি ওর জন্য আমাকে চোখ রাঙাচ্ছো?দিস ইজ নট ফেয়ার। আর আমি ওর সাথে রুড বিহেভ করছি ওর গা’ধামীর জন্যই।এই বয়সে এসেও নিজের ভালো মন্দ আর কথা বলাটা ও মনে হয় ভালো করে শিখেনি। আর ও যেমন মেয়ে নিজে থেকে কিছু করবে বলে তোমার মনে হয়? সারাক্ষণ নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকে তাই যা করার আমাকেই করতে হয় বুঝলে?

-‘ হুম বুঝলাম। তবে বেশি প্রেশার ক্রিয়েট করো না যাতে মেন্টাল ট্রেস পরে।

-‘ আমি এতোটা ও বোকা না বড় আব্বু যাতে করে নিজে নিজের বউকে ট্রেস দিবো মেন্টালি।এমনিতেই বিয়ের বিষয় টা নিয়ে অনেক প্রেশার নিচ্ছে। আই থিংক এবার সবকিছু বলে দেওয়াই ভালো। বিয়ের আগেই বলা উচিৎ ছিলো কিন্তু আংকেলই তো কিছু বলতে দিলো না।

-‘ ওমমম আংকেল?

-‘ শ্বশুর আব্বা। একটু লাজুক ভাব নিয়ে বলে সৌন্দর্য। সৌন্দর্যের কথার ধরণে জোরে হেঁসে উঠে মি.রুপম ওয়াহিদ।

*********
নূরের মায়ের সকাল থেকেই মন খারাপ এসব পরিস্থিতিতে মনে হয় আগে কখনো পরেনি।বাড়ির এমন ঠান্ডা পরিবেশ মোটেও তার কাছে ভালো লাগছে না। নূর আর তার বাবা মনে হয় প্রতিযোগিতায় নেমেছে। না খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করছে আর না কথা বলছে ভালো করে। আজও সেই ভোর বেলা উঠে চলে গেছে অফিসে কাজ আছে বলে।অথচ এতো বছরেও এতো সকালে না খেয়ে বের হতে দেখেনি। কি শুরু করছে এরা বাপ বেটি মিলে।

এই যে একটু আগে কল করলো নূরের বাবাকে বলল খেয়ে নিয়েছে। অথচ নূরের মায়ের কথাটা বিশ্বাস হলো না। কারণ লোকটার শরীর দিন দিন অবনতি হচ্ছে। রাতে ঠিক মতো ঘুমায় ও না সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দেয়। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না উনি।হুট করেই মাথার মধ্যে একটা জিনিস খেলা করে। ফোনটা বিছানা থেকে তুলে কাউকে কল লাগায় নূরের মা।

********

প্রচন্ড গরমে সকলের অবস্থা খারাপ। বাহিরে প্রচন্ড পরিমাণে রোদ, সবকিছু শুকিয়ে যেনো কাঠ হয়ে আছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টির দেখা মিল্লেও গরম কিছুতেই কমছে না। গরম যেনো আরো বাড়িয়ে দিয়ে যায় বৃষ্টি। এই গরমে বাইরে বের হয়ে ও শান্তি নেই। গরমে ঘেমে নেয়ে শরীর একাকার।

বর্তমানে নূর ইসরাত ফাতিহা হেঁটে আর রিকশায় চড়ে ঢাকা শহরের অলিগলি ঘুরে চলেছে। ফাতিহা কিছু টা ক্লান্ত হয়ে গেছে। গরমে খারাপ ও লাগছে কিছু টা শরীর। তবুও কিছু বলছে না ঘুরতে তার অনেক ভালো লাগছে। নূর ফাতিহার দিকে তাকিয়ে দেখে ফাতিহাকে কেমন ক্লান্ত লাগছে।গুলুমুলু গাল দুটো কেমন লাল হয়ে গেছে। অনেক সময় নিয়ে হেঁটেছে নিশ্চয়ই পা দুটি ব্যাথা হয়ে গেছে। নূর একটু নিচু হয়ে ফাতিহার গালে চুমু খেয়ে নেয়, তারপর কোলে তুলে ইসরাত কে বলে,,আশেপাশে কোনো দোকান আছে কিনা দেখার জন্য। আইসক্রিম খাবে সকলেরই গলা শুকিয়ে গিয়েছে।

নূরের কোলে থাকা ফাতিহার ফুলো লাল গাল দুটো দেখে ইসরাত আল্লাদ করে টেনে দিয়ে বলে,,ওরে আমার গুলুমুলু বাচ্চা টা।

ওফফফ মাম্মার ফ্রেন্ড আমি এসব লাইক করি না একদম আমার গালে হাত দিবে না, গাল মুছতে মুছতে বলে ফাতিহা।

এহহ ঢং একদম আমার গালে হাত দিবে না কেনোরে তোর গালে কি স্বর্ন লাগানো আছে নাকি? আর কি ভাব একদম বাপের ফটোকপি।

ইসরাতের এহেম কথা শুনে ফাতিহা নূরের দিকে তাকায়। নূর ইসরাত কে বলে,,ইসরাত কি শুরু করলি আমরা সকলেই খুব ক্লান্ত একটা বসার জায়গা বের কর না।

হুম ঠিক আছে চল বলেই ওরা এদিক ওদিক একটা রেস্টুরেন্ট খুঁজতে থাকে। একটু গিয়ে একটা আইসক্রিম পার্লার পেয়ে যায় ওটাতেই ঢুকে পরে তিনজন।

এইদিকে সৌন্দর্য একের পর এক কল দিয়ে চলেছে নূরের ফোন বারবার বেজে কেটে যাচ্ছে। ড্রাইভার কে কল করে জানতে পেরেছে তারা স্কুল থেকে বের হয়ে গাড়ি না নিয়েই কোথায় গেছে। এইদিকে অনেক বেলা হয়ে যাচ্ছে সেইদিকে কি তাদের খেয়াল নেই? ফোন টা রাখে কেন? এতো কেয়ার লেস মানুষ সৌন্দর্য আর দুটো দেখেনি ইচ্ছে করছে ঠাস করে ফোনটা একটা আছাড় দিতে। ইসরাত কে কল দেয় নূরকে ফোনে না পেয়ে কিন্তু কিসের কি সব এক গোয়ালেরই তো গরু। এই মেয়ে কি করে ফোন ধরবে? আমিও না বলেই সৌন্দর্য একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। পা’গল করে ছাড়বে এই দুই মেয়ে সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। কোনো উপায় না পেয়ে নূরের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে রওনা দেয় তাদের উদ্দেশ্যে।

নূর,ফাতিহা আর ইসরাত মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছে। আহ কি শান্তি এই গরমে আইসক্রিমটা কে তাদের অমৃত বলে মনে হচ্ছে।
এই অমৃত কে ব’দ হজম করানোর জন্য যে একজন আসতেছে সেই দিকে তাদের খেয়াল নেই।

#চলবে,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here