পতিতা পল্লী পর্ব ৫

0
1293

পতিতা পল্লী
৫ম পর্ব
ক্যালেশনঃ গ্রুপ

আর দেখল অরণ্য কার সাথে জানি চেঁচামেচি করছে।ডালিয়া প্রথমে বুঝতে পারছিল না এভাবে জোরে চিৎকার কেন করছে অরণ্য।খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ডালিয়া বুঝার চেষ্টা করল কেন অরণ্য চিৎকার করছে।কিছুক্ষণ পর ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্য কারও সাথে ফোনে কথা বলছে আর ঐ লোকটাকে অরণ্য বলছে

—আমাকে আর কোনদিন ফোন দিবা না তুমি।পৃথিবীতে যদি কাউকে ঘৃণা করি একমাত্র তোমাকে।পৃথিবীর সব মেয়ে জাতি নিকৃষ্ট তার মধ্যে তুমি প্রথম।আমাকে কল দিয়ে জ্বালাবা না তুমি।জানই তো আমি তোমাকে কত ঘৃণা করি।এখন কেন ফোন দাও বলতো।যখন আমার কিছু ছিল না তখন কোথায় ছিলে তুমি।দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট তুৃমি।

এসব বলে ফোনটা কেটে জোরে চিল্লাতে লাগল আর কাঁদতে লাগল।ডালিয়া পড়ালেখা কম করলেও খুব বিচক্ষণ ছিল।ডালিয়ার বুঝতে বাকি রইল না অরণ্যের ভিতরে একটা চাপা কষ্ট আছে।আর যে ফেন দিয়েছে সে একটা মেয়ে।হয়ত তার কাছ থেকেই কষ্টটা পেয়েছে।আর এজন্যই অরণ্য মানসিক রোগীর মত ব্যবহার করে।ডালিয়ার কেন জানি না অরণ্যের প্রতি মায়া হল।অরণ্যের ঘরে যাবে কি না চিন্তা করতে লাগল।কিন্তু গেলে যদি অরণ্য রেগে যায়।
তাই অরণ্য বুঝে উঠার আগেই ডালিয়া চলে আসল নিজের ঘরে।ডালিয়া নিজের ঘরে এসে খাটে হেলান দিয়ে কিছুটা ক্লান্তি নিয়ে চোখ বুজল।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ডালিয়া চোখ খোলল।ডালিয়ার খেয়াল করল অরণ্য তার সামনে দাড়িঁয়ে আছে।হাতে কি যেন একটা নিয়ে।ডালিয়া অরণ্যকে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল

—অরণ্য আপনি?হঠাৎ এখানে?কিজন্য বলুন।

ডালিয়ার কথা শেষ করতে না করতেই অরণ্য পিছনে লুকিয়ে রাখা হাতটা বের করে ডালিয়াকে বেল্ট দিয়ে পিটাতে লাগল।আর ডালিয়া চিৎকার করে করে বলতে লাগল

—আমাকে আর মারবেন না।আল্লাহর দোহাই লাগে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আর মারবেন না দয়াকরে।আমাকে এত কষ্ট দিবেন না।আমাকে মাফ করে দেন।

—হাহাহা তোদের মত মেয়েরা সবচেয়ে খারাপ।দুনিয়াতে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে মেয়ে জাতি।তোরে কষ্ট না দিলে আমার শান্তি লাগবে না।

৪,৫ মিনিট বেল্ট দিয়ে পিটানোর পর অরণ্য ডালিয়াকে বলল

—এবার তুই কান ধরে এক পায়ে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবি।আর যদি কোন উল্টা পাল্টা করিস বুঝিসেই তো তোর কি হাল হবে।

