#না_চাওয়া_পূর্ণতা ?
লেখক : সানজিতা আক্তার মীম
পর্ব : ০১
কমলাপুর রেলস্টেশনে বসে আছে তনু। বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে। তনু অপেক্ষা করছে সায়ন এর জন্য। সায়ন আর তনু একে অপরকে সীমাহীন ভালোবাসে। হঠাৎ তনুর বাবা মি. তন্ময় চৌধুরী মেয়ের বিয়ে ঠিক করে তার বন্ধুর ছেলে আসফির সাথে। তনু নিজের বাবাকে অনেক ভয় পায় তাই কিছু বলতে পারে নি কিন্তু বড় ভাই নুহাশকে সব বলে। নুহাশ বোনকে অনেক ভালোবাসে তাই বোনের কষ্ট মেনে নিতে পারবে না বলে বোনকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। পালানোর আগে তনু একটা good news দিয়ে আসে নুহাশকে যা শুনে খুশিতে প্রায় পাগল হওয়ার দশা। তাও বোনকে সাবধান করে বিদায় জানায়।
এদিকে সায়ন এর আসার কোনো নাম গন্ধ নাই। তনু বারবার সময় চেক করছে। আর মাত্র ১০ মিনিট আছে।১০ মিনিট পর ট্রেন ছেড়ে দিবে। হঠাৎ টুংটাং শব্দ করে তনুর ফোনে মেসেজ আসে৷ তনু মেসেজ open করতেই,
“” Sorry, মাফ করে দিও। আমি আসতে পারবো না। ভালো থেকো। “”
মেসেজটি পরে যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে তনুর মাথায়।সায়ন এসব কি বললো। অবাক চোখে ফোনের মেসেজটির দিক চেয়ে রইলো। হুস আসতেই হতদন্ত হয়ে সায়নকে কল করলো কিন্তু সায়ন কল রিসিভ করছে না। তনু পাগলের মতো কল করেই যাচ্ছে কিন্তু অপর পাশ থেকে রিং হয়ে যাচ্ছে অথচ রিসিভ করছে না।
তনু একবার ট্রেন এর দিক তাকাচ্ছে তো একবার স্টেশনের গেট এর দিক। কোথায় যাবে কার কাছে যাবে। বাড়িতে কোন মুখে যাবে আর সায়নতো এই মাঝ রাস্তায় ওকে একা ছেড়ে দিল। চোখের পানি ছেড়ে দিল তনু।।।
এভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেলো। ট্রেন চলে গেছে অনেক আগেই। সেই জায়গায় এখন অন্য ট্রেন দাড়িয়ে কিন্তু তনুর কান্না,,, সে তো শেষ হওয়ার নয়।
এক পর্যায়ে তনু উঠে দাঁড়ায়। সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও এখন কি করবে। দাঁড়িয়ে চোখ মুছে স্টেশন মাস্টার এর কাছে থেকে অজানা শহরের টিকিট কেটে ট্রেনে উঠে এলো। জানালার পাশের এক সিটে এসে বসে পরলো তনু পাশে একদল ছেলেমেয়ে বসেছে। দেখে মনে হচ্ছে ঘুরতে যাচ্ছে। তনু শেষ বার নিজের শহরকে দেখে নিলো জানালা দিয়ে। ট্রেন চলছে আপন গতিতে। পাশের ছেলে মেয়ে গুলো গান গাইতে শুরু করলো।
কেন আসে দিন, তোকে কাছে না পাওয়ার
কেন আসে দিন, তোকে চোখে হারাবার
কী উপায়, ফেরা যায় তোর স্বপ্নতে আবার
ওরে মন উদাসী, একা ফেলে পালালি কোথায়
ওরে প্রবাসী, ওরে বন্ধু আমার ফিরে আয়
হাসিতে হাসিতে ভুল ফুরিয়েছে আজ সব
চলে গেছে, ঢলে গেছে কালকের কলরব
কথা ছিল সাথে তোর, বলা হলো শেষ না
খালি খালি চারপাশ, এ আমার দেশ না
কী উপায়, ফেরা যায় তোর স্বপ্নতে আবার
ওরে মন উদাসী, একা ফেলে পালালি কোথায়
ওরে প্রবাসী, ওরে বন্ধু আমার ফিরে আয়
তোর সাথে এসে যেতো, ঝর্ণারা কথাদের
ঝরে গেল কেন আজ মরসুম পাতাদের
কত না বিকেল ঘুড়ি উড়িয়েছি দু’জনে
চলে আয় চলে আয়, আজ আবার উজানে
কী উপায়, ফেরা যায় তোর স্বপ্নতে আবার
ওরে মন উদাসী, একা ফেলে পালালি কোথায়
ওরে প্রবাসী, ওরে বন্ধু আমার ফিরে আয়……
গান শেষ হতেই তনুর চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। সাথে সাথে নিজের চোখ মুছে নেয় ও। ভাবতে থাকে তনু,,,,
অনেক কিছুই অজানা থেকে গেল। সায়ন হয়তো কোনোদিন জানতেও পারবে না। আর তনুও জানাতে চায় না আর। ট্রেন এর জানালা দিয়ে সিমকার্ড টা ফেলে দিল তনু। সারা রাত বাইরে চেয়ে থেকে পার করে দিলও।
আসলে স্বপ্ন সবাই দেখে তাদের মধ্যে কারও কারও স্বপ্ন সত্যও হয় কিন্তু কিছু মানুষের স্বপ্ন সবসময় স্বপ্নই থেকে যায়। সেই স্বপ্ন পায় না তার #পূর্ণতা। হয়তো তনুর স্বপ্নগুলোও পাবে না সেই #পূর্ণতা।
সকালের দিকে ট্রেন থামে এক অজানা শহরে। সেই শহরে পা রেখে বুঝলো তনু, এখানে না আছে কোনো আপনজন না আছে কোনো ভালোবাসার মানুষ । তাই নিজেকে সাহস দিচ্ছে সে কারণ একাই পথ চলতে হবে তনুর। তাই পা বাড়ালো অজানা শহরের দিকে……….
#চলবে……