#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam
আস্তে আস্তে ঘড়ির কাটা ঘুরে চলেছে। সময় বসে নেই তার নিজ দায়িত্বে অতিবাহিত হচ্ছে। নূর মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে কিছু সময় হ্যাং হয়ে বসে ছিলো।মন বারবার বলছে কল আর মেসেজ দেওয়া লোকটা মি.সৌন্দর্য ওয়াহিদ। এসব ভাবনার মাঝেই নূরের মায়ের ডাক আসে খাবার খাওয়ার জন্য। নূর আসছি বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে খাবার খাওয়ার জন্য চলে যায়।
খাবার টেবিলে কাউকেই দেখতে পায় না নূর। নূরের মা রান্না ঘরে কাজ করছিল নূর ডেকে জিজ্ঞেস করলো বাকি রা সব কোথায় মা?
-‘ বাকিরা কেউ বাসায় নেই।
-‘ কোথায় গেছে?
-‘ তূর প্রাইভেটে গেছে আর তোর বাবা সেই সকাল ৬ টায় ই বেরিয়ে গেছে না খেয়ে।
-‘ এতো সকাল সকাল যে? কোনো কাজ আছে নাকি?
-‘ আমাকে কি তোর বাপ কিছু বলে? এতো কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন? চুপচাপ খাবার রাখা আছে টেবিলে খেয়ে নে।
নূর বুঝতে পারলো পরিবেশ গরম আছে। মা তার কোনো কারণে রেগে আছে তাই আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ খেতে বসে।
পুরোদিন নূরের শুয়ে বসেই কেটে যায়। একদিনেই যেনো শরীর টা অনেক ভালো হয়ে গেছে। ফ্রেশ লাগছে অনেক মনটা ও শান্ত আছে। এরমধ্যে ফোনের কথা একদম মাথা থেকে বের হয়ে গেছে। ফোন যে কোথায় রেখেছে সেটা ও হয়তো মনে নেই নূরের।
*********
পরের দিন সকাল হতেই ব্যস্ত জীবন শুরু। ক্লাস টিউশন, পড়াশোনা।ইসরাত সকাল সকাল ফোন দিয়ে বলেছে যেহেতু নূরের শরীর তেমন একটা ভালো না যেনো ভার্সিটিতে না যায়। নূর বলে দিয়েছে সে একদম ঠিক আছে এবং কলেজেও যাবে। ইসরাত সৌন্দর্যের ভয় ও দেখিয়েছে এই বলে যে,আজ যদি ভার্সিটি যায় তাহলে রাগারাগি করবে।নূর তাও জানিয়ে দিয়েছে সে যাবে।
যথাসময়ে ভার্সিটিতে আসে দুজন। প্রথম ক্লাস করার পরই পিওন এসে জানায় আর ক্লাস হবে না। আর নূরকে বলে যায় প্রিন্সিপাল তাকে ডাকছে অফিস রুমে।
নূর শুকনো ঢুক গিলে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,, কি জন্য ডাকছেরে ইসু? আমি কি কিছু ভুল করেছি?
-‘ আগে গিয়ে দেখ কি জন্য ডাকছে পরে তো বুঝতে পারবি।এখন শুধু শুধু সাত-পাঁচ ভেবে টেনশন নিয়ে কি কোনো লাভ আছে?
-‘ আমি একা কিছুতেই যাবো না তুই ও চল আমার সাথে।
-‘ আমিতো যাবোই। আমি অফিস রুমের সামনে দাঁড়াবো তুই ভিতরে গিয়ে জিজ্ঞেস করবি কেন ডেকেছে ।
-‘ এই না দোস্ত তুই ও ভিতরে যাবি আমার সাথে।
-‘ স্যার ডেকেছে তোকে আমি গিয়ে কি করবো শুনি? পরে স্যার আমাকে কিছু বললে?
