পতিতা পল্লী শেষ পর্ব

0
1808

পতিতা পল্লী
শেষ পর্ব

কিন্তু হঠাৎ একদিন রহমত চাচা এসে ডালিয়া আর অরন্যকে বলল

—কে জানি এসেছে ডালিয়ার খোজ করতে।অরণ্য বাবা আর ডালিয়া মা নীচে গিয়ে দেখে এসো তো।

অরণ্য আর ডালিয়া তখন বসে বসে গল্প করছিল।আর অরণ্য মনে মনে ভাবছিল যে আজকে ডালিয়াকে প্রপোজ করবে।আর ডালিয়াকে প্রপোজ করতে নিয়েছিল ঠিক এ মুহুর্তে চাচার এ কথা শোনে ডালিয়া আর অরণ্য নীচে গেল।নীচে গিয়ে অরণ্য খেয়াল করল একটা মধ্য বয়স্ক অপরিচিত লোক এসেছে।অরণ্য লোকটাকে ঠিক চিনতে পারল না।তাই অরণ্য লোকটা জিজ্ঞেস করল

—আপনি কে? এখানে কি জন্য?আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম।

অপরদিকে ডালিয়া লোকটাকে দেখে ভয়ে মুচরে গেল কারন লোকটা আর কেউ না লোকটা তার প্রাক্তন স্বামী।লোকটা ডালিয়াকে দেখে বলল

—তুই আমার সাথে চল।তোরে বিয়া করছি এখানে রাখার জন্য

লোকটাকে ডালিয়ার সাথে এভাবে কথা বলতে দেখে বেশ রেগে গেল।অরন্য লোকটাকে রাগী কন্ঠে জবাব দিল।

—কে আপনি? এখানে এসে এভাবে অসভ্যতা করছেন যে।আপনার তো সাহস কম না আমার বাড়িতে এসে আমার বউ এর সাথে অসভ্য ভাষায় কথা বলছেন।

লোকটা এবার বিদঘুটে হাসি দিয়ে জবাব দিল

—আপনার বউ কি করে হয়? একে তো আমি ২ বছর আগে বিয়ে করেছিলাম এ আমার বউ আপনি একে জিজ্ঞেস করেন।আমাদের ডিভোর্স ও হয় নি। আমার বউ এর সাথে আমি যেভাবে ইচ্ছা কথা বলব তাত তোর কি?আমি আমার বউকে নিয়ে যেতে এসেছি তোর বাপের কি তাতে?

অরণ্য লোকটার কথা শোনে বুঝতে পারল এ আর কেউ না এ ডালিয়ার প্রাক্তন স্বামী।এবার অরণ্য আরও রেগে গেল।অরণ্যের রক্ত যেন মাথায় চড়ে গেল।অরণ্য কিছু বলার আগেই লোকটা ডালিয়ার হাত ধরে বলল

—চল আমার সাথে চল তোরে আর কষ্ট দিমু না।তুই আমার সাথে থাকবি।

ডালিয়া হাতটা ছুটানো চেষ্টা করল।কিন্তু শক্তি সাথে পেরে উঠচিল না।তাই চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলতে লাগল

–আমাকে ছাড়েন আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।আমার হাত ছাড়েন।

অরণ্য লোকটার কান্ড দেখে রেগেমেগে বলল

— ডালিয়ার হাত ছাড়ুন বলছি।তা না হলে ভালো হবে না বলছি।

লোকটা আবার ও বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল

— আমার বউকে আমি ধরেছি তাতে তোর কি?আমি ছাড়ব না।ডালিয়াকে আমার সাথে করে নিয়ে যাব।বেশি তেড়িবেড়ি করলে অন্যের বউ অপহরণ করার মামলা ঠুকে দিব কিন্তু।

—হাত ছাড়ুন ডালিয়ার, না হয় ভালো হবে না।

— ছাড়ুম না হাত।ডালিয়া আমার বউ।তুই কি করবি কর।

এ বলে ডালিয়ার হাত টেনে নিয়ে যেতে চাইল।অরণ্য বেশ রেগে ডালিয়াকে ঐ লোকটার হাত থেকে ছুটিয়ে লোকটাকে কষিয়ে চড় মারল আর বলল

—জানোয়ার,বেহায়া,নির্লজ্জ, কাপুরুষ লজ্জা লাগে না ডালিয়াকে বউ এর পরিচয় দিতে।বাপের বয়সী হয়ে একটা মেয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে করেছিস।আমারে মামলার ভয় দেখাস।১৪ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে বাল্য বিবাহ করেছিস,বিয়ের রাতে নিজের স্ত্রীকে অন্য পরুষ দিয়ে ধর্ষণ করাইছিস,নিজের বউরে নিজে ধর্ষন করছিস,কুত্তার বাচ্চা তুই তো একটা ধর্ষক,তারপর নিজের বউরে পতিতা পল্লীতে বিক্রি করে দিছিস।তুই তো একটা পাচাকারী।তুই আমার নামে কি মামলা করবি আমি তের নামে এখন বাল্যবিবাহ করার,পাচার করার আর ধর্ষণের মামলা করুম।দেখি তুই কিভাবে বাচিঁস।

