দেবী পর্ব ৩০

0
309

#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩০ঃ

সিরাজী মঞ্জিলের এক মেয়েকে শশুড় বাড়ি বিদায় দিতে না দিতেই আরেক ছেলের রক্তের ধারা বয়ে যাচ্ছে সিরাজী মঞ্জিলে। কাকন যখন চিৎকার করে কাকনের চিৎকারে সকলেই প্রায় তিনতলায় এসেছিল। তারপর হেলাল কে এভাবে মৃত দেখে যেন সকলেই থমকে গেলো। এটা কি থেকে কি হয়ে গেলো। বিকেল অব্দি যে ছেলে দিব্যি কাজ কর্ম করে বেড়ালো এখন সে নৃশংস হত্যার শিকার কিভাবে মেনে নেবে সকলে।

মালেকা হেলাল কে পড়ে থাকতে দেখে ছুটে গেলো হেলালের দিকে। হেলাল কে ধরে বিলাপ কান্না শুরু করে দিয়েছে। মালেকা রুহুল কে দেখে বলছে,” তুই ই খুন করছিস।তুই আর তোর বউ মিলা খুন করছিস” সাথে নানা কটু কথা বলা শুরু করলো। ওর সাথে সকলেই কাদতে শুরু করে দিয়েছে।

সুভাও হেলালের এমন মৃত্যু দেখে কাদছে।সে তো হেলাল কে কোনোদিনো রুহুলের থেকে কম ভালোবাসে নি। কি নির্মম মৃত্যু। সুভা চিন্তিত ভাবে রুহুলের দিকে তাকালো।লেখিকা স্রোতস্বীনি। তার স্বামীর পর হেলাল।আচ্ছা বিলালের কোনো পাপের শাস্তি এভাবে দেওয়া হচ্ছে নাতো। না তার খোকার এমন কিছু হলে সুভা মানতে পারবে না।

দুলাল সিরাজী হতভম্ব। বাড়িতে এত মেহমান থাকা সত্বেও কেউ কিভাবে খুন করতে পারলো। একদম নিখুত ভাবে হত্যা। দুলাল সিরাজী রক্তের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তার বংশের রক্ত আজ সকলের পায়ের নিচে।সকলের পায়েই এই রক্ত লেগেছে। তার বংশের বিনাশ কি তাহলে অতি নিকটে।

জামাল আর মহীবুল একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে।
তারা বার বার ভাবছে কে খুন করলো এভাবে হেলাল কে। তারা নিজেরাই তো হেলাল কে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল অথচ আজ হেলাল অন্য কারো শিকার হয়ে গেলো। এতগুলো প্রহরী আছে গেইটের কাছে। তার ওপর বাড়ি ভর্তি মেহমান। বাইরের কেউ খুন করে গেলো অথচ কেউ ধরতে পারলো না।

রুহুল দুলাল সিরাজীর কাছেই দাড়িয়ে আছে। কাকন রুহুলের কাছে এলো। এসে রুহুলের হাতটা শক্ত করে ধরলো। রুহুল বরাবরই সাহসী সহজে ভেঙে পড়ে না তবে নিজের ছোট ভাই এর এমন অবস্থা দেখে নিশ্চুপ হয়ে গেছে, কথা বলার ভাষা নেই। এই সেই হেলাল যে ছোটবেলায় তার দাদাভাই এর কাছে বায়না করতো। রুহুলের গলা দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না।

মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ এসেছে। পুলিশ কিছু জিজ্ঞাসা বাদ করে জানালো হেলালের লাশ মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে এবং দেখা হবে কিভাবে মৃত্যু হয়েছে। কিছুক্ষণ পর হেলালের লাশ নিয়ে যাওয়া হলো থানায়। রুহুল,দুলাল আর মহীবুল যাবে সাথে।

লাশের সাথে রুহুলের যাওয়া দেখে মালেকা বললেন, “তুই কেন যাস রুহুল, তর তো আনন্দের দিন। সব সম্পত্তি তুই পাবি। তুই খুনি আমার পোলার। আমার পোলা, আমার হেলাল। দে ফিরায়া দে আমার হেলাল রে। আমি জানি তুইই খুন করছা আমার হেলাল রে। ”

এমন কথায় রুহুলের সাহস যেন আরো হারিয়ে গেলো। সে নিজের ভাই কে কিভাবে মারতে পারে। রুহুল এক পলক মালেকা কে দেখে চলে গেলো থানায়।