ডালিয়া আর কোন কথা না বাড়িয়ে অরণ্যের কথা মত কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকল।আর অরণ্য ডালিয়াকে দেখে হাসতে লাগল।অনেকক্ষণ পর ডালিয়ার মনে হল পা টা ফেটে যাচ্ছে।মাথাটা ঘোরাচ্ছে।ভয়ে পা টা নামাতেও পারছে না।কারন অরণ্য সামনে দাঁড়ানো।হুট করে ডালিয়ার মাথাটা ঘুরে গেল আর ডালিয়া মেঝেতে পড়ে গেল।ডালিয়ার যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখল ডালিয়া বিছানায় শুয়ে আছে।ডালিয়ার বুঝতে বাকি রইল না অরণ্যই তাকে বিছানায় শুইয়ে রেখে গেছে।এটাও বুঝতে পারল যখনেই কোন মেয়ে তাকে কষ্ট দেয় তখনেই অরণ্য ডালিয়াকে কষ্ট দেয়।গতকাল হয়ত কোন মেয়ে ফোন দিয়ে কিছু বলেছে তাই হয়ত ডালিয়াকে এভাবে শাস্তি দিয়েছে।অরণ্যের প্রতি থাকা রাগটাও যেন এবার ফিকে হয়ে গেল ডালিয়ার।ডালিয়া বেশ ভালোই বুঝতে পারছিল অরণ্য কোন চাপা কষ্ট পেয়েছে।কোন কষ্ট পেয়ে অরণ্য এমন করছে।আর এজন্যই হয়ত অরণ্য ডালিয়ার সাথে এমন করছে।হঠাৎ করে ডালিয়াকে অরণ্যের বাসার চাকর রহমত চাচা ডাক দিল

—মা ডালিয়া তুমি নাস্তা করে নাও।অরণ্য এক দিন এর জন্য বাইরে গেছে।তোমাকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছে।দয়াকরে বাড়ির বাইরে গিয়ে বা পালিয়ে গিয়ে ওকে কষ্ট দিও না।এর আগেও একটা মেয়ে এনেছিল অরন্যের অত্যাচারে পালিয়ে গিয়েছে।অরণ্য তোমাকে জানি অনেক কষ্ট দেয় কিন্তু ওর মনটা অনেক ভালো।দয়াকরে তুমি পালিয়ে যেও না।এখন নাস্তা খেয়ে নাও।

ডালিয়া ওনার কথা শোনে একটু বিস্মিত হল।অনেকদিন পর ডালিয়াকে কেউ এভাবে বাবার মত আদর করে কথা বলেছে।কারণ এ দুবছরে ডালিয়া শুধু পুরুষের রূপ দেখেছে।কিন্তু রহমত চাচার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার চাওয়াতে কোন কুদৃষ্টি নেই।ডালিয়া রহমত চাচার দিকে তাকিয়ে বলল

—চাচা আমি আর কোথায় যাব বলেন।আমার যাওয়ার জায়গা নাই।থাকতে হলে যে এখানেই থাকতে হবে।আপনি চিন্তা করবেন না আমি যাব না।আপনি যান আমি নাস্তা খেয়ে নিচ্ছি।

—কথাটা শোনে স্বস্তি পেলাম মা।চিন্তা তো আর এমনেই করি না।তুমি আমাকে এটুকু বলে চিন্তা মুক্ত করলে মা।

