নীল জোছনায় ভাসি পর্ব ১

0
767

বাবার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলছে কাজটি। কিন্তু বাবার কোনো মেয়ে পছন্দই হচ্ছে না। বাবা পাত্রী বাছাইয়ে যে শর্তগুলো রেখেছে তা হলো- মেয়েকে শ্যামলা হতে হবে, অতিরিক্ত ফরসা হওয়া যাবে না, অতিরিক্ত কালোও হওয়া যাবে না। উচ্চতা হবে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। এর চেয়ে এক ইঞ্চি ছোটো-বড়ো হলেই সে পাত্রী বাতিল। মেয়ের চুল কোমড় পর্যন্ত লম্বা হতে হবে। চোখের মণি হতে হবে গাঢ় কালো। নাক বোঁচা হলে চলবে না। মুখে কোনো তিল থাকা চলবে না। ওজন পঞ্চাশ থেকে ষাটের মধ্যে থাকতে হবে। বয়সের সীমা ত্রিশ থেকে চল্লিশ। বাবার সব শর্ত মেনে কোনো মেয়ে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যাবে কি না এটাও সন্দেহ।
বড়োপু বাবার বিয়ের সিদ্ধান্তে অখুশি। মাঝে মাঝে আপু একটা কথা প্রায়ই বলে,
“এই বুড়োর মাথা খারাপ হয়ে গেছে! দেখিস খুব তাড়াতাড়ি একে পাবনা নিয়ে যেতে হবে। কে নিয়ে যাবে? আমি? অসম্ভব। নিয়ে গেলে তুই নিয়ে যাস।”

আমি বাবার বিয়ে করার সিদ্ধান্তে অখুশি নই। আমি বাবার মেয়ে। তার দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্তে আমার অবশ্যই অখুশি হওয়ার কথা। কিন্তু আজব ব্যাপার, আমি অখুশি হচ্ছি না। বাবা যেদিন জানালো সে বিয়ে করার জন্য পাত্রী দেখছে সেদিন আপু বলেছিল,
“তোমার বয়স কত বলো তো? এই বয়সে বিয়ে করবে? হায় আল্লাহ! মানুষজনকে মুখ দেখাবো কী করে? কী বলবে মানুষজন? আমাদের কী হবে? ভালো ঘর থেকে তো আমাদের জন্য সম্বন্ধ আসবে না! তুমি আমাদের এত বড়ো সর্বনাশ করতে চাচ্ছ?”

বাবা অবাকের সুরে বললো,
“সর্বনাশ কেন হবে? কেন আমার মেয়েদের জন্য ভালো ঘর থেকে সম্বন্ধ আসবে না? আমি বিয়ে করায় যারা সম্বন্ধ নিয়ে আসবে না বুঝতে হবে তারা নিচু মানসিকতার মানুষ। এমন মানুষদের বাড়িতে আমি আমার মেয়েদেরকে এমনিতেও বউ করে পাঠাবো না। আমি এত খারাপ বাবা কখনোই হতে পারবো না।”

আপু বাবার এই বয়ান শুনে কী করবে, কী বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না। ভীষণ রাগ করে নিজের রুমে চলে গেল।
বাবা আমার দিকে ফিরে বললো,
“বল সেতু, আমি কি এত খারাপ বাবা হতে পারি?”

আমি বাবার সে কথার কোনো প্রত্যুত্তর না দিয়ে বললাম,
“কাকে বিয়ে করবে? পাত্রী ঠিক করেছো?”

