ধূসর_রঙের_প্রজাপতি ১১

0
652

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_11

খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে যে যার মতো ছাঁদে বসে আছে । কেউ বা জুস হাতে কেউ বা চা কফি হাতে।
অভিনব লঞ্চের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। মৃদু বাতাসে চুল গুলো উড়ে যাচ্ছে।
ঝিল গল্প করতে ব্যস্ত। অভিনব ট্রাভেলার নির্দেশক এর সাথে কথা বলতে নিচে চলে আসলো।
ট্রাভেলার নির্দেশক কাগজ পত্র গোছাতে ব্যস্ত।
অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ হ্যালো। ভাইয়া আজ আমরা কোথায় যাচ্ছি?

ট্রাভেলার নির্দেশক কাগজ গুলো দেখিয়ে বললেন
_ কিছু ফরমালিটিস আছে সেগুলো পূরন করে যেতে হবে।
আমরা আজ করমজল যাবো। যেহেতু করমজল থেকে আবার লঞ্চে পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে তাই আমরা আজ কটকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।
কটকা নাইট হোল্ড করে সকালে কটকা ঘুরবো।
সব থেকে জরুরী কথা হলো আমরা কেউ রাতে ঘুরবো না।
রিক্স নেওয়া সম্ভব না। যদি ও অনেকেই রাতের কথা বলেছিলো বাট উই আর সরি।
এটা আমাদের রুলস এ নেই।

অভিনব বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো।
ওনি ঠিক ই বলেছেন। এটা সুন্দরবন, এখানে নানা পশু পাখির বাস।
কোনো ভাবেই রাতে ঘোরা সম্ভব নয়।

অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ ইটস ওকে। রাতে বের হওয়া তে উচিত ও নয়।

ট্রাভেলার নির্দেশক কৃতার্থ হলেন। তারপর নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন । অভিনব আর বিরক্ত না করে ছাঁদে চলে আসলো।
সাড়ে তিনটা বাজে সুন্দরবন অলরেডি চলে এসেছে।
সবাই হৈ হুল্লর করছে। অভিনব ঝিলের কাছে গিয়ে বলল
_ ঝিল একটু আসুন।

ঝিল সবার থেকে একটু সময় নিয়ে চলে আসলো।
অভিনব এক কাপ কফি এগিয়ে দিয়ে বলল
_ নিন আপনার জন্য আমি বানিয়েছি।

ঝিল চকচকে চোখে তাকিয়ে বলল
_ রিয়ালি ? আপনি খুব ভালো কফি বানান। উফফফ দিন দিন

ঝিল কফি টা হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই সারা শরীরে অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব হলো।
আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো ঝিল। অভিনব মুচকি হেসে কফি কাপে চুমুক দিলো।
ঝিল আর অভিনব কফি শেষ করে কিছুক্ষণ চারপাশের ভিউ দেখতে লাগলো।
ঝিল খানিকটা দূরে সরে যেতেই একটা মেয়ে এসে অভিনবর পাশে দাঁড়ালো ।
অভিনব ভদ্রতার খাতিরে হাসলো। মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
_ হায় আম মাহেরা আহমেদ নদী।

অভিনব হ্যান্ডশেক করে অধরে হাসি ফুটিয়ে বলল
_ অভিনব সরকার ইহান। আপনাকে ঠিক চিনলাম না।

_ আমি মাহের ভাইয়ার ছোট বোন। ভাইয়া ভাবি আসছিলো তাই সাথে আমি আর আমার কাজিন আফরা ও এসেছি।

অভিনব হালকা হাসলো। মাহেরা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। অভিনব সন্তর্পণে উত্তর দিচ্ছে ফাঁকে ফাঁকে হাসছে।
বুকে হাত গুঁজে ঝিল তা দেখছে। অভিনবর সাথে মাহেরার ঢলাঢলি সহ্য হচ্ছে না ওর।
তাই আর এক মুহুর্ত ও সেখানে না দাঁড়িয়ে সোজা নিচে চলে গেল।
নিজের কেবিনে গিয়ে বেডে শুইয়ে পরলো।
একটা বালিশ কানে চাঁপা দিয়ে নিলো।

*

অভিনব ঝিল কে খুঁজে চলেছে। এখন লঞ্চ থেকে নেমে বোর্টে এ করে সবাই করমজল যাবে।
কিন্তু ঝিল কে আশে পাশে দেখা যাচ্ছে না। অভিনবর সরু ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। লঞ্চের মধ্যে বিপদের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তবু ও মেয়ে মানুষ মানেই চিন্তার কারন। বিষাক্ত হায়না রা ঝাঁপিয়ে পরে তাদের উপর।
অভিনব ছাঁদ থেকে নেমে আশে পাশে খুঁজতে লাগলো।
তিন তলা লঞ্চের সব জায়গায় খুঁজে অবশেষে কেবিনের দিকে পা বাড়ালো।
মনে প্রানে চাইলো ঝিল যেন সেখানেই থাকে। কেবিনে এসে ভ্রু কুঁচকে নিলো। কেউ যে শুইয়ে আছে তা ঠিক ই বোঝা যাচ্ছে তবে কে শুইয়ে আছে তা বোঝা যাচ্ছে না।
কারন গায়ে চাদর জড়িয়ে মাথার উপর বালিশ চাঁপা দিয়ে রেখেছে।
কি অদ্ভুত

