#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ।
৪ঃ
হালখাতা যা বহুবছর আগে থেকেই বছরের প্রথম দিন বাঙালি রা করে থাকে। সিরাজী বংশের পুর্বপুরুষরাও হালখাতার আয়োজন করতো।তাই আজ ১লা বৈশাখ এ হালখাতার আয়োজন করেছিল। দুলাল সিরাজী পক্ষ থেকে মুলত আজকে হালখাতা উপলক্ষে সকল কৃষক দের এবং তার থেকে ঋণ নেওয়া ব্যক্তিদের,, বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। হালখাতার সকল কাজ সেরে সকলে খেতে বসেছে।
সিরাজী মঞ্জিলের রীতি অনুযায়ী পুরুষেরা ভোজ কক্ষে বসে খায়। আর নারীরা রান্নাঘরের মেঝেতে খাওয়ার নিয়ম।লেখিকাঃ স্রোতস্বীনি। যদিও যথেষ্ট বড় রন্ধনশালা। সেখানে খেতে কারো অসুবিধা হয় না। তিন বেলায় এভাবে খাওয়ার নিয়ম। খাওয়ার টেবিলে বসে খাচ্ছে সকলে।টেবিল ভর্তি নানা রকম এর খাবার।
জামাল খেতে খেতে দুলাল সিরাজোকে বললো, “আব্বা,,কইতেছিলেম যে এইবার তো সব দিক দিয়াই লাভবান হইতাছেন। আশা করি এইবার আমাগো জমি গুলাতে ফলন ভালো হবো। আর আম,লিচু,কাঠল বাগানে অনেক ফল আইছে। আপনি যদি কিছু মনে না করেন এইবার এগুলা দেখভালের দায়িত্ব আমি আর মহী নিমু।”
দুলাল সিরাজী ভাতের দিকে তাকিয়ে বললো, “খাওয়ার সময় বেশি কথা কওয়া আমার পছন্দ না। চুপচাপ খাও।সময় আসলে কমু নে কারে দায়িত্ব দিমু।”
হেলাল চাচার পক্ষ নিয়ে বললো, ” দাদাজান চাচাজান যখন কইতাছে দেন দায়িত্ব। আমিও সাহায্য করুম নে।”
দুলাল হেলালের চোখে চোখ রেখে বললো, ” খুব ভালো কইরাই জানা আছে কেডা কত ভালো কাম করতে পারো।মুখ ডা খুলবার চাই না।”
দুলালের কথা শুনে তিনজনের ই মুখ চুপসে গেলো।
রুহুল শুধু নিরবে খেয়ে যাচ্ছে। কারন সে অকারণে এগুলোতে জড়াতে চায় না। তার সব ই জানা। তার চাচা, ভাই যে দেখভালের নামে চুরি করে টাকা হাতিয়ে নেবে জানা আছে তার।
অন্যদিকে রান্নাঘরে সকল মহিলারা খাবার খাচ্ছে।
সবাই গোস্ত, পোলাও,কোরমা আর ইলিশ ভাজি খাচ্ছে। আর একমাত্র সুভা যে কি-না মাছ ভাত খাচ্ছে।এজন্য তার জা আর সতীন মুখ চিপে হাসছে। সুভা গোস্ত-পোলাও খেতে পারে না। এ নিয়ে সিরাজী মঞ্জিলে নানা কথা শুনেছে সে। তার শাশুড়ী মা কিছু না বললেও সতীন এবং জা এর থেকে নানা টিটকারি শুনতে হতো।