দেবী পর্ব ৫

0
375

#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ।
৫ঃ
_______________________
সিরাজী মহিলা পাঠশালা~

ফুল,রিতা,নুপুর সাথে আরো ১০-১২ জন কিশোরী মেয়েরা মিলে মেলায় যাওয়ার কথা বলবে। কাকন কেও জোর করে সাথে নিয়েছে। ফাতিমার কাছে গেলো সকলে।
–ফাতিমা আপা,,আমরা সবাই মেলায় যাইতে চাই।

ফাতিমা স্পষ্ট ভাবে বলল,” না ,,ওইখানে যাওয়া যাইবো না। পরপুরুষ আছে অনেক। আর তাছাড়া অত ভিড়ে কোনো অঘটন ঘটলে। এত গুলা যুবতী মাইয়া যাওয়া ঠিক হইবো না।”

সবাই মিলে হুড়মুড়িয়ে ফাতিমার পায়ে পড়লো।
ফুল বললো,” না কইরেন না আপা,,একটু ঘুইরা ই চইলা আসমু। ”
–হ্যাঁ আপা যাবো আর আসবো। (সবাই বলে উঠলো)

ফাতিমা এবার বললো,”বেশ যাবি যাইস।কিন্তু সবাই বোরকা পড়বি, মাগরিবের আগেই চইলা আসবি আর কেউ কারো হাত ছাড়া যাবে না।”

সবাই খুশিতে বলে উঠল,” ঠিক আছে আপা।”

একপাশে দাড়িয়ে ছিল কাকন
ফাতিমা কাকন কে ডাকলো,” কাকন”!

কাকন ফাতিমার ডাকে সাড়া দিয়ে বলল,”জি আপা”
(লেখিকাঃSrotoswini_স্রোতস্বীনি)

ফাতিমা বললো,” কাছে আয় তুই মা। সারাদিন তো মহিলা শালায় ই থাকিস। কাল তৈরি হয়ে থাকিস মেলায় যাবি ওগো সাথে।”

কাকন বললো,”না, আপা আমি যাবো না।”

রিতা কাকনের হাত চেপে বললো,”চুপ তুই ও যাবি। আপা আপনে চিন্তা কইরেন না। ও যাইবো।”

নুপুর সায় দিল,” হ্যাঁ রে কাকন তুই যাবি। কোনো বাহানা করবি না।”

ফাতিমা এবার বললো,” কাকন রাজি হয়ে যা ওরা যখন বলছে।লেখিকা স্রোতস্বীনি। আর তোরা কাকন রে দেইখা রাখিস ।ও তো আর তগো মত চালাক না। বোকা সোকা মাইয়া আমার। ওর হাত কিন্তু ছাড়বি না।য

ফুল বললো,”জি আপা,,কোনো চিন্তা কইরেন না। ”

কাকনের কোনো ইচ্ছে নেই মেলায় যাওয়ার। তবুও যেতেই হবে।
_____________________

নববর্ষের শুরুতে বাঙালী রা নানা আনন্দে মেতে উঠে। বাঙালী রা বহু বছর আগে থেকেই উৎসব প্রিয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবছর ও সিরাজপুরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। গ্রাম্য মেলা মানেই আনন্দের শেষ নেই। গ্রামবাংলার মানুষ নানা ভাবে আনন্দে মেতে উঠে। মেলার পরিচালনা করে থাকে সিরাজীরা নিজে। বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ থেকে দোকানিরা আসে তাদের পণ্য বিক্রি করে। লাভবান ও হয়। সেই সাথে সিরাজপুরবাসীও মেলা উপভোগ করে।

বিকেলে সবাই ওরা মেলার উদ্দেশ্যে বের হল। সিরাজী মহিলা পাঠশালা থেকে ৫ মিনিটের পথ। মেলা বসেছে গ্রামের হাটের বিপরীতে ফাকা মাঠে। গ্রামের সবচেয়ে বড় মাঠ। চারিদিকে মানুষের গিজগিজ।হরেক রকম খাবার, নাগরদোলা,চরকি, যাত্রা প্রভৃতি রয়েছে।