-‘ কিছু হবে না চল না দোস্ত।
-‘ আচ্ছা ঠিক আছে চল।
দুইজন বর্তমানে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইসরাত এতো করে বলছে ঢুকতে নূর কিছুতেই ঢুকছে না।উল্টো ইসরাত কে ঠেলছে আগে যাওয়ার জন্য নূর পিছনে পিছনে আসবে।
এরমধ্যে ভিতর থেকে ডাক আসে কি হলো ভিতরে এসো।
ইসরাত নূরকে ঠেলে ভিতরে পাঠিয়ে দেয়।নিজে আর যায় না। প্রথম পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে বুঝলো নূরের সময় লাগবে হয়তো বের হতে তাই সাইডে চলে যায়। অনেক দিন হলো তালহা কে জ্বালানো হয় না।
নূর প্রিন্সিপালের সামনে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বলে,, জ্বি – জ্বি স্যার।
-‘ বসো।
-‘ না না স্যার আমি এমনিই ঠিক আছি আপনি বলুন কিজন্য ডেকেছেন আমাকে।
-‘ আরে বসো তুমি।
নূর একটা চেয়ারে বসে। হাতের তালু গুলো ভয়ে ঘেমে গেছে কে জানে কি বলবে স্যার। পুরো ভার্সিটিতে দুইজন স্যার কে সকলেই ভয় পায় এক প্রিন্সিপাল স্যার আরেকটা সৌন্দর্য স্যার।কিছু স্যার ম্যাডাম পর্যন্ত ভয় পায়।
-‘ তুমি আমার নাম জানো?.
স্যারের এমন কথায় নূর মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়, সে জানে নাম। নূরের মাথা দোলানো দেখে স্যার মুচকি হাসে।
-‘ তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে আম্মু?
-‘ জ্বি স্যার ভালো।
গুড মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো।তোমাকে নিয়ে আমাদের পুরো ভার্সিটির অনেক আশা। আর কোনো ঝামেলা হলে আমাকে জানাবে ঠিক আছে?
নূর মাথা নাড়ায়।
আচ্ছা তবে আজ বাড়ি যাও।আর আমার কিন্তু আরেকটা পরিচয় আছে সেটা তোমাকে এখন বলবো না। সেটা না-হয় সারপ্রাইজ রইলো।
নূর স্যারের কথায় মুচকি হেসে বের হয়ে যায়। এতো সময়ের আঁটকে রাখা নিশ্বাস টা যেনো এখন নিচ্ছে।
কিন্তু নূর স্বস্তিতে নিশ্বাস নিক এটা হয়তো কেউই চায় না তাইতো আবার ও পিওনের ডাক আসে।সৌন্দর্য স্যার তাকে দেখা করতে বলেছে।পাঁচ মিনিটের মধ্যে যেনো গিয়ে দেখা করে খুব আর্জেন্ট।এই লোকটা কি শুরু করছে নূর বুঝতে পারছে না। এটা যে একটা ভার্সিটি লোকটা কি জানে না?এইদিকে ইসরাত কে ও দেখতে পাচ্ছে না কোথাও।
-‘ ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি।পিওন কে বলে নূর।
-‘ না না এখনই আমার সাথে নিয়ে যেতে বলেছে স্যার।আপনি আমার সাথে চলুন।
লোকটা তো বেশ অসহ্য কি বজ্জাত। নূরের খুব রাগ লাগছে তবুও কিছু করার নেই স্যার বলে কথা। চলুন বলে নূর পিওনের আগে আগেই চলতে থাকে।নূর ভুলবশত অনুমতি ছাড়াই কক্ষে ঢুকে পরে।
“বুড়ো বয়সে কি তোমাকে এখন হাতে ধরে ধরে আদব কায়দা শিখাতে হবে পরাণ ?”
মা-মানে?
মানে স্যারদের রুম বা অন্য কোথাও প্রবেশ করতে গেলে যে পার্মিশন নিয়ে ঢুকতে হয় সেটা কি জানা আছে? ব্রু কোচকে জিজ্ঞেস করে সৌন্দর্য।
নূর যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। ছাত্রীদেরকে ও যে পরাণ-ফরাণ বলে ডাকা যায় না সেটা মনে হয় আপনার জানা নেই। আমার নাম ইয়ানূর নট পরাণ।
ভেরি ইমপ্রেসিভ। আমিতো এটাই চাই।
নূর সৌন্দর্যের কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে কি চান আপনি?