সিরাজী বাড়ির বউ হয়ে ও গোস্ত পাতে নেয় না এজন্য বলা হতো বাবার বাড়ি গোস্ত চোখে দেখে নি । অবশ্য সকলের বাপের বাড়ি থেকে সব কিছু আসলেও রুহুলের নানা বাড়ি অর্থাৎ সুভার বাপের বাড়ি থেকে আজ অব্দি কিছুই আসতে দেখে নি কেউ। যতবার এই প্রসঙ্গে কথা বলা হয় তাদের শাশুড়ি দুলাল সিরাজীর স্ত্রী ধমকিয়ে চুপ করতে বলেন। সুভা নিরব থাকে। কেমন যেন অনুভূতিহীন এক মানবী।লেখিকা স্রোতস্বীনি।সবার খাওয়ার মাঝে সামিয়া হঠাৎ এক কথা বলে উঠলো,” দাদিমা,, আমি পরশু মেলায় যামু। আপনি দাদাজান রে বুঝাইয়া কইয়েন আমারে জানি যাওয়ার অনুমতি দেয়।”
দাদিমা বললো, “সিরাজী বাড়ির মাইয়া-বউগো পর পুরুষের সামনে যাওয়া তর দাদাজানে পছন্দ করে না। এক কথা কয়বার কমু।তয় তর দাদাজান অনুমতি দিলে যাইস।তর দাদাজান রে কইস।”
সামিয়া বললো, ” দাদাজান রে কওয়ার সাহস আমার নাই।আপনি কইলেই কাম হবো”
দাদিমা খাওয়ায় মন দিয়ে বললেন,”আমি পারুম না। বুড়া কালে মাইর খাইবার চাই না।”
সামিয়া বললো, “ঠিক আছে কইতে হইবো না। দাদাভাই রে কইলে কাম হইতে পারে।বড়াম্মা তুমি দাদাভাই রে একটু কইয়ো তো। আমি মেলায় যামু ” (আহ্লাদী সুরে বললো সামিয়া)
সুভা মুচকি হেসে বললো, “বেশ আমি রুহুল কে বলবো যেন আমার সামিয়া মা কে নিয়ে যায়। এখন খেয়ে নে দেখি নি।”
সামিয়া সুভাকে জড়িয়ে ধরে বললো,”বড়াম্মা তুমি খুব ভালো।”
সতীনের প্রতি নিজের মেয়ের দরদ দেখে মুখ কালো করলো মালেকা। সে আর যাই হোক সুভা কে পছন্দ করে না। সে এই বাড়িতে বড় ছেলের বউ হয়ে এসেছিল ঠিক ই কিন্তু বড় বউ এর অধিকার পায় নি। তাকে বলাই হয় নি তার স্বামী বিবাহিত। বিয়ের পর জেনেছে। সেই থেকে সুভার প্রতি ঘৃণা। এই জন্যই রুহুল পেট এ থাকতে সে সুভা কে শিড়ি থেকে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যজোড়ে বেচে যায় সুভা। সাথে রুহুলও।কিন্তু হারিয়ে ফেলে মা হওয়ার ক্ষমতা। সেই এক পুত্র রুহুল কে নিয়েই সুভার বাস এ বাড়িতে।
______________________
সকলেই যার যার কক্ষে। সুভা রুহুলের কাছে গেলেন। দরজার কাছে দাড়িয়ে ছেলের বই পড়ার দৃশ্য দেখলেন। ইংরেজি এক উপন্যাসের বই। ছেলে তার বই প্রেমী।বিভিন্ন উপন্যাস গল্প পড়তে পছন্দ করেন। লন্ডনে যেয়ে শেষ একটা লেখাপড়া করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার বাবার দুর্ঘটনায় যাওয়া হলো না।দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন সুভা।
কারো ছায়া দেখে পিছনে ফিরলেন রুহুল।মাকে দেখে বললো,”ভিতরে আসেন আম্মা,দাঁড়িয়ে আছেন কেন”?