এরপর এসব বলে রহমত চাচা চলে গেল।তারপর ডালিয়া নাস্তা করল আর ভাবতে লাগল অরণ্য কোথায় গেল।আবার ভাবল এ বাড়িতে আাসার পর সে এ বাড়িটাও ঘোরে দেখি নি।অরণ্য আাসার আগে একটু বাড়িটা ঘোরে দেখার খুব ইচ্ছা হল ডালিয়ার।ডালিয়া রুম থেকে বের হয়ে নীচে নামল।খেয়াল করল বাড়িটা বেশ গোছালো।কিন্তু ড্রইং রুমের প্রতিটা দেয়ালে লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ মেয়ে মানুষ।ডালিয়ার লেখাটা পড়ে কেন জানি না লেখাটার নীচে লিখতে ইচ্ছা করল পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃনিত মানুষ পুরুষ মানুষ।কিন্তু মন চাইলেও যে ডালিয়া এ কথাটা লিখতে পারবে না।ডালিয়া চাইলেও যে এটা লিখতে পারবে না।সে ক্ষমতা যে ডালিয়ার নেই।ডালিয়া চাইলেও কোন পুরুষকে শাস্তি দিতে পারবে না।ডালিয়া ড্রইং রূম থেকে আস্তে আস্তে উপরে উঠল।হঠাৎ ডালিয়ার চোখে একটা রুম পড়ল ডালিয়া খেয়াল করল এ রুমটা অন্য সব রূম থেকে একদম আলাদা ভাবে গোছানো।দেয়ালে খেয়াল করল একটা মেয়ের ছবি।মেয়েটা বেশ সুন্দরী।পাশের ছবিটায় খেয়াল করল একটা মহিলার ছবি দেওয়া।এর পাশের ছবিটা তিনজনের গ্রূপ ছবি।তার পাশের ছবিটা অরণ্যের সাথে মেয়েটার বেশ রোমান্টিক একটা ছবি।অরণ্য মেয়েটাকে চোখ ধরে নিয়ে কেকের সামনে নিয়ে গেছে আর ঠিক সে মুহুর্তে ক্লিক করা একটা ছবি।ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্য হয়ত মেয়েটাকে জন্মদিনের সারপ্রাইজ দিচ্ছিল।তার পাশে আরেকটা ছবি সেটাতে মেয়েটা অরণ্যের কান মুলে দিচ্ছিল।পাশের ছবিটার পাশেই একটা ফুলদানিতে তাজা গোলাপ আর রজনী গন্ধা রাখা ছিল।একের পর এক ছবি দেখতে ডালিয়া যেন স্বপ্নের জগৎ কল্পনা করে ফেলতেছিল।ছবিগুলা দেখে চোখের সামনে যেন রেমান্টিক মুহুর্ত গুলা ভেসে উঠল।কেন জানি না ডালিয়ার অরণ্যকে এবার অন্যরকম একটা মানুষ মনে হচ্ছিল।মনে হচ্ছে ছবিতে থাকা অরণ্য যেন একটা অন্য অরণ্য।

ডালিয়া বুঝতে পারছিল না এমেয়েটা আর মহিলাটা কে।ডালিয়া ঐরূম থেকে বের হয়ে পাশে অরণ্যের রুম টা খেয়াল করল আর দেখল অরণ্যের রুমের দরজা খোলা।ডালিয়ার কৌতুহল নিয়ে অরণ্যের রুমে গেল।সেখানে গিয়ে ডালিয়া কিছুটা বিস্মিত হল।কারন ডালিয়া খেয়াল করল সে মেয়েটার একটা বড় ছবি এখানে টানানো আর লাল কালি দয়ে ক্রস করে দাগ টানা অনেক গুলা।ডালিয়া আরও বিস্মিত হয় যে ডালিয়ার অনেক গুলা ছবি এখানে টানানো।কখন যে ঘুমের মধ্যে অরণ্য ডালিয়ার ছবি তুলে এখানে টানিয়েছে ডালিয়া টেরেই পাই নি।আরও খেয়াল করল এখান থেকে ডালিয়ার ৪ টা ছবি লাল কালি দিয়া ক্রস টানা আর ৬ টা ছবিতে এখনও কোন দাগ টানা হয় নি।আরও অবাক হল ডালিয়া খেয়াল করল তার লম্বা চুল গুলাও এখানে দেয়ালে টানানো।ডালিয়া কিছুটা বিস্মিত হল।হঠাৎ রহমত চাচার ডাকে ডালিয়ার ঘোর কাটল।

—ডালিয়া তুমি এ রুমে কি করছ?অরণ্য জানলে তেমাকে শেষ করে দিবে।

—নাহ চাচা হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি।আচ্ছা চাচা অরণ্য এমন কেন করে।তার রুমে এসব কি?

—দেখ মা অরণ্য যদি জানতে পারে আমি তোকে কিছু বলেছি তাহলে খুব কষ্ট পাবে।শুধু এটা জেনে রাখ ও খুব কষ্ট পেয়েছে।পারলে ভালোবাসা দিয়া পাগলটাকে মানুষ বানা।আর এখন তোর রুমে যা আর ভুলেও এ রুমে আসবি না।

