পদ্মরাগ পর্ব- ০৯

0
337

#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী


পরীর মনে ইজ্বাকে নিয়ে তখনো তেমন অনুভূতি জন্মায়নি কারণ ইজ্বার বিয়ে অন্যকারোর সঙ্গে হবে সেটা তার মনের মধ্যে গেঁথে রেখেছে। তাই অন্যকোনো কাঁটা তাকে বিধ্বস্ত করতে পারেনি। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে সে।

ওদিকে আবির নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছে, পরীর বিয়ে হয়ে যাবে সেটাতো ভালো কথা, খুশির খবর। তার তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু সে খুশি হতে পারছে না কেন? হোয়াই?
ইজ্বা এসব ভেবে রেগে নিজের হাত দিয়ে টি-টেবিলে জোড়ে আঘাত করে, রক্ত পড়ছিল হাত দিয়ে। কিন্তু তাতে তার কিচ্ছু আসে যায় না, সে শুধু নিজের মনকে আওড়াতে থাকে পরীর জন্য তার এত টান কিসের। কেন সে পরীর কিছু হলে নিজেকে সামলাতে পারে না।
অনেকক্ষণ এগুলো আওড়াতে আওড়াতে ইজ্বা আবিষ্কার করলো, সে পরীকে ভালোবাসে, প্রচণ্ড ভালোবাসে।
যখন ইজ্বা বুঝতে পারল সে পরীকে ভালোবাসে মুচকি হেসে হাতে নিজে নিজেই ব্যান্ডেজ করে নিল।

সকালে পরীকে রুশেন আরা ডাকেন,

রুশেন আরা- নয়টা বাজতেছে মেয়ে এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে?

পরী-মা আরেকটু ঘুমায়।

রুশেন আরা-দেখ মেয়ের আবদার, উঠ বলছি।

পরী- দিলেতো ঘুম ভাঙ্গিয়ে। ভাল্লাগেনা।

রুশেন আরা- ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

পরী- রেডি হবো কেন মা?

রুশেন আরা- কলেজের জন্যে। কিন্তু আজ একটু সাজুগুজো করিস তো। তুই যা মেয়ে পেতনীর মতো কলেজ যাস।

পরী- সাজবো। সাজবো কেন?

রুশেন আরা- ওরা বলেছে তোর উডবি বর সজীব নাকি কলেজে দেখা করবে।

পরী- কলেজে?

রুশেন আরা-হুম, কলেজে।

পরী মনে মনে ভাবে, কলেজে হলে আরো ভালো হবে, এনাকন্ডাটা বেশ কেঁপে যাবে, বড় বড় চোখ করে তাকাবে। ওয়াও এটাইতো পরী চাই, ইজ্বা ভাইয়া রাগলে একদম এনাকন্ডা লাগে।

কলেজে পরী একদিন অন্য ডিপার্টমেন্টের ছেলে রনির সঙ্গে কথা বলছিল,কখনো হেসে হেসে, কখনো মুখ গুরুগম্ভীর করে। এক দুই মিনিট নয় প্রায় একঘন্টা ধরে। সেদিন পরী ইজ্বার ক্লাসও করেনি। শুধু রনির সঙ্গে কথা বলার জন্যে। ইজ্বা তো রেগে ফায়ার, পরিকে ইজ্বা এতক্ষণ ফলো করেছিল।
শেষ অবধি সহ্য করতে না পেরে পরীকে অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। ইজ্বার অফিসের সামনে কোন স্টুডেন্ট খুব প্রয়োজন ছাড়া যায় না। সবাই ইজ্বার ওপর ক্রাশ খেলেও সবাই ভয় পায়।
পরীর দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে ইজ্বা পরীর দিকে এগিয়ে আসছিল। পরীও ক্রমে পিছিয়ে পড়ছিল। হঠাৎ পিছনের চেয়ারে ধাক্কা খেয়ে পরী পরে যাবে তখনই ইজ্বা তাকে বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে। অনেকক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল। ইজ্বা হঠাৎ নড়েচড়ে নাকের অপর চশমাটা নামিয়ে বলে,

ইজ্বা-ওই ছেলেটা কে?

ইজ্বার চোখ রক্তাভ। গা রাগে কাঁপছে।
ওদিকে পরী কখনো ইজ্বাকে এতটা রাগতে দেখেনি তাই সেও ভয়ে কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতে পরীর চোখে জল এসে যায়। ইজ্বা পরীর চোখে জল দেখে নিতুকে বলে,

ইজ্বা-কাঁদছিস কেন? বল ছেলেটা কে?

পরী- বয়ফ্রেন্ড।

ইজ্বা- কি?

পরী-হুঁ বয়ফ্রেন্ড। ছেলেটা মৌ এর বয়ফ্রেন্ড রনি। ওদের ঝগড়া হয়েছে তাই আমি রনিকে………

অন্যকিছু বলার আগেই ইজ্বা পরীকে ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে রয়।
পরী বেচারি প্রথম ভয় পেয়েছিল কিন্তু পরে আবিষ্কার করে ও যদি কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলে ইজ্বা রেগে যায়। তার মানে তাকে ইজ্বা ভালোবাসে। পরী এই কথা ভেবে আবার নিজের মাথায় নিজে গাট্টা দিয়ে বলে,
পরী- দূর,আমি ইজ্বা ভাইয়ার বোন তাই অন্যছেলের সঙ্গে কথা বলছি তাই রেগে গিয়েছেন। যাইহোক আজ ইজ্বা ভাইয়ার এনাকন্ডা রুপটা সত্যি সত্যি দেখলাম। আমার দেওয়া নাম সার্থক হয়েছে আজ। কি আনন্দ !

