নিনীকা পর্ব ৩+৪

0
598

#নিনীকা
#পর্ব_৩_ও_৪

#পর্ব_৩

শুধু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মা ইলাদের বাসায় কথা বললেন। ইলাদের বাসার কেউই মায়ের কথার কোনো গুরুত্ব দিলো না। দাদু সাফ জানিয়ে দিলেন, এরপর যদি এ বিষয়ে কথা হয়, ব্যাপারটা বেশি ভালো হবে না। মা চুপ করে গেলেন একেবারেই। মায়ের দাদুকে এত ভয় পাবার কারণ আমি বুঝতে পারলাম না। নিজে নিজেই ডিসিশন নিলাম, জলে ভেসে যাক আমার মা। ইলাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো। ইলাও তৈরি। যেদিন পালিয়ে যাবো, সেই আগের রাতেই মা এলেন আমার সাথে ঘুমোতে। আমি মনে মনে ভাবলাম, মা কি কিছু বুঝে গেল নাকি?
রাতে বিছানায় শুয়েই মা বললেন,
—বুকে আয় না রওনক। মায়ের বুকে শুলে কি হয়?
—লজ্জা লাগে মা।
—ভালো করে তো দাঁড়িটাও কামাতে শিখিসনি, এতো লজ্জা তোর! ছোটবেলায় কত ন্যাপি পাল্টেছি এই হাতে।
—তুমি যাও না মা। আমার কত পড়া আছে জানো? রাতে রিহার্সালও করবো।
—তা কর না, আমিও শুনি। কবে আবার বড় নায়ক হয়ে যাবি, টিকিট ছাড়া তো সিনেমাও দেখতে পারবোনা তখন। তুই এত সুন্দর হলি কেন রে রওনক? মেয়েদের রূপ নিয়ে মায়েদের চিন্তা হয় জানতাম, আমার হচ্ছে ছেলের রূপ নিয়ে চিন্তা।
আমি হাসলাম। মা কৌতুহলী চোখ মুখ করে বললেন,
—গল্প শুনবি রওনক? শুনেই দেখ্ না, তোর নাটকে যদি কাজে লাগে।
আমি মায়ের মুখের গল্প শোনবার লোভ সামলাতে পারলাম না। পৃথিবীর কোনো ছেলেরই বোধহয় মায়ের মুখের গল্প শোনবার লোভ সামলানোর ক্ষমতা নেই। তখন কে জানতো, এই গল্পই আমার সারাজীবনের জন্য কাল হবে।
মা আয়েশী ভঙ্গিতে বলতে থাকলেন,
—তুই তখন আমার সাত-মাসের পেটে। রিনি কথা বলতে শিখেছে মাত্র! সারাদিন পটপট করে কথা বলে। আমি সংসার নিয়ে সুখের ব্যস্ততায় ব্যস্ত। তোর বাবাও ছোট্ট ১টা জব নিয়ে আছে। এর মাঝে একদিন সন্ধ্যার দিকে তোর জামান আংকেল ফোন করলেন।অফিস থেকে ফেরার পথে তোর বাবার নাকি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। ক্রিটিকাল কন্ডিশন। রিনিকে কোলে নিয়ে প্রেগন্যান্ট আমি ঘরের মেক্সি পরে খালি পায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে হাসপাতাল গেলাম। ঘেমে আমার মেক্সি ভিজে একাকার। শ্বাস ফেলতে পারছিলাম না। হাসপাতাল গিয়ে শুনি, তোর বাবার অবস্থা ক্রিটিকাল না। তোর বাবা স্পটডেড ছিলেন।শুধু কনফার্ম করতেই তাকে হাসপাতাল নেওয়া হয়েছে। আমি জানিস, তখন একটুও কাঁদলাম না।হাসপাতালের প্যাসেজে পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম।আরাম করে দম নিতে থাকলাম। এতটা পথ দৌড়ে তখন বড় ক্লান্ত আমি।
আমি মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
—প্লিজ মা। আর শুনবো না।
—আরে শুনেই দেখ্ না, বাকিটা খুব মজার! আমি পা ছড়িয়ে বসেছি, দেখে রিনিও বসে পড়লো। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছিলো। আমি কষে রিনিকে দুইটা চড় দিলাম। সাথে সাথে কান্না বন্ধ! তোর দাদু পাগলপ্রায় হয়ে ছুটে এলেন। রিনিকে গভীর মমতায় কোলে তুলে নিলেন। আমি তাকে দেখে আশায় বুক বাঁধলাম।এই বুঝি ছেলের উপর তাঁর অভিমান ভাঙলো। ৪ মেয়ের পর একমাত্র ছেলে উনার; মা-বাবার অমতে বিয়ে করেছে আমায়, রাগ করা তো স্বাভাবিক। রিনি হবার পর কিন্তু উনি রিনির মুখ দেখতেও আসেন নি। ছেলে মারা যাওয়ায় তিনি হাউমাউ করে কাঁদলেন। আমাকে তাঁর সাথে করে নিয়ে গেলেন। নিজের বাড়িতে রাখলেন। তোর বাবার সাতদিনের দোআ শেষে তিনি আমায় ডেকে বললেন, ‘আমার সিলেটের বাসাটা তোমার। তুমি তোমার সন্তান নিয়ে সেখানে থাকবে। মাসখরচ সব আমি দিবো’।
আমার তখন টাকা নেই, আশ্রয় নেই, আত্মীয় নেই। তিনি তাঁর অতি অপছন্দের পুত্রবধুকে আশ্রয় দিচ্ছেন, তাঁর মহানুভবতায় আমি যখন কৃতজ্ঞ হয়ে উনাকে কদমবুসি করতে গেলাম তিনি পা সরিয়ে নিয়ে বললেন, ‘হারুন যেদিন তোমায় বিয়ে করে, সেদিন থেকেই সে আমার কাছে মৃত ছিল। তাঁর শরীরটাকে তাই আর বাঁচিয়ে রাখার দরকার ছিল না। তুমি একদিন আমার কাছ থেকে আমার ছেলেকে কেড়ে নিয়েছিলে, আমি তোমার সন্তানের কাছ থেকে তাঁর বাবাকে কেড়ে নিয়েছি। হিসাব সমান সমান। আশা করি, আমার মানসিক শক্তি আর ক্ষমতা তুমি আজীবন মনে রাখবে’।
আমি জানিস, তোর দাদুর উপর একদম রাগ করলাম না। বরং আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম। তাঁর ক্ষমতা ও মানসিক শক্তিকে মাথায় রেখে তোর দাদুর দেওয়া এই বাড়িটাতেই বাস করতে লাগলাম। এরপর তুই হলি। তোরা একটা ভালো বাড়িতে থাকবি, খাবি, পড়বি, এই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। রিনির বিয়ের সময় আমি একদম কাঁদিনি কেন জানিস? রিনি এই বাড়িটা থেকে মুক্তি পাচ্ছে, এটাই আমার জন্য সবথেকে খুশির ছিল।
আমি স্তব্ধ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
—ইলা তোর বিয়ে করা বউ জেনেও আমি ইলাকে এনে দিতে পারলাম না। তোর দাদু তোদের লুকিয়ে বিয়ে করার কথা শুনে বলেছেন, মেয়ের মা-বাবাকে না জানিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করা ইসলামে জায়েজ নেই। আর যেহেতু তোরা হুজুরের কাছে বিয়ে পড়েছিস, রেজিস্ট্রি করিসনি তাই এ নিয়ে আইনী কোনো জটিলতাও নেই। বাকি যেটা সামাল দেবার সেটা উনি দিয়ে দিবেন। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বুঝাতে পারিনি আমি। আমার ক্ষমতা কত কম, কত শূণ্য দেখেছিস রওনক? কিন্তু আমি জানি, তুই একদিন অনেক বড় হবি, অনেক ক্ষমতা হবে তোর। পরম করুণাময় তোকে অনেক নামী করবে, দেখিস। তাঁর অসীম কৃপার প্রমাণ আমি আমার এই একজীবনে বহুবার পেয়েছি।