মেলায় পৌছে কাকন অবাক হলো একেই তো হরেক রকমের জিনিসপত্র তার ওপর এতো ভিড়।কেমন যেন অসস্তি লাগছে তার। সে এতো মানুষের মধ্যে কখনো থাকে নি।

কাকন বিরক্ত তে বলল,”এত ভিড় রিতা আপা,,এই জন্য আমি আসতে চাই নি।”

ফুল কাকন কে ধমক দিয়ে বললো,” কাকন তুই একটু চুপ থাকবি। সব সময় বেশি কথা কস।এমনিতেই আপা আসতে দিতে চাইলো না। তার উপর তুই বেশি কথা বলছিস।”

রিতা বললো, ” শোন কাকন বছরে একবার ই মেলা হয়। গত বছর তো বিলাল সিরাজীর দুর্ঘটনার জন্য মেলা হয় ই নাই। এইবার আমি সেইরকম ঘুরুম।”

ফুল বলল,” ঠিক কইছা। চল নাগরদোলা চড়ি।”

আরেকজন বললো,”না আগে আমরা চুড়ি আর ফিতা দেখি। দেখ কত রকমের।”

ফুল বলল,” ঠিক আছে তাই হইবো।”

রিতা এবার বাধ সাধলো,”না আগে কিছু খাইয়া নেই। কত্ত রকমের খাওয়ার জিনিস। আচার দেইখা জিব্বাই পানির বন্যা বইতাছে।”

ফুল বললো,” তর খালি খাই খাই। আচারে একদিন আছাড় খাবি দেখিস তুই।”

নুপুর বললো, ” তোরা যা, ওই যে সোহাগ। আমি একটু চিঠি টা দিয়ে আসি।কাকন তুই আমার সাথে চল।”
বলেই কাকন এর হাত ধরে নিয়ে গেলো।

সবাই হেসে দিলো। ভিড়ের মধ্যেই এগোতে লাগলো।
সবাই যাচ্ছে। আর অন্যদিকে নুপুরের সাথে যাচ্ছে কাকন।লেখিকা স্রোতস্বীনি। সবচেয়ে শান্তশিষ্ট সরল মেয়ে কাকন।চুপচাপ মূর্তির ন্যায় নুপুর কে অনুসরণ করছে। ভিড়ের মধ্যে বাজে ছেলেরা ধাক্কা দিতে চাচ্ছে তাই কাকন ভয়ে নুপুরের হাত আরো জড়িয়ে নিলো।
নুপুর কাকনের হাতের দিকে চেয়ে বলল,” এইভাবে ধরে আসিস কেন? হাত ছাড় কাকন আর তাড়াতাড়ি হাটতো । দেখ ওই যে সোহাগ দাড়িয়ে আছে। “বলেই কাকন এর হাত ছেড়ে দিলো।

বেচারি কাকন নুপুরের সাথে সাথে যাওয়ার চেস্টা করলো।দেখলো নুপুর কথা বলছে সোহাগের সাথে। হঠাৎ কিছুক্ষণ পর দেখলো নুপুর আর সোহাগ কোথাও যাচ্ছে। কাকন ও যেতে চাইলো কিন্তু কিছু দূর এগিয়ে ভিড়ের মধ্যে কিভাবে যেন হারিয়ে গেলো। কাকন চারিদিকে চোখ বুলালো কিন্তু ফলাফল শুন্য।
কাকন “নুপুর আপা” বলে ডাকতে থাকলো। কিন্তু এই ভিড়ে কেউ শুনছে না তার কথা। তারপর কাকন সবাইকে খুজতে লাগলো কিন্তু ভিড়ের মধ্যে তাদের কেও পেলো না। কাকনের খুব ভয় হতে লাগলো।তবুও খুজতে লাগলো কিন্তু ব্যর্থ হলো। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে তার মাগরিবের নামাজ পড়তে হবে। কোনো উপায় না পেয়স তাই সে পাঠশালার উদ্যেশ্যে রওনা হলো। মাঠের পথ ছেড়ে খানিক টা এগিয়ে এসেছে। চারিদিকে মাগরিবের আজান দিচ্ছে। কাকন বকুলতলা এসে পৌছালো। হঠাৎ তার অন্যরকম লাগলো।সে কেন যেন বকুল গাছ টার দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ তার ভয় বেড়ে গেলো। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই একদম ফাকা ফাকা লাগছে তার । সে জোরে জোরে শ্বাস নিলো। সামনেই মসজিদ হয়তো সবাই নামাজে গেছে।ডান দিকে গেলে মহিলা পাঠশালা।লেখিকা স্রোতস্বীনি। আর বাম দিকে নদী আর নদীর পাশে এখানে এলাকার বখাটে রা গুলি খায়(আফিমের তৈরি করা মাদক) খায়, জুয়া খেলে । যা সে ফাতিমা আপার থেকে শুনেছিল।
কিছুটা দূরে সে দেখলো কয়েকজন বসে জুয়া খেলছে। কাকন ওদের দেখে দ্রুতপায়ে এগোতে লাগলো।কিন্তু ওদের চোখ ফাকি দিতে পারলো না।

