#দেয়ালের_ওপাশে_কে?
পর্ব-২
লেখা:Zannatul Eva
রাত থেকে সাবা একনাগাড়ে কেঁদেই যাচ্ছে। তার একই কথা সে কিছুতেই এই বিয়ে করবে না। বাবা-মাকে বলে কোনো লাভ হচ্ছে না৷ তার উপর সাবার চাচারা একেকজন প্রচন্ড রাগি ধাঁচের মানুষ। এতদিন পর একটা ভালো সম্বোন্ধ পাকা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে এই বিয়ে তারা দিয়েই ছাড়বে। সাবার আদনানকে নিয়ে ভীষণ ভয় হচ্ছে। কেউ একজন ওকে মে*রে ফেলার হুমকি দিয়েছে। সে আদনানকে বিয়ে করলে যদি সত্যি সত্যিই ওই লোকটা আদনানের ক্ষতি করে দেয়! এত ভালো একটা ছেলেকে জেনেশুনে কী করে সে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে!
সামনেই বিয়ে। ভালো মন্দ খেতে হবে, রূপচর্চা করতে হবে। কত শপিং করতে হবে। এখন যদি তুই এইভাবে কান্নাকাটি করিস তাহলে তো তোর চেহারা আরও মলিন হয়ে যাবে মা।
রেবা হাসান মেয়ের জন্য খাবারের থালা সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। সাবা তার মাকে বলল, প্লিজ মা আমি এই বিয়েটা করতে চাই না। কেউ একজন আদনানকে থ্রেট করেছে। আমাকে বিয়ে করলে নাকি সে আদনানকে মে*রে ফেলবে। আমি একথা জেনেও কী করে বিয়েটা করবো মা?
রেবা হাসান মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলল, এমন রাজকন্যার মতো মেয়ে আমার৷ রূপে, গুণে কোনোদিক থেকে কোনো অংশে কম আছে তোর? এমন শাহজাদীর মতো মেয়ের পেছনে ছেলেদের লাইন লেগে থাকাটা কি স্বাভাবিক নয়? কত ছেলেরাই তো তোকে পছন করতো। সে কী এমনি এমনি? সেসব ছেলে গুলোই হয়তো এমন বদমাইশি করছে। ওসব নিয়ে তুই একদম ভাবিস না। যা হবে ভালোর জন্যই হবে। আর যা হয় আসলে আমাদের ভালোর জন্যই হয়। কান্নাকাটি না করে নিজের যত্ন নে। চোখ, মুখ ফুলিয়ে একদম একাকার অবস্থা। এখনি যদি এমন হয় তবে বিয়ের সময় কী করবি তুই? একদম কাঁদবি না৷ নে হা কর আমি তোকে খাবার খাইয়ে, ঘুম পারিয়ে দিয়ে যাব। মাথায় বিলি কেটে দিবো দেখবি খুব ভালো ঘুম হবে। তোর মনে আছে ছোট বেলায় আমি মাথায় হাত বুলিয়ে না দিলে তোর ঘুমই আসতো না। এখন তো খুব বড় হয়ে গেছো তাই আর মাকে দরকার হয়না।
অনেকটা অভিমান নিয়ে রেবা হাসান মেয়েকে কথা গুলো বলল। খাওয়া শেষে সাবা মাকে বলল, আজ তুমি আমার সাথে ঘুমোবে মা? আমার ভীষণ ভয় করছে। আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও প্লিজ।
রেবা হাসান মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি আছি তো তোর কাছে। একদম ভয় পাস না।
কাল যেভাবেই হোক একবার আদনানের সাথে দেখা করতে হবে। ওকে ভালো করে বোঝাতে হবে যেন ও এই বিয়েটা না করে। কিন্তু ওর নাম্বারটাও তো রাখিনি। যেভাবেই হোক আমাকে ওর সাথে কথা বলতেই হবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই সাবা তার মায়ের কোলের উপরে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরের দিন মায়ের কাছ থেকেই আদনানের নাম্বারটা জোগার করলো সাবা। কামাল হাসান শুনে খুব খুশি হলো যে, মেয়ে তার পছন্দ করা পাত্রের সাথে বিয়ের করতে রাজি হয়ে গেছে। বাড়িতে রীতিমতো বিয়ের তোরজোর শুরু হয়ে গেছে। হাতে মাত্র কয়েকটা দিন আছে। এরমধ্যেই যা করার করতে হবে৷ সাবা ভাবলো, একবারে বাসা থেকে বেরিয়েই আদনানকে কল করবো। অবশ্য ও যা ব্যস্ত মানুষ কী জানি দেখা করতে পারবে কি না। তবুও চেষ্টা করতে ক্ষতি কী!
ভার্সিটি গিয়ে সাবা ফাতিহাকে সমস্তটা জানানোর পর ফাতিহা বলল, এতদিন অবদি যা হয়েছে সেটা অন্তত মেনে নেয়া যাচ্ছিল। কিন্তু এবার ডিরেক্ট খুনো*খুনির পর্যায়ে চলে এসেছে! আমার মনে হয় তোর থানাতে একটা জিডি করা উচিত। কে জানে কবে কী ক্ষতি করে দেয়। আগে থেকে সাবধান থাকা ভালো। আচ্ছা বললি না তো ছেলেটা দেখতে কেমন? কী করে?