এসব বলে লোকটাকে অরণ্য আরও কয়েকটা কিল ঘুষি দিল।তারপর পুলিশকে ফোন দিল।পুলিশ তাৎক্ষণিক এসে বলল

—জ্বী অরণ্য সাহেব বলেন।

—এই যে এই লোকটাকে ধরে নিয়ে যান।আপনাকে তো ফোনে সব জানিয়েছি এ লোকটার কাহিনী।একে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন।

—ধন্যবাদ অরন্য সাহেব আমরা একে নিয়ে যাচ্ছি।আপনি সময় করে একবার থানায় এসে ফাইল করে যাবেন।আর আমরা লোকটার নামে চার্জসিট রেডি করে রাখব।

—আপনাকেও ধন্যবাদ।

তারপর পুলিশগুলো লোকটাকে ধরে নিয়ে গেল।ডালিয়া শুধু নীরব দর্শকের মত সবটা দেখল।ডালিয়ার চোখের জল যেন ছল ছল করে পড়তে লাগল।অরণ্য ডালিয়াকে কাছে টেনে বলল

—ভয় পেও না আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না।

ডালিয়া চুপ করে সব শোনল।অরণ্যের প্রতি আরও মুগ্ধ হয়ে গেল।যতই অরণ্যকে দেখছে ততই যেন ডালিয়ার ভালোবাসাটা দ্বিগুন হতে লাগল।

কিন্তু এ ঘটনার প্রভাবটা মনে হয় অরণ্যের মনে দাগ কেটেছিল।সেদিনের পর থেকে অরণ্য ডালিয়ার সাথে খুব বেশি কথা বলত না।ডালিয়া বুঝতে পারছিল না অফিসের ব্যাস্ততার জন্য এমন করছে নাকি ডালিয়ার উপর অরণ্যের ক্ষোভ জন্মেছে এজন্য।নাকি অরণ্যের ডালিয়াকে মানতে কষ্ট হচ্ছে।এসব ভেবে ডালিয়া কিছুটা অস্থির হয়ে গেল।ইদানিং ডালিয়ার শরীরটা ও বেশ খারাপ হতে লাগল।শরীরটা যেন দিন দিন দুর্বল হতে লাগল।একটা ডাক্তার দেখানো দরকার কিন্তু অরণ্যকে বললে যদি রেগে যায়।তাই সিদ্ধান্ত নিল ডালিয়া তার বাবাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে।ডালিয়া তার বাবার কাছে গিয়ে বলল

—বাবা আমার সাথে একটু বাইরে যেতে পারবা?

—কেন মা কোথায় যাবি?

— ডাক্তারের কাছে যাব।

—কেন রে মা কি হয়েছে তোর?

—আরে ঐরকম কিছু না।চল যায়।

—মা রে আমার তো এক পা ভাঙ্গা আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলে আরও জামেলা হবে।আমাকে সামলাবি নাকি ডাক্তার দেখাবি।এর থেকে ভালো তুই তোর রহমত চাচাকে নিয়ে যা।

—আচ্ছা বাবা।

ডালিয়া তার বাবার রুম থেকে বের হয়ে রহমত চাচাকে ডাকতে লাগল

—রহমত চাচা,রহমত চাচা।

—কিরে মা কি হয়েছে?

—আমার সাথে একটু চলো তো।

—কোথায় যাব আগে সেটা তো বল।

—ডাক্তারের কাছে যাব একটু

—কেন রে মা তোর কি হয়েছে।

—আরে তেমন কিছু না একটু শরীর খারাপ। ডাক্তার দেখাইয়া ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।চল তো।

—অরণ্যকে বলি।

—আরে ওকে বলতে হবে জানই তো ও ইদানিং ও অনেক বিজি।শুধু শুধু ওর চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেই।

—আরে, আরে আমার মা টা দেখি বেশ সংসারী হয়ে গেছে।

কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল

—হয়েছে এবার চলো তো।

—আরে আমাকে পান্জাবীটা তো পাল্টাতে দিবি তো।আমি পান্জাবি পাল্টাইয়া আসি আগে।

—আচ্ছা তাড়াতাড়ি আস।

রহমত চাচা কিছুক্ষণ এর মধ্যে নতুন পান্জাবী পড়ে এসে ডালিয়া কে বলল

—এবার চল মা।

তারপর দুজন মিলে ডাক্তারের কাছে গেল।ডালিয়া ডাক্তারের সিরিয়াল দিল। অতঃপর ডাক্তার দেখাল।ডাক্তার দেখিয়ে চেম্বার থেকে বের হল। রহমত চাচা ডালিয়াকে দেখে বলল