“সবে তো ঘটক লাগালাম।”

“বেশ তোমার ঘটক পাত্রী খুঁজে পেলে জানিয়ো। আর না পেলেও জানিয়ো। আমার সন্ধানে একজন ভালো পাত্রী আছে।”

বাবা আমার কথায় খুশি হলো। আমার পাশে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
“আমার ছোটো মেয়েটা কত লক্ষ্মী! বড়োটা যদি একটুখানিও তোর মতো হতো তাহলেও মনটাকে সান্ত্বনা দিতে পারতুম।”

বাবার সেই কথাটি মনে করে বেশ হাসি পেল আমার। আমার বাবা ভীষণ মজার মানুষ, সেই সাথে একজন ভালো মানুষও বলতে হয়। আপু কী ভাবে জানি না, কিন্তু আমি মনে করি এরকম একজন বাবা জীবনে আছে বলেই আমার জীবন এত সুন্দর।

বসার ঘরে এসে দেখলাম বাবা খুব মনোযোগ সহকারে কিছু একটা দেখছে। কাছে এসে দেখলাম বাবা ছবি দেখছে। পাত্রীর ছবি। তার পাশে ঘটক করিম চাচা বসে আছেন। বাবা চিন্তিত মুখে বললো,
“না না করিম ভাই, এই মেয়েটা তো ঠিক নেই। দেখুন না, এই মেয়েটার নাক বোঁচা।”
বাবা আকস্মিক আমার দিকে তাকালো। বললো,
“আমার মেয়েদের কি নাক বোঁচা? দেখুন, কত সুন্দর নাক আমার মেয়ের। আমি যদি আমার মেয়েদের জন্য নাক বোঁচা মা আনি সেটা কি ভালো দেখায়? আপনিই বলুন।”

করিম চাচাও বাবার কথায় সায় দিলেন,
“না, সেটা বড়োই খারাপ দেখায়। তবে আপনি চিন্তা করবেন না, আসছে ফাল্গুনে আমি আপনার বিয়ে পরিয়েই ছাড়বো।”

আমার মনে হলো না করিম চাচা তার কথা রাখতে পারবেন। হয়তো বাবার পাত্রী বাছাইয়ের পর্ব শেষ হতেই এখনও এক যুগ লেগে যাবে। কিন্তু তখন আর কোনো পাত্রী বাবাকে বিয়ে করবে না। কারণ বাবা বৃদ্ধ হয়ে যাবে। করিম চাচাকে বললাম,
“আপনার জন্য কি আরও এক কাপ চা আনবো চাচা?”

করিম চাচা সলজ্জ হেসে বললেন,
“বলছো যখন তখন আনো। তবে চিনিটা একটু কম দিয়ো।”

রান্নাঘরে এসে দেখলাম আপু এখনও ভাত খাচ্ছে। আপুর ভাত খেতে অনেক সময় লাগে। কেন লাগে জানেন? কারণ ও ভাত খেতে খেতে বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে। আপুর এই অভ্যাসটা আমার ভীষণ অপছন্দের।
চায়ের জন্য চুলোয় পানি বসালাম। আপু বললো,
“করিম চাচা এখনও যায়নি?”

“না।”

“এই লোকটাই নাটের গুরু। আমি নিশ্চিত করিম চাচাই বাবার মাথায় বিয়ের ভূত চাপিয়েছে।”

“আমার সেটা মনে হচ্ছে না।”

আপু হাত ধুয়ে নিলো। যদিও ওর প্লেটে এখনও কিছু ভাত অবশিষ্ট আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে রাগ চেপেছে ওর মাথায়। আপুর রাগ সাংঘাতিক। রেগে গেলে কোনো কাজই করতে পারে না।
আপু বসার ঘরে চলে গেল। শুনতে পেলাম আপু ভারিক্কি গলায় বলছে,
“আপনি এখনও যাননি চাচা? আর এটা কী?”