অভিনব ঠোঁট বাঁকিয়ে বেডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। এক পলক দেখে নিলো , হাইট দেখে মনে হচ্ছে ঝিল ই।
তাই বিনা সঙ্কোচে মাথায় চেপে রাখা বালিশ টা সরিয়ে নিলো।
ঝিলের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।
অর্ধেক চুল ঝিলের মুখে লেপ্টে আছে। ঠিক যেন কোনো ভূতনি।
ঝিল লাফিয়ে উঠে পরলো। অভিনব মুখ চেপে হাসতে লাগলো।
ঝিল দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ আপনি হাসছেন কেন ?
আমাকে কি সার্কাস মনে হচ্ছে ?

অভিনব হাসতে হাসতে সহজ উওর দিলো
_ নাহ তবে ভূতনি দের মতো দেখা যাচ্ছে।

ঝিল নাক কুঁচকে বলল
_ হোয়াট।

অভিনব খিল খিল করে হাসতে লাগলো। ঝিলের বেশ রাগ উঠে গেল। একে তো সেই সময়ে মাহেরার ঢলাঢলির কথা ভাবছে তারউপর অভিনবর হাসি।
ঝিল আর নিতে পারলো না আশে পাশে তাকিয়ে বেড থেকে বালিশ টা তুলে নিয়ে অভিনব কে বালিশ দিয়ে মারতে লাগলো।
অভিনব হাত দিয়ে নিজেকে প্রট্রেক করার চেষ্টা চালালো।
অবশেষে ভাব খারাপ দেখে আরেকটা বালিশ দিয়ে নিজেকে প্রট্রেক করতে লাগলো।
ঝিল নাছোড়বান্দা অভিনব কে বালিশ দিয়ে মেরেই যাবে।
ঝিল বেডে উঠে অভিনব কে বালিশ দিয়ে মারতে লাগলো।
ঝিলের বাচ্চামো দেখে অভিনব হাসতে হাসতে বেডে শুইয়ে পরলো।
ঝিল অভিনবর বুকে বালিশ রেখে বাঁকা হেসে বলল
_ এখন কোথায় যাবেন। আমাকে দেখে হাসা হচ্ছিলো না।
আজ আর তোমার রেহাই নেই বাঁছা।

ঝিল অভিনব কে মারতে যাবে তার আগেই অভিনব সরে গেল।
ঝিল বেডের উপর পরে যেতেই অভিনব ঝিলের দু হাত চেপে ধরলো।
খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলল
_ এখন আপনি কোথায় যাবেন ?
আমাকে বালিশ দিয়ে মারা হচ্ছিলো না।

ঝিল ভ্রু কুঁচকে থেকে উঠে যেতেই অভিনবর উপরে গিয়ে পরলো।
দুজনেই হালকা ব্যাথা পেল। অভিনব আর ঝিল ফিক করে হেসে দিলো।
অভিনবর শার্টের কলার চেপে ঝিল হাসতে লাগলো।
হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে অভিনবর বুকে মাথা রাখলো।
হঠাৎ অভিনবর খেয়াল হলো কি হচ্ছে । অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে হালকা স্বরে বলল
_ ঝিল ।

ঝিল হাসতে হাসতে বলতে লাগলো
_ আপনাকে আজ ছাড়ছি না। আমাকে নিয়ে মসকরা।

অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ ঝিল আপনি
_ কি আপনি আপনি করছেন আমি তো

বলেই ঝিলের মাথায় বিষয় টা খেলে গেল। ঝিল হুরমুরিয়ে অভিনবর বুক থেকে উঠে গেল।
অভিনব ও বেড থেকে উঠে বসলো।
ঝিল জামাকাপড় ঠিক করে মাথা টা খানিকটা উঁচু করলো।

ঝিল আর অভিনব এক সঙ্গে বলে উঠলো
_ সরি।

দুজনেই মুচকি হাসলো। অভিনব হালকা শ্বাস নিয়ে বলল
_ আমরা এখন করমজল যাবো। তৈরি হয়ে নিন।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।

*

ঝিল চুল গুলো সেট করে মুখে হালকা সান্স ক্রিম মেখে নিয়েছে সাথে ঠোঁটে লিপ বাম।
একটা হাঁটু অব্দি জিন্স এর টপস সাথে মাফলার আর জিন্স।
একটা ট্রাভেলিং ক্যাপ পরেছে মাথায় তার উপর সানগ্লাস টা ঝুলিয়ে রেখেছে ।
কাঁধে একটা ছোট ব্যাগ ঝুলিয়ে নিয়েছে। অভিনবর কাছে এসে দাঁড়াতেই অভিনব ভ্রু কুঁচকালো।
ঝিল চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ কি হয়েছে?