—কি রে মা ডাক্তার কি বলল?কোন সমস্যা নাই তো।

ডালিয়া একরাশ হাসি দিয়ে বলল

—আরে চাচা এত চিন্তা কর না তো কোন সমস্যা নাই। সব ঠিক আছে।কিছু টেস্ট দিয়েছে।আজকে করে যাব কালকে সকালে রিপোর্ট দিলে ডাক্তারকে আবার দেখাব।এমনি সব ঠিক আছে।

—তাহলে যা টেস্ট গুলা করিয়ে আয়।আমি এখানে বসি।

আচ্ছা চাচা, এই বলে ডালিয়া টেস্ট গুলো করে বের হল।তারপর রহমত চাচা আর ডালিয়া বাসায় ফিরল।ডালিয়ার ফিরেই অরণ্যের জন্য রান্না করল।অরণ্য আসার পর ডালিয়া অরণ্যকে খেতে দিল।অরণ্য তেমন কোন কথা ডালিয়ার সাথে বলল না।ডালিয়া ভিতরে ভিতরে বেশ কষ্ট পেতে লাগল।সত্যিই কি অরণ্য ব্যাস্ততার জন্য এমন করছে নাকি অন্য কিছু।এসব ভেবে ভেবে ডালিয়া না খেয়েই ঘুমিয়ে গেল।সকালে উঠে দেখল অরণ্য ডালিয়াকে না বলেই হাসপাতালে চলে গেছে ।ডালিয়া বিষয় টা ভেবে বেশ কষ্ট পেল।তারপর রহমত চাচাকে ডাকতে লাগল

—রহমত চাচা, রহমত চাচা তাড়াতাড়ি বের হও ডাক্তারের কাছে যাব রিপোর্ট দেখাতে।

—ডালিয়া মা তুই আজকে একটু একা যা। আমার আজকে কাজ আছে।ড্রাইবারকে নিয়ে গাড়ি করে চলে যা।

–আচ্ছা চাচা

ডালিয়া রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।ডালিয়া বাসায় এসে দেখল বাসার মেইন দরজাটা খোলা।ঘরে কোন আলো নেই।ডালিয়া এমন দেখে বেশ চমকে গেল।কারন এমন তো কখনও হয় নি।ডালিয়া ঘরে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে দেখল চারপাশে কেউ নেই।ডালিয়া, রহমত চাচা,বাবা,বলে ডাকতে লাগল।কেউ কোন সাড়া দিল না।ডালিয়া তাদের রুমে গিয়ে দেখল কেউ নেই।ডালিয়া বেশ ভয় পেয়ে গেল।ভাবতে লাগল কারও কিছু হয় নি তো।ভয়ে ভয়ে ডালিয়া চারপাশ তাকাল।খেয়াল করল চারপাশে কেউ নেই।ডালিয়ার ভয়টা যেন আরও বেড়ে গেল।হঠাৎ ডালিয়ার চোখ গেল অরণ্যের রুমে। ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্যের রুমের লাইট জ্বালানে।ডালিয়া দৌঁড়ে অরণ্যের রুমে গিয়ে দেখল অরণ্য চেয়ারে বসে বসে হাসছে।ডালিয়া বুঝতে পারল না অরণ্য এভাবে হাসছে কেন।ডালিয়া বেশ চমকে গেল অরণ্যের হাসি দেখে।ভয়ে ভয়ে ডালিয়া জিজ্ঞেস করল

—আপনি এভাবে হাসছেন কেন?

—হারামজাদী হাসব না তো কাঁদব?

অরণ্যের কথা শোনে ডালিয়ার মথায় যেন আকাশ ভেঙে গেল।কারন এ কোন অরণ্যকে ডালিয়া দেখছে।আর অরণ্য এভাবে কথা বলছে কেন?তাহলে কি অরণ্য আগের রূপে ফিরে গেছে।ডালিয়া ভয়ে ভয়ে স্তব্ধ স্বরে অরণ্যকে জিজ্ঞেস করল

—-আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন?

অরণ্য আবার বিদঘুটে একটা হসি দিল।আর বলল

—এভাবে কথা বলব না তো কিভাবে বলব।তুই কি ভেবেছিস আমি ভলো হয়ে গেছি।আমি তোর সাথে এতদিন অভিনয় করেছি।হারামজাদী তোর কথায় ভালো হয়ে যাব ভাবলি কি করে?

অরণ্যের কথা শোনে ডালিয়ার মাথাটা যেন ঝিমঝিম করতে লাগল।ডালিয়া হঠাৎ দাঁড়ানো থেকে বসে পড়ল।অরণ্য খেয়াল করল ডালিয়া নীচে বসে পড়েছে।অরণ্য তাড়াতাড়ি ডালিয়ার কাছে গেল।আর বলল

—ডালু ডালু কি হয়েছে তোমার? আমি তো মজা করছিলাম। আমার কিছু হয় নি।দেখ আমি ঠিক আছি একটু চারদিকটা তে খেয়াল করে দেখ।

ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে মাথা তুলে চারদিক খেয়াল করে দেখল বেলুন আর ফুল দিয়ে পুরা রুম সাজানো।এতক্ষণ ডালিয়া এগুলা খেয়ালেই করে নি।হঠাৎ রহমত চাচা আর ডালিয়ার বাবা আর অরণ্য বেলুন ফাটাতে লাগল আর বলতে লাগল হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।ওহ ডালিয়ার আজকে জন্মদিন ডালিয়া নিজেও ভুলে গিয়েছিল।আর ভুলবেই বা না কেন যে পথে সে গিয়েছে সেখানে এসব আবেগে কোন মূল্য নেই। ডালিয়া বেশ বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল

—আমার জন্মদিন আপনি জানলেন কিভাবে?