তাই পরীর আজ তার উডবি বর রনির সঙ্গে কলেজে দেখা করতে কোনো প্রবলেম নেই। পরী ইজ্বার এনাকন্ডা রুপ আরেকবার দেখতে চায়। নিজের দেওয়া নামের সার্থকতা খুঁজতে চায়। ইজ্বাকে যে রাগলে একদম এনাকন্ডা লাগে সেটা আবার দেখতে চায়।

তাই পরী মাকে জড়িয়ে ধরে বলে

পরী- মা আজ যে রনি আমাদের কলেজে আসবে ইজ্বা ভাইয়াকে বলো না, প্লিজজ।

রুশেন আরা-কেন বলব না?

পরী- কারণ বলতে পারব না, বলো বলবে না।

রুশেন আরা- হুঁ। কখন যে তোর মাথায় কি আছে কেউ জানেনা।তাড়াতাড়ি হয়ে তাড়াতাড়ি আমায় উদ্ধার কর মা।

রেডি হয়ে সবাই ব্রেকফ্রাস্ট করতে টেবিলে। পরী আজ একটা নীল রঙের শাড়ি পড়েছে। ইজ্বা পরীর থেকে চোখই সরাতে পারছে না। ইজ্বা নিজ মনে মনে বলতে থাকে,
আজ পরীকে এত সুন্দর লাগছে আগে তো এরকম লাগেনি। হায় আমার দিলকা রানী।আমার কিউটিরানী লাভ ইউ সো মাচ। মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি যেন আকাশ থেকে ডানাকাটা পরী নেমে এসেছে।

খাওয়া-দাওয়া শেষে পরী আর ইজ্বা এক সঙ্গে কলেজে যাওয়ার জন্যে বের হলো। হঠাৎ ইজ্বা গাড়ি থামিয়ে পরীকে চুপচাপ বসে থাকতে বলে কিছুক্ষণের জন্য চলে যায়।
একগুচ্ছ নীল রঙের চুরি কিনে আনল পরীর জন্য। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পকেট থেকে চুরিগুলো বের করে বলল,
ইজ্বা- এই নে সব কিছুই ঠিক ছিল সাজগুজের কিন্তু চুরি পড়তে ভুলে গেলি। গাঁধা একটা।

পরী-আমি গাঁধা!

-হুঁ,তুই গাঁধা, গর্দভ।

পরী-গাড়ি থামাও।

ইজ্বা-কেন?

পরী-আমি বলছি তাই।

ইজ্বা-ওকে, যা হুকুম মেমসাহেব।
পরী গাড়ি থেকে নেমে কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
পরী-আমি আর তোমার গাড়ি করে যাব না। আমি গদর্ভ, গাঁধা। মাইফোট

পরীরর দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে থাকিয়ে ইজ্বা মনে মনে বলে,

ইজ্বা- ইশশশ পরীরানীকে কেঁপিয়ে দিয়েছি মনে হয়। দূর আমিই বা এত ওকে কেঁপায় কেন? পরীরানীকে কেঁপাতে আমার এতো ভালো লাগে কেন? চুরিটাই দেওয়া হলো না। পাগলী একটা।

পরী হাঁটতে শুরু করল। ইজ্বা গাড়িটা স্প্রিটে চালিয়ে পরীর সামনে দাড় করিয়ে দিয়ে বলে,
ইজ্বা – কলেজ এখনো অনেক দূরে পেতনী। আর এই যে এতো সাজোগুজো করেছো যদি হেঁটে যাও সব নষ্ট হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং গাড়ি করেই চলে আস।

পরী-না আমি তোমার গাড়িতে আর যাব না।

ইজ্বা- যাবি না?

পরী- না।

ইজ্বা- ওকে, গুড বাইইইই।

এই বলে ইজ্বা নিজ মনে ফন্দি আঁটলো। পরী তাকে একটু হলেও ভালোবাসে কিনা তা জানার জন্যে সে পরীকে পরিক্ষা করতে চায়।
ইজ্বা জানে কলেজের প্রায় মেয়ে তার প্রতি ক্রাস খেয়েছে। সব মেয়ে ইজ্বার সঙ্গে গা ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলতে আসে। তবে বলতে পারে না ভয় পেয়ে।
ঐশিও তাদের একজন ইজ্বার জন্য একদম ছন্নছাড়া পাগল। ইজ্বা রাস্তার ওপাশে ঐশিকে দেখে ডাক দেয়। ঐশি ইজ্বার ডাক শোনে উন্মাদের মতো ছুটে আসে।

হাসিমাখা কন্ঠে বলে

ঐশি-জ্বী স্যার,

ইজ্বা-কলেজেই তো যাচ্ছো।

ঐশি-হ্যাঁ স্যার।

ইজ্বা- আমার গাড়িতে উঠো।

ঐশে- আপনার গাড়িতে!

ইজ্বা- হুম আমার গাড়িতে,

ঔশি গাড়ির পিছনের সিটে উঠছিল, কিন্তু ইজ্বা ঐশিকে সামনে বসতে বলে।
এবার ইজ্বা পরীকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল। ঔশিকে দেখে পরী ভীষণ জ্বলছিল। কিন্তু কেন তার ওদের একসঙ্গে দেখে এতো হিংসে হচ্ছে সে নিজেও জানে না।

…….. সবাই একটু রেসপন্স করবেন নিশ্চয়ই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here