মা এরপর অত্যন্ত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে পড়লেন।যেন কিছুই হয়নি। সেই সারারাত আমি ঘুমোতে পারিনি। গা গুলিয়ে বমি হলো। ইলা ফোন করলো বারংবার। আমি মোবাইল সুইচড অফ করে দিলাম। তার তিনদিন পর দাদু আমায় ডেকে পাঠালেন। বললেন, তোমাদের বিয়েটার তো কোনো ভিত্তি ধর্মমতে নেই। এ কারণে তোমাদের মনেও কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকুক, তা আমি চাই না। এজন্য আজ হুজুরের সামনে এ কান্ডের সমাপ্তি চাই। আমি ইলার দিকে না তাকিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে হুজুরের মুখের দিকে চেয়ে বললাম, এ বিয়ের কোনো ভিত্তি আমার কাছে নেই। আমি সজ্ঞানে ইলাকে এ বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্ত করছি। এরপর ইলা আমার সাথে আর যোগাযোগের চেষ্টা করেনি। তার ছয় মাস পরেই ইলার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের আগের রাতে ইলা অবশ্য শেষ চেষ্টা করেছিল আমার কাছে আশ্রয় পাবার। সব ছেড়ে চলে আসতে চাইলো সে কিন্তু আমি কিছু না বলেই চুপ করে থাকলাম। যদি মায়েরও বাবার মতো….
আমি আর ভাবতে পারলাম না।