কাকন মালেকার কাছে বসে বললো, “আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে ছোট আম্মা। আমরা দুজন একসাথে যখন দোতলায় আসি। রক্ত দেখে তিনতলায় এসে দেখি ছোটভাই এর এমন অবস্থা। উনি কি জন্য নিজের ছোট ভাই কে মারবে। ”

–“চপ ফকিন্নি তুই আর তর সুয়ামি কাউ রে বিশ্বাস করি না আমি। আমার নাড়ি ছেড়া ধন রে আল্লাহ তুমি উঠাইয়া নিলা কেন। আল্লাহ ফিরাইয়া দেও। ”
কথা বলতে বলতেই মালেকা জ্ঞান হারালো।

কাকন মালেকাকে আকড়ে ধরলো।কয়েকজন মহিলার সাহায্য নিয়ে মালেকা কে নিচে নামিয়ে আনলো।

কাকনের সামনে কাদছে, আসমা,দাদিমা, আলেয়া,রোকেয়া সকলেই। তবে মালেকার জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। ভাগ্য কত নিষ্ঠুর। বিকেল অব্দি যে মা মেয়েকে নতুন ঠিকানায় পাঠানোর আনন্দে ছিল বিকেলেই সেই মা ছেলেকে শেষ ঠিকানায় পাঠানোর যন্ত্রণায় তাপড়াচ্ছে।

মালেকা কাদছে আর বার বার সুভা,রুহুল এদের কে দোষারপ করে বিলাপ করছে। কাকন এর ভাগ্যের উপর রাগ লাগছে কেন রুহুল কেই দোষারপ করছে। রুহুল তো একজন প্রকৃত রক্ষক যে কারো ক্ষতি করতে পারবে না।

সুভা এগুলো সহ্য করতে পারলো না। কাদতে কাদতে সেখান থেকে উঠে এলো। কাকন ও চোখের পানি মুছে সুভাকে অনুসরণ করলো। কাকন দেখল সুভা বিলাল সিরাজীর পায়ের কাছে বসে কাদছে। নানা কথা বলছে।

সুভা কাদতে কাদতে বলছে,”আপনার ছোট ছেলে হেলাল আর নেই।ওকে হত্যা করা হয়েছে। আর দোষ দেওয়া হচ্ছে আপনার খোকা কে। এখনো কি উঠবেন না। প্রতিবাদ করবেন না আপনি। ”

সুভা দুহাত দয়ে মুখ ঢেকে আবারো বললো, “সারাটা জীবন আমার খোকা সবার জন্য ভেবে গেলো অথচ আজ মালেকা আমার খোকা কে দোষ দিচ্ছে। আপনার পাপের শাস্তি কেন আমার খোকা পাবে। এগুলো আপনাদের করা কুকর্মের ফল। কেউ না জানলেও আমি ঠিক ই জানি।আমার রুহুলের কিছু হলে আমি এই সিরাজী মঞ্জিল জ্বালিয়ে দেবো।”

কাকন সুভার কাছে যাওয়ার আর সাহস পেলো না। দূর থেকে এগুলো শুনেই চলে গেলো।
_________________________

অনেক রাত অব্দি সকলেই বসে আছে। দুলাল, জামাল,মহীবুল,রুহুল এলো অনেক রাতে ।রুহুল কে কেমন বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে। কাকন এগিয়ে গেলো রুহুলের দিকে। বলল,” ঠিক আছেন আপনি। পানি দেবো। ”

রুহুল কিছুই বললো না। নিরবে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো,কাকন ও সাথে সাথে গেলো। কক্ষে যেয়ে দু হাতে নিজের মাথা ধরে মাথা নিচু করে বসে থাকল রুহুল।লেখিকা স্রোতস্বীনি। কাকন এগিয়ে এসে পানি দিলো। রুহুল এক নিশ্বাসে সবটুকু পানি খেয়ে নিলো।তারপর গায়ের পাঞ্জাবি ছুড়ে ফেললো। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে শুরু করলো।

কাকন রুহুলের পাশে বসে রুহুল কে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলাতে শুরু করলো। বললো, “এমন করবেন না। কষ্ট হলে কাদুন তবুও এমন ভিতরে কষ্ট জমিয়ে রাখবেন না।”