— নাথিং। যে কাজের জন্য ডেকেছি আজতো আর ক্লাস নেই তাই না?
–হুু।
— ড্রাইভার কে বলা আছে গিয়ে গাড়িতে বসো।ফাতিহার স্কুলে যাও ওকে আজ তুমি স্কুল থেকে আনবে।আমিও যেতাম বাট আনফরচোনেটলি আমার কাজ পরে গেছে।
–কিন্তু?
— সাথে ইসরাত কেও নিয়ে যেতে পারো। যাও।
–ঠিক আছে কিন্তু আমি আপনাদের বাড়িতে যাবো না।
-তোমাকে আমি আমার বাড়িতে নিয়ে ও যাবো না। এতো সহজ না আমার বাড়িতে যাওয়া। কিছু সময় ফাতিহার সাথে কাটাবে দেন ড্রাইভার তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবে।
নূর আর ইসরাত ফাতিহার স্কুলের যেতে থাকে। নূর মনে মনে ভাবছে কেন জানি মনে হচ্ছে সৌন্দর্য তাকে কনট্রোল করছে। কিছুই ভালো লাগছে না। ফাতিহা মেয়ে টা তো কোনো দোষ করেনি। আর যাই হোক ঐ বাচ্চা মেয়েটার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবে না নূর। মাম্মা ডাকে মেয়েটা তাকে সেই ডাকের মান সে রাখবে। আরো নানান ধরনের ভাবনা ভাবতে ভাবতে ফাতিহার স্কুলে এসে পরে দুজন।
স্কুলে গিয়ে জানতে পারে আরো এক ক্লাস আছে তারপর ছুটি হবে। যদিও বা স্কুল চলাকালীন সময়ে কেউ ভিতরে প্রবেশ করে হাঁটাহাটি করতে পারে না সম্পূর্ণ নিষেধ।অভিভাবকদের জন্য আলাদা জায়গা আছে। কিন্তু ইসরাত যেখানে আছে সেখানে কিছুই অসম্ভব না মনে হয়। স্কুল ম্যামকে বলে স্পেশাল পার্মিশন নিয়ে নিয়েছে।
দুইজন মিলে পুরো স্কুল ঘুরে ঘুরে দেখছে। বেশ পরিপাটি ও সুন্দর পরিবেশ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বড়লোকদের ব্যাপার স্যাপার।ঘুরতে ঘুরতে দুইজনই হাঁপিয়ে যায়।এরমধ্যে ফাঁকা একটা ক্লাস রুম দেখতে পায়। ইসরাত কিছু না বলে গিয়ে বসে পরে খুব টায়ার্ড লাগছে।ইসরাতের পিছু পিছু নূর ও গিয়ে বসে। শুধু শুধু বসে থাকতে তো আর ভালো লাগে না তাই ইসরাত ফোন বের করে। তালহা কে মেসেজ দিবে তখন লোকটা কল ও ধরেনি মেসেজ ও সিন করেনি। ফোন বের করতে গিয়ে ব্যাগ থেকে কলম বেঞ্চের নিচে পরে যায়। ইসরাত ফোনের দিকে তাকিয়েই নিচু হয়ে সেটা উঠাতে যায় কিন্তু নাগাল পায় না। কলম আনতে বেঞ্চের ভিতর ঢুকে পরে।
কলম নিয়ে উঠতে যাবে তখন আঁটকে যায় আর উঠতে পারে না। ইসরাতের স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালো আর এসব বেঞ্চ বাচ্চাদের তাই আঁটকে যায়।
নূর এই নূর দেখ না আমি আঁটকে গেছি।
তুই ঐখানে কি করতে গেছিস?
আগে আমাকে বের কর দোস্ত।
নূর ইসরাতের হাত ধরে টান দেয় কিন্তু কিছুই লাভ হয় না।
#চলবে,,,,?
সবকিছুই সামনে আসবে আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন।আর কেমন হলো জানাবেন।