সোহেল এইবার অধৈর্য্য হয়ে আমাকে আবার ডাকলো,
—স্যার, ৩টা বেজে পাঁচ স্যার। প্লিজ, স্যার। প্রেসরা চলে এসেছে। আপনার মেকআপ নেওয়া বাকি।
—হিরোইন ম্যাডাম কি এসে গেছে নাকি?
—হিরোইন এসে তো স্যার লাভ নেই। প্রেস আপনাকে ছাড়া একটা ক্লিকও নিবে না। আপনাকে ছাড়া তো নিউজ হিট করবে না। স্যার, ঝট করে একটা হট শাওয়ার নিয়ে নিন আগে। এর মাঝে আপনার মুভির ইনফরমেশনগুলো আর একবার শুনিয়ে ফেলি।
—ওসব আমার মাথায় আছে। তুমি শুধু খেয়াল রাখো কেউ যাতে বিয়ে নিয়ে আমায় কোনো প্রশ্ন না করে।
—আপনার যেই মেয়ে ভক্তের দল! এই কোয়েশ্চান থেকে তো মুক্তি নেই।
আমি মিষ্টি করে হাসলাম। সোহেল অভিভূত গলায় বললো,
—স্যার নেক্সট মুভিতে এরকম একটা স্মাইলের ক্লোজআপ শট রাখবেনই। এক হাসিতে হাজার মেয়ে কাঁত। স্যার আপনার রেমুনারেশন আরো বাড়িয়ে ফেলবো ভাবছি।
এই ছেলেটা যে কি? সবসময় ব্যবসা!

আমি গাড়ি থেকে নামলাম। অনেক কাজ আমার। অনেক ব্যস্ত এখন আমি।

#পর্ব_৪

সোহেল পুরো প্রোগ্রামের সূচিটা রওনকের কানের কাছে রিকল করতে লাগলো।
বাসায় ঢুকেই রওনক দেখলো, মা আবার কোমরে আইসব্যাগ ধরে আছেন। মা চূড়ান্ত মুখ কালো করে বললেন,
—পাষাণ ছেলে, তোকে না বলেছি বিয়ের ব্যাপার কনফার্ম না করে বাড়িতে আসবি না। আমি কোমর ভেঙ্গে মরে গেলে তারপর বিয়ে করিস!
—তোমার কি ব্যথা বেড়েছে নাকি? ডক্টর এসেছিলো?
মা সোজা হয়ে বসতে বসতে বললেন,
—হ্যাঁ রে ইলার সাথে কি কথা হলো রে? ওর জামাই’র মাথাটা সেড়েছে?
—এ অনেক লম্বা গল্প মা। প্রোগ্রাম এটেন্ড করে এসেই বলবো।
রওনক দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে চলে গেল।