—তোমার বাবা বলেছে।

কিন্তু ডালিয়া এবার কাঁদতে কঁদতে তার রুমে চলে গেল।অরণ্য বুঝতে পারল না ডালিয়া এভাবে কেন কাঁদল।অরণ্য ও দৌঁড়ে ডালু ডালু বলে ডালিয়ার রুমে গিয়ে বলল

—ডালু কাঁদছ কেন?কি হয়েছে?আমি কি তোমাকে খুব বেশি কষ্ট দিছি।

ডালিয়া অরণ্যের কলার ধরে বলল

—আপনাকেকে কতবার বলেছি এসব মজা আমার সাথে করবেন না।তবুও কেন এসব মজা করে আমাকে কষ্ট দেন।আমাকে কেন আপনি যন্ত্রণা দেন।।এসব মজা আমার ভালে লাগে না।এসব মজা করলে যে আমি ভয় পেয়ে যায় আমার কট হয় সেটা কি আপনি বুঝেন না।তবুও কেন এমন করেন বলেন।

এটা বলে ডালিয়া অরণ্যের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল।আর অরণ্য ডালিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল

—ডালু সরি আমি আর কোনদিন এমন মজা করব না।আমি বুঝতে পারি নি তুমি এতটা কষ্ট পাবে।আমি তো সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এমন করছিলাম।তুমি বল আজকে আমার থেকে কি চাও আমি তাই দিব,সেটা মানার চেষ্টা করব।কিন্তু প্লিজ তুমি কান্না কর না।প্লিজ তুমি কান্না থামও এভাবে কাঁদলে যে আমার অনেক কষ্ট হয়।তুমি বুঝ না আমি তোমাকে ভালোবাসি ডালিয়া।

ডালিয়া কান্না থামিয়ে অরণ্যকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে বলল

—আপনি আমাকে কথা দিন আপনি সবসময় এমন থাকবেন।আপনাকে কোন মেয়ে বা আমিও যদি ছলনা করে ঠকায় তবুও আপনি আগের মত হবে ন না।আমি আপনার কাছে শুধু এটাই চাই।

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে বেশ অবাক হল।ডালিয়া তার নিজের জন্য কিছুই চাইল।উল্টা অরণ্যের ভালো চাইল।অরণ্য ডালিয়ার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল

—কথা দিলাম ডালু আমি আর কোনদিন আগের মত হব না।প্লিজ তুমি ঐ রুমে চল সবাই অপেক্ষা করছে।আর কান্নাকাটি কর না।

ডালিয়া চোখ মুছে বলল

—চলেন।

তারপর ডালিয়া আর অরণ্য ঐ রুমে গেল।একসাথে কেক কাটল।অরণ্য ডালিয়ার হাতে রিং পড়িয়ে দিল।আর ঠিক করল ৭ দিন পরেই বিয়ে করবে।ডালিয়ার বাবা আর রহমত চাচাও বেশ খশি হল।সবাই সিদ্ধান্ত নিল ঘরুয়া ভাবেই বিয়ে হবে।আর ডালিয়াকে অরণ্য একটা কাগজ দিল আর বলল এটা হল ঐ লোকটার সাথে তোমার ডিভোর্স এর কাগজ সাইন করে দাও।তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।আমাদের মাঝে তাহলে কেউ আর বাধা দিতে পারবে না।ডালিয়াও সাইন করে দিল।অরণ্য ডালিয়াকে বলল

—বিয়ে ঘরুয়া ভাবে হলেও আমি চাই তুমি পরীর মত সাজ।তোমাকে নিয়ে এ কয়দিন শুধু শপিং করব।

ডালিয়াও বেশ খুশি হল।রাতে নিজের রুমে এসে ডালিয়া আংটি টা দেখতে লাগল।পরদিন দুজন মিলে শপিং এ গেল।ডালিয়া আর অরণ্য শাড়ির দোকানে গেল।ডালিয়াকে অরণ্য একটা নীল শাড়ি দেখিয়ে বলল

—ডালু তুমি এ নীল শাড়িটা নাও তোমাকে বেশ মানাবে।

ডালিয়া মুচকি হেসে জবাব দিল

—আমি জানি আপনার নীল পছন্দ তাই বলে বিয়ের দিন নীল পড়ব।আমি বিয়েরদিন লাল শাড়ি পড়ব।লাল টুকটুকে বউ সাজব।আমি একটা লাল শাড়ি কিনব।