–“কিরে সন্দাবেলা বুরকা পড়া পরী কই থিকা আইলো।
–চল যাইয়া দেহি। হ চল যাই। রাইতে সবাই মেলায় যাত্রা দেখবো আর আমরা ওর লগে যাত্রা করুম। -হাহাহা তার আগে চল পরী ধরি।” এগুলা বলেই ৪-৫ জন কাকনের দিকে আসতে শুরু করলো।

কাকন দেখলো ওর দিকে এগিয়ে আসছে কাকন ভয়ে দৌড় দিলো। কিন্তু তারা কাকন কে ঘিরে ধরলো তারা।
–“আরে কই যাও মাইয়া। তোমার লগে আইজ আকাশের চাঁদ দেখুম। ”

আরেকজন বললো-উহু খালি চাঁদ কেন রাইতের আকাশে সূর্য ও দেখমু আজকা। বলেই হো হো করে হেসে উঠলো সবাই।

কাকন ভয়ে বললো, ” দেখুন আমাকে যেতে দিন। আমি কিন্তু লোক ডাকবো।”

–“ডাকবা ডাকো দেখি কেডায় আসে। হোহোহো”
তারপর কাকনের হাত ধরে ফেললো।কাকন ভয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।চিৎকার করতে থাকলো। কিন্তু তার আগেই বখাটে গুলো ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।কাকন আরো জোরে জোড়ে চিৎকার করতে শুরু করলো।এক জন কাকন কে পাজাকোলে নিলো।আরেক জন মুখ চেপে ধরলো।
কাকন কে নদীর পাশ দিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। কাকন বুঝতে পারলো তাকে জঙ্গলের ভিতর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কি জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কাকন ছোটার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে।চিৎকার ও করছে।কিন্তু কেবল উউম উম শোনা যাচ্ছে। জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করলো বখাটে গুলো। নির্জন জায়গায় এনে কাকন কে ফেলে দিলো।কাকন মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে শুরু করলো। কাকন কে ফেলে দিলে কাকন উঠে দৌড়াতে লাগলো। তার মনে কেবল একটাই চিন্তা তাকে বাচতে হবে। সে যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কাকন জঙ্গলে ছুটছে। তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বেশ খানিক দূর যেতেই কোনো এক শিকড়ের সাথে পা বেজে পড়ে গেলো কাকন।পড়ে যেয়ে হাটুতে আর হাতে ব্যাথা পেলো।তবুও দুই হাতে ভর করে উঠে দাড়ালো। কিন্তু শ’য়’তা’ন গুলো ঠিক ই ধরে ফেললো। তারপর বললো, — “মা** তুই আমাগো দোড় করায়লি। ভাবছিলাম তরে খাইয়া ছাইড়া দিমু কিন্তু তুই হেইডাও পাবি না। ওই ওরে ধর। ”

কাকন এই কথা শুনার পর এক চিৎকার
করলো,” বাচাও।”

সাথে সাথেই একজন কাকনের মুখ চেপে ধরলো। তারপর আরেকজন ২ হাত ধরে ফেললো। এবার কাকনের নিকাব খোলার জন্য হাত বাড়ালো।

কাকন কাদছে আর ভাবছে আদোও কি তার শেষ রক্ষা হবে?

চলবে….
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি

বিদ্রঃদয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক,কমেন্ট, শেয়ার দিয়ে পাশে থাকবেন।ধন্যবাদ।

®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি✍️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here