ডালিয়া রহমত চাচার কথা শোনে তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে গেল।কিন্তু ডালিয়া বুঝতে পারছিল না ঐ মেয়ে দুইটা কে?কেনই বা অরণ্য ঐ মেয়ের ছবিতে লাল দাগ টেনেছে।আর ঐ মহিলাটায় বা কে?আর তার নিজের ৪ টা ছবিতে কেন দাগ টানা তাও বুঝত পারল না।বেশ বিচক্ষণ থাকার দরুণ খানিকক্ষণ ভাবার পর ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্য তাকে ৪ বার আঘাত করেছে আর এজন্য হয়ত তার ৪ টা ছবিতে দাগ কাটা।ডালিয়া বেশ বুঝতে পারল কোন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হয়ত অরণ্যের মেয়েদের প্রতি ঘৃণা জন্মল গেছে।কিন্তু কি ঘটনা।ডালিয়া চিন্তায় অস্থির হয়ে গেল।সারাদিন ভেবেও কোন কূল কিনAttention
সমস্ত ঘটনা জানবে কিভাবে তাও বুঝতে পারল না।

পরদিন ঘুৃম থেকে উঠে দেখল অরণ্য চলে এসেছে আর বসে টিভি দেখছে।ডালিয়া অরণ্যের সামনে গিয়ে দাড়াল। অরণ্য কিছুটা অবাক হল ডালিয়াকে দেখে।আর দেখে বলল

—তুমি পালিয়ে যাও নি?আমি তে ভেবেছি তুমি পালিয়ে গেছ।আমি তো তোমাকে পালানেোর সুযোগ করে দিছিলাম।তাহলে পালালে না কেন?এখানে থাকলে যে তোমাকে অনেক কষ্ট পেতে হবে ডালিয়া।এ আগের মেয়েটাও পালিয়ে গিয়েছিল।

ডালিয়া অরণ্যের কথাগুলো শোনে কিছুটা অবাক হল।এরকম শান্ত গলায়া কথা বলছে অরণ্য।আবার কোন মতলব আছে কি না সেটাও ভাবতে লাগল।কিন্তু অরণ্যের চোখের দিকে তাকিয়ে ডালিয়ার কেন জানি না মনে হচ্ছিল অরণ্য এবার কোন মতলব আটে নি।তাই শান্ত স্বরে ডালিয়া উত্তর দিল

—আমি কোথায় যাব বলুন।অনেক কষ্ট পেলেও যে আমাকে এখানেই থাকতে হবে।আপনি মেরে ফেললে ও আমাকে এখানে থাকতে হবে।আমার যে পালানোর জায়গা নাই অরণ্য বাবু।এ জীবন থেকে কতবার পালনোর চেষ্টা করেছি কিন্তু বারবার ব্যার্থ হয়েছি।এ জীবন থেকে পালানোর কোন জায়গা নেই।

এবার ডালিয়ার কথা শোনে অরণ্যের একটু মায়া হল।কিছুটা কৌতুহল নিয়ে ডালিয়াকে জিজ্ঞেস করল

—আচ্ছা তুমি এ পেশায় এসেছ কেন?

—ইচ্ছা করে কি কেউ এ পেশায় আসে বাবু।সে এক বড় কাহিনী।

—বল শোনি।

–আপনি সত্যিই কি শোনবেন?

—হ্যা বল।

তারপর ডালিয়া প্রথম থেকে ঘটে যাওয়া তার জীবনের কাহিনী বলল।অরণ্য তার কাহিনী শোনে কিছুটা থমকে গেল।ডালিয়া সমস্ত কাহিনী বলে অরণ্যকে বলতে লাগল আমারও লিখতে মন চায় পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃনিত মানুষ পুরুষ মানুষ।অরণ্য এবার ডালিয়ার চোখ দুটো মুছতে লাগল।অরণ্যের এমন আচরণ ডালিয়াকে কিছুটা অবাক করল।ডালিয়ার মনে হল অরণ্যের ময়েদের প্রতি এত ঘৃণা কেন সেটা এখন জিজ্ঞেস করলে হয়ত জানতে পারবে।ডালিয়া অরণ্যকে বলল

—আপনি মেয়েদের এত ঘৃণা কেন করেন বলবেন?

—তুমি কি সত্যিই জানতে চাও।

—হ্যা জানতে চায় বলুন।

—তাহলে শোন…..

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here