_ সবাই দেখি দু ইঞ্চি মেকআপ করেছে আপনি করবেন না ?

ঝিল হো হো করে হেসে বলল
_ আমি এভাবেই ঠিক আছি। কোনো অকেশন ছাড়া গাঢ় মেকআপ করি না।

অভিনব হালকা হাসলো। ঝিল কে পরিপাটি সাজেই সুন্দর লাগছে।
অভিনব দ্রুত গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ক্যামেরা হাতে বের হয়ে আসলো।
অভিনব ব্ল্যাক এন্ড ব্লু রঙের মিশ্রনের কটন লং স্লিভ এর হুডি পরেছে।
ঝিল একপলক তাকিয়ে বলল
_ বিদেশি দের বোধহয় বিদেশি পোশাকেই সুন্দর লাগে।

অভিনব মৃদু হেসে বলল
_ আমি তো অর্ধেক বিদেশী তা আমাকে কিসে সুন্দর লাগে ?

_ আপনি তো সব সময় বিদেশী ব্র্যান্ড এর বিদেশী মডেল এর জামা ই পরেন।
তো বুঝবো কি করে ?

_ আচ্ছা। তাহলে বলছেন যে বাংলাদেশি জামা পরা উচিত। ওকে সুন্দরবন ট্যুর শেষে কয়েকটা ট্রাই করে দেখবো।

ঝিল ঝরা হাসলো। ট্রাভেলার নির্দেশক বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
ঝিল অভিনবর হাতে ধাক্কা মেরে বলল
_ আমরা তো এখনো মাঝ নদীতেই ?

অভিনব মৃদু হেসে বলল
_ হুমম

_ তাহলে এখন কেন রেডি হলাম ?

_ করমজল বোর্ট এ করে যেতে হবে। লঞ্চে করে যাওয়া যায় না।

_ মানে এখন বোর্ট কোথায় পাবে ?

অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ বোর্ট তো সাথেই আছে।

ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। অভিনব ঝিলের হাত ধরে লঞ্চের পেছনে নিয়ে গেল।
পেছনে বোর্ট বাঁধা থেকে ঝিল অবাক হলো। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ এটা আমাদের সাথেই এসেছে।

_ হোয়াট তারমানে এই বোর্ট টা সেই জেলখানা ঘাট থেকেই আমাদের সাথে এসেছে ?

অভিনব মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকালো । ঝিল গালে হাত দিতেই অভিনব নাক কুঁচকালো।
ঝিল মেকি হাসি দিয়ে হাত নামিয়ে নিলো।
বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার পর সবাই একে একে লঞ্চ থেকে নেমে বোর্ট উঠে গেল।
ঝিল ভয় পাচ্ছিলো তাই অভিনব ঝিলের হাত ধরে নিয়ে আসলো।
ঝিল হাঁফ ছেড়ে বাচলো। বোর্ট টা হালকা দুলতে থাকাতে ঝিল বেশ ভয় পেল।
অভিনব ঝিলের এক হাত ধরে রাখলে ও ঝিল ভয় পাচ্ছিল।
অভিনব কোনো কিছু না ভেবে ঝিল কে এক হাতে হালকা করে জরিয়ে ধরলো।
ঝিল কিছু মনে করে নি কারন এখানে সবাই ঘেঁষাঘেঁষি করে দাড়িয়ে আছে।
কে কখন গাঁয়ের উপর পরে যাবে অভিনব তার জন্য ই এক হাতে ঝিল কে প্রট্রেকশন দিলো।
ঝিলের বিষয় টা বেশ ভালো লাগলো। মৃদু হেসে অভিনবর হুডি খামচে দাড়িয়ে রইলো।
অভিনব এক পলক ঝিল কে দেখে নিয়ে অধরে হাসি ফুটালো।
বোর্ট সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে করমজল যেতে লাগলো।
অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর ঝিলের মন কে উৎফুল্ল করে দিলো।
চারি পাশে হাজারো গাছ পালা দূর থেকে তার একটা ও চিনতে পারলো না ঝিল।
মাথার উপর নাম না জানা কিছু পাখি উড়ে যাচ্ছে সাথে কয়েকটা চিল গোল করে ঘুরছে।
তা দেখে ঝিল ঝরা হাসলো।
আশে পাশে আর ও টুরিস্ট বোর্ট দেখা যাচ্ছে।
সবাই হাল্কা হৈ হুল্লরে মেতে উঠেছে। ঝিলের বেশ ভালো লাগলো। মন প্রান দিয়ে অভিনব কে কৃতঙ্গতা প্রকাশ করলো।
অভিনব না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।

“হ্যাপি করমজল জার্নি”

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here