—আচ্ছা আমার ডালুর যা ইচ্ছা হয় তাই কিনে দিব।

ডালিয়া একটা টকটকে লাল শাড়ি কিনল।রকমারী গহনা কিনল।অরণ্য ও শেরওয়ানি কিনল।আস্তে আস্তে সময় ও পার হল।সপ্নের মত যেন সুখের সময় টা পার হতে লাগল।আর কালকে ডালিয়া আর অরণ্যের বিয়ে।বিয়ের কথা মনে হয়ে অরণ্য বেশ আনন্দ পেতে লাগল।ডালিয়াকে আপন করে পাবে এটা ভেবেই যেন অরণ্যের মনটা খুশি হয়ে যেতে লাগল।এসব ভাবতে ভাবতেই অরণ্য ঘুমিয়ে গেল।পরদিন সকালে রহমত চাচার ডাকে অরণ্যের ঘুম ভাঙ্গল।রহমত চাচা হাপাঁতে হাঁপাতে বলতে লাগল

—-অরণ্য ডালিয়া,ডালিয়া!!!

—কি হয়েছে চাচা তুমি এমন করছ কেন? ডালিয়ার কি হয়েছে?

—ডালিয়াকে কোথাও পাচ্ছি না।সারা বাড়ি তন্ন তন্ন খুজেছি ডালিয়া কোথাও নেই

—এত সকালে কেথায় গেছে।কি বলছ চাচা

—হ্যা বাবা সত্যি বলছি তুমি এসে দেখে যাও।

অরণ্যও সারা বাড়ি খুজে ডালিয়াকে পেল না।ডালিয়ার রুমে দেখল ডালিয়া নেই।সাথে ডালিয়াকে কিনে দেওয়া শাড়ি আর গহনা গুলোও নেই।হঠাৎ অরণ্যের চোখ গেল ডালিয়ার টেবিলের উপর।দেখল একটা কাগজ গ্লাসের নীচে চাপা দেওয়া।কাগজটা খুলে দেখল ডালিয়ার অগোছাল হাতের লেখা আর সেখানে ডালিয়া লিখল

“আমাকে মাফ দিন।আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।শাড়ি আর গয়না গুলো নিয়ে গেলাম।আর আপনার সাথে যা করেছি সবটা আমার ছলনা।আপনি মাফ করে দিন আমাকে”

চিঠিটা পরে অরণ্যের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।ডালিয়া এমন একটা কাজ করল বিশ্বাসেই করতে পারছে না।দিন গড়িয়ে রাত হল ডালিয়া আর আসল না।অরণ্য মনে মনে ভাবল ডালিয়া তাকে ঠকালেও সে ডালিয়াকে ঠকাবে না।ডালিয়ার কথা সে রাখবে।সে আর আগের জীবনে যাবে না।সবকিছু ঠিক মত করবে।তবে এটা আবার ও প্রমাণ হল”মেয়ে মানুষ ছলনাময়ী বিষাক্ত জাল”

আস্তে আস্তে দিন পার হতে লাগল অরণ্যও অরণ্যের গতিতে চলতে লাগল।কেটে গেল ৩ টা মাস।হঠাৎ একদিন অরণ্য খেয়াল করল মাবিহা এসেছে।মাবিহাকে দেখে অরণ্য বপশ চমকে গেল।আর মাবিহা দেখার পর অরণ্যের ও একটা ক্ষুদ্র মায়া জন্মালো।মাবিহা কে অরণ্য জিজ্ঞেস করল

—মাবিহা তুমি হঠাৎ।

—ভয় পেও না আমি তোমার সাথে জোর করে থাকতে আসি নি।আমি তোমাকে একটা বলতে এসেছি।

মাবিহার শান্ত স্বরের জবাব শোনে অরণ্যের একটা মায়া কাজ করল মাবিহার প্রতি।অরণ্য মাবিহাকে জিজ্ঞেস করল কি কথা বল।

মাবিহা অরণ্যের দিকে একটা…..

মাবিহা অরণ্যের দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে অরণ্যের হাতটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল

—আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?একটা শেষ সুযোগ কি দেওয়া যায় না?।আমি যে অণুতপ্তের আগুনে পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে গেছি।আমাকে মাফ করে দাও।আমাকে তোমার করে নাও।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ আমার চোখে কোন ছলনা নেই।আমায় মাফ করে দাও অরণ্য।

অরণ্য মাবিহার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখল মাবিহাকে বেশ নিষ্পাপ লাগছে।আজকে মাবিহার চোখে অরণ্য কোন ছলনার ছাপ দেখতে পারছে না।আজকে মাবিহাকে অনেক পবিত্র লাগছে।আর সত্যিই তো মাবিহা একটা ভুল করেছে তাকে তো সে ভুল শুধরানোর সুযোগ দেওয়া উচিত।মাবিহার প্রতি হঠাৎ একটা মায়া জন্মালো অরণ্যের।এ মায়ার জাল ছিড়ে যেন অরণ্য বের হতে পারছিল না।তাই অরণ্য মাবিহাকে জড়িয়ে ধরে বলল