রুহুল ও কাকন কে আগলে ধরলো।শক্ত করে ধরে বললো, “আপনার ও কি মনে হয় আমি হেলাল কে খুন করেছি। ছোট আম্মা কিভাবে কথাটি বলতে পারলো।জানেন মহীবুল দাদাজান কে বলেছে আমি নাকি হেলাল কে অপছন্দ করতাম।এগুলো তে আমার হাত আছে। ”

–“পুরো দুনিয়া বললেও আমি বিশ্বাস করি না আপনি খুন করেছেন।আমি নিজেই তো আপনার সাথে ছিলাম। ভাইয়ের লাশ দেখে আপনার সেই রুপ কেউ না বুঝলেও আমি বুঝি। ”

রুহুল কাকন কে ছেড়ে দিয়ে দুটো হাত কাকনের সামনে তুললো।বললো, “এই হাত দুটো দিয়ে হেলাল কে কোলে রেখেছি। হাটা শিখিয়েছি আমি। ওকে আমি কিভাবে খুন করবো বলুন বিবিজান। ”

–” আমি জানি আপনার এই হাত দুটো পবিত্র যা কেবল আগলে রাখতে জানে। যে যা ই বলুক সত্যিটা সবাই জানে। ”

–” আমার আজকে আবারও অসহায় লাগছে বিবিজান। যেমনটি আব্বাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে লেগেছিল। আব্বা বেঁচে থেকেও মৃত আর হেলাল সত্যিই মৃত। ”

–” শান্ত হোন এভাবে ভেঙে পড়বেন না।আসুন আমার কোলে মাথা রাখুন আমি আপনাকে মাথা টিপে দেই ”

রুহুল কাকনের কোলে মাথা রাখলো। কাকন রুহুলের মাথা টিপে দিচ্ছে।রুহুল বললো,
–“আমি সন্তান হয়ে আব্বা কে রক্ষা করতে পারি নি,,বড় ভাই হয়ে ছোট ভাই কে রক্ষা করতে পারলাম না।আমি সত্যিই অক্ষম। সিরাজী মঞ্জিলের কর্তা হওয়ার যোগ্যতা নেই আমার। ”

–“আপনার তো এতে কোনো হাত নেই। আপনি ছোট আম্মার কথায় এভাবে মন খারাপ করে থাকবেন না। উনি পুত্রশোকে দিশেহারা হয়ে এমন করছেন।আমি তো আপনাকে বিশ্বাস করি। ”

রুহুল উঠে বসলো।কাকনের হাত দুটো ধরে বললো, “সত্যি আমাকে বিশ্বাস করেন। সারাজীবন এভাবেই পাশে থাকবেন তো আমার, বিশ্বাস করবেন তো আমায়।”

–“মৃত্যুর আগ অব্দি আমি আপনার পাশেই থাকবো,আমি শুধু আপনাকেই বিশ্বাস করবো।”
______________________

ফজর নামাজের পরেই হেলালের লাশ সিরাজী মঞ্জিলে নিয়ে আসা হয়। নৃশংস ভাবে ধারালো অস্ত্র দ্বারা খুন করা হয়েছে। তবে খুনে একটি জিনিস মিল পাওয়া গেছে সেটি হলো হাবিবুল্লাহর মাথায় যেভাবে মারা হয়েছিল একই ভাবে হেলালের মাথায় ও সেই অস্ত্র দ্বারা আঘাত করা হয়েছে। একবার নয় বার বার।
মাথায় বার বার আঘাত করার পর খুব দ্রুত মৃত্যুবরণ করেছে। তবে শরীরের রক্ত নেই বললেই চলে।

লাশ ধোয়ানোর পর সাদা কাফনে মুড়িয়ে খাটিয়ায় শুয়িয়ে রাখা হয়েছে হেলাল কে।পুরো সিরাজপুর বাসীর ঢল পড়েছে যেন সিরাজী মঞ্জিলে। যেখানে আজ বোন কে আনার জন্য ঢাকা যেত সেখানে লাশ হয়ে কবরে যেতে হবে।সকলেই এমন মৃত্যতে শোকাহত।

সিরাজপুরের মাদ্রাসা থেকে এসেছে সকল পুরুষ শিক্ষার্থীরা।লেখিকা স্রোতস্বীনি। সকলে সুমধুর সুরে কুরআন তিলাওয় করছে যা হেলালের নামে দেওয়া হবে।কুরআন পড়া শেষে মোনাজাত করে দুয়া পড়ানো হবে।