আপু বাবার হাত থেকে নিশ্চয়ই পাত্রীর ছবিটা কেড়ে নিয়েছে। আমি না দেখেও বেশ অনুমান করতে পারলাম।
আবারও আপুর ভারিক্কি কণ্ঠ শোনা গেল,
“দয়া করে এসব ফালতু ছবি-টবি বাবাকে আর দেখাবেন না। আমি জানি তো, বাবার মাথায় বিয়ের ভূত আপনার জন্যই চেপেছে।”

করিম চাচার গলা শোনা গেল,
“এরকম করে কথা বলতে হয় না রূপকথা মা। বিয়ে হচ্ছে ফরজ কাজ, শুভ কাজ…”

“চুপ করুন…” আপুর কণ্ঠে এবার স্পষ্টতই রাগ ফুটে উঠলো, “আর কোনো ছবি-টবি নিয়ে আসবেন না। পারলে দোকান থেকে কলা, পাউরুটি নিয়ে আসবেন। যা মানুষের কাজে আসবে।”

আপু হনহন করে আবার রান্নাঘরে ফিরে এলো। রাগে ওর শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত চলছে।
আমি বললাম,
“করিম চাচাকে এমনভাবে না বললেও পারতে।”

“তুই চুপ কর।” আপু খুব কঠিন গলায় ধমক দিলো। আপুর কঠিন গলার ধমক খেয়ে কেঁপে উঠলাম আমি। আমি কিংবা বাবা কেউই এত রাগী নই, কিন্তু আপু অনেক রাগী। আমার ও বাবার ধারণা আপু এই রাগী স্বভাব মায়ের কাছ থেকে জব্দ করেছে। কারণ মা’ও অনেক রাগী ছিল।

___________________

মানুষের জীবনে যেমন সুখ আছে, তেমনি অঢেল দুঃখও আছে। আমার জীবনের বড়ো দুঃখগুলোর মধ্যে একটি হলো আমি কখনও আমার রান্না খাইয়ে আপুকে খুশি করতে পারিনি। দোষটা অবশ্য আপুর নয়, আমি আসলেই ভালো রাঁধতে পারি না। দুপুরে খেতে বসে মাছের তরকারি খেয়েই আপু বললো,
“এটা কী রান্না করেছিস? এটা মাছের তরকারি হলো? লবণ দিসনি? এরকম হলে খাওয়া যায়?”

আপু দুপুরে ডিম ভেজে ভাত খেলো। তবে বাবা মাছের তরকারি দিয়েই খেলো, আর খেয়ে প্রশংসাও করলো খুব। আমি জানি প্রশংসা কেবলই আমাকে খুশি করার জন্য। আসলেই রান্না ভালো হয়নি। আমার নিজেরই নিজেকে কথা শোনাতে ইচ্ছা করছিল। সারাটা বিকেল ধরে মন খারাপ করে রইলাম। বিকেলে হাতে কোনো কাজ থাকে না, যার জন্য মন খারাপিটা একটু বেশিই পেয়ে বসলো। একটা কথা আছে, যখন মানুষ একা থাকে তখন কোনো কারণ ছাড়াও মানুষের মাঝে মন খারাপি ভর করে। এই মুহূর্তে বাসায় কেবল আমি একা আছি। বাবা দোকানে আর আপু ছাত্র পড়াতে গেছে। একটা মোবাইল নেই যে সেটা নিয়ে সময় পার করবো। বর্তমান সময়ে মোবাইল না কি সময় কাটানোর সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমার সেই ভালো বন্ধুটিকে আমি কবে যে পাবো জানি না। বাবা অবশ্য একটা মোবাইল কিনে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আপু দিতে দেয়নি। বলেছে মোবাইল পেয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দেবো। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগে কোনো মোবাইল দেওয়া হবে না। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর দেওয়া হবে। তবে সেখানেও শর্ত আছে, পরীক্ষায় এ প্লাস পেতে হবে।