সুভা বললো, “তোর সাথে একটা কথা বলতে এলাম। কাল সামিয়া কে একটু মেলায় নিয়ে যাস তো খোকা। মেয়েটা বায়না করেছে”।
(লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি)
রুহুল বই বন্ধ করে বললো,” আম্মা আপনি জানেন ই তো দাদাজান মেলায় সামিয়া কে নিয়ে যাওয়াতে সম্মতি দিবেন না।আর আমিও মেয়েদের এভাবে পরপুরুষ এর সামনে ঘুরাঘুরি পছন্দ করি না। তাই এই বিষয় টা আমি মানতে পারবো না। ক্ষমা করবেন।”
সুভা বলল,”এই সিরাজী বংশের নিয়ম কত অদ্ভুত। মেয়েদের ১০ ক্লাস এর বেশি পড়ানো যাবে না।ছেলেদের সাথে বসে খাওয়া যাবে না। আমার বাড়ি তে এমন নিয়ম ছিল না।লেখিকা স্রোতস্বীনি। দম বন্ধ হয়ে আসে এমন নিয়মে। আগে জানলে কখনোই এই সিরাজী মঞ্জিলে বউ হয়ে আসতাম না।”
রুহুল উঠে মায়ের কাছে দাড়ালো বলো,”আম্মা এটা আমাদের বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। এই নিয়ম ই মানতে হবে।আর দয়া করে এভাবে বলবেন না।আর পারলে অতীত ভুলে যান।”
সুভা রুহুলের চোখের দিকে অসহায়ের মতো চেয়ে বললো,” চাইলেই কি সব ভুলে যাওয়া যায় খোকা, আমি তো ভুলবো না,পারবো না ভুলতে।”
রুহুল কিছুক্ষণ চুপ থাকলো তারপর বললো,” অনেক রাত হয়েছে আম্মা,,,আব্বার কাছে যান। একা আছেন উনি। আর সামিয়া কে বলবেন আমি কাল গিয়ে মেলার পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবো তারপর যদি মনে হয় নিয়ে যাবো।”
সুভা ছেলের দিকে একবার তাকালো। তারপর চলে গেলো।
________________
মহিলা শালায় রিতা, ফুল, নুপুর পাশাপাশি শুয়ে আছে। ফাতিমা আর কাকন পাশাপাশি। রিতা আর ফুল প্রায় জোর করে ফাতিমা কে একদম কিনারে দিয়েছে। কারন আজ সকল মেয়েরা মিলে পরিকল্পনা করবে। মেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা।
রিতা বললো, ” শোন, কাল আমরা ফাতিমা আপা রে কমু মেলায় যাওয়ার কথা। যদি যায়তে না দেয় সবাই মিলা পা ধরমু।”
ফুল বললো,” কিন্তু তাতেও যদি রাজি না হয়। তখন কি করমু?”
নুপুর বললো,”আরে কাকন রে দিয়া কওয়ামু।ফাতিমা আপা কাকন রে অনেক ভালোবাসে। কাকন কইলেই রাজি হইবো। ”
রিতা মুখ ফুলিয়ে বললো,” কিন্তু কাকন তো বাইরে বের হওয়া পছন্দই করে না। সারাদিন খালি এই মহিলাশালায় ই থাকে।”
ফুল বললো,”আরে রিতা চিন্তা করিস না সব আমার উপর ছাইড়া দে। কাকন রে জোর কইরা কওয়ামু।”
নুপুর লজ্জামাখা মুখ নিয়ে বললো,” মেলায় গেলে সোহাগ এর লগে দেখা করুম। ”
রিতা নুপুর কে লজ্জা দেওয়ার জন্য বললো, ” আহারে সুহাগ ভাই এর নাইকা রে,, পিরিত দেইখা বাচি না।আপা জানলে পিরিত বাইর হইবো নে।”
নুপুর বললো, “তুই সব সময় বেশি কথা কস। শুধু চিঠি টা দিমু। তাই মেলায় যাওয়া খুব দরকার।”
ফুল বলল,”আইচ্ছা নিস,, কিন্তু কেউ জানি টের না পায়। ”
হঠাৎ ফাতিমা বলে উঠলো,” কিরে তোরা কি শুরু করছা। ঘুমা কইতাছি। ফজরের সময় না উঠলে মাইর দিমু। এখন ঘুমা।”
ফাতিমার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো সবাই। তারপর ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে…
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি
বিদ্রঃদয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক,কমেন্ট, শেয়ার দিয়ে পাশে থাকবেন।ধন্যবাদ।
®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️