শাওয়ার নিতে গিয়ে নিজের মুখটা আজ ভালো করে দেখলো রওনক। ইলা ঠোঁট সুন্দর বলেছিলো যে!ঠোঁটের উপর আলতো করে হাত বুলালো।
মনে মনে ভাবলো, ইলা যেন আর কি ভালবাসতো তার? এই ৬ ফুটের হাইট। সবসময়ই বলতো, তোমার সুপার হাইট রওনক ভাই।
ইলার বিয়ে হবার পর এই এতটা বছরে তাঁর জীবন আকাশ-পাতাল বদলে গেছে। কথা বলার ধরন পাল্টে গেছে, সকাল বিকেল পাল্টে গেছে, লাইফস্টাইল পাল্টে গেছে। ইলাকে ভুলে থাকতে গিয়ে, মা’কে সামলাতে গিয়ে প্রতি সেকেন্ড সে কাজ করেছে।প্রতি মুহূর্তকে ব্যবহার করেছে। মা’কে একটা বাড়ি থেকে মুক্তি দিতে গিয়ে, এখন তাঁর নিজের ক’টা বাড়ি হলো? ১৪টা না ১৫টা? তাঁর কত টাকা আছে? ক’টা গাড়ি? ৭টা না ৯টা? সে নিজেই তো জানে না। তাঁর ইলাকেও সুখী দেখবার দরকার ছিল। আজ তাও দেখে এলো। সে কি সুখী এখন? আচ্ছা এই জীবনে সে যে একটা ক্ষণিকের বিয়ে করেছিলো, তা কি কখনো কাউকে বলতে পারবে?
রওনকের ভাবনায় ছেদ পড়লো। সোহেল এসে আবার তাড়া দিচ্ছে।

প্রোগ্রাম শেষে লেইট নাইট বাসায় ফিরে রওনক দেখে মা বসে আছেন। আউটডোরে শুটিং না থাকলে ডিনারটা মা রওনকের সাথেই করেন। ডিনারে বসেই রওনক দেখলো, মেন্যু সব তাঁর পছন্দমতো। মা বিয়ের ব্যাপারটা শক্ত করেই ভাবছে তাহলে।