হেলালের লাশ দেখে কেবল কষ্ট হচ্ছে না মহীবুল আর জামালের। একদিন একদিন হেলাল হয়তো মহীবুল অথবা জামালের হাতেই মৃত্যু বরণ করতো কিন্তু আজ অন্য কেউ খুন করেছে। মহীবুল এর মনে কোনো রকম না লাগলেও জামালের মনে অন্য আতঙ্ক সৃষ্টি হলো।সে তার নিজের মুখ যেন দেখতে পারছে হেলালের জায়গায়। জামাল কেমন যেন কেপে উঠলো।
জামালের মনে আতঙ্ক হাবিবুল্লাহ মরলো আর আজ হেলাল দুজন ই তো তাদের দলের ছিল। একই ভাবে এমন ভাবে হত্যা জামালের খুব ভয় করছে জীবনে তো আর কম কুকর্ম করেনি।

অন্যদিকে মহীবুল পৈশাচিক আনন্দ লাগছে। হেলালের মা এমনিতেও বার বার রুহুল কে দোষারোপ করছে। এখন মালেকার কানে আরো বিষ ঢালতে পারলেই কাজ। আর যেহেতু রুহুল ই সবার আগে লাশের কাছে ছিল সিরাজপুর বাসীকে যদি একবার রুহুলের নামে খুনি প্রমাণ করা যায় তাহলে সব কিছু মহীর।
____________________

টেলিফোন এর মাধ্যমে খবর পেয়েই বকুলের পরিবারেই সবাই সিরাজপুরে এসেছে। সামিয়া হেলালের খাট ধরেই বার বার কাদছে। বকুল শক্ত করে ধরে রেখেছে সামিয়া কে। এভাবে সামিয়া কে কাদতে দেখে বকুলের খুব কষ্ট হচ্ছে। কাল নতুন জীবনের সুচনা হয়েছিল মেয়েটার আর আজ কাদছে এভাবে। সামিয়া বকুল কে ছাড়িয়ে মাকে দেখে মায়ের কোলে ঢলে পড়লো।মালেকাও মেয়েকে বুকে নিয়ে বিলাপ করে করে কাদতে শুরু করলো।

তবে এত কিছুর মাঝেও আরেকটি নিষ্পাপ মনের ঠিক ই কষ্ট হচ্ছে। সে হলো পারুল। এইতো বাড়ি থেকে আসার আগেও আসমা বলেছিল এবার গেলে তোর আর হেলালের বিয়ের ব্যাপারে আব্বাজান এর সাথে কথা কমু। অথচ হেলাল মৃত্যুপুরী তে চলে গেলো। পারুল তো ছোট থেকেই জানতো তার মা তাকে সিরাজী মঞ্জিলে বিয়ে দিতো তাই মনে মনে হেলাল কে ভালোবেসেছে। অথচ তার ভালোবাসা পুর্ণতা পেলো না।চিৎকার করে কাদতেও পারছে না।

জোহরের আযানের আগেই খাটিয়া কাধে তুলে নিয়ে গেলো হেলাল কে মসজিদের উদ্দেশ্যে। কালিমা শাহাদত পড়তে পড়তে খাটিয়া তুলে নিলো কাধে। রুহুলের মনে হচ্ছে এই ভার বোধহয় সে সহ্য করতে পারবে না। বড় ভাই হয়ে ছোট ভাই এর খাটিয়া কাধে নেওয়া এত কষ্টের। হেলালের খাটিয়া যখন সিরাজী মঞ্জিলের গেইট থেকে বের করলো সেই সাথে একজনের দীর্ঘশ্বাস বের হলো।
_____________________

কাকন জোহর নামাজ পড়ার জন্য সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো। নিজ কক্ষে যাবে তখন কান্নার আওয়াজ পেলো। উপরে তাকিয়ে দেখলো পারুল বসে কাদছে।
কাকন ছুটে গেলো। গিয়ে বললো, ” পারুল তুমি এখানে এভাবে বসে আছো কেন?