সাবা খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল, দেখতে খুব সুন্দর। লম্বা, ফর্সা আর বেশ হ্যান্ডসাম। আর ও নামকরা একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। ওর যেই ব্যাপারটা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেটা হলো ওর সাহসিকতা। এরকম একটা হুমকির সম্মুখীন হয়েও এই বিয়েটা করার জন্য ও প্রস্তুত৷ এই থ্রেট পাওয়ার পর থেকেই নাকি আরও বেশি করে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে। কিন্তু ওর এই সাহসিকতার স্বভাবটাই এখন আমার ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতটা সাহস দেখানোও উচিত না। তাই ভেবেছি আজ একবার ওর সাথে দেখা করে কথা বলবো। দাঁড়া ওকে একটা ফোন করি।
ফাতিহা ভেংচি কেটে বলল, ও বাবা এর মধ্যেই ফোন নম্বর দেয়া নেয়া হয়ে গেছে! এরপর তো আর আমাকে মনেও রাখবি না৷ সারাক্ষণ নিজের ডাক্তার হাসবেন্ডের সাথেই প্রেমালাপ না মানে ফোনালাপ করবি।
সাবা মুখ বেকিয়ে বলল, বললেই হলো! শোন ওর এত সময় নেই আমার সাথে খেজুরে আলাপ করার। এমনিতেই সারাক্ষণ পেশেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ডাক্তার মানুষ বুঝতেই পারছিস। এখন ফোন দিলে ধরে কি না সেটা দেখ।
ফোনটা কর আগে৷ দেখবি ঠিক ধরবে।
সাবা আদনানকে ফোন করলো ঠিকই কিন্তু রিং হতে হতে ফোনটা কেটে গেল। সাবা বলল, দেখেছিস! বলেছিলাম না আমি ধরবে না। আরে ওর এত সময় কই।
আবার ট্রাই কর। ধরলেও ধরতে পারে।
কয়েকবার ট্রাই করার পর অবশেষে আদনান এবার সাবার কল রিসিভ করলো। সাবা সালাম দিলো। আসসালামু আলাইকুম।
আদনান সালামের জবাব দিয়ে বলল, কে বলছেন?
আমি সাবা। ভালো আছেন?
আদনানের খিটখিটে ব্যস্ত মনটা সাবার নাম শোনা মাত্রই ফুরফুরে হয়ে গেল। মৃদু স্বরে বলল, আপনি! আমার নম্বর কোথায় পেলেন?
সাবা বলল, মায়ের কাছ থেকে জোগার করেছি।
সাবা নিজে থেকে নম্বর জোগার করে ফোন করায় আদনানের বেশ ভালো লাগলো।
হঠাৎ কী মনে করে?
সাবা বলল, আজ একবার কফিশপে একটু দেখা করতে পারবেন? যদি ফ্রি থাকেন তবেই। জানি আপনার পেশেন্ট দেখার অনেক চাপ থাকে। আর……
পুরো কথা শেষ করার আগেই আদনান বলল, কোথায়, কখন দেখা করতে হবে বলুন।
সাবা বলল, আমি লোকেশন আর সময়টা আপনাকে টেক্সট করে জানিয়ে দিবো। এখন রাখছি।
ওকে বাই।
সাবার মনের উপর থেকে যেন একটা বিশাল বড় পাথর নেমে গেল। দুজনেই সন্ধ্যেবেলা ঠিক সময়ে নির্দিষ্ট কপিশপে চলে এলো। আদনান বলল, আপনার যদি আপত্তি না থাকে তবে আমার একটু শপিং করার ছিল। মানে মায়ের জন্য কিছু কিনবো ভেবেছি। আপনি সাথে গেলে একটু হেল্প হতো। মেয়েলি ব্যাপার তো আমি আসলে আগে কখনো সেভাবে একা একা কিছু কিনিনি। ওখানের কাজটা সেরেই না হয় নিরিবিলি কফি খাওয়া যাবে।
সাবার একটু হেজিটেট ফিল হচ্ছিলো। কিন্তু তাও সে আদনানের সাথে শপিং মলে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেল।
উপরতলায় যেতে হবে। চলুন আমার সাথে। আদনান বলল।
সাবাকে নিয়ে শপিং মলের উপর তলায় যাওয়ার সময় আদনানের কাছে একটা ফোন আসে। আদনান সাবাকে বলল, আপনি উপরে গিয়ে দাঁড়ান আমি একটু কথা বলে আসছি।
সাবা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে এস্কেলেটরে পা দিলো। উপরে উঠতে উঠতে এদিক সেদিক তাকিয়ে শপিং মলটা ভালো মতো দেখছিলো। হঠাৎ পাশে তাকিয়ে চিরচেনা মুখের মানুষটাকে দেখতেই আতকে উঠলো। চেনা মুখের মানুষটি সাবার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে বলল, কেমন আছো সাবা?
সাবা খানিকটা ভীতু স্বরে বলল, তুমি?
চলবে…….