—তোমার কোমর ব্যথা তারপরও এত রান্না কেন?
—খা.. খা… খেয়ে নে। তোর বউয়ের রান্না তো আর খেয়ে যেতে পারবো না। তাই নিজেই রাঁধি।
—এখনকার কোনো বউ কি রাঁধে মা? আগুনের আঁচে নিজের শরীর কেউ পোড়াতে চায় না। এত বেশি চেয়ো না মা।
—তুই তাহলে বিয়ে করবি না? বেশ তো, আমায় রিনির কাছে পাঠিয়ে দে না। তোর সাথে আমি আর থাকছি না।
—তুমি বুঝতে পারছোনা মা, এখন বিয়ে করার কি স্কোপ আছে? আগামী ৩ বছরে আমার কোনো শিডিউল নেই। একটা বিয়েতে হিউজ আয়োজন।এর মধ্যে মিডিয়ার টাঁনাহেচড়া তো আছেই।
—বিয়ে করতে কি কোনো শিডিউল লাগে? তুই শুধু বল করবি কিনা? বাকি সব আমি সামলে নিবো।
—মা, প্লিজ। মিডিয়া যেন আগে থেকেই কিছু টের না পায়! মেয়ে দেখাদেখি করতে গিয়ে তুম যে কোথায় কোন নিউজ বানিয়ে ফেলবে! এদের তো শুধু একটা লিক চাই। বাকি তো এক্সেজারেট করে এরা পুরো কাহিনী বানিয়ে ফেলে।
—এত ভাবিস নাতো! আমি সব চুপিচুপি করবো।
ফাইনাল করেই তোকে জানাবো। মেয়েই তো হাজারটা খুঁজতে হবে আমার। চিত্রনায়ক রওনক রাজ এর বউ বলে কথা। সে তো আর যেন তেন মেয়ে হলে হবে না।
—-মেয়ে যাই হোক, শুধু কান্ড যাতে না হয় মা। সেই দিকটা একটু দেখো। বউ দেখতে গিয়ে পেপারের নিউজ হয়ো না প্লিজ!
—নিউজ টিউজ হলে হোক গে। তুই পাত্রী দেখতে এলাউ করেছিস, এই যথেষ্ট। তা কেমন মেয়ে দেখবো, বলতো? হ্যাঁ রে রওনক, তোর কোনো হিরোইন পছন্দ আছে?
—মা, প্লিজ! ওটা আমার কাজের জায়গা।
—হু। কি কাজরে বাবা! এই নাচছিস, এই গাইছিস, এই জড়াজড়ি করছিস! এসব করে করে তোর তো অনুভূতিই নষ্ট হয়ে গেছে।
রওনক হেসে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিলো।
সোহেল মিনমিন করে বললো,
—অত রিচ ফুড নিচ্ছেন রাতে। ৬তারিখ থেকেই কিন্তু আনার ২০দিনের আউটডোর শ্যূটিং আছে।এখন সুস্থ থাকাটা খুব জরুরী।
মা সোহেলের দিকে কড়া চোখে তাকালেন,
—চুপ করো না সোহেল। ছেলেটা কতদিন পর একটু মন খুলে খাচ্ছে!
—রওনক, আজ আমার সাথে ঘুমোতে আয় না বাবা। কতদিন তোরে চুলে বিলি কাটি না! তোকে গল্প শুনাই না!
সোহেল বিনীত ভঙ্গিতে বললো,
—ম্যাম, স্যার গত তিন রাত্তির ধরে ঠিকঠাক ঘুমোচ্ছেন না। গল্প না শুনিয়ে আজ বরং একটু ঘুম পাড়িয়ে দিন না। ডার্ক সার্কেল এসে যাচ্ছে!
মা হাত জোড় করে অনুরোধের ভঙ্গিতে বললো,
—রওনক, তুই এক্ষুণি এর চাকরি নট কর তো।এক্ষুণি। আমার ছেলেকে পুরো পুতুল মানব বানিয়ে ফেলছে।
রওনক সাথে সাথেই বললো,
—চাকরি নট সোহেল। যাও বাড়ি যাও।
সোহেল হেসে ফেললো।
হাত ধুতে ধুতে রওনক মা’কে বললো,
—মা, আমি দার্জিলিং এ শ্যূটিং করবো ২০দিন। এর মধ্যে তুমি মেয়ে দেখবে। যদি এর মধ্যে মেয়ে পাওয়া যায়, বিয়ে হবে। এটাই লাস্ট চান্স! এর মধ্যে না হলে, আর সারাজীবনেও তুমি কিন্তু আমায় বিয়ের কথা বলবে না।
মা নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে বললেন,
—আচ্ছা, চেষ্টা করে দেখি।
সিঁড়ির কাছে গিয়ে রওনক একটু দাঁড়ালো। একটু ভেবে বললো,
—মা ইলাকে তুমি এজন্যই আসতে বলেছো, তাই না? ও তাহলে আমায় বিয়ে দিতেই এসেছে। তুমি কি জানো মা, ইলার আবার বেবী হবে?
মা মৃদু হেসে বললেন,
—জানি। ইলাই জোর করে আসলো। তোর সংসার দেখতে চায়। শোন্, নিজের ভালোবাসাকে সারাজীবন ভালোবেসে চুপচাপ কাটিয়ে যাওয়াটা অনেক সোজা, রওনক। কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষকে সংসার গুছিয়ে দেবার মতো শক্ত কাজ কিন্তু আর নেই। ইলা এই শক্ত কাজটাই করতে এসেছে। নিজের পছন্দের মানুষকে অন্য কারো সাথে সুখী দেখতে চাওয়াটায় অনেক সাহসের দরকার হয়, অনেক মনের জোড়ের দরকার হয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ইলা কত সাহসী, ভেবেছিস?
রওনক সিঁড়ি ভেঙ্গে উপড়ে উঠতে থাকলো। মা একদৃষ্টিতে রওনকের দিকে তাকিয়ে আছেন। ইশ্ ছেলেটা এত সুন্দর হলো কেন? মাথভর্তি ঝাকড়া চুলটা, হালকা করে নড়ছে। থুতু ছিটোবার ভঙ্গি করে, মা ফিসফিস করে বললেন, “মাশাআল্লাহ”

রওনক বিছানায় শরীর এলাতে এলাতে বিড়বিড় করে বললো, আমি চিত্রনায়ক রওনক রাজ! আর আমার জীবনের নতুন গল্পের শুরু হবে এখান থেকেই।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here