পারুল কাকন কে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমারেও মাইরা ফালাও ভাবিজান আমি বাঁচতে চাই না।”
–“কেন পারুল, তুমি একথা বলছো কেন?
–“ওনারে ছাড়া কেমনে বাঁচমু আমি আমি বাচতে চাই না। আমারে মাইরা ফালাও ভাবিজান। আমি যে ওনারে অনেক অনেক ভালোবাসি।

কাকন বুঝলো পারুলের মনের অবস্থা। কাকন পারুলের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, “এই দুনিয়ায় কেউ ই চিরস্থায়ী নয় পারুল। ছোটভাই এর আয়ু শেষ তাই এভাবে মৃত্যু হলো। এভাবে কাদলে ওনার আত্মার কষ্ট হবে। লেখিকা স্রোতস্বীনি। এখন আমরা যদি কিছু করেতে পারি তাহলে সেটা হলো ওনার আত্মার শান্তির জন্য দুয়া করা। চলো নামাজ পড়বে আমার সাথে। ওনার জন্য দুয়া করবে।”

পারুল কাকনের কথায় সম্মতি জানিয়ে ওজু করে নামাজ পড়ে নিলো কাকনের সাথে।দুজনেই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে মনের কথা বললো দুজনেই কাদলো।
মোনাজাত শেষে পারুল জায়নামাযে সিজদারত অবস্থায় আবারো কাদলো।

কাকনের পারুলের কান্না দেখে মায়া হলো। ভাবলো ভালোবাসার মানুষকে হারানোর বেদনা কি খুব কষ্টের।কাকনে রুহুলের হাস্যজ্বল মুখটি ভেসে উঠলো। রুহুলের কথা মনে করেই কাকনের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। না সে কখনোই রুহুল কে হারাতে পারবে না। রুহুল কেও যদি কেউ তার থেকে কেড়ে নেয় তাহলে কিভাবে থাকবে কাকন।
__________________________

লাশ দাফন করে সকলেই আবার সিরাজী মঞ্জিলে এলো।মালেকা আগের মতো কাদতে দেখে রুহুল সাহস সঞ্চয় করে মালেকার কাছে গেলো। বললো, “ছোট আম্মা ”

মালেকা ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, “এই নামে ডাকবি না আমায় তুই খুন করছা আমার হেলাল রে। আমার একমাত্র পোলা। ”

দাদিমা কাদতে কাদতে বললো, “তোর কেন মনে হয় মানিক এই কাম করছে। ও তো হেলাল রে ভালো বাসতো।হুশে কথা ক মালেকা। ”

–“না ও কোনো দিন ও আমার হেলালরে ভালোবাসে নাই। ও আর ওর মা মিলা এই সব সিরাজী মঞ্জিলের কর্তা হওয়ার জন্য করছে। ”

–“তোর মাথা এহন ঠিক নাই। বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে এগুলা কইস না মালেকা। ”

–“কেন কমু না কেন এই মঞ্জিলের কেউ আমার হেলাল রে ভালোবাসে নাই। বিলাল সিরাজী নিজেও নিজের ছোট পোলারে কাছে টাইনা নেয় নাই। সবাই খালি রুহুল রুহুল করছে। নাই আমার হেলাল আর নাই।সবাই খুশি তো এহন। ”

এত কিছু আর রুহুলের সহ্য হলো না। পায়ের কাছে বসে হাত দুটো ধরে বললো, “ছোট আম্মা হেলাল আমার ভাই। আমার আপন ভাই। ওকে আমি কিভাবে খুন করব বলেন।আপনি কি অস্বীকার করতে পারেন যে আলেয়া,হেলাল আর সামিয়াকে আমি ভালোবাসিনি।”

–“তুই খুন করস নাই তাইলে কে খুন করল।আমার হেলালের তো আর কোনো শত্রু নাই।”

–” যে ই আমার আব্বার এই অবস্থা করেছে, আর আমার ভাই কে যে খুন করেছে তাদের কাউ কেই আমি ছাড়বো না ছোট আম্মা। নিজে হাতে খুন করবো আজ আপনাকে ছুয়ে আবারো প্রতিজ্ঞা করলাম আমি।

মালেকা রুহুলকে জড়িয়ে ধরে কাদলো। রুহুল কাকন কে ইশারা করলো মালেকা কে খাওয়ে দিতে। কাকন জোর করে দু লোকমা ভাত খাইয়ে দিলো মালেকা কে।

রুহুল উঠে কক্ষে যেতে চাইলো।তবে মহীবুল আর জামালের দিকে চেয়ে থামলো। তারপর মহীবুলের সামনে দাড়িয়ে বললো, ” আমার ভাই কে আমি খুন করি নি। ছোট আম্মার কানে বিষ ঢালা বন্ধ কর। ”

মহীবুল অবাক হয়ে গেলো। রুহুল কিভাবে জানলো।

চলবে……..

#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি

বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।

®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here