—আমার এ ছন্নছাড়া জীবনে কেন জড়াতে চাও।তুমি যে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবা।

মাবিহাও কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল

—তুমি আমাকে যত পার কষ্ট দাও তবুও আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

পাশ থেকে রহমত চাচা বলে উঠল

—অরণ্য বাবা মাবিহা মা যেহুত ভুল বুঝতে পেরেছে তাকে ক্ষমা করে দাও।তাকে আর কষ্ট দিও না।তাকে শুধরানোর একটা সুযোগ দাও।তোমরা আজকেই বিয়ে নাও।

অরণ্য, মাবিহার কথা ভেবে রহমত চাচার কথা ফেলতে পারল না।অতঃপর তারা বিয়ে করে নিল।মাবিহাও আগের থেকে বদলে গেল।মাবিহা ডাক্তারি করা ছেড়ে দিয়েছিল আরও আগেই।অরণ্য চাই না মাবিহা জব করুক।আর মাবিহাও অরণ্যের বউ বলে পরিচয় দিতেই বেশি ভালো বোধ করত।মাবিহা বেশ মানিয়ে নিল অরণ্যের সাথে।মাবিহাকে পেয়ে অরণ্যও বেশ খুশি ছিল।একমাস পর মাবিহা অরণ্যকে বলল

–একটা কথা বলার ছিল

অরন্য মাবিহার কোমরে হাত দিয়ে কানে কানে বলল

—কি কথা?

মাবিহা অরণ্যের দিকে ফিরে অরণ্যের কানে একটা চুমু দিয়ে বলল

—তুমি বাবা হতে চলেছ। আমাদের পরিবারে নতুন অতিথি আসতে শুরু করেছে।

অরণ্য মাবিহার কথা শোনে খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেল।মাবিহাকে কোলে নিয়ে ঘুরাতে লাগল।মাবিহা বলল

—আরে আস্তে আস্তে।বাবু ব্যাথা পাবে যে।

অরণ্য জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল

—ওহ সরি। আজকে থেকে তোমার বাড়ির সব কাজ করা বন্ধ।আজকে থেকে শুধু রেস্ট নিবা।আমি চায় না বাবু আর বাবুর মায়ের কোন ক্ষতি হোক।

মাবিহাও সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল।অরণ্য আর মাবিহার জীবন বেশ ভালোয় কাটতে লাগল।তারা বেশ ভালোই সময় কাটাতে লাগল।অরণ্য মাবিহার একটা বিষয়ে প্রথমে আপত্তি করলেও অরণ্য পরে আর এ বিষয় নিয়ে আপত্তি করে নি।কারন মাবিহা প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা আলাদা করে কি করত সেটা অরণ্যকে বলত না।প্রথম প্রথম অরণ্য জানতে চাইলেও পরে ভাবল হয়ত সংসারের কোন কাজের জন্য রেখেছে তাই পরে আর এটা নিয়া মাবিহাকে কিছু বলে নি। আস্তে আস্তে মাবিহার ডেলিভারীর সময় আসল।একদিন হঠাৎ মাবিহা ব্যাথায় চিল্লাতে লাগল।অরণ্য মাবিহাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল।ডাক্তার মাবিহাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে গেল তাড়াতাড়ি ।আর বের হয়ে বলল

—অরণ্য সাহেব আমরা আপনার স্ত্রী কে বাঁচাতে পারি নি সরি।আপনার সন্তান ভালো আছে।আর আপনার কন্যা সন্তান হয়েছে।

অরণ্যের ভিতরা টা যেন একথা শোনে দুমরে মুচরে গেল।অরণ্য দৌঁড়ে মাবিহার কাছে গিয়ে দেখল মাবিহার নিথর দেহটা পড়ে আছে।মাবিহাকে জড়িয়ে ধরে অরণ্য চিল্লায়ে কাঁদতে লাগল।হঠাৎ অরণ্য খেয়াল করল কেউ একজন তার কাঁধে হাত রেখেছে।অরণ্য পিছন ফিরে যা দেখল নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না।খেয়াল করল ডালিয়া দাঁড়ানো।অরণ্য ডালিয়াকে দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল

—ডালিয়া তুমি এখানে?তুমি এতদিন কোথায় ছিলে।দেখ মাবিহা মরে গেছে।

—হুম জানি অরণ্য মাবিহা মরে গেছে।আর এটাই যে হওয়ার ছিল

—মানে?