হঠাৎ শোরগোলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। কোথায় গন্ডগোল হচ্ছে? দৌড়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। দেখতে পেলাম শোরগোলের উৎপত্তি আমাদের বাড়ির সামনে। সেজান ভাইয়া একটা ছেলের সাথে চড়া গলায় কথা বলছে। তার গলায় রাগ স্পষ্ট। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম কেন সেজান ভাইয়া এত ক্ষুব্ধ বেচারা ছেলেটির উপর। ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকালাম। কত বয়স হবে ওর? চৌদ্দ কি পনেরো। জেবিনের বয়স কত? ওরও তো চৌদ্দ-পনেরো বছরই বয়স। এর মানে ছেলেটা জেবিনের ক্লাসমেট হবে।
সেজান ভাইয়া হঠাৎ ছেলেটার গালে চ’ড় মা’রলো। আমার বুকের মধ্যিখানটায় ছোটোখাটো ভূমিকম্প হলো এটা দেখে। এতক্ষণের ঘটনা দেখার পর যেটা বুঝতে পারলাম তা হলো ছেলেটা ভদ্র। আমার মানতে কষ্ট হলো ভদ্র ছেলেটার গালে পড়া ওই শক্ত ভারী হাতটার আ’ঘাত। খুব অভিমান হলো আমার। ডেকে বলতে ইচ্ছা হলো,
‘এই যে সেজান ভাইয়া, ও তোমার বোনকে পছন্দ করে বলে এরকম করছো, ওর বয়সি থাকতে তুমি কি কাউকে পছন্দ করতে না? করতে তো। আমাদের তো বড়ো ভাই নেই। তাহলে আমার বোনকে পছন্দ করার অপরাধে কি তোমার মতো আমারও তোমাকে চ’ড় মা’রা উচিত ছিল?’

কিন্তু কিছুই বলা হলো না মানুষটিকে। বুক ভর্তি খারাপ লাগা নিয়ে রুমে এলাম। সেজান ভাইয়া উগ্র হয়ে গেছে! বখাটেদের মতো! না হলে ছেলেটাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলতো, এরকম চড়া গলায় রেগে কথা শোনাতো না, চ’ড় মা’রতো না। কিন্তু তবুও কী করার? এই উগ্র, বখাটে মানুষটিকেই আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি! যখন ভালোবেসেছিলাম তখন তো জানতাম না সে এমন উগ্র, বখাটে হবে। কিংবা কে জানে জানলেও হয়তো ভালোবাসতাম। যখন জানলাম সে সিগারেট ছুঁয়েছে, খারাপ বন্ধুদের প্ররোচনায় একে একে ছুঁয়ে ফেলেছে সিগারেট, মদ, গাঁজা, তখনও মানুষটিকে ঘৃণা করতে পারিনি। তবে কঠিন অভিমান করেছিলাম। কিন্তু আমার ঘৃণা করা উচিত ছিল। যখন জানতে পেরেছিলাম আমার বোন এবং তার মাঝে প্রেম ঘটিত সম্পর্ক তখনও তাকে ভুলতে পারিনি। তাকে ভুলতে পারিনি যখন আমার বোন মাদকাসক্তির জন্য তাকে ছেড়ে এলো তখনও। যখন সে মিথ্যা খু’নের দায়ে প্রায় হাজতে ঢুকতে চলছিল তখনও তার প্রতি আমার ভালোবাসা একটুখানিও কমেনি। কিন্তু তখন তো সবাই এটাই জানতো সেজান ভাইয়া আসলেই খু’নের সাথে জড়িত। তবু কেন একটুখানি ঘৃণা করতে পারলাম না তাকে?
আশরাফ চাচা সঠিক প্রমাণ সংগ্রহ করে, অনেক টাকা খুইয়ে সেজান ভাইয়াকে হাজতে ঢোকা থেকে বাঁচিয়েছে। মাদক থেকেও তাকে ফিরিয়ে এনেছে অনেকটাই। কিন্তু তাও সম্পূর্ণ ফেরেনি সে। আমি তার সম্পূর্ণ ফিরে আসার অপেক্ষা করি। কিন্তু আমার ভালোবাসারা কখনও অপেক্ষার বন্ধনীতে বন্দি ছিল না, আজও নেই।
অজস্রবার ভেবেছি তাকে ভুলে যাব, কিন্তু ভোলার পরিবর্তে আমি অজস্রবার তাকে ভালোবেসেছি! গুরুতর থেকে আরও গুরুতর ভাবে। কিন্তু তাকে ভুলে যাওয়ার অনেক কারণ ছিল, এখনও আছে। আমি মাঝে মাঝে আফসোস বোধ করি, কেন তাকে একটুখানি ঘৃণা করতে পারি না? আমি ঘৃণা করতে চাই তাকে। খুব বেশি না, একটুখানি।

