না_চাওয়া_পূর্ণতা পর্ব : ১৫

0
1892

#না_চাওয়া_পূর্ণতা ?
লেখক : সানজিতা আক্তার মীম
পর্ব : ১৫

সায়ন হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। সূর্যের আলো চোখে পরাতে সায়ন কপাল কুচকে ফেললো। সায়ন আস্তে করে চোখ খুললো। সায়ন উঠতে নিলে হাতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো৷ হাতের দিকে তাকাতে সায়নের মনে পরলো তনুর গুলি লেগেছে।

সায়ন হতোদন্ত হয়ে উঠতে নিলে নুহাশ দৌড়ে এসে সায়নকে আটকায়। নুহাশ মাত্রই সায়ন এর কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকছিলো।

নুহাশ : আরে সায়ন করছো কি তুমি। তুমি এখন উঠতে পারবে না। শুয়ে পরো।
সায়ন : তনু কোথায়? তনুর গুলি লেগেছে। আমার তনুকে ওই তাহা গুলি করেছে। তনু অনেক ব্যাথা পাচ্ছে। প্লিজ ভাইয়া আমাকে তনুর কাছে যেতে দিন। ( অস্থির হয়ে)

নুহাশ বুঝতে পারলো সায়নকে ও থামাতে পারবে না তাই বাইরে থেকে অন্তুকে নিয়ে এলো। অন্তু এসে সায়ন এর পাশে বসলো। নুহাশ ডাক্তারকে ডাকতে গেল।

অন্তু : বাবাই তুমি এখন কেমন আছো?
সায়ন : একটুও ভালো না। তোমার মামাকে বলো না প্রিন্সেস, আমাকে তোমার মাম্মাম এর কাছে নিয়ে যেতে। ( কান্না করে দিয়ে) প্লিজ বলো।

ডাক্তার এসে সায়নকে চেকাপ করতে লাগলো। ডাক্তারের কথায় সায়ন বুঝতে পারলো ও ৩ দিন ধরে হাসপাতালে অজ্ঞান হয়ে ছিল।

ডাক্তার : আপনাকে আর ৩ দিন পর ডিসচার্জ করে দেওয়া হবে। রেস্ট করুন। নার্স তাকে ইনজেকশনটা দিয়ে দাও।

নার্স ইনজেকশন দিয়ে যেতেই সায়ন ঘুমিয়ে পরলো। অন্তুকে নিয়ে নুহাশ সায়ন এর কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো৷ OT র সামনে দাড়িয়ে আছে নুহাশ। ভেতরে ডাক্তাররা তনুর চেকাপ করছে৷ তনুকে ভাগ্যক্রমে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে কিন্তু তনু কোমায়। ডাক্তার বেরজয়ে আসে OT থেকে।

নুহাশ : স্যার, আমার বোন এর কি অবস্থা এখন? ও সুস্থ হয়ে যাবে তো?
ডাক্তার : দেখুন আমি আপনাকে কোনো ধোঁয়াশায় রাখতে চাই না। তাই শুনুন, উনি একদিন পরও কোমা থেকে ফিরতে পারে, একমাসও লাগতে পারে, বছরও লাগতে পারে। সব আল্লাহ এর হাতে। তাই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। আসি।

ডাক্তার চলে যায়। নুহাশ এর পেছনে দাড়িয়ে থাকা সায়ন সব শুনে ফেলেছে। একটু আগেই সায়ন এর ঘুম ভাঙে আর ও রুম থেকে বের হয়ে তনুকে খুজতে খুজতে এখানে নুহাশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আসে। ডাক্তার এর কথায় সায়ন ওইখানেই দাঁড়িয়ে যায়।

সায়ন : তনু কোমায়!!!

সায়ন এর শব্দ শুনে নুহাশ ভয়ে পেছনে তাকালো। নুহাশ সায়নকে কিছু বলার আগেই সায়ন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। নুহাশ দৌড়ে সায়নকে ধরে বসে। সায়নকে কেবিনে নিয়ে আসে।ডাক্তার এসে দেখে গেছে৷ অন্তু নুহাশ এর কোলে বসে কান্না করছে।

অন্তু : মামা, বাবাই আর মাম্মাম কি ঠিক হবে না? আমার ভয় করছে ( কান্না করতে করতে বলল)
নুহাশ : আমার প্রিন্সেস তো good girl তাই না বলো। তাই ভয় পেয়ো না। বাবাই উঠলে বাবাইকে সামলাতে হবে। মাম্মাম আরও কয়েকদিন ঘুমে থাকবে। ডাক্তাররা ঘুমের ঔষধ দিয়েছে মাম্মামকে। বুঝলে।
অন্তু : ( চোখ মুছে) হুম। বাবাইকে আমরা কান্না করতে দিবো না।

সায়ন পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে অন্তু ওর পাশে বসে আছে৷ সায়ন অন্তুর দিকে তাকাতে অন্তু মিষ্টি করে একটা হাসি দিল। যে কোনো বাবা এই হাসি দেখলে বুকের ভেতর শান্তি অনুভব করবে।
অন্তু : বাবাই এখন কেমন লাগছে?
সায়ন : একটুও ভালো নেই। তোমার মাম্মাম এর কাছে নিয়ে চলো প্লিজ প্রিন্সেস।
অন্তু : তার আগে তোমাকে নাস্তা করে ঔষধ খেতে হবে তাই না মামা।
নুহাশ : ইয়েস, মাই প্রিন্সেস।

সায়ন অন্তুর কথা মতো একটু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিল। নুহাশ আর অন্তু সায়নকে নিয়ে তনুর কেবিনের বাইরে দাড়িয়ে আছে৷ সায়ন ভয়ে ভেতরে যাচ্ছে না। নুহাশ সায়ন এর কাঁধে হাত রেখে সাহস দিলো যদিও নিজেরই সাহস নেই।

সায়ন কাঁপা কাঁপা পায়ে তনুর কেবিনে ঢুকলো। কেবিনে ঢুকে সায়ন দেখলো তনু বেডে শুয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে। সায়ন তনুর সামনে দাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে তনুর গালে স্পর্শ করলো।

সায়ন : তুমি কেন করলে এমন। আমি মরে যেতাম। তাহলে তোমার এতো কষ্ট পেতে হতো না। আগেও আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি এখনো আমার জন্য আবার কষ্ট পেতে হলো৷

অন্তু এসে সায়ন এর হাত ধরে দাড়ালো।আর বলতে লাগলো,
অন্তু : বাবাই, দেখো মাম্মাম একদম সুস্থ হয়ে যাবে। তুমি কান্না করো না। তুমি কান্না করলে আমিও কিন্তু কান্না করে দিবো৷
সায়ন : নাহ আমি একদম কান্না করবো না। আমরা মাম্মামকে সুস্থ করে তুলবো কেমন।
অন্তু : হুম।

৩ দিন পর তনুকে বাসায় সিফট করা হলো। সাথে একটা নার্স এর ব্যবস্থা করেছে সায়ন। সায়ন এখন কলেজের কাজ বাসায়ই করে। অন্তুরও খেয়াল রাখে। খাওয়া, খেলাধুলা এবং সব ধরণের চাওয়াও। এর সাথে সাথে তনুর যথেষ্ট খেয়াল রাখে সায়ন। এভাবে তনুর ঠিক হওয়ার অপেক্ষায় চলতে থাকে সায়ন এর দিন।
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here