—তাহলে শোন। সেদিন আমি রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম।হঠাৎ খেয়াল করলাম মাবিহা ডাক্তারের কাছে গেছে আর বেশ আচ্ছন্ন মনে ছিল। মাবিহার চেহারাটা দেখে কেন জানি না আমার মনে হচ্ছিল কিছু একটা হয়েছে।আমি দৌঁড়ে মাবিহা যেখানে ডাক্তার দেখিয়েছিল সেখানে গেলাম।সেখানে গিয়ে যা শোনলাম নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।কারন জানতে পারলাম মাবিহার বড় একটা রোগ ধরা পড়েছে আর মাবিহা বাঁচবে মাত্র ২ থেকে ৩ বছর।একথা শোনে আমি বেশ চমকে গেলাম।পরদিন মাবিহার সাথে যোগাযোগ করলাম।মাবিহা বেশ কষ্ট পাচ্ছিল।নিজের এ রোগের জন্য বারবার নিজেকে দায়ী করছিল।ভাবছিল যে, তোমাকে কষ্ট দিয়েছে তাই তার এমন হয়েছে।কিন্তু তার খুব শখ ছিল তোমার ভালোবাসা নিয়ে মারার।আমি মাবিহাকে অনেক করে বললাম তুমি অরণ্যকে বিয়ে কর আমি অরণ্যের জীবন থেকে চলে যাব। মাবিহা রাজি হল না।কিন্তু এদিকে আমি জানতে পারলাম আমি কখনও মা হতে পারব না।তাই মাবিহাকে বললাম

—মাবিহা আমি অরণ্যকে কখনও বাচ্চা দিতে পারব না।তুমি ওকে বিয়ে কর আর একটা বাচ্চা নাও।তারপর তোমার কিছু হলে আমি তোমার বাচ্চার দায়ভার নিব।আমি চাই তুমি অরণ্যের ভালোবাসা পাও।প্লিজ না কর না।

মাবিহা হতাশ কন্ঠে বলল

—কিন্তু সে তো আমায় ভালোবাসে না ডালিয়া।সে তো তোমাকে ভালোবাসে।আমি চাই না তোমাদের মাঝে আসতে।

—আমাদের মাঝে তুমি আস নি বরং তোমাদের মাঝেই আমি এসে পড়েছি।অরণ্য তোমাকে ভালোবেসেই বিয়ে করবে।শুধু আমার কথাটা শোনে যেও।

সেদিন আমার জোরাজোরি তে মাবিহা রাজি না হয়ে পারল না।সে রাজি হল।সে ডাক্তারে কাছে জানতে পারল এসময় সে বাচ্চা নিতে পারবে কিনা।ডাক্তার তাকে বলল বাচ্চা নেওয়া যাবে।তবে এতে ঝুঁকি বেশি হয়ত ডেলিভারীর সময় মমত্যু ঘটবে।মাবিহা এটাই স্থির করল সে তোমাকে বিয়ে করে বাচ্চা নিবে।কিন্তু আমি তোমার জীবনে থাকলে মাবিহা কখনও তোমাকে পেত না তাই এত বড় নাটক করেছি।আর আমি যদি তোমাকে এ ঘটনা বলতাম তাহলে তোমার মাবিহার প্রতি শুধু দয়া আসত ভালোবাসা না।

“আমি চেয়েছি মাবিহাকে তুমি ভালোবাস।চেয়েছি সে তোমার ভালোবাসা পেয়ে মরুক।মাবিহা নিজের ভুল শুধরে নিয়েছিল।আমি চেয়েছি সে তার ভুল শুধরানোর পুরুষ্কার পাক।”

তার জন্যই এত বড় নাটক করা।আর মাবিহা ১৫ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে পাঠাত আমার খাওয়া খরচের জন্য।তুমি হাজারবার জানতে চাইলেও সে বলে নি।আর আমাকেও সে একলা ছাড়ে নি।তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে।প্রতিদিন কথা হত আমাদের।আর আজকে যখন মাবিহার পেইন উঠল আমাকেই প্রথম ফোন দিয়েছিল।মাবিহা ডাক্তারকে আগেই বলে দিয়েছিল তোমাকে যেন না জানানো হয়।ডাক্তার তাই করল।এবার তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মেনে নেব।যদি মনে কর আমি আর মাবিহা তোমাকে ঠকিয়েছি তাহলে তুমি যা শাস্তি দিবে তাই মেনে নিব।

ডালিয়ার কথা শোনে অরণ্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল।কারন মাবিহা এত বড় একটা রোগ নিয়ে ছিল কত যন্ত্রণায় না তাকে সহ্য করতে হয়েছে।কিন্তু অরণ্যকে বুঝতে দেয় নি।হাসি মুখে সবসময় কথা বলেছে।আর ডালিয়া নিজের ভালোবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দিল সেটাও কাউকে বুজতে দিল না।বরং আরও নিজেকে ছলনাময়ী প্রমান করে গেল।

“সত্যিই মেয়েরা ছলনাময়ী এ ছলনা কিছু কিছু মানুষের জীবনে সুখ এনে দেয় আাবার কিছু কিছু মানুষের জীবন শেষ করে দেয়।”