____________________

আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকি সেটা তিনতলা বিশিষ্ট একটা বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলা। নিচ তলায় সেজান ভাইয়াদের বাসা। উপর তলাটা শিক্ষক সমিতির। শিক্ষক সমিতি বলছি কারণ সেখানে এক সঙ্গে চারজন শিক্ষক বাস করে। অনেকটা ব্যাচেলর মেসের মতো। দুজন আছে হাই স্কুলের শিক্ষক। একজন প্রাইমারি স্কুলের, এবং অন্যজন মাদ্রাসার। এদের ভিতর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সবার ছোটো। সে মাস্টার্স শেষ করেছে সবে। অন্য শিক্ষকদের সাথে খুব একটা কথা না হলেও তার সাথে প্রায়ই কথা হয়। সে আমাকে ডাকে ‘মিস তুতু’। বড়োই অদ্ভুত ডাক! প্রথম প্রথম নামটার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে সমস্যা হতো, কিন্তু পরে আবিষ্কার করলাম কেউ ভালোবেসে ডাক নাম দিলে সে নাম প্রকৃত নামের চেয়েও বেশি আপন লাগে।

আমাদের বাড়িটা বাউন্ডারি দিয়ে বেষ্টিত। বাড়ির পিছনে অনেকগুলো পেয়ারা গাছ আছে। সেগুলো বাড়ির মালিকের লাগানো। কেউ অবশ্য খায় না। আমি মাঝে মাঝে খাই, চেয়ার পেতে পেয়ারা গাছের নিচে বসে। প্রাইমারির শিক্ষকও আসে মাঝেমধ্যে। আমার সাথে গল্প করতে করতে একটা পেয়ারার অর্ধেক খায়। আমি কখনও তাকে একটা পেয়ারা সম্পূর্ণ খেতে দেখিনি। ভাবছি একদিন জানতে চাইবো তার সম্পূর্ণ পেয়ারা না খাওয়ার কারণ।

আমাদের বাড়ির সম্মুখে একটা টিউবওয়েল আছে। সেই টিউবওয়েল থেকেই সবাই খাওয়ার পানি সংগ্রহ করে। সেজান ভাইয়া রোজ সন্ধ্যায় কল পাড়ে বসে গোসল করে। সুমনা চাচি অনেক বকেও ছেলের এই অভ্যাস পালটাতে পারেনি। সেজান ভাইয়াকে সে বারংবার বলেছে বাথরুমে গোসল করতে। কিন্তু চাচির কথা শুনবে এমন ছেলে তো সেজান ভাইয়া না।
সন্ধ্যার পরে টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে এসে দেখি সেজান ভাইয়া কল পাড়ে। তার গোসল শেষ হয়েছে। শার্ট কাচছে এখন। পরনে একটা লুঙ্গি। আর টি-শার্ট। সেজান ভাইয়াকে কখনও লুঙ্গি পরতে দেখা যায় না, কিন্তু সন্ধ্যায় খানিকটা সময়ের জন্য তাকে লুঙ্গি পরতে দেখা যায়, গোসল করার পর। আমি কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম তার শার্ট ধোয়া কখন শেষ হবে তার অপেক্ষায়। সে শার্ট নিংড়িয়ে যখন ঘরে যাওয়ার জন্য পিছন ঘুরলো, তখন আমাকে দেখা মাত্রই বলে উঠলো,
“কীরে সেতু, তোর বাবা না কি বিয়ের জন্য পাত্রী দেখছে?”

(চলবে)

#নীল_জোছনায়_ভাসি (০১)
#লেখা: ইফরাত মিলি
____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here