অরণ্য যেদিন প্রথম ছলনার শিকার হয়েছিল তখন তার জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল আর ২য় ছলনা তো অরণ্যের জীবন পাল্টে দিল।
“মেয়েরা যেমন ছলনাময়ী বিষাক্ত জাল তেমনি ছলনাময়ী মায়ার বাধন।”
এ বাধন ছিড়ে যাওয়ার ক্ষমতা কারও নেই।মাবিহার লাশটা অরণ্য জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল

—একটা বার তো বলতে পারতা।দুজনে কষ্টটা ভাগ করে নিতাম।তাহলে না বলে কেন চলে গেলে।না বলে কেন ধোকা দিলে।এ কোন ছলনার মায়ায় আমায় ফেলে গেলে যেখান থেকে বের হতে পারছি না।দেখ তো একবার আমাদের কন্যা সন্তান হয়েছে।তুমি আরেক মায়ার ছলনা রেখে গেলে মাবিহা।মাবিহা দেখ ডালিয়া এসেছে।তুমি তো তাকে কিছু বল।এ মেয়েটা যে তোমাকে অনেক ভালোবাসে।

এদিকে ডালিয়াও কাঁদতে লাগল।ডালিয়া মাবিহার বাচ্চাটা কুলে জড়াইয়া নিয়ে বলতে লাগল

—তোর এক মা চলে গিয়েছে তো কি হয়েছে আমি আছি তো।তোর মায়েরা যে কষ্ট গুলো পেয়েছে তোকে সে সব কষ্ট থেকে আগলে রাখব মা।তোর কাছে কোন কষ্ট আসতে দিবনা।আর অরণ্যকে বলল-তোমার বাচ্চার মা হিসেবে কি আমাকে গ্রহন করবে।

অরণ্য ডালিয়ার কাছে এসে বলল

—তুমি ছাড়া আমার মেয়েকে কে দেখবে বল।মাবিহা তো আমার মেয়ের ভার আগেই তোমাকে দিয়ে গেছে।এত বড় ছলনায় করেছ যে এ ছলনার মায়া থেকে বের হতে পারব না।

ডালিয়া আর অরণ্য কাঁদতে লাগল।মাবিহাকে তারা কবর দিল।কিছুদিন পর অরণ্য ডালিয়াকে বিয়ে করে নিল।আর ডালিয়াও তার ভালোবাসা ফিরে পেল।অরণ্য আর ডালিয়া সুখে সংসার করতে লাগল।

সেদিনের ঘটনার পর ডালু আর অরুর জীবন পাল্টে গেল।ডালিয়া এখন সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে একটা সংগঠন খুলেছে।সেখানে সুবিধাবঞ্চিত বিভিন্ন নারীদের কাজের ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।

আর পতিতা পল্লীর যেসব মেয়েদের জোর করে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল তাদেরকেও উদ্ধার করে কাজের ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। ডালিয়ার বেশ সময় পার হয়ে যায়,বাচ্চা,সংসার আর এসব সামাজিক কাজ করে।আর ডালিয়া আর অরণ্যের মেয়ের নাম রেখেছে “মালিয়া” মাবিহা নামের প্রথম অক্ষর মা আর ডালিয়ার নামের শেষ অক্ষর লিয়ার সম্বনয়ে।মাবিহায় এ নাম টা ডালিয়াকে বলে গিয়েছিল।বলেছিল যদি তাদের মেয়ে হয় এ নাম যেন রাখা হয়।।অরণ্য ডালিয়ার মোড় পাল্টে গিয়ে তারা সুখে সংসার করতে লাগল।

পতিতা পল্লীর নাম শুনলেই আমরা সভ্য সমাজের লোকরা তাদের প্রতি একটা ঘৃনার চাদর মুড়ে দিয়ে কথা বলি।কিন্তু তাদের এ পথে আসার আগের গল্পটা আমরা কখনও শুনি না।কখনও এটা জানতে চায় না তারা কেন এখানে কেন এসেছে।তাদের এখানে আাসার আগে যে হাজারটা কারন,হাজারটা গল্প আর কাহিনী থাকে তা আমারা না জেনেই তাদের নিকৃষ্ট বলতে আমাদের সভ্য সমাজের মুখে আটকায়।

একটু সহানুভূতি আর ভলোবাসা পেলে যে তারাও কারও কারও জীবনের মোড় বদলাতে পারে তা আমরা বুঝি না।গল্পের ডালিয়ার মত হাজারটা নয়িকা সমাজে থাকলেও অরণ্যের মত নায়কের বেশ অভাব

(আশা করি ইন্ডিং টায় সবাই খুশি।আমি জানতাম সবাই ভাববে ডালিয়া অসুস্থ তাই এমন করেছিল তাই একটু ভিন্ন ভাবে ইন্ডিং দিলাম।আশা করি এমন কেউ সহজে ভাবতে পারি নি।কারন পাঠকের মনে ভাব পাঠক পড়ার আগেই আমি বুঝতে পারি।আাশা করি গল্পটা ভালো লেগেছে।পরের গল্প এর থেকে ভালো হবে ইনশাআল্লাহ)

#সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here